যুক্তিবিজ্ঞান

যুক্তিবিজ্ঞান (গ্রিক λογικήLog baবা লোগোস,ইংরেজি Logic) দুটি অর্থ আছে: প্রথমত, এতে কিছু কার্যকলাপ বৈধ যুক্তি ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে; দ্বিতীয়ত, এটি যুক্তি আদর্শ গবেষণা বা তার একটি শাখার নাম, যেখানে ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা সম্পর্কে যুক্তিসম্মত আলোচনা বা যুক্তিতর্ক করা হয়। আধুনিক অর্থে- দর্শন, গণিত ও কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্টরূপে যুক্তিবিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যগুলি উপস্থিত রয়েছে।

অ্যারিস্টটল

যুক্তিবিজ্ঞান ভারতের বেশ কয়েকটি প্রাচীন সভ্যতাগুলির মধ্যে চর্চিত হয়, চীন, পারস্য এবং গ্রীস। পশ্চিমের দেশগুলোতে যুক্তিবিদ্যাকে একটি প্রথাগত শৃঙ্খলা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ও দর্শন এর মধ্যে এটি একটি মৌলিক জায়গা দিয়েছেন এরিস্টটল। যুক্তি গবেষণা শাস্ত্রীয় ট্রিভিয়ামের অংশ ছিল। পূর্বের দেশগুলোতে, যুক্তিবিজ্ঞান বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মাবলম্বিদের দ্বারা উন্নত হয়েছিল। যুক্তিবিজ্ঞান প্রায়ই তিনটি অংশে- আবেশক যুক্তি, মনন যুক্তি, এবং ন্যায়িক যুক্তি- বিভক্ত করা হয়।

যুক্তিবিজ্ঞানের গবেষণা

যৌক্তিক রুপ বা বিন্যাস হলো যুক্তিবিজ্ঞানের কেন্দ্র। কোনো আলোচনা বা যুক্তিতর্কের বৈধতা বা দৃঢ়তা নির্ধারিত হয় এর যৌক্তিক বিন্যাস এর উপর নির্ভর করে, এর বিষয়বস্তুর উপর নয়। পরম্পরাগত এরিস্টটলিয় আনুমানিক যুক্তিবিজ্ঞান ও আধুনিক প্রতীকমূলক যুক্তিবিজ্ঞান হলো প্রথাগত যুক্তির উদাহরণ। প্রথাগত যুক্তি সাধারণত বিষয়ের মূলে এবং কেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়। এটা পাঠকের বই ও লেখকের কলম পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।

অপ্রথাগত যুক্তিবিজ্ঞান হলো সাধারণ ভাষায় করা যুক্তিতর্কের গবেষণা। সামান্য বিষয়ে যেই যুক্তিতর্ক করা হয় তার চর্চা করা অপ্রথাগত যুক্তিবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এটি মূলত আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যুক্তিতর্ক ও আলোচনায় কোন কিছু প্রমাণ বা অপ্রমাণ করার কাজেও ব্যাবহার করে থাকি। প্লেটো-র কিছু উদ্ধৃতি এই যুক্তিবিজ্ঞানের উপযুক্ত উদাহরণ।

যৌক্তিক রুপ বা বিন্যাস

যুক্তি সাধারণত আনুষ্ঠানিক রুপে বিবেচিত হয়, যখন এটি বিশ্লেষিত ও প্রতিনিধিত্ব করে কোনো বৈধ আলোচনার। একটি আলোচনার প্রকৃতি প্রদর্শিত হয় তখনই, যখন এর বাক্যগুলো কোনো যৌক্তিক ভাষার প্রথাগত ব্যাকরণ ও প্রকৃতি মেনে চলে, যেন আলোচনাটির বিষয়বস্তু সাধারণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে। কেউ যদি "যৌক্তিক বিন্যাস"-এর ধারণাটিকে দার্শনিকতায় ভরপুর মনে করে অর্থাৎ এই ধারনাটি যদি তার জন্য জটিল হয় তবে সেই ক্ষেত্রে, সহজভাবে "বিন্যাস" করা হলো কোন বাক্যকে সরাসরি 'যুক্তির ভাষায়' অনুবাদ করা।

এটিই কোন আলোচনার যৌক্তিক রূপ। এটি প্রয়োজনীয় কারণ সাধারণত যে কোন ভাষায় ব্যাক্ত একটি বাক্য নানান বিভিন্নতা ও জটিলতা প্রদর্শন করে থাকে, যা তাদের অর্থের পরিবর্তন ঘটায় এবং বাক্যটি যেই অর্থ প্রকাশ করতে ব্যাক্ত হয়েছে তার চেয়ে অবাস্তব রুপে পরিনত হয়। বাক্যকে যৌক্তিক রুপে বিবেচনা করার জন্য কিছু ব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্য উপেক্ষা করা প্রয়োজন- যেসব শব্দ যুক্তির সাথে সম্পৃক্ত নয় (যেমন, একটি লাতিন আলোচনায় লিঙ্গ ও বিশেষ্য-বিশেষন অপ্রয়োজনীয়) তাদের উপেক্ষা করা, কিছু সংযুক্তি শব্দ প্রতিস্থাপন করা (যেমন, "কিন্তু" অযৌক্তিক। এর পরিবর্তে "এবং" ব্যবহার করা) এবং সাধারণত যেসব অভিব্যক্তি (সকল বা সর্বজনীন ইত্যাদি)এর পরিবর্তে কিছু যৌক্তিক অভিব্যক্তি (কোন, প্রতি ইত্যাদি) বা দ্ব্যর্থক শব্দ ব্যবহার করা।

ইতিহাস

লজিক গ্রীক শব্দ লোগোস থেকে এসেছে, যার অর্থ "শব্দ" বা "যা বলা হয়", তবে এর অর্থ আদতে "চিন্তা" বা "কারণ"।[1][2] পশ্চিমা বিশ্বে, যুক্তি প্রথমে অ্যারিস্টটল বিকাশ করেছিলেন, যিনি বিষয়টিকে 'বিশ্লেষণ' বলে অভিহিত করেছিলেন। অ্যারিস্টটোলিয়ান যুক্তি বিজ্ঞান ও গণিতে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে এবং ১৯ শতকের গোড়ার দিকে পশ্চিমে বিস্তৃতভাবে ব্যবহৃত হয়। অ্যারিস্টটলের লজিক সিস্টেমটি অনুমানমূলক সিলোজিস্ম, টেম্পোরাল মডেল যুক্তি এবং ইন্ডাকটিভ যুক্তি - পাশাপাশি প্রভাবশালী শব্দভাণ্ডার যেমন বিভিন্ন টার্ম, প্রেডিক্টেবল, সিলোজিস্ম এবং প্রোপোজিশনের অগ্রদূত ছিল। স্টোয়িক যুক্তিবিজ্ঞান এর বিপরীতে ছিল।

ভারতে মেধাতিথি খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে আনভিকসিকি যুক্তি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Pépin, Jean (২০০৪)। "Logos"। Encyclopedia of Religionআইএসবিএন 978-0-02-865733-2। ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০২১
  2. "logic"etymonline.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০২১
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.