মোহন লাল

মোহনলাল ছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার অন্যতম প্রধান সেনাপতি। পলাশীর যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও সিরাজের পক্ষে বিশ্বস্ততার সাথে লড়াইয়ের কারণে তিনি পরিচিত।

মোহনলাল
মোহনলালের স্মৃতিফলক, গুপ্তিপাড়া, হুগলী
মৃত্যু১৭৫৭-?
পেশাদেওয়ান, সেনাপতি
আন্দোলনপলাশীর যুদ্ধ

প্রথম জীবন

মোহনলাল ছিলেন নবাব সিরাজদ্দৌলার একজন অন্যতম বিশ্বস্ত কর্মকর্তা। তিনি দেওয়ান মোহনলাল এবং মোহনলাল কাশ্মিরী নামে পরিচিত ছিলেন। ঐতিহাসিক নরোত্তম হালদারের মতে,মোহনলাল হিন্দু মাহিষ্য ছিলেন। [1] ঠাকুর অনুকুল চন্দ্রের মতে মোহনলাল জন্মগত ভাবে মাহিষ্য পরিবারের সন্তান। ১৭৫৬ সালের এপ্রিলে নবাবের আসনে বসেই সিরাজদ্দৌলা যে দুজন দক্ষ কর্মকর্তার ওপর আস্থা স্থাপন করেছিলেন তারা হলেন মীর মদন ও মোহনলাল। নবাবের দেওয়ানখানার পেশকার নিযুক্ত করে তাকে মহারাজা উপাধি ও মনসবদারী দান করা হয়। তাকে বিহারের পূর্ণিয়ার শাসনভারও অর্পণ করেন নবাব। নবাব দরবারে তার প্রতিপত্তিতে সিরাজের শত্রুরা আতঙ্কিত হয় এবং মোহনলালকে বিষ প্রয়োগে হত্যার চক্রান্তও হয়েছিল একথা নবাব দরবারে আগত ফরাসি দূত মঁসিয়ে ল' তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন।[2][3]

পলাশীর যুদ্ধ

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধের সময় মোহনলাল সিরাজের প্রতি অবিচল বিশ্বস্ততায় যুদ্ধ করেছিলেন। গোলাম হোসেন রচিত 'সয়ার-উল-মুতাখেরিন' গ্রন্থ থেকে জানা যায়, মীর মদনের মৃত্যুর পরেও মোহনলালের একক চেষ্টায় যুদ্ধের গতি সিরাজের অনুকূলে ছিল।[4] কিন্তু নিজ অদূরদর্শিতা ও মানসিক দুর্বলতাহেতু তরুণ নবাব সিরাজ মীর জাফর প্রমুখ বিশ্বাসঘাতকদের প্রভাবে যুদ্ধ বন্ধ রাখার আদেশ দেন। ফলত: নবাব বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় ও শোচনীয় পরাজয় ঘটে। মোহনলালের যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটে এমনটা অনেকে মনে করেন। ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকারের মতে মোহনলাল যুদ্ধে আহত হন। যুদ্ধ পরবর্তী পর্যায়ে তার বড় ছেলে (পূর্নিয়ার নায়েব নাজিম) শ্রীমন্ত লাল মিরনের হাতে মারা যান। ছোট ছেলে হুক্কা লাল পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন।[5]

নিখোঁজ জীবন ও বিতর্ক

মোহনলালের পলাতক জীবন সম্পর্কে বিশেষ বিতর্ক আছে। ঐতিহাসিক নিখিলনাথ রায় ও সোনিয়া আমিন বলেন, মোহনলালের ভগ্নী ছিলেন সিরাজের প্রণয়িনী এবং তিনি তাদের শিশুপুত্রকে নিয়ে মুর্শিদাবাদ ত্যাগ করে ময়মনসিংহে আশ্রয় নেন। তারপর তার অজ্ঞাতবাস পর্বের নানা কিংবদন্তি ছড়িয়ে আছে বাংলায়। অনেক ঐতিহাসিক অনুমান করেন তার জন্মস্থান হুগলী জেলাগুপ্তিপাড়া, সেখানে বৃন্দাবনচন্দ্র মন্দিরে তিনি আত্মগোপন করে থাকেন যুদ্ধোত্তর পর্বে। নদীয়ার কালীগঞ্জের নিকটবর্তী জুড়ানপুর শাক্তপীঠেও তার অবস্থানের কাহিনী প্রচলিত আছে কিংবদন্তি মোতাবেক।[5][6]

তথ্যসূত্র

  1. Haldar, Narotam (১৯৮৮)। Gangaridi - Alochana O Parjalochana
  2. পূর্ণেন্দু পত্রী, পুরোনো কলকাতার কথাচিত্র। পলাশীর যুদ্ধ। কলকাতা: দেজ পাবলিশিং।
  3. প্রথম খন্ড, নারায়ন সান্যাল (১৯৯০)। রূপমঞ্জরি। কলকাতা: দেজ পাবলিশিং। পৃষ্ঠা ৪৮৫, ৪৮৯।
  4. "নবাবি আমল ও বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলা"। দৈনিক সংগ্রাম। ৩১অক্টোবর, ২০১৫। ২৬ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 09.12.16 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  5. অমলেন্দু দে (২০১২)। সিরাজের পুত্র ও বংশধরদের সন্ধানে। কলকাতা: পারুল প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ২৪। আইএসবিএন 978-93-82300-47-2।
  6. "গুপ্তিপাড়া"বিকাশপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১৭
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.