রুশ বিপ্লব
রুশ বিপ্লব হচ্ছে বলশেভিক বিপ্লব এবং অক্টোবর বিপ্লবের সমন্বিত রূপ । ১৯১৭ সালে ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসের দিন নারীরা তাদের অধিকার আদায়ের দাবিতে রাজপথে নেমে আসে । পরদিন তাদের সঙ্গে যোগ দেন শ্রমিকরা ।
রুশ বিপ্লব | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং ১৯১৭-২৩ ওর বিপ্লব | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
|
| ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
|
| ||||||
শক্তি | |||||||
Imperial Russian Army | Red Guards: 200,000 | ||||||
a. Until 15 March 1917. |
"রুশ বিপ্লব" ১৯১৭ সালে সংগঠিত দুইটি বিপ্লবের মিলিত নাম। এই বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় জার শাসনের অবসান হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থান হয়। ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে (গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী মার্চ মাস) সংগঠিত প্রথম বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ার সম্রাজ্য ভেঙে পরে এবং শেষ সম্রাট দ্বিতীয় নিকোলাসকে উৎখাত করে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে অন্তর্বতীকালীন সরকারকে উৎখাত করে বলশেভিক (কমিউনিস্ট) সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
ফেব্রুয়ারি বিপ্লব (মার্চ ১৯১৭) এর কেন্দ্রবিন্দু ছিল তৎকালিন রাজধানী পেট্রোগ্রাদ (বর্তমানে সেইন্ট পিটার্সবার্গ) ও তার আশেপাশের অঞ্চল। বিশৃঙ্খলার মধ্যে, দ্যুমা ইম্পেরিয়াল সংসদ সদস্যরা একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন বলে অনুমিত হয়। সেনা নেতৃত্ব অনুধাবন করেন যে, সম্রাটের উৎখাতের ফলে যে জনদ্রোহ দেখা দিয়েছে তা নিয়ন্ত্রণ করার উপায় তাদের হাতে নেই। সোভিয়েতরা (শ্রমিক কাউন্সিল), প্রথমদিকে অন্তরবর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিলেও একটি বিশেষ ক্ষমতা বলে তারা সরকারকে প্রভাবিত করতে থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর (১৯১৪-১৮) সামরিক বিপর্যরের প্রেক্ষাপটে ফ্রেব্রুয়ারি বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল। এ সময় সেনাবাহিনী বিদ্রোহম্মুখ অবস্থায় ছিল।
তৎকালীন রাশিয়ায় একটি দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা চলতে থাকে যেখানে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের হাতে ছিল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আর সোভিয়েতদের হাতে ছিল জাতীয় পর্যায়ে সমাজের শ্রমিক শ্রেনী ও বামপন্থীদের আনুগত্যের ফলে প্রাপ্ত ক্ষমতা। এই বিশৃঙ্খল পরিবেশে ঘন ঘন বিদ্রোহ, প্রতিবাদ ও ধর্মঘট সংগঠিত হতে থাকে। অন্তরর্বর্তীকালীন সরকার যখন জার্মানির সাথে যুদ্ধে লিপ্ত, তখন বলশেভিক ও অন্যান্য সমাজাতন্ত্রিক জোটগুলো সংঘাত বন্ধের জন্য প্রচারণা চালায়। বলশেভিকরা শ্রমিক মিলিশিয়াদের রেড গার্ডস, পরবর্তিতে রেড আর্মিতে রূপান্তরিত করে এবং তাদের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।[1]
১৯১৭ সালে অক্টোবর বিপ্লবের (গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জী অনুসারে নভেম্বর) মধ্য দিয়ে বলশেভিক পার্টি ও শ্রমিক সোভিয়েতরা পেট্রোগ্রাদের অন্তরবর্তীকালীন সরকারকে উৎক্ষাত করে রাশিয়ান সোভিয়েত ফেডারেশন সোস্যালিস্টিক রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা করে। সেই সাথে রাজধানী মস্কোতে স্থানান্তর করা হয়। বলশেভিকরা সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ের প্রধানের দায়িত্ব নেয় এবং গ্রামাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। ভিন্নমত দমন করা জন্য তারা সর্বত্র চেকা প্রতিষ্ঠা করে। মার্চ ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার অংশগ্রহণ সমাপ্ত করার জন্য বলশেভিক নেতারা ট্রিটি অব ব্রিস্ট-লিটভস্ক স্বাক্ষর করে।
