যমুনা টিভি
যমুনা টিভি বাংলাদেশের একটি সংবাদভিত্তিক বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল। ৫ এপ্রিল ২০১৪[1] তারিখে চ্যানেলটি পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচারে আসে। ১৭ই মার্চ ২০১৪ সালে টেলিভিশন চ্যানেলটি দ্বিতীয়বারের মত পরীক্ষামূলক সম্প্রচারে আসে। সংবাদ ও তথ্যের জন্য ২০২০ সালের বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ সংবাদভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেলের তালিকায় নাম আসে যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলের।[2][3] নিয়মিত সম্প্রচার ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইউটিউব ও ওয়েব পোর্টাল হিসেবে তথ্য ও সংবাদ প্রচার করছে গণমাধ্যমটি।
যমুনা টিভি | |
---|---|
উদ্বোধন | ৫ এপ্রিল ২০১৪ |
মালিকানা | যমুনা গ্রুপ |
চিত্রের বিন্যাস | এমপিইজি-২ |
স্লোগান | সামনে থাকে, সামনে রাখে |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
প্রচারের স্থান | জাতীয় |
প্রধান কার্যালয় | যমুনা ফিউচার পার্ক, ঢাকা, বাংলাদেশ |
ওয়েবসাইট | www |
স্ট্রিমিং মিডিয়া | |
https://jamuna.tv/live | |
www |
ইতিহাস
২০০২ সালে সম্প্রচারের লাইসেন্স পায় যমুনা টেলিভিশন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সরকারি অনুমোদন পায় যমুনা টেলিভিশন। পরীক্ষামূলক সম্প্রচারে থাকা যমুনা টেলিভিশনকে ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর ফ্রিকোয়েন্সি ও যন্ত্রপাতি আমদানির অনুমোদন বাতিল সংক্রান্ত চিঠি দেয় বিটিআরসি। [4]২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর যমুনা টেলিভিশনের পরীক্ষামূলক সম্প্রচারও বন্ধ করে দেয়া হয়।[5] ১৭ই মার্চ ২০১৪ সালে টেলিভিশন চ্যানেলটি দ্বিতীয়বারের মত পরীক্ষামূলক সম্প্রচারে আসে।২০১৪ সালের ৫ এপ্রিল সংবাদভিত্তিক চ্যানেলটি পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচারে আসে।[6] আলোচিত সাংবাদিক সাইমন ড্রিং যমুনা টেলিভিশনের উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন।
প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো
বাংলাদেশের শিল্পগোষ্ঠী যমুনা গ্রুপের সহযোগি প্রতিষ্ঠান যমুনা টেলিভিশন। গণমাধ্যমটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে কাজ করছে। টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফাহিম আহমেদ।[7] এর আগে তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বার্তা সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে সংবাদমাধ্যমটিতে শতাধিক পেশাদার সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী কাজ করছেন। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশে সংবাদদাতা আছে গণমাধ্যমটির। ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কের সদর দফতর থেকে পরিচালিত গণমাধ্যমটির ৩টি ব্যুরো অফিস আছে।
সংযুক্তি
সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য গণমাধ্যমটির সঙ্গে বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন, ডয়েচেভেলেসহ নানান সংস্থার সঙ্গে সংযুক্ত গণমাধ্যমটি। এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভিন্ন প্রশিক্ষণমুলক কাজে যুক্ত টেলিভিশনটির সাংবাদিকেরা।
প্রচারিত সংবাদ ও অনুষ্ঠানমালা
- ইনভেস্টিগেশন ৩৬০° ডিগ্রি: অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান। ২০২৩ সাল পর্যন্ত অনুসন্ধান বিষয়ক নানান পুরস্কার অর্জন করে ইনভেস্টিগেশন ৩৬০° ডিগ্রিতে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ।
- ক্রাইম সিন: বিভিন্ন অপরাধমুলক ঘটনার বিশ্লেষণভিত্তিক অনুষ্ঠান।
- আই-ডেস্ক: আন্তর্জাতিক সংবাদভিত্তিক অনুষ্ঠান।
- সুন্দরের স্বপ্নে: লাইফস্টাইল বিষয়ক অনুষ্ঠান।
- সকালের বাংলাদেশ: বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নানান বিষয়কে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপনের অনুষ্ঠান।
