রাধা (অভিনেত্রী)

রাধা নামে পরিচিত উদয়া চন্দ্রিকা (জন্ম ৩ জুন ১৯৬৫)[1] হচ্ছেন একজন সাবেক ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। কেরালা প্রদেশে জন্মগ্রহণকারী রাধা মূলত তামিল ও তেলুগু চলচ্চিত্রে অভিনয় করতেন, এছাড়াও তিনি মালয়লাম, কন্নড় এবং হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন। তিনি ১৯৮১ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম শীর্ষ অভিনেত্রী ছিলেন।[2] রাধার বোন অম্বিকাও তামিল চলচ্চিত্রে অভিনয় করতেন।[3] রাধা কল্লর বোনদের (অম্বিকা, মল্লিকা ও রাধা) মধ্যে সবচেয়ে সফল। অম্বিকা ও রাধা তাদের কর্মজীবনের শীর্ষে অবস্থান কালে একাধিক চলচ্চিত্রে একসাথে কাজ করেছেন। তারা যৌথভাবে একটি চলচ্চিত্র স্টুডিও এআরএস স্টুডিওজের যৌথ মালিক, যা পরে ২০১৩ সালে জোলি জিমিকানা হোটেল কমপ্লেক্সে রূপান্তর করা হয়। তিনি স্টার বিজয় চ্যানেলের জোড়ি নাম্বার ওয়ান নৃত্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের ষষ্ঠ মৌসুমের বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন।

রাধা
জন্ম
উদয়া চন্দ্রিকা

(1965-06-03) ৩ জুন ১৯৬৫
দাম্পত্য সঙ্গীরাজশেকরন নায়ার (বি. ১৯৯১)
সন্তানকার্তিকা নায়ার (জ. ১৯৯২)
বিগনেশ নায়ার (১৯৯৫)
তুলসী নায়ার (জ. ১৯৯৭)
আত্মীয়অম্বিকা (বোন)

প্রারম্ভিক জীবন

রাধা ১৯৬৫ সালের ৩রা জুন কেরল রাজ্যের তিরুবনন্তপুরম জেলার কল্লরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা কল্লরা সরসম্মা ছিলেন ২০১৪ সালে মহিলা কংগ্রেসের নেত্রী। তারা পাঁচ ভাইবোন। তার বড় দুই বোন হলেন অম্বিকা ও মল্লিকা এবং ছোট দুই ভাই হলেন অর্জুন ও সুরেশ।[3][4]

কর্মজীবন

তামিল চলচ্চিত্র

রাধা ১৯৮১ সালে পরিচালক পি ভারতীরাজার তামিল ভাষার আলাইগাল ওইভাতিল্লাই চলচ্চিত্রে নবাগত কার্তিকের বিপরীতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু করেন। চলচ্চিত্রটি ব্যবসা সফলতা লাভ করে এবং কাল্ট ক্ল্যাসিক হিসেবে বিবেচিত হয়। কার্তিকের সাথে তার রসায়ন জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং এই ধারাবাহিকতায় পরের বছর এই যুগল পাক্কাতু বিটু রোজা, বালিবামে বা বাইলাঞ্জোডিগল চলচ্চিত্রে একসাথে কাজ করেন। একই বছর তিনি কামাল হাসানের সাথে টিক টিক টিক চলচ্চিত্রে একটি ছোট চরিত্রে কাজ করেন। এই চলচ্চিত্রটি তার কর্মজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এরপর তিনি কামাল হাসানের সাথে তুঙ্গাদে তাম্বি তুঙ্গাদে (১৯৮৩), ওরু কাইদিয়িন ডায়েরি (১৯৮৫), ও জাপানিল কল্যাণরমন (১৯৮৫) অভিনয় করেন। জাপানিল কল্যাণরমন চলচ্চিত্রটি কামাল হাসানের ১৯৭৯ সালের ব্যবসা সফল কল্যাণরমন চলচ্চিত্রের অনুবর্তী পর্ব।[5] তিনি ভারতীরাজার মুদল মারিয়াতাই (১৯৮৫) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার - তামিল অর্জন করেন।

তিনি বেল্লাই রোজা (১৯৮৩) চলচ্চিত্রে তার বোন অম্বিকার সাথে অভিনয় করেন।[6] এই সময়ে দুই বোনই খ্যাতির শীর্ষে থাকাকালীন ইদায়া কোবিল (১৯৮৫), কাদল পারিসু (১৯৮৭) ও অন্ননগর মুদল তেরু (১৯৮৮) চলচ্চিত্রেও একসাথে অভিনয় করেন।[7]

