রজার মিলা

আলবার্ট রজার মু মিলার (জন্ম: ২০ মে, ১৯৫২) ইয়াউন্দে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী অবসরপ্রাপ্ত ক্যামেরুনিয়ান ফুটবলার। সচরাচর তিনি রজার মিলা নামেই পরিচিত ব্যক্তিত্ব। মূলতঃ ক্যামেরুন জাতীয় ফুটবল দলে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতেন। ক্যামেরুন দলের পক্ষে তিনটি বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশগ্রহণ করেছেন। প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে অংশগ্রহণকারী ক্যামেরুন দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ফুটবল অঙ্গনে অন্যতম প্রধান তারকা ও প্রথম আফ্রিকান খেলোয়াড়দের একজন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। চমকপ্রদ ক্রীড়াশৈলীর উপস্থাপনা ও অসম্ভব চাপ মোকাবেলা করে দলকে সম্মুখে নিয়ে যেতে সক্ষম ছিলেন তিনি। ১৯৭৬ ও ১৯৯০ সালে তিনি দুইবার বর্ষসেরা আফ্রিকান খেলোয়াড়ের মর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন।

রজার মিলা
২০০৮ সালে রজার মিলা
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম আলবার্ট রজার মু মিলার
জন্ম (1952-05-20) ২০ মে ১৯৫২
জন্ম স্থান ইয়াউন্দে, ক্যামেরুন
উচ্চতা ফুট ৮ ইঞ্চি (১.৭৩ মিটার)
মাঠে অবস্থান স্ট্রাইকার
জ্যেষ্ঠ পর্যায়*
বছর দল ম্যাচ (গোল)
১৯৬৫-১৯৭০ একলেইর ৫৭ (৬)
১৯৭১-১৯৭৪ লিওপার্ডস দৌয়ালা ১১৭ (৮৯)
১৯৭৪-১৯৭৭ তোনেরে ৮৭ (৬৯)
১৯৭৭-১৯৭৯ ভ্যালেন্সিয়েনেস ২৮ (৬)
১৯৭৯-১৯৮০ মোনাকো ১৭ (২)
১৯৮০-১৯৮৪ বাস্তিয়া ১১৩ (৩৫)
১৯৮৪-১৯৮৬ সেন্ট-ইতিনে ৫৯ (৩১)
১৯৮৬-১৯৮৯ মন্টপিলিয়ের ৯৫ (৩৭)
১৯৮৯-১৯৯০ সেন্ট-পিরোইজ
১৯৯০-১৯৯৪ তোনেরে ১১৬ (৮৯)
১৯৯৪-১৯৯৫ পেলিতা জায়া ২৩ (২৩)
১৯৯৫-১৯৯৬ পুত্রা সামারিন্দা ?? (১৮)
মোট ৭১২ (৪০৫)
জাতীয় দল
১৯৭৩-১৯৯৪ ক্যামেরুন ১০২ (২৮)
পরিচালিত দল
২০০১-২০০৭ মন্টপিলিয়ের (কোচ স্টাফ)
২০০৭-২০১১ তোনেরে
২০১১-২০১২ তোনেরে (ফুটবল পরিচালক)
* শুধুমাত্র ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে

ক্লাবভিত্তিক জীবন

ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়াউন্দিতে জন্মগ্রহণকারী মিলার তার পিতার রেললাইনের চাকুরীর পাশাপাশি শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। ১৩ বছর বয়সে দৌয়ালার একলেইর ক্লাবে খেলা অবস্থায় তরুণ মিলা তার দক্ষতা ও কৌশলের মাধ্যমে সকলের নজর কাড়েন। এ ক্লাবে তিনি ১৯৬৫ সালে শৌখিন খেলোয়াড়রূপে চুক্তিবদ্ধ হন। এরপর ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সময়কালে লিওপার্ডস দৌয়ালা দলে যোগ দেন ও ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো তিনি তার দলকে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপ লাভে সহায়তা করেন। ১৯৭২-৭৮ সময়কালে তোনেরে ইয়াউন্দে ক্লাবে চলে যান। ১৯৭৪ সালে তিনি বর্ষসেরা আফ্রিকান ফুটবলারের পুরস্কার পান মিলা। তন্মধ্যে ১৯৭৫ সাল ছিল তার জীবনের স্মরণীয় বছর। ক্যামেরুন কাপের চূড়ান্ত খেলায় জয়সূচক গোলটি ছিল তারই। এছাড়াও, প্রথমবারের মতো আফ্রিকান কাপ উইনার্স কাপ প্রতিযোগিতায় ক্লাবের বিজয়ে অবদান রাখেন।

