মোজাহার উল্লাহ

মোজাহার উল্লাহ (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২০০৮) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। [1]

মোজাহার উল্লাহ
মৃত্যু২০০৮
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর উত্তম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

মোজাহার উল্লাহর পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার ভালুকা গ্রামে। তার বাবার নাম আলী আজম এবং মায়ের নাম খায়রুননেছা। তার স্ত্রীর নাম দেল আফরোজ। তার এক ছেলে ও চার মেয়ে। মোজাহার উল্লাহ স্বাধীনতার পর বিমা পেশাতেই জড়িত ছিলেন।

কর্মজীবন

১৯৭১ সালে বিমা কোম্পানিতে চাকরি করতেন মোজাহার উল্লাহ। কর্মরত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে। মার্চ মাসে ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। চট্টগ্রামের প্রতিরোধযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যাওয়ার পর যোগ দেন মুক্তিবাহিনীর নৌ উইংয়ে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী তার বাবাকে আটক করে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরে রাতের অন্ধকারে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে মোজাহার উল্লাহ উপস্থিত হলেন নদীর তীরে। বর্ষণমুখর রাত। মোজাহার উল্লাহ সহযোদ্ধাদের প্রস্তুত করে নামিয়ে দিলেন পানিতে। তিনিসহ কয়েকজন নদীর তীরে থাকলেন সহযোদ্ধাদের নিরাপত্তায়। নদীতে সার্চলাইটের তীব্র ঝলমল আলো। চারদিকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। বন্দর ঘুমে অচেতন। মধ্যরাতে পানি তোলপাড় করে বিকট শব্দে নিস্তব্ধতা খান খান হয়ে পড়ল। একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকল মাইন। জাহাজগুলো বাজাতে থাকল সাইরেন। চট্টগ্রাম বন্দরে এই অপারেশনে অংশ নিতে মুক্তিবাহিনীর নৌ-মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে চট্টগ্রামে এসে সমবেত হন ১২ আগস্ট। নৌ-মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন মোট ৬১ জন। তিনটি দলে বিভক্ত। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মোজাহার উল্লাহ। ভারত থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তারা চট্টগ্রামে পৌঁছান। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে ছিল ২০ কেজি ওজনের বোঝা। লিমপেট মাইন, ফিনস, গ্রেনেড, বিস্ফোরক, শুকনা খাবারসহ অন্যান্য সামগ্রী। অর্ধেক পথ তারা হেঁটে যান। তিনটি দলের মধ্যে একটি দল চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। তারা সীতাকুণ্ডে আটকা পড়ে। মোজাহার উল্লাহ তার দল নিয়ে নির্ধারিত সময়ে চট্টগ্রামে পৌঁছান। ১৫ আগস্ট রাতে নৌ-মুক্তিযোদ্ধারা তাদের গোপন শিবির থেকে বেরিয়ে কর্ণফুলী নদীর তীরে বন্দরের অপর পাড়ে সমবেত হন। শেষ মুহূর্তে তিনজন নৌ-মুক্তিযোদ্ধা অপারেশনে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৭। আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী (বীর উত্তম-বীর বিক্রম), মোজাহার উল্লাহ, মোহাম্মদ শাহ আলম (বীর উত্তম) এবং খোরশেদ আলম (বীর প্রতীক) নদীর তীরে বিভিন্ন স্থানে পাহারায় থাকেন। মুক্তিযোদ্ধারা পানিতে নেমে সাঁতরে নির্দিষ্ট টার্গেটে (জাহাজ, বার্জ প্রভৃতি) সফলতার সঙ্গে লিমপেট মাইন লাগিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যান। আধা ঘণ্টা পর থেকে মাইনগুলো একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে। সেদিন তাদের অপারেশনে প্রায় ১০টি টার্গেট সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস বা নিমজ্জিত হয়। এর মধ্যে ছিল এমভি আল আব্বাস, এমভি হরমুজ জাহাজ, মৎস্য বন্দরে নোঙর করে রাখা বার্জ ওরিয়েন্ট, নৌবাহিনীর দুটি গানবোট এবং একটি পন্টুন। এ ছাড়া ছিল ছোট-বড় আরও কয়েকটি বার্জ।[2]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৩-০৩-২০১২"। ২০২০-০৮-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-০৯
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৫৬। আইএসবিএন 9789849025375।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.