মেলিসাস

মেলিসাস (গ্রিক: Μέλισσος; খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী) ছিলেন প্রাচীন গ্রিক দর্শনের এলিয়াটিক সম্প্রদায়ের সর্বশেষ দার্শনিক। এ সম্প্রদায় বা দর্শনের বাকি দুই সদস্য ছিলেন জেনো এবং পার্মেনিদিস। তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে। সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দে তার জন্ম। সামোস দ্বীপের অধিবাসী এ দার্শনিক ছিলেন জেনোর সমসাময়িক। রাজনীতিতে তিনি জেনোর চেয়েও বিখ্যাত ছিলেন। এথেন্সের বিরুদ্ধে তিনি পেলোপোনেশিয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৪৪০ অব্দে সামোস রাজ্যের প্রধান সেনাপতি থাকার সময় তার হাতে এথেন্সের নৌবাহিনীর পরাজয় ঘটে বলে জানা যায়। তবে তার এ বিজয় বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। খ্রিস্টপূর্ব ৪৩৯ অব্দে পেরিক্লিসের কাছে সামোস বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।[1]

সামোস দ্বীপের মেলিসাস
নুরেমবার্গ ক্রনিকলে প্রকাশিত মেলিসাসের প্রতিকৃত
জন্ম
সামোস
যুগপ্রাচীন যুগ
অঞ্চলপাশ্চাত্য দর্শন
ধারাএলিয়াটিক দর্শন
প্রধান আগ্রহ
অধিবিদ্যা
উল্লেখযোগ্য অবদান
অসীম, বাস্তবতা সম্পর্কে একত্মবাদ
ভাবগুরু

মেলিসাসের দার্শনিক ভিত্তি

মেলিসাস প্রথমেই এম্পেদোক্লেসআনাক্সাগোরাস, এ দুই দার্শনিকের মতবাদের সাথে পরিচিত হন। এরা উভয়েই সত্তা সম্পর্কে পার্মেনিদিসের মূল সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করেছিলেন। এরপর তারা পার্মেনিদিসের একত্মবাদী মতের সাথে বহুত্ব, গতি, পরিবর্তন প্রভৃতি ধারণার সমন্বয় বিধানের চেষ্টা করেন। সত্তা কতিপয় মৌলিক দ্রব্যে বিভাজ্য, এ বিশ্বাস নিয়ে তারা আলোচ্য সমন্বয় বিধানের কাজে হাত দেন। পার্মেনিদিসের পরিকল্পিত সত্তার বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে একমাত্র গতিহীনতা ছাড়া অন্যসব বৈশিষ্ট্যের সাথে এসব মৌল দ্রব্যের সাদৃশ্য ছিল। এম্পেদোক্লেস ও আনাক্সাগোরাস, এরা উভয়েই পার্মেনিদিসের মত মনে করতেন যে, শূণ্যদেশ বলতে কিছু নেই। যেসব দ্রব্যের সমন্বয়ে সত্তা গঠিত তারা এমন আঁটসাঁটভাবে যুক্ত যে তাদের মাঝখানে কোন শূণ্যদেশ থাকতে পারে না।

মেলিসাসের দর্শন

এম্পেদোক্লেস এবং আনাক্সাগোরাস মিলে পার্মেনিদিসের মতবাদের যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেন, মেলিসাস তার বিরোধিতা করেন। পার্মেনিদিসের সমর্থনে তিনি ঘোষণা করেন যে, যথার্থ ও আদর্শ সত্তাকে অবশ্যই এক ও নিরবচ্ছিন্ন হতে হবে এবং এতে কোন গতি, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, বিভাজন বা বহুত্ব থাকতে পারে না। সত্তার কোন সৃষ্টি বা উৎপত্তি নেই। সত্তা সৃষ্ট, একথা স্বীকার করলে এও স্বীকার করতে হবে যে, সত্তার সৃষ্টির পূর্বে অসত্তা ছিল। কিন্তু অসত্তা থেকে সত্তার উদ্ভব হতে পারে না। সুতরাং একথা মেনে নিতে হবে যে, সময়ের দিক থেকে সত্তা অসীম বা অনন্ত। আবার দৈহিক দিক থেকেও সত্তা অনন্ত। সত্তা গোলক আকৃতির, পার্মেনিদিসেরএ মতের বিরোধিতা করে মেলিসাস বলেন, সত্তাকে ধারণ করা বা সীমিত করার মত কোন শূণ্যস্থান নেই। সময়ের দিক থেকে সত্তার যেমন কোন শুরু বা শেষ নেই, দৈহিক দিক থেকেও এর কোন সীমা নেই। শূণ্যদেশ বলে যেহেতু কিছু নেই, সুতরাং গতি বলেও কোন কিছু থাকতে পারে না। কারণ গতির জন্য শূণ্যদেশ অপরিহার্য। গতি বলে যদি কিছু না থাকে তাহলে সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন বলে কিছু থাকতে পারে না। গতি ও পরিবর্তন ইন্দ্রিয়প্রসূত ব্যাপার মাত্র।

তথ্যসূত্র

  1. Plutarch, Life of Pericles, 26.
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.