মুফতি আব্দুর রাজ্জাক
মুফতি আব্দুর রাজ্জাক (মুফতি আব্দুর রাজ্জাক খান নামেও পরিচিত; ১৩ আগস্ট ১৯২৫ – ২৬ মে ২০২১) ছিলেন একজন ভারতীয় দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, মুফতি এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মী, যিনি জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের নবম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সংগঠনটি বিভক্ত হওয়ার পর তিনি আরশাদ গ্রুপের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভোপালে জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া নামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন।
মুফতিয়ে আজম মধ্যপ্রদেশ[1] মুফতি আব্দুর রাজ্জাক | |
---|---|
مفتی عبد الرزاق | |
ভোপাল শহরের মুফতি | |
অফিসে ১৯৭৪ – ১৯৮৩ | |
দারুল কাদা, ভোপালের সহকারি মুফতি | |
অফিসে ১৯৫৮ – ১৯৬৮ | |
দারুল কাদা, ভোপালের প্রধান বিচারক | |
অফিসে ১৯৬৮ – ১৯৭৪ | |
সাধারণ সম্পাদক, জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ | |
অফিসে ১২ অক্টোবর ১৯৯১ – ২২ জানুয়ারি ১৯৯৫ | |
পূর্বসূরী | আসরারুল হক কাসেমি |
উত্তরসূরী | আব্দুল আলিম ফারুকী |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ১৩ আগস্ট ১৯২৫ |
মৃত্যু | ২৬ মে ২০২১ ৯৫) | (বয়স
ধর্ম | ইসলাম |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
যুগ | আধুনিক |
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
প্রধান আগ্রহ | হাদিস, ফিকহ, লেখালেখি, তাসাউফ, রাজনীতি |
উল্লেখযোগ্য কাজ | জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, ভোপাল |
যেখানের শিক্ষার্থী | দারুল উলুম দেওবন্দ |
দেওবন্দি আন্দোলন |
---|
সিরিজের অংশ |
|
জীবনী
আবদুর রাজ্জাক ১৯২৫ সালের ১৩ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন।[2] তিনি ভোপালের মসজিদ মালাং শাহ, জামিয়া দারুল উলুম ইলাহিয়া এবং জামিয়া আহমদিয়ায় পড়াশোনা করেছেন।[3] ১৯৫২ সালের জুলাইয়ে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন।[4] তিনি হুসাইন আহমদ মাদানির কাছে সহীহ বুখারী, ফখরুল হাসান মুরাদবাদীর কাছে সহীহ মুসলিম, ইব্রাহিম বলািয়াভির কাছে সুনান আত-তিরমিজী, বশির আহমদের কাছে সুনানে আবু দাউদ, মুবারাক হুসাইনের কাছে সুনানে নাসাই ও সুনানে ইবনে মাজাহ, মেরাজুল হক দেওবন্দির কাছে মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ, সৈয়দ হাসানের কাছে মুয়াত্তা ইমাম মালিক, মুহাম্মদ তৈয়ব কাসেমির কাছে শামায়েলে মুহাম্মদিয়া, মুহাম্মদ সালেম কাসেমির কাছে শরহে ওয়াকিয়াহ অধ্যয়ন করেছেন।[4] ১৩৭৭ হিজরিতে তিনি দারসে নিজামি কোর্স সমাপ্ত করেন এবং পরে মাহদী হাসান শাহজাহানপুরীর অধীনে ফিকহশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন।[4] তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[5]
১৯৪৭ সালে তিনি ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে ভোপালের কাজী শিবিরে সংঘটিত লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন।[5] ১৯৫৮ সালে তিনি ভোপালের অন্যতম প্রাচীন ও বৃহত্তম ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া প্রতিষ্ঠা করেন।[6][7] একইসাথে তিনি মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন মাদ্রাসার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।[6] তিনি মধ্যপ্রদেশের দারুল উলুম দেওবন্দের ‘রাবেতা মাদারিসে ইসলামিয়া’র রাজ্য সভাপতিও ছিলেন।[6] মধ্যপ্রদেশে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের বিস্তারে তার ভূমিকা রয়েছে।[8] ১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত তিনি এই সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।[9] ২০০৮ সালে সংগঠনটি বিভক্ত হওয়ার পর তিনি আরশাদ গ্রুপের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি এবং মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।[10] ১৯৫৮ সালে তিনি ভোপালের ‘দারুল কাদা’র (ইসলামি আদালত) সহকারি মুফতি নিযুক্ত হন এবং ১৯৬৮ সালে প্রধান বিচারক হিসেবে পদোন্নতি পান।[11] তিনি ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত ভোপাল শহরের মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[11] তাকে মধ্যপ্রদেশের গ্র্যান্ড মুফতি (মুফতিয়ে আজম) বিবেচনা করা হয়।[12] তিনি ভিন্নমতাবলম্বী নেতাদের সাথে বৈঠক করে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির প্রচার করেছিলেন।[13] তিনি একজন স্পষ্টভাষী বক্তা ছিলেন এবং মুসলিমদের পরিস্থিতি অনুযায়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা মোকাবেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।[14][15]
