মোনা লিসা

মোনা লিসা (ভুলভাবে মোনালিসা) (ইতালীয়:La Gioconda বা ফরাসি: La Joconde)[1]একটি বিশ্বখ্যাত চিত্রকর্ম। ইতালীর শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ১৬ শতকে এই ছবিটি অঙ্কন করেন। ধারণা করা হয়, বিখ্যাত এই ছবিটি মোনা লিসার দ্বিতীয় পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ স্মরণে অঙ্কিত হয়। অনেক শিল্প-গবেষক রহস্যময় হাসির এই নারীকে ফ্লোরেন্টাইনের বণিক ফ্রান্সিসকো দ্য গিওকন্ডোর স্ত্রী লিসা গেরাদিনি বলে সনাক্ত করেছেন। শিল্পকর্মটি ফ্রান্সের ল্যুভ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। ল্যুভ জাদুঘরের তথ্যমতে প্রায় ৮০% পর্যটক শুধু মোনালিসার চিত্রটি দেখার জন্য আসে।[2]

মোনা লিসা
ইতালীয়: লা জকোন্দা (La Gioconda), ফরাসি: লা জকোন্দা (La Joconde)
See adjacent text.
শিল্পীলিওনার্দো দা ভিঞ্চি
বছর১৫০৪–১৫০৬ খ্রিস্টাব্দ, হয়তো ১৫১৭ পর্যন্ত চলেছে
ধরনপপলার প্যানেলে তেলরঙ
বিষয়লিসা দেল জোকোন্দো
আয়তন৭৭ সেমি × ৫৩ সেমি (৩০ ইঞ্চি × ২১ ইঞ্চি)
অবস্থানলুভ্‌র জাদুঘর, প্যারিস

ইতিহাস

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ১৫০৩ থেকে ১৫০৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে একটি পাইন কাঠের টুকরোর ওপর মোনা লিসার এই ছবিটি আঁকেন। চিত্রকলার ইতিহাসে এই চিত্রকর্মটির মতো আর কোনোটি এত আলোচিত ও বিখ্যাত হয়নি। এর একমাত্র কারণ মোনা লিসার সেই কৌতূহলোদ্দীপক হাসি, যা পরবর্তীতে বহু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বর্তমানে এটি প্যারিস শহরের ল্যুভ জাদুঘরে রাখা আছে। এটি ছিল শিল্পীর সবচেয়ে প্রিয় ছবি এবং তিনি সবসময় এটিকে সঙ্গেই রাখতেন। আর তিনি নিজেই বলতেন এটি হলো আমার সেরা শিল্পকর্ম।

২০০৫ সালে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়েছে, এই চিত্রকর্মটিতে আঁকা নারী প্রকৃতপক্ষে ইতালির ফ্লোরেন্সের অভিজাত নারী ও ফ্রান্সেসকো দেল জোকোন্দোর স্ত্রী লিসা দেল জোকোন্দো গেরার্দিনি[3] তবে মোনা লিসাকে নিয়ে অনেক ধারণা প্রচলিত ছিল। কিছু গবেষকগণ মনে করতেন, মোনা লিসা হলো লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মা আবার কেউ মনে করতেন মোনা লিসা হলো লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির বান্ধবী। একটি কম্পিউটার পরীক্ষায় দেখা গেছে মোনা লিসা'র সাথে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির কিছুটা মিল রয়েছে। তাই মনে করা হয় হয়তো মোনা লিসা চিত্র কর্মটি না ছেলে না মেয়ে।

পরিচয় নিশ্চিতকরণ

ডানদিকের মার্জিনে ভেসপুচ্চির লেখা নোটটি সিসেরোর চিঠির একটি নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদকে নির্দেশ করে।

লিওনার্দোর মোনা লিসা সম্পর্কে সমসাময়িক নিষ্পত্তিমূলক তথ্যের অভাবের কারণে চিত্রকর্মটিতে অঙ্কিত নারীর পরিচয় নিশ্চিত করা কঠিন ছিল। ২০০৫ সালে সিসারোর এপিস্তউলেই আদ ফামিলিয়ারেস (লাতিন: Epistulae ad Familiares, আত্মীয়দের চিঠি) বইটির ১৪৭৭ সালের সংস্করণের ডান মার্জিনে ভেসপুচ্চির লেখা একটি মন্তব্য হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার থেকে আবিষ্কারের পর এই অবস্থার পরিবর্তন হয়। ড. আরমিন শ্লেচার লাইব্রেরিতে একটি ইনকুনাবুলা (মুদ্রণশিল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে মুদ্রিত বই) প্রদর্শনীর জন্য বইয়ের তালিকা প্রস্তুত করার সময় এই আবিষ্কার করেছিলেন।[4]

