মোহাম্মদ আবদুল মমিন
শহীদ মোহাম্মদ আবদুল মমিন (জন্ম: ১ জুন, ১৯৩০ - মৃত্যু: ৩০ জানুয়ারি, ১৯৭২) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[1]
মোহাম্মদ আবদুল মমিন | |
---|---|
জন্ম | ১ জুন, ১৯৩০ |
মৃত্যু | ৩০ জানুয়ারি, ১৯৭২ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মো. আবদুল মমিনের জন্ম চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার কামরাঙ্গা গ্রামে। তার বাবার নাম হায়দার আলী মুন্সি এবং মায়ের নাম নোয়াবজান বিবি। তার স্ত্রীর নাম মোসা. আমেনা খাতুন। তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে।[2]
কর্মজীবন
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি করতেন মো. আবদুল মমিন। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল ঢাকার অদূরে জয়দেবপুরে। মো. আবদুল মমিন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কে এম সফিউল্লাহর (বীর উত্তম) নেতৃত্বে যুদ্ধে যোগ দেন। জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহে সমবেত হয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধযুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে অংশ নেন। পরে যুদ্ধ করেন ৩ নম্বর সেক্টর ও ‘এস’ ফোর্সের অধীনে।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে আখাউড়া যুদ্ধে মো. আবদুল মমিন যথেষ্ট সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। ৩০ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আখাউড়ায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল অংশ নেয়। মো. আবদুল মমিনের দল আখাউড়ার উত্তর দিকে সিঙ্গারবিল হয়ে অগ্রসর হয়। সিঙ্গারবিলের আশপাশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বড় রকমের সংঘর্ষ হয়। মুক্তিযোদ্ধারা সিঙ্গারবিল জেটি ও পার্শ্ববর্তী রাজাপুর দখল করেন। এরপর তারা আজমপুর রেলস্টেশনে আক্রমণ চালান। মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দল ১ ডিসেম্বর দুপুরে আজমপুর রেলস্টেশন দখল করেছিল; কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ করে কয়েক ঘণ্টা পর স্টেশনটি পুনর্দখল করে। তখন ‘এস’ ফোর্সের অধিনায়ক কে এম সফিউল্লাহ আজমপুর রেলস্টেশন পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দেন। এরপর মো. আবদুল মমিনের দল সেখানে আক্রমণ চালায়। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। বাংলাদেশ স্বাধীন; কিন্তু ঢাকা শহরের একটি অংশ (মিরপুর) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী অবাঙালিদের (বিহারি) দখলে থেকে গেল। তারপর কেটে গেল আরও প্রায় দেড় মাস। অবাঙালিরা আত্মসমর্পণ করল না। এরপর সরকার নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের নির্দেশ দিল সেখানে অভিযান চালানোর। মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে আক্রমণ চালানোর আগে অবাঙালিদের আবার নির্দেশ দিলেন আত্মসমর্পণ করতে। তারা আত্মসমর্পণ না করে বরং আকস্মিক আক্রমণ চালাল মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর। শুরু হয়ে গেল ভয়াবহ যুদ্ধ। রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারাই বিজয়ী হন; কিন্তু অবাঙালিদের হাতে শহীদ হলেন লেফটেন্যান্ট সেলিম, মো. আবদুল মমিনসহ প্রায় দেড়শ জন মুক্তিযোদ্ধা। তাদের মধ্যে ছিলেন মো. আবদুল মমিন। মিরপুর ছিল অবাঙালি অধ্যুষিত এলাকা। ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে মিত্রবাহিনীর ১০ বিহার রেজিমেন্ট মিরপুরে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার কাছে নিয়োজিত থাকে। সেখানে বিপুলসংখ্যক অস্ত্রধারী অবাঙালি আত্মগোপন করেছিল। ৩০ জানুয়ারি থেকে মুক্তিযোদ্ধারা (দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পুলিশ) মিরপুরে অভিযান শুরু করে। তারা সেখানে যাওয়া মাত্র প্রচণ্ড আক্রমণের সম্মুখীন হন। [3]
পুরস্কার ও সম্মাননা
তথ্যসূত্র
- দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১১-০২-২০১২
- একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৩৩৩। আইএসবিএন 9789843351449।
- একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ১৭১। আইএসবিএন 9789849025375।
পাদটীকা
- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।