- শোবিজ: বিনোদন দুনিয়ার নানান সংবাদভিত্তিক অনুষ্ঠান।
- টেকট্রেক: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক অনুষ্ঠান।
- চলতে চলতে: সমসমায়িক রাজনীতিতে আলোচিত ব্যক্তিত্বদের নিয়ে ওপেন ফোরাম অনুষ্ঠান।
- ভয়েস: বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণদের ইতিহাস-সংস্কৃতি ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ভাবনা।
অতীতে সম্প্রচারিত সংবাদ ও অনুষ্ঠানমালা
- কেন?: নাগরিক জীবনের নানান সংকট নিয়ে অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান।
- মাই রিপোর্ট: নাগরিক সাংবাদিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপিত অনুষ্ঠান।
- চেক-ইন-জেএফপি: শহরবাসীর বিনোদনের নানান বিষয়কে উপজীব্য করে অনুষ্ঠান।
- সামি কোথায়?: ভ্রমণবিষয়ক অনুষ্ঠান।
- স্বদেশী: দেশীয় ও লোকজ সংস্কৃতিকে উপস্থাপনের অনুষ্ঠান।
- ২৪ ঘণ্টা: আলোচিত বিষয়ে টকশো ধরণের অনুষ্ঠান।
- প্রাণের টানে: আলোচিত ব্যক্তিদের জীবনীমুলক অনুষ্ঠান।
- প্রশ্নবোধক: সাম্প্রতিক নানান বিষয়ে তরুণদের ভাবনাভিত্তিক অনুষ্ঠান।
বিতর্ক ও সমালোচনা
যমুনা টেলিভিশন স্টেশনটি ২০০২ সালে সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স পায়। সেই লাইসেন্স আবার ২০০১-২০০৬ সালের বিএনপি সরকার বাতিল করে দেয়। পরে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর লাইসেন্স ফিরে পেয়ে কাজ শুরু হয়। পরীক্ষামূলক সম্প্রচার অব্যাহত রাখায় বিটিআরসি ফ্রিকোয়েন্সি বাতিল করে। ২০১০ সালে যমুনা টিভির সম্প্রচার বন্ধের সরকারি আদেশ বৈধ বলে হাইকোর্ট রায় দেন। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পরীক্ষামুলক সম্প্রচারের পর বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ২০০৯ সালের উনিশে নভেম্বর যমুনা টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়।[8] ২০১৫ সালে টেলিযোগাযোগ কোম্পানি গ্রামীণফোন গণমাধ্যমটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। ২০১৫ সালে ‘ইনভেস্টিগেশন ৩৬০৹’ নামক অনুষ্ঠানের ‘জলবায়ু তহবিলে নয়ছয়’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রচারের জন্য তৎকালীন পরিবেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদের মানহানি হয় বলে অভিযোগ তোলা হয়। রাঙ্গুনিয়ার শেখ রাসেল এভিয়ারি পার্ক নির্মাণে ৩৫ কোটি টাকা জলবায়ু তহবিল থেকে ব্যয় করা হয়, সেই অনুসন্ধান প্রতিবেদনের জন্য ৫০১ ও ৫০২ ধারায় গণ মাধ্যমের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হয়। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ঢাকার চকবাজারে দেবীদাস লেনে অবৈধ পলিথিন ব্যাগ তৈরির অবৈধ কারখানা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে হামলার শিকার হন যমুনার সিনিয়র রিপোর্টার শাকিল হাসান ও ভিডিওজার্নালিস্ট শাহীন আলম। সাংবাদিকের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়।[9] [10]২০১৮ সালে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ মামলা দায়ের করে। রবি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মামলা করে।[11] ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে যমুনা টেলিভিশনের ক্যাবল সম্প্রচার বন্ধ করার ঘটনা জানা যায়।[12] ২০১৯ সালের শেষ দিকে যমুনা টিভিতে বাংলাদেশের ইসলামি পণ্ডিত আজিজুল হককে জঙ্গিনেতা হিসেবে প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে সমালোচনার মুখে যমুনা টিভি কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চায়।[13][14] ২০২১ সালে যমুনা টিভির বিরুদ্ধে ৬৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করে বিডি থাই কসমো লিমিটেড। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ভাগ্নে রায়ান হামিদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বিডি থাই কসমো লিমিটেড।[15] ২০২১ সালের ৩ মে উপসচিব মাহবুব হাসান শাহীনের দুর্নীতি শিরোনামে প্রচারিত প্রতিবেদনের জন্য যমুনা টিভির সাংবাদিক নূরনবী সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা করা হয়, যা পরে স্থগিত করে হাইকোর্ট। রিপোর্টের বিষয় ছিল, উপসচিব মাহবুব হাসান শাহীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী, তিনি দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে সরকারি চাকরি করতে পারবেন না। তিনি বাংলাদেশ থেকে অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কিনেছেন।