নোটের সংক্ষিপ্ত ল্যাটিন পাঠ্যটি নিম্নরূপ: Apelles pictor. Ita Leonardus Vincius facit in omnibus suis picturis, ut enim caput Lise del Giocondo et Anne matris virginis. Videbimus, quid faciet de aula magni consilii, de qua re convenit iam cum vexillifero. 1503 octobris. [5] (বাংলা: "চিত্রকর আপেলিস। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি তার সমস্ত চিত্রকর্মে এটিই করেছেন, যেমনটা করেছেন লিসা দেল জোকোন্দো এবং কুমারী মাতা অ্যানের চেহারায়।[lower-alpha 1] আমরা দেখতে পাব যে তিনি মহা কাউন্সিলের হল সম্পর্কে কী করবেন, যে সম্পর্কে তিনি ইতোমধ্যে গোনফালোনিয়েরের সাথে একমত হয়েছেন। অক্টোবর ১৫০৩।") [7]

এই মন্তব্যে ভেসপুচি লিওনার্দো এবং বিখ্যাত প্রাচীন গ্রিক চিত্রশিল্পী আপেলিসের শৈলীর মধ্যে একটি সাদৃশ্য উল্লেখ করেছেন। উভয় শিল্পীই বাকি চিত্রকর্মের কাজ করার আগে প্রথমেই খুবই বিশদে বিষয়বস্তুর মাথা ও কাঁধ এঁকে নিতেন। একটি উদাহরণ হিসাবে ভেসপুচ্চি লিওনার্দোর "লিসা দেল জোকোন্দো"র প্রতিকৃতিতে কাজ তালিকাভুক্ত করার পাশাপাশি মন্তব্যে "অক্টোবর ১৫০৩" তারিখ দিয়েছেন। নাম ও তারিখের অন্তর্ভুক্তি শিল্প ইতিহাসবিদ জর্জিও ভাসারির লিখিত ১৫৫০ সালে প্রকাশিত উৎসের সাথে বৈধতা নিশ্চিত করে। ভাসারির এই লেখাটি পরবর্তীতে বেশ পরিচিত হলেও প্রায়ই অবিশ্বস্ত হিসেবে বিবেচিত হতো। ভাসারি লিখেছিলেন এই সময়ের মধ্যে লিওনার্দো তার স্ত্রী, "মোনা লিসা" আঁকার জন্য ফ্রান্সেসকো দেল জোকোন্দোর কাছ থেকে একটি কমিশন নিয়েছিলেন।[8] এখানে "মোনা" শব্দটি কোনও নাম হিসাবে নয়, বরং, ইতালীয় "কুমারি নারী'র সাহিত্য রূপ "ম্যাডোনা"র (Madonna) একটি সংক্ষিপ্তরূপ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে।[9]

টীকা

  1. ১৫০৩ সালের দিকে লিওনার্দো দ্য ভার্জিন অ্যান্ড চাইল্ড উইদ সেন্ট অ্যান ছবিটি এঁকেছিলেন। একই সময়ে তিনি প্রায় একইরকম দেখতে প্রস্তুতিমূলক দ্য ভার্জিন অ্যান্ড চাইল্ড উইদ সেন্ট অ্যান অ্যান্ড সেন্ট জন দ্য ব্যাপটিস্ট কার্টুনটিও তৈরি করেছিলেন।[6]

তথ্যসূত্র

  1. "Portrait of Lisa Gherardini, wife of Francesco del Giocondo"Musée du Louvre। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০১২
  2. "The New York Times > Arts > Art & Design > In Louvre, New Room With View of 'Mona Lisa'"nytimes.com। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০১১
  3. "Mona Lisa – Heidelberger find clarifies identity"। University Library Heidelberg। ২০১১-০৫-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০০৮
  4. "Mona Lisa – Heidelberg discovery confirms identity"হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারহাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৮। ২০১১-০৫-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-০৫
  5. Probst, Veit। "Rätselhafte Mona Lisa"হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার (জার্মান ভাষায়)। হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-০৫
  6. Burke, Jill (২০০৮)। "Agostino Vespucci's Marginal Note about Leonardo da Vinci in Heidelberg."Leonardo da Vinci Society Newsletter (ইংরেজি ভাষায়) (30): 4 Academia.edu-এর মাধ্যমে।
  7. According to the German translation given on Probst, Veit। "Rätselhafte Mona Lisa"হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার (জার্মান ভাষায়)। হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়। ৭ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৫-২৫
  8. Probst, Veit। "Rätselhafte Mona Lisa"হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার (জার্মান ভাষায়)। হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-০৫
  9. Nicholl, Charles (২৮ মার্চ ২০০২)। "The myth of the Mona Lisa"The Guardian। UK। সেপ্টেম্বর ৫, ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১১

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.