রাজকৃষ্ণ রায়
রাজকৃষ্ণ রায় (২১ অক্টোবর ১৮৪৯ - ১১ মার্চ ১৮৯৪) একজন বিশিষ্ট নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক।[1]
রাজকৃষ্ণ রায় | |
---|---|
জন্ম | ২১ অক্টোবর ১৮৪৯ রামচন্দ্রপুর , পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ |
মৃত্যু | ১১ মার্চ ১৮৯৪ (বয়স ৪৫) |
পেশা | বিশিষ্ট কবি নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক |
সংক্ষিপ্ত জীবনী
রাজকৃষ্ণ রায়ের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার রামচন্দ্রপুরে। পিতার নাম রামদাস রায়। শৈশবেই মাতার মৃত্যু হওয়ার তার পিতা রাজকৃষ্ণকে কলকাতায় নিয়ে চলে আসেন। মাত্র আট বৎসর বয়সে রাজকৃষ্ণের পিতৃবিয়োগে ঘটে তাই স্কুলের লেখাপড়া তার ভাগ্যে জোটেনি। তিনি নিজেই নানা স্থান থেকে বই পত্র যোগাড় করে স্বশিক্ষিত হয়েছিলেন। আর আর্থিক অনটন কাটাতে চাকরির আশায় নিউ বেঙ্গল প্রেসে কাজে যোগ দেন। নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা চালিয়ে আর কাজের মাঝে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। অর্জিত কর্মদক্ষতায় ২১ বৎসর বয়সে ১২ টাকা মাসিক বেতনে আলবার্ট প্রেসের ম্যানেজার হন। [2] এখান থেকেই ১২৮৫ বঙ্গাব্দে মাসিক পত্রিকা'বীণা'প্রকাশ করেন। এই পত্রিকাতেই তার কবিতা নাটক প্রভৃতি নিয়মিত প্রকাশিত হয়। পরে ১২৮৭ বঙ্গাব্দে তিনি 'বীণাযন্ত্র' প্রেস স্থাপন করেন। কিন্তু লোকসানের ফলে প্রেস বিক্রি করে ১২৯৪ বঙ্গাব্দে ঠনঠনিয়ায় 'বীণারঙ্গভূমি' প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে স্বরচিত পৌরাণিক নাটক 'চন্দ্রহাস' এবং অন্যান্যদের নাটক ও প্রহসন অভিনয় করতে থাকেন। এখানেও ঋণের দায়ে ১২৯৭ বঙ্গাব্দে বঙ্গভূমি হস্তান্তরিত হলে ১২৯৮ বঙ্গাব্দে স্টার থিয়েটারের বেতনভোগী নাট্যকার হন। প্রচুর নাটক লিখেছেন তিনি। বিদ্রূপাত্মক কবিতার সাহায্যে বাঙালি জাতির চেতনা সঞ্চারে সাহায্য করেছেন। 'ভূতলে বাঙালি অধম জাতি' কবিতা তারই প্রমাণ। 'ভারতগান' কবিতামালার প্রত্যেকটিতে দেশপ্রেমের কথা বলেছেন। আবার অন্যদিকে অলস, ভীরু, স্বার্থপর জাতি সম্বন্ধে ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন।
সাহিত্যকর্ম
সম্ভবত, রাজকৃষ্ণ রায়ই প্রথম বাঙালি যিনি সাহিত্যকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে 'হরধনুভঙ্গ' নাটকে তিনি সর্বপ্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহার করেন। আবার 'বর্ষার মেঘ' কবিতা ও ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে রচিত 'রাজা বিক্রমাদিত্য' নাটকে গদ্য-কবিতা রচনায় তার প্রয়াস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রাজকৃষ্ণের প্রথম কাব্যগ্রন্থ- 'বঙ্গ ভূষণ'(১৮৭৪) আর শেষ রচনা 'বেনজীর বদ রেসুনীর'(১৮৯৩)।'ভারতকোষ' নামে ভারতবর্ষ সম্পর্কিত প্রথম বিশ্বকোষের সঞ্চালক ছিলেন তিনি এবং শরচ্চন্দ্র দেব। এছাড়াও রামায়ণ ও মহাভারতের পদ্যানুবাদ করেন তিনি। রাজকৃষ্ণ রায় রচিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল -
- 'পতিব্রতা'
- 'নাট্যসম্ভব'
- 'তরণীসেনবধ'
- 'লায়লা মজনু'(১৮৯১) গীতিনাট্য
- 'ঋষ্যশৃঙ্গ'(১৮৯২) গীতিনাট্য
- 'দ্বাদশ গোপাল'(১৮৭৮) পৌরাণিক নাটক
- 'অনলে বিজলী'(১৮৭৮) পৌরাণিক নাটক
- 'লৌহ কারাগার'(১৮৮০) নাটক
- 'হরধনুভঙ্গ'(১৮৮২) নাটক
- 'বামনভিক্ষা'
- 'হিরন্ময়ী'
- 'কিরণময়ী'
- 'আগমনী'
- 'নিভৃত-নিবাস'
- 'অবসর-সরোজিনী'(১৮৭৬)
- 'বেলুনে বাঙালীবিবি' (১৮৯০) সামাজিক প্রহসন
- 'লোভেন্দ্র গবেন্দ্র' (১৮৯০) সামাজিক প্রহসন
- 'দুই শিকারী'(১৮৮২)
- 'অদ্ভুত ডাকাত'(১৮৮৯)
- 'জ্যোর্তিময়ী'(১৮৮৯)
- 'খোশগল্প'(১৮৮০-৮৫) গল্প সংকলন
মৃত্যু
রাজকৃষ্ণ রায় মাত্র ৪৫ বৎসর বয়সে ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১১ই মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্র
- সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত,সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট-২০১৬, পৃষ্ঠা ৬৪১-৬৪২, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ডঃ শিশিরকুমার দাশ " সংসদ সাহিত্য সঙ্গী" -২০০৩