১৯৭৭ সালে ফ্রান্সে চলে যান ও ১৯৭৭-৭৯ সময়কালে ফরাসি ক্লাব ভ্যালেন্সিনেস দলে খেলেন। কিন্তু এ দুই বছর সংরক্ষিত খেলোয়াড় হিসেবেই তার অবস্থান ছিল। এরপর ১৯৭৯-৮০ মৌসুমে এএস মোনাকো দলে যোগ দিলেও তাকে সংরক্ষিত খেলোয়াড় ও আঘাতজনিত কারণেই মাঠের বাইরে অবস্থান করতে হয়। পরের বছর ১৯৮০ সালে বাস্তিয়া ক্লাবে যোগ দিলেও তিনি নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। ঐ ক্লাবে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত খেলেন তিনি। অবশেষে ১৯৮৪ সালে সেন্ট-এতিনে দলে তারকা খ্যাতি পান। ১৯৮৬-১৯৮৯ সাল পর্যন্ত মন্টপিলিয়ের দলে খেলেছেন। ফরাসি ফুটবল থেকে অবসর নেয়ার পর এ ক্লাবের কোচের দায়িত্ব পালন করেন।

বাস্তিয়ায় থাকা অবস্থায় ১৯৮১ সালে তিনি চমৎকার গোল করে দলকে ফ্রেঞ্চ কাপ জয় সহায়তা করেন। এছাড়াও, মোনাকোতে থাকাকালীন ১৯৮০ সালে ফ্রেঞ্চ কাপ জয়ে অবদান রাখেন। ১৯৯০ সালে তিনি ক্লাবভিত্তিক জীবন থেকে অবসর নেন।

আন্তর্জাতিক ফুটবল

ফ্রান্সে অবস্থানকালীন সময়ে ১৯৭৮ সালে সর্বপ্রথম ক্যামেরুন দলের পক্ষে প্রথম অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮০-এর দশক থেকে শুরু করে ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত ক্যামেরুন জাতীয় ফুটবল দলে খেলেন। ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে অংশ নেন। এ বিশ্বকাপে ক্যামেরুন দল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। পেরুর বিপক্ষে দলের প্রথম খেলায় তিনি একটি গোল করেন। এ প্রতিযোগিতায় তার দল তিনটি খেলাতেই ড্র করেছিল। দুই বছর পর ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত ১৯৮৪ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ক্যামেরুন ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৮৭ সালে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন মিলা।

১৯৯০ সালে ক্যামেরুনের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি পল বিয়া’র কাছ থেকে ফোন পান তিনি। এরফলে অবসর ভেঙ্গে পুনরায় জাতীয় দলে ফিরে আসেন মিলা ও ইতালিতে অনুষ্ঠিত ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলে অদম্য সিংহরূপে চিহ্নিত ক্যামেরুনের পক্ষে অংশ নেন। ৩৮ বছর বয়সে মিলা আন্তর্জাতিক তারকা খ্যাতি পান। এ বয়সে সাধারণতঃ অধিকাংশ ফরোয়ার্ড ফুটবলাররা অবসর নিয়ে থাকেন। তিনি চারটি গোল করেছিলেন যার দুইটিই এসেছিল কলম্বিয়ার বিপক্ষে, অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমে। দ্বিতীয় খেলায় রোমানিয়ার বিপক্ষে দুই গোল করেন। তন্মধ্যে স্মরণীয় ছিল কলম্বিয়ার বিপক্ষে নিজস্ব দ্বিতীয় গোলটি। প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে কলম্বিয়ান গোলরক্ষক রেনে হিগুইতাকে ফাঁকি দিয়ে বলকে জালে প্রবেশ করান তিনি। ২০১০ সালের ফিফা বিশ্বকাপে কোকাকোলার বিজ্ঞাপনচিত্রে তার দ্বিতীয় গোল উৎসবটি দেখানো হয়।[1] এ চিত্রে তাকে জনতার সামনে কোকা-কোলা পান করতে দেখা যায়।

প্রতিটি গোলের পর কর্নার ফ্ল্যাগ এলাকায় দৌঁড়ে দলের অন্যান্যদেরকে নিয়ে গোলের নাঁচ উৎসব করেন যা গোল উৎসব পালনের পথিকৃৎ হয়ে রয়েছেন। এ বিশ্বকাপে তার দল ক্যামেরুন প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে জায়গা পেয়েছিল। পরবর্তীকালে অবশ্য সেনেগাল ২০০২ এবং ঘানা ২০১০ সালে এ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়। কোয়ার্টার-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিলা নিজেকে আরও মেলে ধরেন। খেলার দ্বিতীয়ার্ধ্বে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে গোল করে দলকে সমতায় আনেন ও একেকে’র গোলে দল এগিয়ে থেকেও দূর্ভাগ্যজনকভাবে ৩-২ ব্যবধানে পরাজিত হয় গ্যারি লিনেকারের পেনাল্টিতে।

