রাসায়নিক যৌগ

রাসায়নিক যৌগ হল একপ্রকারের পদার্থ যা দুই বা ততোধিক ভিন্ন মৌলিক উপাদানের মধ্যে রাসায়নিক বন্ধনের মাধ্যমে গঠিত হয়। মৌলিক উপাদানসমূহ নির্দিষ্ট ভরের অনুপাতে যুক্ত হয়ে রাসায়নিক যৌগ গঠন করে এবং যৌগ ভাঙ্গলে এর মৌলিক উপাদানসমূহ পাওয়া যায়।[1][2]

বিশুদ্ধ জল (H2O) একটি যৌগের উদাহরণ। মডেল দুটি অংশ হাইড্রোজেন (সাদা) এবং এক অংশ অক্সিজেন (লাল) এর সংযোগ দেখায়


ফোর-কার্বন যৌগের ফুটন্ত পয়েন্টস

বৈশিষ্ট্য

ব্যতিক্রম

কিছু ব্যতিক্রমী রাসায়নিক যৌগ রয়েছে যা উপর্যুক্ত সংজ্ঞা অনুসরণ করে না। কিছু নির্দিষ্ট স্ফটিক আকারের যৌগ non-stoichiometric; কারণ তাদের স্ফটিক গঠনে অন্য উপাদানের উপস্থিতি (বা আটকে পরা উপাদান) অনুসারে এদের সংযুক্তিতে পার্থক্য হয়। রাসায়নিক ভাবে অভিন্ন কিছু যৌগের গাঠণিক উপাদানের বিভিন্ন পরিমাণে ভারী বা হালকা আইসোটোপ থাকতে পারে, যার কারণে যৌগ গঠনকারী উপাদানসমূহের ভরের অনুপাত কিঞ্চিত পরিবর্তিত হয়। তাই এ যৌগসমূহ পুরাপুরি সমগোত্রীয় হবে না, তবে রসায়নের অধিকাংশ ক্ষেত্রে এদের অভিন্ন ধরা যায়।

যৌগ ও মিশ্রণের পার্থক্য

রাসায়নিক যৌগের ভৌতরাসায়নিক ধর্ম এর গঠনকারী মৌলিক উপাদানসমূহের ধর্ম থেকে ভিন্ন। ইহা যৌগ ও মিশ্রণের প্রধান পার্থক্যসূচক, কেননা বস্তু বা উপাদানের মিশ্রণের বৈশিষ্ট্য সাধারণত মিশ্রণগঠনকারী উপাদানসমূহের বৈশিষ্ট্যের অনুরূপ বা ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত হয়। আরেকটি পার্থক্যসূচক হল মিশ্রণের উপাদানসমূহ সাধারণত সহজ যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (যেমন: ছাঁকন) পৃথক করা যায়; যেখানে যৌগের উপাদান পৃথক করা প্রায়সময়ই কঠিন হয়। এছাড়া রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উপাদানসমূহের রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে রাসায়নিক যৌগ গঠিত হয়। মিশ্রণ কেবল যান্ত্রিকভাবে প্রস্তুত করা যায়।

সংকর ধাতুকে, যা একপ্রকার মিশ্রণ, প্রায়ই রাসায়নিক যৌগ হিসেবে ভুল করা হয়। ইহা যান্ত্রিকভাবে প্রস্তুত করা হয়; সাধারণত প্রথমে উপাদানসমূহকে উত্তপ্ত করা হয় এবং তারপর দ্রত শীতলকরণের ফলে উপাদানসমূহ একত্রে মিশ্রিত অবস্থা লাভ করে।

ফর্মুলা

রসায়নবিদগণ বিভিন্ন প্রকারের ফর্মুলার সাহায্যে রাসায়নিক যৌগ নির্দেশ করেন। অনুর ক্ষেত্রে, আণবিক এককের ফর্মুলা ব্যবহৃত হয়। পলিমার জাতীয় পদার্থ যেমন খনিজ ও অনেক ধাতব অক্সাইডের ক্ষেত্রে empirical ফর্মুলা উল্লেখ করা হয়; যেমন: খাবার লবণের জন্য NaCl. আণবিক ও empirical ফর্মুলায় উপাদানের ক্রম হল প্রথমে C তারপর H এবং এরপর বর্ণানুক্রমিক। ট্রাইফ্লুরোএসেটিক এসিড (Trifluoroacetic acid) তাই লেখা হয় C2HF3O2। বর্ণনামূলক ফর্মুলা যৌগের গাঠণিক তথ্যও প্রকাশ করে; ট্রাইফ্লুরোএসেটিক এসিডের ক্ষেত্রে F3CO2H। অপরদিকে অজৈব যৌগের ফর্মুলা সাধারণত গাঠণিক তথ্য প্রকাশ করে না। যেমন H2SO4 এর অনুতে H-S রূপ কোন রাসায়নিক বন্ধন নেই। এর গঠনের সঠিক বর্ণনাসূচক ফর্মুলা হবে O2S(OH)2

রাসায়নিক যৌগ সৃষ্টির কারণ

মৌলিক পদার্থ বা উপাদান সমূহ রাসায়নিক যৌগ গঠন করে স্থিতিশীলতা লাভ করার জন্য। মৌলিক পদার্থ সমূহ স্থিতিশীল হয় যখন তাদের সর্বোবহিস্থ: শক্তি স্তরে সর্বোচ্চ সংখ্যক ইলেক্ট্রণ থাকে (সাধারণত দুইটি বা আটটি যোজনী ইলেক্ট্রণ)। যেহেতু নিষ্ক্রিয় গ্যাসসমূহের সর্বোবহিস্থ: শক্তিস্তরে আটটি যোজনী ইলেক্ট্রণ রয়েছে (ব্যতিক্রম হল হিলিয়াম যার স্থিতিশীলতার জন্য কেবল দুইটি যোজনী ইলেকট্রণ প্রয়োজন), তাই এরা সচারাচর বিক্রিয়া ঘটায় না।

দশা ও তাপীয় ধর্ম

রাসায়নিক যৌগ সমূহ বিভিন্ন দশায় অবস্থান করতে পারে। সকল যৌগ কঠিন রূপ ধারণ করে, অন্তত যথেষ্ট নিম্ন তাপমাত্রায়। আণবিক যৌগসমূহ তরল, গ্যাসীয় এবং এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে প্লাজমা রূপ ধারণ করতে পারে। তাপ প্রয়োগে সকল যৌগ বিশ্লিষ্ট হয় অর্থাৎ গঠনকারী উপাদানে বিভক্ত হয়। যে তাপমাত্রায় যৌগসমূহ ভেঙ্গে যায় তাকে সাধারণত বিশ্লেষণ তাপমাত্রা বলে। বিশ্লেষণ তাপমাত্রা খুব তীব্র নয়, এটা নির্ভর করে তাপ প্রয়োগের হারের উপর। যথেষ্ট উচ্চ তাপমাত্রায়, সকল যৌগ, বিশ্লেষিত হয়ে বা হওয়ার পথে, ক্ষুদ্র যৌগাংশে বা স্বতন্ত্র অণুতে বিভক্ত হয়।

সি এ এস (CAS) নম্বর

প্রত্যেকটি রাসায়নিক যৌগের একটি অনন্য সনাক্তকারী নম্বর রয়েছে যাকে ঐ যৌগের সি এ এস নম্বর বলে।

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.