রণেশ দাশগুপ্ত

রণেশ দাশগুপ্ত (১৫ই জানুয়ারি ১৯১২ - ৪ঠা নভেম্বর ১৯৯৭) ছিলেন একজন বাংলাদেশী সাহিত্যিক, সাংবাদিক,[3] সংগ্রামী রাজনৈতিক কর্মী ও দেশের স্মরণীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।[4] বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মরণোত্তর একুশে পদক ভূষিত হন।

রণেশ দাশগুপ্ত
রণেশ দাশগুপ্ত
জন্ম(১৯১২-০১-১৫)১৫ জানুয়ারি ১৯১২
মৃত্যু৪ নভেম্বর ১৯৯৭(1997-11-04) (বয়স ৮৫)
পেশালেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ[2]
পুরস্কারএকুশে পদক

পারিবারিক ইতিহাস

পিতা অপূর্বরত্ন দাশগুপ্ত খ্যাতনামা খেলোয়াড় ছিলেন। কাকা নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্ত ছিলেন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ও পেশায় শিক্ষক। আরেক কাকা ছিলেন গান্ধীবাদী স্বদেশী। পারিবারিক পরিমণ্ডল এমন হওয়ার ফলে ছোটবেলা থেকেই দেশ, পরাধীনতা, বৃটিশবিরোধী রাজনীতি ইত্যাদির সঙ্গে রণেশ দাশগুপ্তের ঘনিষ্ঠ পরিচয় ঘটেছিল এবং পরবর্তী জীবনে এই রাজনৈতিক সচেতনতা তাকে চালনা করেছিল।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা

১৯২৯ সালের রাঁচির (বিহার) স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে বাঁকুড়ার কলেজে ভর্তি হন। এ সময় অনুশীলন দলের সঙ্গে তার যোগাযোগ ঘটে ও তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বাঁকুড়া কলেজ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হলে তিনি কলকাতায় এসে সিটি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু পুলিশের উৎপাতে লেখাপড়ায় বিঘ্ন হওয়ায় বরিশালে এসে ব্রজমোহন কলেজে ভর্তি হন। থাকতেন তার মাতুল সত্যানন্দ দাশের বাড়িতে, ইনি কবি জীবনানন্দ দাশের পিতা। ১৯৩৪ সালে তার পিতা অবসর গ্রহণ করলে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের গাউরদিয়া গ্রামে পৈতৃক বাড়িতে সবাই বসবাস করতে শুরু করেন, পরে ওই গ্রাম পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। তখন সবাই ঢাকা শহরে চলে আসেন এবং সংসার চালানোর জন্য বাধ্য হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে রণেশ দাশগুপ্তকে সাংবাদিকতার চাকরি নিতে হয়।

সাংবাদিক জীবন ও রাজনীতি

বিখ্যাত পত্রিকা ‘সোনার বাংলা’য় সাংবাদিক জীবনের মধ্য দিয়ে তার সাংবাদিক জীবনের শুরু। তার লেখক জীবনের শুরু হয় এসময়। সেকালের ঢাকা সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য বিখ্যাত ছিল। তিনি তরুণ সাহিত্যিক সোমেন চন্দ, অচ্যুত গোম্বামী, কবি কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত প্রমুখের বন্ধুত্ব লাভ করেন ও নানা রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপৃত হন।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর রাজনৈতিক কারণে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। গোটা পাকিস্তানি আমলে তিনি বহুবার কারাবাস করেছেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময়ে তিনি জেলে ছিলেন এবং সেখানেই তিনি নাট্যকার মুনীর চৌধুরীকে ‘কবর’ নাটক লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ‘কবর’ নাটকটি তাদের চেষ্টায় কারাগারে মঞ্চস্থ হতে পেরেছিল। কারামুক্তির পর ১৯৫৫ সালে তিনি ‘সংবাদ’ পত্রিকায় সাংবাদিকতার চাকরি গ্রহণ করেন[5]। এ পত্রিকাকে ব্যাপক অর্থে প্রগতির মুখপত্র করে তুলতে তার অবদান ছিল বিরাট। তার সাহিত্যিক খ্যাতি ঘটে এ সময়েই, ‘উপন্যাসের শিল্পরূপ’ (১৯৫৯) নামে একটি বিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থ রচনার জন্য। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র-জন্মশতবর্ষ পালনের সময়ে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়, ১৯৬২ সালে ছাড়া পান, আবার কারারুদ্ধ করা হয় ১৯৬৫ সালে, ছাড়া পান ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সুবাদে। ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর বিপ্লবী কথাশিল্পী সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, শহীদুল্লাহ কায়সারসহ একঝাঁক তরুণ[6] উদীচী গঠন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন, দেশ স্বাধীন হলে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৫ সালের ১ নভেম্বর কলকাতায় একটি সভায় যোগ দিতে গিয়ে সেখানে থেকে যেতে বাধ্য হন, কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দেশে সামরিক শাসন চালু হয়েছিল। তারপর বাংলাদেশ নানা বিপর্যয় ও উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয়। তিনি আর ফিরে আসেন নি, স্বেচ্ছানির্বাসিতের জীবন বেছে নিয়েছিলেন।

প্রবন্ধ ও অনূদিত গ্রন্থ

তিনি কয়েকটি ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। ইংরেজি ও উর্দুভাষা উত্তমরূপে আয়ত্ত করেছিলেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের অধিকাংশই মননশীল প্রবন্ধ ও অনুবাদের।

প্রবন্ধগ্রন্থ

  • উপন্যাসের শিল্পরূপ (১৩৬৬ বঙ্গাব্দ)
  • শিল্পীর স্বাধীনতার প্রশ্নে (১৩৭৩ বঙ্গাব্দ)
  • ল্যাটিন আমেরিকার মুক্তি সংগ্রাম (১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দ)
  • আলো দিয়ে আলো জ্বালা (১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ)
  • আয়ত দৃষ্টিতে আয়ত রূপ

অনুবাদ

  • ফয়েজ আহমদ ফয়েজের কবিতা (১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দ)

সম্পাদনা

  • জীবনানন্দ দাশের কাব্যসমগ্র

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.