মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন
মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন (জন্ম: ৫ মে, ১৯৪৭ - মৃত্যু: ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। [1]
মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন | |
---|---|
জন্ম | ৫ মে, ১৯৪৭ |
মৃত্যু | ১৯৭১ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর উত্তম |
- একই নামের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের জন্য দেখুন আনোয়ার হোসেন।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মো. আনোয়ার হোসেনের বাড়ি চাঁদপুর জেলার,শাহরাস্তি উপজেলার সোনাপুর গ্রামে,শাহরাস্তি পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড। তিনি ১৯৪৭ সালের ৫ মে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তার বাবার নাম আবদুল হক এবং মায়ের নাম নূরজাহান বেগম।
কর্মজীবন
১৯৭১ সালের মার্চে মো. আনোয়ার হোসেন প্রশিক্ষণে ছিলেন। প্রশিক্ষণে থাকার কারণে দেশের পরিস্থিতির খবর সময়মতো পেতেন না। ১৪ মার্চ তার আত্মীয় ওয়াকার হাসান (বীর প্রতীক) গিয়েছিলেন যশোরে। তখন তিনি প্রশিক্ষণ থেকে এক দিনের ছুটি নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন এবং দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নেন। ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছা ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি করার। পাকিস্তান শাসনামলে সেনাবাহিনীতে অফিসার্স কোর্সে বাঙালি কেউ যোগ দিলেই তাকে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে দেওয়া হবে, নিশ্চয়তা ছিল না। কোর্সে যাঁরা সবচেয়ে ভালো করতেন, তাদেরই ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে নিয়োগ পেতেন। আনোয়ার হোসেন এইচএসসি পাস করে ১৯৬৯ সালে যোগ দেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৩ অফিসার্স শর্ট কোর্সে। এতে সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে কমিশন পান। ১৯৭০ সালে তাকে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। এ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ছিলেন বাঙালি রেজাউল জলিল। অফিসারদের মধ্যে হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ (বীর বিক্রম) ও মো. আনোয়ার হোসেন ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন পাকিস্তানি। ১৯৭১ সালের মার্চে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হতে থাকলে তাদের রেডিও শোনা নিষিদ্ধ করা হয়। এ সময় আবার এই ব্যাটালিয়নের অর্ধেক যশোরের প্রত্যন্ত এলাকায় প্রশিক্ষণে, অর্ধেক ছুটিতে ছিলেন। ২৫ মার্চ মো. আনোয়ার হোসেনও ছিলেন প্রশিক্ষণস্থলে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের খবর তারা সময়মতো পাননি। ২৮ বা ২৯ মার্চ অধিনায়ক রেজাউল করিম নির্দেশ দেন তাদের অবিলম্বে সেনানিবাসে ফেরার। সেদিনই তারা সেনানিবাসে আসেন। সেনানিবাসে আসার পর রেজাউল করিম সবাইকে অস্ত্র জমা দিতে বলেন। তার নির্দেশে তারা অনিচ্ছা সত্ত্বেও অস্ত্র জমা দেন। সেদিন তারা বেশির ভাগ ছিলেন ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত। এ জন্য তারা রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন। গভীর রাতে যশোর সেনানিবাসে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বালুচ ও ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্ট তাদের আক্রমণ করে। নিরস্ত্র সৈনিকদের কয়েকজন ঘুমন্ত অবস্থাতেই শহীদ হন। বেঁচে যাওয়া সৈনিকেরা অস্ত্রাগারের তালা ভেঙে অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ শুরু করেন। সৈনিকেরা অধিনায়ক রেজাউল জলিলকে অনুরোধ জানান বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়ার। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। অন্যদিকে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও আনোয়ার হোসেন সৈনিকদের সঙ্গে স্বেচ্ছায় একাত্মতা প্রকাশ করেন। তাদের নেতৃত্বে সৈনিকেরা বীরত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানিদের মোকাবিলা করতে থাকেন। হাফিজ উদ্দিন ও আনোয়ার হোসেন এই অসম যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব ও সাহস প্রদর্শন করেন। তাদের সাহস ও বীরত্বে প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরও মনোবল বেড়ে যায়। কয়েক ঘণ্টা ধরে যুদ্ধ চলে। এর মধ্যে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অনেকে শহীদ ও অনেকে আহত হন। একপর্যায়ে তাদের গোলাগুলিও কমে আসতে থাকে। এ অবস্থায় হাফিজ ও আনোয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সেনানিবাস এলাকা ছেড়ে চৌগাছায় একত্র হওয়ার। এরপর তারা ফায়ার অ্যান্ড মুভ পদ্ধতিতে খোলা মাঠ দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকেন। আনোয়ারও সেভাবে পশ্চিম দিকের খোলা মাঠ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় হঠাৎ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেশিনগানে ছোড়া গুলি এসে লাগে আনোয়ার হোসেনের কোমর ও পিঠে। গুলির আঘাতে সঙ্গে সঙ্গে তিনি শহীদ হন। প্রতিরোধ যোদ্ধারা তার মরদেহ উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী এক গ্রামে নেন। সেখানে স্থানীয় জনগণ তাকে নজরুল ইসলাম কলেজের সামনে সমাহিত করেন। [2]
পুরস্কার ও সম্মাননা
তথ্যসূত্র
- দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১৪-০৮-২০১১
- একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৫। আইএসবিএন 9789849025375।