প্রাতিষ্ঠানিক অর্জন সমূহ
- মিডিয়া ফেলোশিপ পুরস্কার ২০২২ (অর্জনকারী: সাংবাদিক ফারহানা ন্যান্সি)
- ‘আইনি বিপদগ্রস্তদের মঙ্গলার্থে অবদান’ ক্যাটাগরিতে ‘বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যালায়েন্স পুরস্কার-২০১৯’ (অর্জনকারী: স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ইব্রাহিম খলিল)
- দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার-২০২২ টেলিভিশন (প্রতিবেদন) (অর্জনকারী: অনুসন্ধানী সেলের সম্পাদক অপূর্ব আলাউদ্দিন)
- অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) ইআরএফ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড (অর্জনকারী: আলমগীর হোসাইন)
- টিআইবি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার (২০১৬) (অর্জনকারী:`জাহাজে আদার ব্যাপারী` শিরোনামে প্রচারিত ২ পর্বের প্রামান্য অনুষ্ঠানের জন্য আলাউদ্দিন আহমেদ এবং খাজনা খারিজ` শিরনামে ভূমি অফিসের দুর্নীতি নিয়ে জি এম ফায়সাল)
- বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মাদক বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য পুরস্কার (অর্জন: সাজ্জাদ পারভেজ)
তথ্যসূত্র
- "About"।
- "বিশ্বের শীর্ষ সংবাদ ভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেলের তালিকায় যমুনা টিভি"। bjcnews.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৭।
- "ইউটিউবে বিশ্বের সেরা পাঁচে যমুনা টেলিভিশন"। দেশ রূপান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৭।
- "যমুনা টিভি বন্ধের সিদ্ধান্ত বৈধ"। BBC News বাংলা। ২০১০-০৫-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৭।
- "আপিলের অনুমতি পেয়েছে বন্ধ করে দেয়া যমুনা টেলিভিশন"। The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৭।
- "সপ্তম বর্ষে যমুনা টিভি"। Barta24 (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৭।
- Reporter, Staff। "যমুনা টিভির সিইও হলেন ফাহিম আহমেদ"। dhakapost.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৭।
- "যমুনা টিভি বন্ধের সিদ্ধান্ত বৈধ"। BBC News বাংলা। ২০১০-০৫-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৭।
- Television, Jamuna। "যমুনা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার শাকিলকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় ২০ সেপ্টেম্বর"। Jamuna Television (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৭।
- প্রতিবেদক, নিজস্ব। "যমুনা টিভির সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় রায় ২০ সেপ্টেম্বর"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৭।
- ডটকম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর। "অনাপত্তিপত্র না থাকার যুক্তিতে যমুনা টিভির সমপ্রচার বন্ধ"। bdnews24। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৭।
- "'যমুনা টিভি বন্ধ এবং খুলনায় সাংবাদিক গ্রেফতারের ঘটনা বুঝিয়ে দেয় নির্বাচন কেমন হয়েছে'"। Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৭।
- "শায়খুল হাদীসের বিরুদ্ধে এ কেমন অপপ্রচার!"। দৈনিক নয়া দিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- "ক্ষমা চাইলো যমুনা টিভি! -"। AmaderProtidin.com। ২০১৯-১২-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- "যমুনা টিভির বিরুদ্ধে ৬৫ কোটি টাকার মামলা"। Newsbangla24। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৭।