মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন খান

মো. আলতাফ হোসেন খান (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৮০) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [1][2]

মো. আলতাফ হোসেন খান
মৃত্যু১৯৮০
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

মো. আলতাফ হোসেন খানের পৈতৃক বাড়ি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম সুলতান খান এবং মায়ের নাম ফাতেমা বেগম। তার স্ত্রীর নাম সরবানু বেগম। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে।

কর্মজীবন

মো. আলতাফ হোসেন চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা (এ) কোম্পানিতে। রেজিমেন্টর অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। মার্চ মাসে সম্ভাব্য ভারতীয় আগ্রাসনের কথা বলে তাদের সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন করা হয়। তিনি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে মোতায়েন ছিলেন। তাদের কোম্পানির অধিনায়ক ছিলেন অবাঙালি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তার কোম্পানির সিনিয়র জেসিওর নেতৃত্বে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। পার্বতীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুখোমুখি যুদ্ধ করেন। পার্বতীপুরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে তারা প্রথমে অ্যাম্বুশ করেন। এরপর কয়েক ঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধ হয়। তাদের আক্রমণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি। কুড়িগ্রাম জেলার অন্তর্গত ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে চিলমারী। চিলমারীর অপর প্রান্তে রৌমারী। ১৯৭১ সালে রৌমারী ছিল মুক্ত এলাকা। রৌমারী থেকে মুক্তিযোদ্ধারা চিলমারী হয়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করত। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে চিলমারীর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এ এলাকায় সার্বক্ষণিক নজর রাখার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী তখন চিলমারীতে শক্ত এক প্রতিরক্ষা তৈরি করে। রাতের অন্ধকারে মো. আলতাফ হোসেন খানসহ মুক্তিযোদ্ধারা নিঃশব্দে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। তাদের অবস্থানের অদূরে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা। তারা কয়েকটি দল ও উপদলে বিভক্ত ছিলেন। একটি উপদলের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। নির্ধারিত সময়ে মো. আলতাফ হোসেন খান নিজ দলের সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর। একযোগে গর্জে ওঠে তাদের সবার অস্ত্র। পাকিস্তানিদের দিক থেকেও একই সময়ে পাল্টা গোলাগুলি শুরু হয়। তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। মুহূর্তে ঘটে প্রলয় কাণ্ড। গোলাগুলি আর আগুনের শিখায় চারদিক আকাশ রক্তিম হয়ে পড়ে। শেষ রাত থেকে সারা দিন যুদ্ধ হয়। পরদিনও। কয়েক দিন একটানা যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। কয়েক দিন ধরে চলা এ যুদ্ধে পাকিস্তানিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তারা পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। প্রায় ১০০ জন পাকিস্তানি সেনা, ইপিসিএএফ এবং তাদের স্থানীয় সহযোগী বাঙালি-অবাঙালি পুলিশ ও রাজাকার নিহত হয়। এ যুদ্ধে মো. আলতাফ হোসেন খান দলনেতা হিসেবে যথেষ্ট সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। তার দুঃসাহসিকতায় সহযোদ্ধারা অনুপ্রাণিত হন। তারাও পাকিস্তানিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতে সক্ষম হন। তাদের দুঃসাহসিক আক্রমণে পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষা ভেঙে পড়ে। তাদের অস্ত্রের গুলিতে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা, ইপিসিএএফ ও রাজাকার নিহত হয়। প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল ৩২ বালুচ রেজিমেন্ট, ইপিসিএএফ, রাজাকার ও পুলিশ। সব মিলে এক ব্যাটালিয়ন শক্তি। তাদের মূল অবস্থানগুলো ছিল হাইস্কুল, রেলস্টেশন ও ওয়াপদা অফিসে।

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২০-১০-২০১২
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।

পাদটীকা

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.