মোগলমারি
মোগলমারি হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত একটি গ্রাম ও পুরাতাত্ত্বিক খনন কেন্দ্র। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অশোক দত্তের নেতৃত্বে ২০০২-০৩ সালে এখানে খননকার্য শুরু হয় এবং ষষ্ঠ-দ্বাদশ শতাব্দীর একটি বৌদ্ধ মঠ আবিষ্কৃত হয়।[1][2][3][4] রাজ্য পুরাতত্ত্ব অধিকরণের অধীনে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে বিস্তারিতভারে আরেকটি খনকার্য চালানো হয়। এই খননকার্যের ফলে বেশ কিছু সামগ্রী ও ছয়টি ট্যাবলেট পাওয়া যায়।[5][6][7]
খননকার্য
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক অশোক দত্তের নেতৃত্বে একদল পুরাত্ত্বিক ২০০৩ সালে মোগলমারিতে প্রথম খননকার্য শুরু করেন।[8] ২০০৩-০৪ সালে খননকার্যের প্রথম পর্যায় মোগলমারি গ্রামের দুটি জায়গাকে খননের জন্য বেছে নেওয়া হয়। প্রথম জায়গাটির নাম দেওয়া হয়েছিল এমজিএম১। ইঁটের এই ঢিপিটি স্থানীয়ভাবে "সখিসেনের ঢিপি" বা "শশীসেনের ঢিপি" নামে পরিচিত ছিল।[8] এমজিএম২ নামাঙ্কিত দ্বিতীয় জায়গাটি স্থানীয় বসত এলাকায় অবস্থিত। এটি পাঁচটি গোলাকার ইঁটের স্তুপের উপর অবস্থিত।[8] প্রথম জায়গাটি "ত্রিরথ" আকারের। এই জায়গাটির পশ্চিমাংশে উত্তর-দক্ষিণে পাঁচিল সহ একটি জায়গা পাওয়া গিয়েছে। এটিকে সন্ন্যাসীদের প্রাচীরবেষ্টিত একটি ছোটো বাসস্থান মনে করা হচ্ছে। খননকার্যের ফলে অন্যান্য প্রাচীন জিনিসের সঙ্গে বর্গাকার ও আয়তাকার নির্মাণের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে। এগুলিকে ছোটো ছোটো ঘর মনে করা হচ্ছে।[8] দ্বিতীয় জায়গাটিতে যে তিনটি গোলাকার ইঁটের নির্মাণ পাওয়া গিয়েছে, এগুলিকে স্তুপের ভিত্তি মনে করা হচ্ছে। এই ধ্বংসাবশেষটি সম্ভবত ষষ্ঠ-সপ্তম শতাব্দীর। আরও খননকার্যের ফলে ৫৫ সেন্টিমিটার কাদার স্তর এবং তার নিচে কালো ও লাল রঙের কিছু সামগ্রী পাওয়া গিয়েছে।[8]
এমজিএম১-এ ২০০৬-০৭ সালে আরও গভীর খননকার্য শুরু হয়। এমজিএম৩ নামে খননকার্যের জন্য আরও একটি জায়গা এই সময়েই বেছে নেওয়া হয়। এই খননকার্যের ফলে ফুল, পশু ও মানুষের ছবি আঁকা একটি দীর্ঘ দেওয়াল পাওয়া যায়। এখানেও নির্মাণের সাতটি স্তর লক্ষ্য করা হয়। এই খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী হল শ্লেট পাথরে নির্মিত একটি বুদ্ধমূর্তি।[8]
২০১২ সালে আরেক রাউন্ড খননকার্যের দলে দেওয়ালগুলিতে বুদ্ধকেন্দ্রিক নানারকম ছবি পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে বোধিসত্ত্বদের ছবি এবং বৌদ্ধ শিলালেখ পাওয়া যায়।[2] এই খননকার্যের ফলে জায়গাটির পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে প্রদক্ষিণ পথও আবিষ্কৃত হয়। আর পাওয়া যায় একটি কেন্দ্রীয় মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। এই মন্দিরে অনেকগুলি বর্গাকার উঠোন-বিশিষ্ঠ খোপ ছিল। খননকারী দলের সদস্য রজত সান্যালের মতে, নির্মাণটি বৌদ্ধধর্মের বজ্রযান পর্বে নির্মিত হয়েছিল। উল্লেখ্য, এই পর্যায়েই বৌদ্ধধর্মে দেবদেবীর পূজা শুরু হয়। মোগলমারিতে খননকার্য চালিয়ে যে দেওয়ালগুলি পাওয়া গিয়েছে সেখানে জামবালা ও সরস্বতী দেবীর ছবি দেখেই এই অনুমান করা হয়েছে।[5] এখানে প্রাপ্ত মূর্তি ও অন্যান্য সামগ্রীগুলিতে গুপ্ত ও মধ্য গঙ্গ অঞ্চলের ভাস্কর্যের প্রভাব দেখা যায়।[1]
পাদটীকা
- Shankar Chattopadhay, Suhrid (২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)। "Unearthing a culture"। Frontline। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৩।
- "Moghalmari excavations unveil West Bengal's Buddhist past"। The Hindu। ৫ এপ্রিল ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৩।
- Mukherjee Pandey, Jhimli (৫ এপ্রিল ২০১২)। "Dantan site may be the missing link of Hiuen Tsang's memoirs"। Times of India। ৩ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৩।
- "Nalanda buzz around Bengal Buddha statues"। The Telegraph। ২৬ মার্চ ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৩।
- "Moghalmari excavation to start again"। The Telegraph। ১ নভেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৩।
- Sarkar, Sebanti (১৩ জানুয়ারি ২০১৪)। "Buried in a village heap, history of Buddhist Bengal"। The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১৪।
- "Six terracotta tablets found at Moghalmari"। Times of India। ১৩ জানুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১৪।
- Kumar Datta, Asok (২০০৮)। Excavations at Moghalmari: first interim report 2003-04 to 2007-08। Kolkata: Asiatic Society।