মেজকর্তা

মেজকর্তা বাংলা সাহিত্যের একটি কাল্পনিক চরিত্র। এই চরিত্রটি সৃষ্টি করেন খ্যাতনামা সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র। মেজকর্তার প্রথম কাহিনী তেনা-রা প্রকাশিত হয় আনন্দমেলা পত্রিকার ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের বৈশাখ সংখ্যায়। মেজকর্তার গল্পগুলি অলৌকিক, রহস্য আর হাস্যরসের এক সুচারু মিশেল।

চরিত্রচিত্রণ

মামাবাবু, ঘনাদা, পরাশর বর্মা - এই কালজয়ী চরিত্র তিনটি সৃষ্টি করার পরেও প্রায় সত্তরোর্ধ প্রেমেন্দ্র মিত্র তৈরি করলেন আরও এক ব্যতিক্রমী চরিত্র মেজকর্তা। কলকাতার ৪৫ নং বাসের সিটে পড়ে থাকা বেওয়ারিশ লাল শালুর পুঁটলিতে মেজকর্তার খেরোর খাতাটি খুঁজে পান লেখক। সেখান থেকে মেজকর্তা সিপাহী বিদ্রোহের সময়ের মানুষ ( মেজকর্তার খেরোখাতা গল্পে লেখক অনুমান করেন), এমনকি তার নামটিও জানা যায়না। গল্পগুলি থেকে জানা যায়, মেজকর্তা মোটামুটি বেশ সচ্ছল এক পরিবারের ছেলে, যা ওঁর কথাবার্তায় পরিষ্কার। তাই খাওয়া পরার যখন চিন্তা নেই তখন উনি মজে থাকেন তার এক অদ্ভুত বিটকেলে শখ নিয়ে – ভূত শিকার করার শখ। চর মারফত উনি খবর পান কখন কোথায় কোন হানাবাড়ি আছে যেখানে ভূত থাকতে পারে। বটকেষ্ট, নসুরাম দাস, কখনোবা মুকুন্দরাম (ইনি নিজেই প্রেতাত্মা) তাকে নিত্যনতুন ভূতের খবর জোগাড় করে এনে দেয়। তারপর তিনি নিজে গিয়ে উঠেন সেইসব ভূতুড়ে বাড়িতে। করেন রাত্রিবাস। আর হানাবাড়ি মানেই যে সবসময় এঁদো পাড়াগাঁ নয়, কলকাতার ইট-কাঠ-পাথরের বাড়িতেও, এমনকি এক গল্পে একটি লাইব্রেরিতেও তিনরাত কাটিয়েছেন মেজকর্তা।[1] তবে তিনি ভূত দেখে কখনোই ভয় পাননি। এরকমও হয়েছে, তিনি মানুষ জানতে পেরে এক ভূত তোতলাতে তোতলাতে তল্লাট ছাড়া হয়েছিল।

প্রকাশনার ইতিহাস

মেজকর্তার প্রথম আখ্যান তেনা-রা প্রকাশিত হয় আনন্দমেলা পত্রিকার ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের বৈশাখ সংখ্যায়। এরপর মেজকর্তার অন্যান্য কাহিনীগুলি আনন্দমেলা, কিশোর ভারতী, পক্ষিরাজ ও সবজান্তা মজারু শিশু-কিশোর পত্রিকাগুলিতে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়।

‘ভূত শিকারী মেজকর্তা’ (নাথ ব্রাদার্স, বৈশাখ ১৩৮৭) গ্রন্থে সংকলিত হয় ছয়টি মেজকর্তা-কাহিনী। এরপরে ‘মেজকর্তার ভৌতিক গল্প’ [পরে পরিবর্তিত নাম ‘ভূত যদি বোকা হয়’] (শৈব্যা প্রকাশন বিভাগ, ১৯৮৬)-তে ছিল মেজকর্তা সিরিজের নয়টি গল্প।সর্বশেষ প্রকাশিত ‘ভূত-শিকারি মেজকর্তা এবং...’ (দে’জ পাবলিশিং, ২০০৯) বইতেও মেজকর্তার নয়টি গল্পই ছিল। তবে ভূত যদি ভীতু হয় এবং ভূতেদের বিশ্বাস নেই শীর্ষক গল্পদুটি এ যাবৎ অগ্রন্থিতই থেকে গিয়েছে।

কাহিনীসমূহ[2]

  • তেনা-রা - আনন্দমেলা, বৈশাখ,১৩৮৩
  • মেজকর্তার খেরোখাতা - আনন্দমেলা পূজাবার্ষিকী, ১৩৮৩
  • মাথায় চন্দ্রবিন্দু - শারদীয়া কিশোর ভারতী, ১৩৮৩
  • ভূত-শিকারী মেজকর্তা - আনন্দমেলা পূজাবার্ষিকী, ১৩৮৪
  • ভূতেরা বড় মিথ্যুক - আনন্দমেলা, আশ্বিন, ১৩৮৫
  • ভূত যদি ভুলো হয় - শারদীয়া কিশোর ভারতী, ১৩৮৫
  • ভূত যদি ভক্ত হয় - আনন্দমেলা পূজাবার্ষিকী, ১৩৮৭
  • ভূত যদি ভীতু হয় - শারদীয়া কিশোর ভারতী, ১৩৮৭
  • ভূত যদি রসিক হয় - সবজান্তা মজারু, জানুয়ারি, ১৯৮৩
  • ভূতেদের বিশ্বাস নেই - পক্ষিরাজ, এপ্রিল – মে, ১৯৮৩
  • ভূত যদি বোকা হয় - শারদীয় পক্ষিরাজ, ১৩৯১

তথ্যসূত্র

  1. একপর্ণিকা: অমর চরিত্রকথা: প্রেমেন্দ্রর তিন সেপাই - সৌরভ চক্রবর্তী
  2. Blogus : Premendra Mitra's Mejokarta : Headpieces
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.