যোগেন চৌধুরী

যোগেন চৌধুরী বিংশ শতাব্দীর শেষভাবে আবির্ভূত একজন বাঙ্গালী চিত্রকর। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি নাগরিকতা ও অবস্থানসূত্রে ভারতের পশ্চিম বাংলার অধিবাসী। তিনি একজন সমাজ সচেতন শিল্পী হিসেবে প্রসিদ্ধ। সমাজ ও রাজনীতির কদর্য বিষয় নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক চিত্র এঁকে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। রাজনীতিতে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশ গ্রহণ করেছেন; পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভার সদস্য ছিলেন।[1][2]

যোগেন চৌধুরী
যোগেন চৌধুরী
ভারতীয় সংসদ সদস্য (রাজ্যসভা)
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
৩ এপ্রিল, ২০১৪
সংসদীয় এলাকাপশ্চিমবঙ্গ
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯৩৯-০২-১৬)১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯
ডহরপাড়া, ফরিদপুর, ব্রিটিশ ভারত
রাজনৈতিক দলসর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস
পেশাচিত্রশিল্পী
পুরস্কারবঙ্গবিভূষণ (২০১১)
ওয়েবসাইটwww.jogenchowdhury.net

জীবনবৃত্তান্ত

তার পিতা প্রমথনাথ চৌধুরী ফরিদপুরের জমিদার ছিলেন, তার আড়াই হাজার বিঘা জমি ছিল। জন্ম ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার কোটালীপাড়ায়। গ্রামের নাম ডহরপাড়া। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষ বিভাজনের পর ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে তার পরিবার বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। তিনি অবশ্য ১৯৪৮তেই বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে যান। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ঢাকুরিয়ার শহিদনগর কলোনিতে বসবাস করেন। তিনি সরকারি আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফট কলেজ থেকে ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে ব্যাচেলর অব ফাইন আর্টস ডিগ্রী লাভ করেন। সরকারি আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফট কলেজে পড়ার সময় যাদের তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে আছেন মানিকলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, ধীরেন ব্রহ্ম, দেবকুমার রায়চৌধুরী, অপর্ণা রায়, বরেন নিয়োগী, রথীন মৈত্র, সত্যেন ঘোষাল, হরেন দাস, গোপাল ঘোষ ও কিশোরী রায়কে। ডিগ্রী হয়ে গেলে তিনি প্রথমে হাওড়া স্কুলে ও পরে হ্যান্ডলুম বোর্ডে কিছু দিন চাকরি করেন। [2]

তিনি ফরাসি সরকারের বৃত্তিতে ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে প্যারিসে গমন করেন এবং চিত্রকলা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। প্যারিসের উইলিয়াম হ্যাটারের আতেলিয়ের ১৭ ও একোল নাসিওনাল সুপেরিয়র দে বোজ আর কাজ করেন। অতঃপর তিন বছর ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, মিসরসহ বিভিন্ন জাদুঘর ও গ্যালারি পরিদর্শন করেন। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে দেশে ফিরে চেন্নাইয়ে কিছুদিন তিনি টেক্সটাইল ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে কিউরেটর হিসাবে কাজ শুরু করেন। শান্তিনিকেতন কলাভবনের অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করেছেন।[3]

জীবন দর্শন

তার বড় ভাই কলকাতার বামপন্থী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। সেই সূত্রে বিভিন্ন বামপন্থী শিল্পী কর্ম ও দর্শন এবং সাহিত্যিকের রচনার সঙ্গে যোগেন চৌধুরীর পরিচয় ঘটে। তিনি মানব মুক্তিতে বিশ্বাস করেন। জীবনের অন্ধকার ও যন্ত্রণার দিক তার ছবিতে স্থান লাভ করেছে।

চিত্রকর্ম

তার পিতা ফরিদপুরের জমিদার ছিলেন, তবে ছবি আঁকতে ও মূর্তি গড়তে ভালবাসতেন। মা-ও আঁকতেন। পিতার জামিদারী সংক্রান্ত কাগজপত্রের পৃষ্ঠদেশে আঁকাবুকির মধ্য দিয়ে শৈশবেই যোগেন চৌধুরীর চিত্রাংকণে হাতেখড়ি। তার মা আঁকিয়ে ছিলেন, তিনিও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। কলকাতার বাসায় দেয়ালে একটি ময়ূরের ছবি এঁকেচিলেন তিনি। এটিই তার জীবনের প্রথম চিত্রকর্ম। [1] কুমোর যখন দুর্গা বানাতে আসত, তখন তিনি মনোযোগ দিয়ে দেখতেন। খড়, তুষ ইত্যাদি কীভাবে কুমোরের দক্ষ হাতে মুখ, হাত, আঙুল হয়ে যেত সেগুলো তিনি মনোযোগ দিয়ে দেখতেন। মাটিতে গড়া মূর্তি রঙীন করার বিষয়টিও দেখতেন মনোযোগ দিয়ে। এভাবেই শৈশবে তার মধ্যে শিল্পবোধ জাগ্রত হয়। শৈশবের স্মৃতি তার চিত্রকর্মে প্রতিফলিত। প্যারিসে অধ্যয়নের অভিজ্ঞতা তার চিত্রে আধুনিকতা নিয়ে আসে। জলরং, প্যাস্টেল, তেলরং বা শুধু কালি – এসব বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি কাজ করে থাকেন। তার প্রথম দিককার চিত্রকর্মে পিকাসোর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। সার্বিকভাবে ভারতীয় শিল্প আন্দোলন ও ইয়োরোপীয় শিল্প আন্দোলনের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তার চিত্রাংকণ রীতিতে।[3] ১৯৪৭-এর ভারত বিভাগের পর কলকাতার শরণার্থী শিবিরে দেখা উদ্বাস্তু নারী-পুরুষের বহু প্রতিকৃতি তিনি অঙ্কন করেন। এই সব চবিতে বলিরেখা বোঝাতে যে হ্যাচিং ও ক্রস-হ্যাচিং-এর ব্যবহার আরম্ভ করেন, সেইগুলি পরবর্তীকালে তার রচনাশৈলীর অন্যতম হয়ে দাঁড়ায়।[2]

স্বীকৃতি ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. শিকড়ের সন্ধানে যোগেন চৌধুরী
  2. "দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ"। ২ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬
  3. যোগেন চৌধুরী মানবমুক্তিতে বিশ্বাসী
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.