১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে ৪২ বছর বয়সে মাঠে নামেন তিনি। রাশিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ-পর্বের শেষ খেলায় তাঁর দল ৬-১ ব্যবধানে পরাজিত হলেও ঐ একটিমাত্র গোল করেছিলেন তিনি যা তাঁকে সর্বাপেক্ষা বয়োজ্যেষ্ঠ গোলদাতা ও খেলোয়াড়ের মর্যাদায় ভূষিত করেছে। উল্লেখ্য, এ রেকর্ড তিনি পূর্বেকার বিশ্বকাপেই সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু তাঁর দল গ্রুপ-পর্ব থেকেই বিদায় নেয়। এছাড়াও প্রতিযোগিতার প্রধান তারকাদের একজনরূপে পরিচিতি পান তিনি।

সম্মাননা

আফ্রিকা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে তিনি দূত হিসেবে কাজ করছেন। ১৯৮৪ ও ১৯৮৮ সালে ক্যামেরুনের আফ্রিকান নেশন্স কাপে দুইবার শীর্ষস্থানীয় গোলদাতার ভূমিকায় ছিলেন মিলা। ফিফা’র শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে ২০০৪ সালে খ্যাতিসম্পন্ন ব্রাজিলীয় ফুটবলার পেলে কর্তৃক ঘোষিত সর্বকালের সেরা ১২৫জন জীবিত ফুটবল খেলোয়াড়ের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। মূলতঃ ইতালিতে অনুষ্ঠিত ১৯৯০ সালের ফিফা বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোন আফ্রিকার দলকে কোয়ার্টার-ফাইনালে প্রবেশ করাতে সাহায্য করার জন্যেই তাঁকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[2]

২০০৬ সালে আফ্রিকান ফুটবল সংস্থা কাফ কর্তৃক মিলা গত শতাব্দীর সেরা আফ্রিকান খেলোয়াড়রূপে ঘোষিত হন। এল খাতিবহাসানকে পিছনে ফেলে তিনি এ সম্মাননা পান।

খেলোয়াড়ী পরিসংখ্যান

ক্লাবে অংশগ্রহণ লীগ কাপ মোট
মৌসুমক্লাবলীগ অংশগ্রহণগোল সংখ্যা অংশগ্রহণগোল সংখ্যা অংশগ্রহণগোল সংখ্যা
ক্যামেরুন লীগ ক্যামেরুন কাপ মোট
১৯৬৮-৬৯একলেইর দ্য দৌয়ালা২৮
১৯৬৯-৭০২৯
১৯৭০-৭১লিওপার্ড দ্য দৌয়ালা২৯২৫
১৯৭১-৭২৩০২০
১৯৭২-৭৩২৮১৯
১৯৭৩-৭৪৩০২৫
১৯৭৪-৭৫তোনেরে ইয়াউন্দে২৯২৩
১৯৭৫-৭৬২৮২৬
১৯৭৬-৭৭৩০২০
ফ্রান্স লীগ কুপ দ্য ফ্রান্স মোট
১৯৭৭-৭৮ভ্যালেন্সিনেস১ম বিভাগ
১৯৭৮-৭৯২৮
১৯৭৯-৮০মোনাকো১ম বিভাগ১৭
১৯৮০-৮১Bastia১ম বিভাগ৩০
১৯৮১-৮২২৩
১৯৮২-৮৩২৯১৩
১৯৮৩-৮৪৩১
১৯৮৪-৮৫সেন্ট-ইতেনে২য় বিভাগ৩১২২
১৯৮৫-৮৬২৮
১৯৮৬-৮৭মন্টপিলিয়ের২য় বিভাগ৩৩১৮
১৯৮৭-৮৮১ম বিভাগ৩৩১২
১৯৮৮-৮৯২৯
রিইউনিয়ন লীগ কাপ মোট
১৯৮৯সেন্ট-পিয়েরোজ
১৯৯৯
ক্যামেরুন লীগ ক্যামেরুন কাপ মোট
১৯৯০-৯১তোনেরে ইয়াউন্দে2922
১৯৯১-৯২৩০১৯
১৯৯২-৯৩২৭২৩
১৯৯৩-৯৪৩০২৫
ইন্দোনেশিয়া লীগ পিয়ালা ইন্দোনেশিয়া মোট
১৯৯৪-৯৫পেলিতা জায়াপ্রিমিয়ার ডিভিশন২৩২৩
১৯৯৫-৯৬পুত্রা সামারিন্দাপ্রিমিয়ার ডিভিশন?১৮
মোট ক্যামেরুন ৩৭৭২৫৩
ফ্রান্স ৩১২১১১
রিইউনিয়ন
ইন্দোনেশিয়া ২৩+৪১
সর্বমোট ৭১২+৪০৫

তথ্যসূত্র

  1. Roger Milla World Cup Coca-Cola Commercial
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৭ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০১৪

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.