মূল (উদ্ভিদবিদ্যা)

মূল বা শেকড় (ইংরেজি: Root) হচ্ছে একটি বৃক্ষ বা গাছের ভিত্তি। শেকড়ের নানা ধরন, মাটির নিচের শিকড় ছাড়াও মাটির ওপরেও শেকড় দেখা যায়। এ শেকড়গুলো বের হয় উদ্ভিদের পাতা থেকে। গাছের শেকড় মাটির তলায় অনেকখানি নেমে গিয়ে মাটির ওপর গাছকে সোজা করে রাখে। শেকড় কেবল মাত্র গাছটিকে মাটির উপর শক্ত করে শুধু দাড় করিয়েই রাখে না, সঠিক খাদ্য দ্রব্য খনিজ সরবরাহ করে তার পুর্ণ বিকাশের সুযোগ করে দেয়।[1] তাই এই শেকড় গাছের একটি অন্যতম অংশ। এর মধ্যে থাকে প্রধান একটি মূল বা শিকড়। এই মূল থেকে ছোট ছোট অনেক শেকড় বের হয়।

একটি তুলা গাছের প্রাথমিক ও গৌণ মূলসমূহ

মূলের কাজ

গাছের বিশাল বয়স্ক শিকড়, মাটির উপরে

শেকড় ছোট বা বড় যাই হোক না কেন মাটি থেকে গাছের জন্য খাদ্যরস সংগ্রহ করে।[2] গাছের তৈরি খাবার শিকড় সঞ্চয় করে রাখে ভবিষ্যতের জন্য। শিকড়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ মাটি থেকে পানি ও খনিজ লবণ টেনে কাণ্ডের মধ্য দিয়ে পাতায় পৌঁছে দেয়া। কচি মূলের আগার একটু পিছনে জন্মায় মূলরোম। এই মূলরোমই মাটি থেকে খাবার সংগ্রহ করে। শেকড় দিয়ে টানা রস কীভাবে লম্বা লম্বা গাছের ডগায় পৌঁছে যায় সেটি সত্যিই বিচিত্র। কোনো কোনো গাছের শিকড় এতটাই খাবার সংগ্রহ করে রাখে যে শিকড়ের খুব চেনা চেহারাটা তখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। যেমন: মূলা, গাজর, শালগম, মিষ্টি আলু, শতমূলী প্রভৃতি। এরা মূলত গাছ থেকে খাবার সংগ্রহ করে মোটা হয়।

মুলের প্রকারভেদ

অভিযোজনের কারণেও শিকড়ের নানাবিধ রূপান্তর ঘটতে পারে যেমন অস্থানিকমূল, বায়বীয়মূল, চোষকমূল, ঠেসমূল, অধিমূল, শ্বাসমূল ইত্যাদি। অক্সিজেন ও জলের যুগ্ম সরবরাহ না থাকলে শিকড় সেদিকে প্রবাহিত হতে পারে না। মাটির নিচে জলের গতি খুবই কম। তাই শিকড়কেই বেরুতে হয় জলের সন্ধানে যে জলে দ্রবীভূত থাকে নানারকম পুষ্টি। এই পুষ্টি সংগ্রহের জন্য থাকে মাইকোরাইজা নামের এক ধরনের মিথোজীবী ছত্রাক যার কারণে সংগ্রহ শতগুণ বেড়ে যায়। শিকড় স্বভাবগতভাবে সুবিধাবাদী; এরা পাথরের ফাটলে, অপেক্ষাকৃত নরম মাটির ভেতরে, পুরানো শিকড়ের চ্যানেলেই প্রবাহিত হতে চায়।

ঠেসমূল

মাটির নিচের অংশ যে কেবল মূল তা নয়, মাটির নিচে গাছের কাণ্ডও থাকতে পারে যাকে আমরা মূল বলে ভুল করি, আবার কিছু গাছের মূল গাছের কাণ্ডে থাকে যা বায়বীয় মূল। এই বায়বীয় মূল আবার জমি স্পর্শ করলে তাকে ঠেসমূল বলে। কোন কোন গাছের বায়বীয় মূল পাতার কাজ করে, অর্থাৎ সবুজকণার সাহায্যে অঙ্গার আত্তীকরণের কাজ চালাতে পারে। গুলঞ্চলতার মূল এই ধরনের।

অস্থানিক মূল

যেসব মূল ভ্রুণমুল থেকে উৎপন্ন না হয়ে উদ্ভিদের অন্য কোনো অংশ(কাণ্ড,পাতা,শাখা ইত্যাদি) থেকে উৎপন্ন হয়, তাকে অস্থানিক মূল বলে।

