রাষ্ট্রধর্ম
রাষ্ট্রধর্ম (যাকে ধর্মীয় রাষ্ট্র বা সরকারী ধর্মও বলা হয়) হল একটি ধর্ম সরকারীভাবে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র দ্বারা অনুমোদিত। সরকারী আছে এমন একটি রাষ্ট্র (যা স্বীকারোক্তিমূলক রাষ্ট্র হিসাবেও পরিচিত), যদিও ধর্মনিরপেক্ষ নয়, অগত্যা একটি ধর্মতন্ত্রও নয়। রাষ্ট্র ধর্ম হলো একটি সরকারী বা সরকার-অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান। তবে এক্ষেত্রে ধর্মতন্ত্রের মতো রাষ্ট্রকে ধর্মের নিয়ন্ত্রণে থাকার প্রয়োজন নেই বা রাষ্ট্র-অনুমোদিত ধর্ম অপরিহার্যভাবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেই।
ইতিহাস
রাষ্ট্রধর্ম মানব ইতিহাস জুড়ে প্রায় সব ধরনের সংস্কৃতিতে পরিচিত। প্রাগৈতিহাসিক যুগেও রাষ্ট্রধর্মের প্রচলন ছিল। ধর্মীয় উপাসনা এবং এর সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্কের বিষয়টি প্রাচীন ল্যাটিন পণ্ডিত মার্কাস টেরেন্টিয়াস ভারোর দ্বারা প্রথম আলোচিত হয়েছিল। প্রথম রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মিত খ্রিস্টান চার্চটি ছিল আর্মেনিয়ান অ্যাপোস্টলিক চার্চ, যা ৩০১ সিইতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। [1]
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রধর্ম
ইসলাম
- আফগানিস্তান
- আলজেরিয়া
- বাহরাইন
- বাংলাদেশ
- ব্রুনাই
- কোমোরোস
- জিবুতি
- মিশর
- ইরান
- ইরাক
- জর্ডান
- কুয়েত
- লিবিয়া
- মালয়েশিয়া
- মালদ্বীপ
- মৌরিতানিয়া
- ওমান
- পাকিস্তান
- ফিলিস্তিন
- কাতার
- সাহরাউই আরব গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
- সৌদি আরব
- সোমালিয়া
- সংযুক্ত আরব আমিরাত
- ইয়েমেন
- কিছু দেশ ইসলামকে সরকারি ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয় নি,কিন্তু এ দেশগুলোর কিছু বিশেষ ব্যবস্থা ইসলামের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সে দেশগুলো হলো: তুরস্ক,তিউনিসিয়া,তাজিকিস্তান,তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তান।
ক্যাথলিক
- কোস্টা রিকা
- হোলি সি
- লিশটেনস্টাইন
- মাল্টা
- মোনাকো
- কিছু দেশের সরকার রোমান ক্যাথলিক ধর্মকে স্বীকৃতি দিয়েছে,কিন্তু এ ধর্মটি সে দেশের রাষ্ট্রধর্ম নয়। সে দেশগুলো হলো: অ্যান্ডোরা, আর্জেন্টিনা, পূর্ব তিমুর, এল সালভাদর, গুয়েতেমালা, ইতালি, পানামা,প্যারাগুয়ে, পেরু, পোল্যান্ড ও স্পেন।
পূর্বদেশীয় অর্থোডক্স
- গ্রিস (একমাত্র দেশ যার রাষ্ট্রধর্ম পূর্বদেশীয় অর্থোডক্স খ্রিস্টধর্ম)
- কিছু দেশের সরকার পূর্বদেশীয় অর্থোডক্স খ্রিস্টধর্মকে স্বীকৃতি দিয়েছে,কিন্তু এ ধর্মটি সে দেশের রাষ্ট্রধর্ম নয়। সে দেশগুলো হলো:বুলগেরিয়া,সাইপ্রাস,ফিনল্যান্ড,জর্জিয়া,গণপ্রজাতন্ত্রী দোনেৎস্ক।
প্রটিসট্যানট মতবাদ
- ইংল্যান্ড
- স্কটল্যান্ড
- টুভালু
- ডেনমার্ক
- আইসল্যান্ড
- নরওয়ে
- কিছু দেশের সরকার প্রটিসট্যানট মতবাদকে স্বীকৃতি দিয়েছে,কিন্তু এটি সে দেশের রাষ্ট্রধর্ম নয়। সে দেশগুলো হলো:ফিনল্যান্ড,সুইডেন।
অন্যান্য/মিশ্র
বৌদ্ধধর্ম
- ভুটান
- কম্বোডিয়া
- মিয়ানমার
- শ্রীলঙ্কা
- কিছু দেশ বৌদ্ধধর্মকে সরকারি ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয় নি,কিন্তু এ দেশগুলোর কিছু বিশেষ ব্যবস্থা বৌদ্ধধর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সে দেশগুলো হলো:থাইল্যান্ড ও লাওস।
হিন্দুধর্ম
- ভারত (সাংবিধানিকভাবে ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। তাই হিন্দুধর্ম দেশটির রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত নয়। তবে হিন্দুধর্ম ভারতের রাষ্ট্র সমর্থিত ধর্ম। এছাড়া ভারতের সংস্কৃতির সাথে হিন্দুধর্ম ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত)।
- নেপাল (সাংবিধানিকভাবে নেপাল একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। তাই হিন্দুধর্ম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত নয়। তবে নেপালের সংস্কৃতির সাথে হিন্দুধর্ম ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। নেপালের কিছু আইনও হিন্দুধর্মের আইনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ)।
মুসলিম রাষ্ট্রে রাষ্ট্রধর্ম
মধ্যপ্রাচ্যে, প্রধানত মুসলিম জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সরকারী ধর্ম হিসাবে ইসলাম রয়েছে, যদিও নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনে ধর্মীয় বিধিনিষেধের মাত্রা দেশ অনুসারে ভিন্ন। সৌদি আরবের শাসকরা ধর্মনিরপেক্ষ এবং ধর্মীয় উভয় শক্তি ব্যবহার করে থাকেন। আর ইরানের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রপতিদের ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। তুরস্ক, (যেখানে মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা রয়েছে) আতাতুর্কের সংস্কারের পরে এটি একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হয়ে ওঠে।
সমসাময়িক সমাজে রাষ্ট্র কর্তৃক নাগরিকদের উপর সরকারী জাতীয় ধর্ম আরোপ করার মাত্রা যথেষ্ট পরিবর্তিত হয়। সৌদি আরব এবং ইরানে এ মাত্রা উচ্চ আর ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড, আইসল্যান্ড এবং গ্রিসের মতো দেশে এ মাত্র ন্যূনতম বা একেবারেই নয়।
তথ্যসূত্র
- The Journal of Ecclesiastical History. p. 268 by Cambridge University Press, Gale Group, C.W. Dugmore