তেলুগু চলচ্চিত্র

তিনি তেলুগু চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন মিস্টার বিজয় কুমার চলচ্চিত্রে শোভন বাবুর বিপরীতে। অগ্নি পর্বতম। তিনি চিরঞ্জীবীর বিপরীতে ১৬টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, তন্মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল গুন্ডা (১৯৮৪), ডোঙ্গা, পুলি, রক্ত সিন্দুরমঅডাবি ডোঙ্গা (১৯৮৫), কোন্ডাবিতি রাজারক্ষাসুদু (১৯৮৬), জেবু ডোঙ্গা (১৯৮৭), যমুদিকি মোগুডুমরণ মৃদঙ্গম (১৯৮৮), স্টেট রাউডিরুদ্রনেত্র (১৯৮৯) এবং কোন্ডাবিতি ডোঙ্গাকোডামা সিংঘম (১৯৯০)। তিনি নন্দমুরি বলকৃষ্ণের বিপরীতে ৬টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, তন্মধ্যে রয়েছে মুড্ডুলা কৃষ্ণাইয়া ও কলিযুগ কৃষ্ণুডু (১৯৮৬), ডোঙ্গা রামুডু (১৯৮৮) ও রামুডু ভীমুডু (১৯৮৯)।

কন্নড় চলচ্চিত্র

রাধা কয়েকটি কন্নড় ভাষার চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তিনি সৌভাগ্য লক্ষ্মী চলচ্চিত্রে বিষ্ণুবর্ধন ও লক্ষ্মীর সাথে অভিনয় করেন, এটি হিন্দি চলচ্চিত্র মাঙ্গ ভারো সাজনা চলচ্চিত্রের পুনর্নির্মাণ, যা মূলত তেলুগু চলচ্চিত্রের পুনর্নির্মাণ ছিল। তিনি রবিচন্দ্রনের বিপরীতে সবিরা সুল্লু (১৯৮৫) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৯১ সালে তিনি শরৎ বাবুর বিপরীতে রণচণ্ডী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রে তার অন্যান্য সহশিল্পী ছিলেন রমেশ ভাট, সুধীর ও মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রু, যিনি খল চরিত্রে অভিনয় করেন। এতে তাকে অনেকগুলি মারপিটের দৃশ্যে দেখা যায়। চলচ্চিত্রটি কন্নড় ভাষার অন্যতম ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র।

মালয়ালম চলচ্চিত্র

কেরলের অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও রাধা মালয়ালম চলচ্চিত্রে সফলতা অর্জন করতে পারেননি, যদিও তার বোন অম্বিকা তামিল ও মালয়ালম উভয় চলচ্চিত্রেই সফল ছিলেন। তার সবচেয়ে সফল মালয়ালম চলচ্চিত্র হল কে. জি. জর্জের রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র ইরাকল (১৯৮৬); এতে তার অভিনীত নির্মলা চরিত্রটিকে তার কর্মজীবনের অন্যতম সেরা কাজ বলে বিবেচনা করা হয়। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল সত্যন অন্তিকাডের রেবাতিক্কোরু পাবকুট্টি (১৯৮৬), এতে তার সহশিল্পী ছিলেন গোপী, মোহনলাল ও মেনকা। তিনি আয়িতম (১৯৮৭) চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন এবং এতে তিনি অম্বিকা, সুকুমারন ও মোহনলালের সাথে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন। তার আরেকটি সফল মালয়ালম চলচ্চিত্র হল ইন্নাতে প্রোগ্রাম (১৯৯১), এটি তার শেষ মালয়ালম চলচ্চিত্র।

ব্যক্তিগত জীবন

রাধা ১৯৯১ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর রাজশেকরন নায়ারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই কন্যা ও এক পুত্র রয়েছে, তারা হলেন কার্তিকা, বিগনেশ ও তুলসী নায়ার। কার্তিকা তেলুগু চলচ্চিত্র জোশ (২০০৯) এবং তুলসী কডল (২০১২) চলচ্চিত্রে অভিনেত্রী হিসেবে তাদের কর্মজীবন শুরু করেছেন।

তথ্যসূত্র

  1. "Wish Radha Nair on her birthday"দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া (ইংরেজি ভাষায়)। ১৫ জানুয়ারি ২০১৭। ২০১৩-১২-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০২০
  2. Collections। Update Video Publication। ১৯৯১। পৃষ্ঠা 394।
  3. "Ambika – Profile and Biography"Veethi। ১৪ জুন ২০১৪। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  4. "Ambika: Profile"Kerala9। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১১-১৬
  5. রমেশ, নীরজ (১৫ ডিসেম্বর ২০১৬)। "Sequels a reliable recipe for hit films"দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০২০
  6. "Vellai Roja (1983)"ফিল্মিবিট (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০২০
  7. অশীষ রাজাধক্ষ্য; পল উইলমেন। Encyclopaedia of Indian cinema (পিডিএফ)ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট। পৃষ্ঠা ৬৫৮।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.