২০১৬ সালে তিনি মধ্যপ্রদেশে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দলের কার্যক্রমের নিন্দা করেন; তিনি মুসলমানদের শান্তি বজায় রাখতে এবং রাজ্যের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে এমন দাঙ্গা বা অন্যান্য কার্যক্রমে জড়িত না হওয়ার জন্য বলেছিলেন।[14] তিনি একটি আদেশে বলেছিলেন, ‘যদি কেউ আপনাকে আক্রমণ করে এবং আপনার কাছে অন্যান্যদের দাঙ্গাকারীদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তাকে হত্যা করা ছাড়া আর কোনও সমাধান না থাকে তবে দ্বিধা করবেন না, এগিয়ে যান’। তিনি মধ্যপ্রদেশের রাজনৈতিক নেতাদেরও এই ডানপন্থী সংগঠনগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং মুসলমানদের উপর আক্রমণ এবং নির্যাতন চালানো থেকে বিরত রাখতে বলেছিলেন।[15] তিনি বলেছিলেন, ‘তারা যদি না থামে, তবে মুসলমানরাও চুড়ি পরে না।’[15] মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দিবেন প্যাটেল তাকে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহনের জন্য সম্মানিত করেছিলেন।[16]
তিনি ২০২১ সালের ২৬ মে মৃত্যুবরণ করেন।[6] দিগ্বিজয় সিং, কমলনাথ এবং শিবরাজ সিংহ চৌহান তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন।[13][17] সমাহিত করার আগে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়েছিল।[18]
প্রকাশনা
তিনি ৫০টিরও বেশি বই রচনা করেছেন যার মধ্যে রয়েছে:
- সরজমিনে হিন্দ: আম্বিয়া কিরাম ওয়া ইসলাম
- কুরআন মে কেয়া হে?
- আজাদি, আসলাফ আওর জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ
- ইসলমি জিন্দেগী: পায়দাস ছে জান্নাত তক
- আহলে কুরআন ও আহলে কিতাব
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
উদ্ধৃতি
- "স্বাধীনতা সংগ্রামী মুফতি আব্দুর রাজ্জাক খান আর নেই"। ইটিভি ভারত। ২৭ মে ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০২১।
- আব্দুল মাবুদ কাসেমি ২০১০, পৃ. ১১৩।
- আব্দুল মাবুদ কাসেমি ২০১০, পৃ. ১৩৯।
- আব্দুল মাবুদ কাসেমি ২০১০, পৃ. ১৪৬–১৪৯।
- আব্দুল মাবুদ কাসেমি ২০১০, পৃ. ২৪১–২৪২।
- "জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের সহ-সভাপতি মুফতি আবদুর রাজ্জাক খান ভোপালী ইন্তেকাল করেছেন"। বাছিরাত অনলাইন। ২৭ মে ২০২১।
- "মুফতিয়ে আজম আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের মৃত্যু, শহর জুড়ে শোকের ছায়া"। দৈনিক ভাস্কর (হিন্দি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০২১।
- আব্দুল মাবুদ কাসেমি ২০১০, পৃ. ৩৪০–৩৪১।
- সালমান মনসুরপুরী, সম্পাদক (মে ২০১২)। তাজকিরাহ ফিদায়ে মিল্লাত। নতুন দিল্লি: জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ। পৃষ্ঠা ১০৪২–১০৪৪। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০২১।
- আব্দুল মাবুদ কাসেমি ২০১০, পৃ. ৩২৯।
- আব্দুল মাবুদ কাসেমি ২০১০, পৃ. ২২২।
- "মধ্যপ্রদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী মুফতি আব্দুর রাজ্জাক গ্র্যান্ড মুফতির মৃত্যু"। আসরে হাজির (উর্দু ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুন ২০২১।
- "ভোপাল: বিশিষ্ট মুসলিম ধর্মগুরু মুফতি আবদুল রাজ্জাক ভোপালে মারা গেছেন, কোভিড প্রোটোকল প্রয়োগের জন্য পুরনো শহরে মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী"। দি ফ্রি প্রেস জার্নাল। ২৭ মে ২০২১।
- সামির (১৯ জানুয়ারি ২০১৬)। "মুফতি আবদুর রাজ্জাক দাঙ্গার সময় মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে নির্দেশ দেন"। দি ছিয়াছত ডেইলি।
- আব্দুল মাবুদ কাসেমি ২০১০, পৃ. ২৫৮–২৬০।
- "রাজ্যপাল ১২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মানিত করেছেন"। এমপিইনফো.অর্গ। ২৭ জানুয়ারি ২০২১। ২৬ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০২১।
- "ফ্রিডম ফাইটার এন্ড ইসলামিক স্কলার ডাইস"। আউটলুক ইন্ডিয়া। ২৭ মে ২০২১।
- "মুফতি আবদুর রাজ্জাককে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়"। নয়া দুনিয়া (হিন্দি ভাষায়)। ২৭ মে ২০২১।
গ্রন্থপঞ্জি
- আব্দুল মাবুদ কাসেমি (২০১০)। মুফতি আব্দুর রাজ্জাক খান, হালাত ও খিদমাত মে তারিখ তারজুমা ওয়ালি মসজিদ (উর্দু ভাষায়)। জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া।