চোষক মূল

পরজীবীর মূল হলো চোষক মূল।

শ্বাসমূল উদাহব়ণ দাও

সুন্দরবন অঞ্চলের লবণাক্ত মাটিতে দেখা যায় আগা সরু এক ধরনের মূল। এ মূলগুলো পানির ওপর মাথা তুলে থাকে। এই মূল দিয়ে সুন্দরী এবং গরান গাছ শ্বাস নেয়। এজন্য এদের বলা হয় শ্বাসমূল বা নাসিকামূল।

স্থানিক মূল

যেসব উদ্ভিদের ভ্রূণমূল বৃদ্ধি পেয়ে সরাসরি মাটির ভেতরে প্রবেশ করে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে সেসব উদ্ভিদের মূলই হচ্ছে স্থানিক মূল। এক্ষেত্রে ভ্রুণমূল বৃদ্ধি পেয়ে সরাসরি মাটির ভিতর প্রবেশ করে শাখা - প্রশাখা বিস্তার করে। স্থানিকমূলে প্রধান মূল থাকে। যথা - মূলা, আম, জাম, মরিচ, সরিষা ইত্যাদির উদ্ভিদের মূল।

মূলের গঠন

শিকড় কখনো সরল নয়, অত্যন্ত জটিল এর শারীরবৃত্ত (Physiology), আন্তরগঠনতন্ত্র (Anatomy), অঙ্গসংস্থান (Morphology) ও আচরণ। মাটির নিচে থাকে বলে তা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না, এবং একারণে শিকড় নিয়ে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক গবেষণাও হয়নি।

মূলের দৈর্ঘ্য

মূল সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা, এগুলো বৃক্ষের উপরিভাগের শামিয়ানা বা ক্যানপির বিস্তৃতির চেয়ে বেশি নয় কিন্তু আদতে তা ক্যানপির দ্বিগুণ-ত্রিগুণও হতে পারে। একটি ৫০ ফুট ক্যানোপিসম্পন্ন গাছের শিকড়ের বিস্তার হতে পারে ১৫০ ফুট পর্যন্ত। তবে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে গাছের শিকড়ের বিস্তৃতি ক্রান্তীয় অঞ্চলের শিকড়ের তুলনায় কম হয়। বৃক্ষের অধিকাংশ শিকড়, বলতে গেলে প্রায় ৯০ শতাংশই থাকে মাটির মাত্র ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতার মধ্যে। বৃক্ষের মোটা কাষ্ঠল শিকড়গুলো এফোঁড়ওফোঁড় হয়ে প্লেট সৃষ্টি করে যাতে পাথর পর্যন্ত শক্তভাবে আটকে থাকতে পারে।

মূলের অঙ্গসংস্থান

বৃক্ষের শিকড়সমূহ

মূল বা শেকড়কে প্রধানত ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো: ভাজক অঞ্চল, দীর্ঘায়ন অঞ্চল এবং পরিস্ফুরণ অঞ্চল। একটি শেকড়ের বাইরের দিকে থাকে একসারি ছোট ছোট ইটের মতো কোষ। এর নাম এপিব্লেমা। এপিব্লেমার মাঝে মাঝে থাকে এককোষী মূলরোম। মূলরোমের তলায় ফাঁকে ফাঁকে থাকে কয়েক সারি গোলাকার কোষ। এ কোষগুলো নাম কর্টেক্স। এই কর্টেক্সেই জমা থাকে শিকড়ের সব খাবার। কর্টেক্সের শেষে থাকে এন্ডোডার্মিস ও পেরিসাইকল। শিকড়ের ঠিক মাঝের অংশেও থাকে অনেক কোষ। এই কোষগুলোকে বলে জাইলেম। জাইলেমের মধ্যের নল বেয়েই রস উঠে যায় ওপরে। জাইলেমের সঙ্গেই পর্যায়ক্রমে আর এক ধরনের কোষসমষ্টি থাকে, যার নাম ফ্লোয়েম। ফ্লোয়েমের কাজ হলো সূর্যের আলোর সাহায্যে পাতায় যে খাবার তৈরি হয় সেই খাবার নিচের দিকে নামিয়ে আনা। জাইলেম ও ফ্লোয়েম কোষগুলোই গাছের সব খাবার বহন করে গাছকে সুস্থ সবল রাখে।

তথ্যসূত্র

  1. Harley Macdonald & Donovan Stevens (৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯)। Biotechnology and Plant Biology। EDTECH। পৃষ্ঠা 141–। আইএসবিএন 978-1-83947-180-3।
  2. "Plant parts=Roots"University of Illinois Extension

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.