বলশেভিক (‘‘রেড”) ও সমাজত্রন্ত্রবিরোধীদের (‘‘হোয়াইট”) ও অন্যান্য অ-বলশেভিক সমাজতন্ত্রীদের মধ্যে গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। এই যুদ্ধ বেশ কয়েকবছর ধরে চলে এবং বলশেভিকরা তাদের বিরোধীদের পরাজিত করে। বলশেভিদের এই জয় ১৯২২ সালে ইউনিয়ন অব সোভিয়েত সোসালিস্ট রিপাবলিক (ইউএসএসআর) প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে।
পটভূমি
১৯০৫ সালের রাশিয়ার বিপ্লবকে ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রধান নিয়ামক বলা হয়। ব্লাডি সানডের ঘটনাগুলো ছিল প্রতিবাদের শুরু। একটি শ্রমিক কাউন্সিল সেইন্ট পিটার্সবার্গ সোভিয়েত এসব বিশৃংখলার জন্ম দিয়েছিল। সেই সাথে কমিউনিস্ট ধারার রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু হয়।[2] প্রথম বিশ্বযুদ্ধ রাশিয়ার জনগনকে জার দ্বিতীয় নিকোলাসের প্রতি আস্থাশীলহীন করেছিল। রাজকীয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কমিউনিস্টদের প্রতিশোধপরায়ন হয়ে পরার পিছনে এটি একটি অন্যতম কারণ। ১৯১৪ সালে কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় উসমানিয় সম্রাজ্যের আবির্ভাবের ফলে তুর্কী সম্রাজ্যের সাথে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ বাধা প্রাপ্ত হয়। এর ফলে সামান্য অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়, ফলশ্রুতিতে রাশিয়া ১৯১৭ সালে যুদ্ধে তাদের অগ্রবর্তী সেনাদলকে সমরাস্ত্র ও রসদ প্রেরনে ব্যর্থ হয়। এটি একটি প্রশাসনিক সমস্যা ছিল মাত্র যেখানে জার্মানি তার দুইটি যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য প্রচুর সমরাস্ত্র ও রসদ উৎপাদন করতে থাকে।[3] যুদ্ধে, শহরাঞ্চলে খাদ্য সরবরাহ ব্যহত হয়। খাদ্যাভাব রাশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসাবে দেখা দেয়। তবে এর জন্য ফলনকে খুব বেশি দায়ী করা যায় না কারণ যুদ্ধে কৃষিজমির খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পরোক্ষ কারণ হিসাবে বলা যায় যে, সরকার যুদ্ধের ব্যয় বহন করার জন্য প্রচুর কাগুজে নোট (রুবল) বাজারে ছাড়ে। এর ফলে বাজারে ১৯১৪ সালের তুলনায় ১৯১৭ সালে মুদ্রাস্ফীতি চার গুন বৃদ্ধি পায়। কৃষকদেরকে অতি উচ্চমূল্যে কৃষি সামগ্রী ক্রয় করতে হত। কিন্তু মধ্যস্বত্তভোগীদের দৌরত্যের কারণে উৎপাদিত পন্যের ন্যায্য মূল্য তারা পেত না। ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য মজুদ করতে শুরু করল এবং শুধুমাত্র নিজের প্রয়োজন মেটানর জন্য উৎপাদন করতে শুরু করল। এভাবে শহরাঞ্চলে প্রতিনিয়ত খাদ্যের সংকট বিরাজ করতে থাকল। এরফলে কলকারখানায় মজুরী বৃদ্ধির দাবীতে আন্দোলন দানা বাঁধল। জানুয়ারিতে জর্মানদের মদদে ব্যাপক ধর্মঘট শুরু হল। এসব কারণে সরকারকে ব্যাপক সমালোচনা সম্মুখিন হতে হয়। জনগনকে সান্ত্বনা দিতে সেইন্ট পিটার্সবার্গের নাম পাল্টে পেট্রোগ্রাদ রাখা হয়। নতুন নামের উচ্চারণটি অনেক বেশি রুশ ভাষার কাছাকাছি ছিল। ফেব্রুয়ারি ১৯১৭ সালে পেট্রোগ্রাদের রাস্তায় জনতা মিছিল করে যুদ্ধের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। যুদ্ধে রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি জার নিকোলাসের অযোগ্যতার ধারনাকে আরো বেশি উষ্কে দেয়।[3]
প্রভাব
তথ্যসূত্র
- Orlando Figes, A Peoples Tragedy, p370
- Wood, 1979. p. 18
- Wood, 1979. p. 24