রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়

রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় (২৯ মে,১৮৬৫ - ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৩) :ঊনবিংশ শতাব্দীতে জন্মগ্রহণকারী বাঙ্গালী সাহিত্যিক যিনি প্রবাসীমডার্ণ রিভিউ পত্রিকাদ্বয়ের সম্পাদক হিসেবে বিশেষভাবে খ্যাতিমান ছিলেন। উপরন্তু তিনি ধর্মবন্ধু, দাসী, প্রদীপ এবং মুকুল এই চারটি পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও দীর্ঘকাল কাজ করেছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তার বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল। পত্রিকার সম্পাদনা ছাড়াও তিনি বেশ কিছু বাংলা ও ইংরেজি গ্রন্থের প্রণেতা। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলা সাহিত্যের যে আন্দোলন সঙ্ঘটিত হয়েছিল, তার পশ্চাতে কর্মবীর রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকা ছিল দৃঢ়মূল। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে জেনিভায় অনুষ্ঠিত লীগ অব নেশনস্‌-এর বিশেষ অধিবেশনে তিনি ভারতবর্ষের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ১৯৪১-এ রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর তিনি বিশ্বভারতীর আশ্রমিক সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। [1][2][3] বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সাংবাদিক হেমন্তকুমার চট্টোপাধ্যায় তার ভ্রাতুষ্পুত্র। সুলেখিকা সীতা দেবীশান্তা দেবী হলেন তার কন্যাদ্বয়।

রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়
রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়
জন্ম২৯ মে, ১৮৬৫
মৃত্যু৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৩ (বয়স ৭৮)
কলকাতা
মাতৃশিক্ষায়তনকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাসাংবাদিক ও শিক্ষাবিদ
দাম্পত্য সঙ্গীমনোরমা দেবী
সন্তানকেদারনাথ চট্টোপাধ্যায়
শান্তা দেবী (নাগ)(কন্যা)
সীতা দেবী(কন্যা)
অশোক চট্টোপাধ্যায়
পিতা-মাতাশ্রীনাথ চট্টোপাধ্যায় (পিতা)
হরসুন্দরী দেবী (মাতা)

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় অবিভক্ত বাংলার অধুনা পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার পাঠকপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার নাম শ্রীনাথ চট্টোপাধ্যায় ও মাতার নাম হরসুন্দরী দেবী। তিনি বাঁকুড়া জেলা স্কুল থেকে ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রান্স,সেন্ট জেভিয়ার'স কলেজ, কলকাতা থেকে এফ.এ.এবং সিটি কলেজ থেকে ইংরাজীতে অনার্স সহ বি.এ পাশ করেন। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ.পাশ করেন। প্রতি পরীক্ষাতেই বিশেষ কৃতিত্ব দেখান ও বৃত্তিলাভ করেন। তিনি ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন।[4] ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ব্রাহ্ম সমাজের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের সভাপতি হয়েছিলেন।

কর্মজীবন

রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার সিটি কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদ কায়স্থ পাঠশালায় যোগ দেন। শেষে বিশ্বভারতীর অধ্যাপক ও পরে অধ্যক্ষ হন।

পত্রিকা প্রকাশ ও সম্পাদনা

রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় নিজে সাহিত্যস্রষ্টা ছিলেন না,কিন্তু সাহিত্যসৃষ্টির পরম সহায়ক ছিলেন। [5] এম.এ পরীক্ষার পরই তিনি ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে 'ধর্মবন্ধু' পত্রিকার সম্পাদনা করেন।১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে মাসিক পত্রিকা 'দাসী' প্রকাশিত হলে তিনি সম্পাদক নিযুক্ত হন। ওই সময়েই নিজস্ব বাংলা ব্রেইল প্রথার উদ্ভাবন করেন। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর সাহায্যে শিশুদের উপযোগী পত্রিকা মুকুল প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হন। শিবনাথ শাস্ত্রী ওই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে মাসিক 'প্রদীপ' পত্রিকার সম্পাদক হন। এলাহাবাদে বর্তমানে প্রয়াগরাজে কর্মরত থাকার সময় ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে (১৩০৮ বৈশাখ,বঙ্গাব্দে) বিখ্যাত ও আধুনিক কালের সর্বাঙ্গসুন্দর মাসিক 'প্রবাসী' পত্রিকা প্রকাশ ও সম্পাদনা করেন। দেশের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদের রচনাসম্ভারে সমৃদ্ধ হয়ে প্রকাশিত হত। চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের সুন্দর প্রতিলিপিতে বাংলা সাময়িক পত্রের ইতিহাসে চিরস্মরণীয়।

রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত রচিত প্রবাসী পত্রিকার প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ

১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রকাশ করেন ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইংরাজী সাময়িক পত্রিকা "দ্য মডার্ন রিভিউ"। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে হিন্দি মাসিক "বিশাল ভারত" প্রকাশ ও সম্পাদনা তার আরো একটি স্মরণীয় কীর্তি। জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে প্রণোদিত তিনি দেশের বহু বিখ্যাত ব্যক্তির সংগ্রাম ও সাধনার পোষকতা করে গেছেন তার পত্রিকার মাধ্যমে। সাংবাদিক হিসাবে নির্ভীক,নিরপেক্ষ এবং দৃঢ়চেতা ছিলেন। সাংবাদিকতার এই গুণের জন্য সরকারের কাছে তাঁকে বহুবার জরিমানা দিতে হয়েছে। সমসাময়িক রাজনৈতিক নেতাগণ এবং রবীন্দ্রনাথ, আচার্য যদুনাথ সরকার প্রমুখ প্রায়ই নিজেদের করণীয় বিষয়ে পরামর্শ নিতেন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ও ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদে প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের মূল সভাপতি, এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো এবং সেকেন্ডারি এডুকেশন রিফর্ম কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সম্পর্ক

রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তিনি অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন। ভারতবাসীর ঐক্য, অর্থনৈতিক জীবনের উন্নতি,স্বদেশী শিল্পকলা ও সাহিত্যের উন্নতি ছিল তার জীবনাব্যাপী সাধনা। বাংলা ভাষায় অর্থনীতি আলোচনার সূত্রপাত তিনিই প্রথম করেন। [6]

প্রকাশনা

প্রতি ইংরাজী বা বাংলা মাসের ১লা তারিখ পত্রপত্রিকা প্রকাশের পদ্বতি এবং ভারতীয় পদ্ধতি অনুসারে অঙ্কিত চিত্রকলার প্রকাশ তিনিই প্রথম প্রচলন করেন। তার রচিত পুস্তক "Towards Home Rule"

রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় রচিত Towards Home Rule গ্রন্থের প্রচ্ছদ

তথ্যসূত্র

  1. "সার্ধশত জন্মবর্ষে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়"। ৯ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১৬
  2. কোরক : রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা, কলকাতা, ২০১৫
  3. সার্ধশতবর্ষ
  4. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ৬৬৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  5. শিশিরকুমার দাশ সংকলিত ও সম্পাদিত, সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৯, পৃষ্ঠা ১৯৬ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-০০৭-৯ আইএসবিএন বৈধ নয়
  6. রবীন্দ্রনাথ ও রামানন্দ
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.