মীরা দেববর্মণ

মীরা দেববর্মন (মার্চ ১৯১৯ - ১৫ অক্টোবর ২০০৭) হলেন ভারতের একজন খ্যাতনামা গীতিকার এবং সঙ্গীত শিল্পী। তিনি ভারতের প্রখ্যাত সুরকার শচীন দেব বর্মনের স্ত্রী এবং রাহুল দেব বর্মনের মাতা।

মীরা দেববর্মণ
মীরা দেববর্মণ
জন্ম
মীরা দাশগুপ্ত
পেশাসহকারী সংগীত পরিচালক, কণ্ঠশিল্পী
দাম্পত্য সঙ্গীশচীন দেববর্মণ
সন্তানরাহুল দেববর্মণ

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

মীরা দেব বর্মনের জন্ম বাংলাদেশের কুমিল্লায় ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে। ছোটবেলা থেকে দাদু ও দিদিমার বাড়ীতে থাকতেন। তার দাদু রায় বাহাদুর কমলনাথ দাশগুপ্ত ছিলেন ঢাকা হাইকোর্ট-এর চিফ জাস্টিস। পড়াশুনো সঙ্গে সঙ্গে তিনি সঙ্গীত শিক্ষা নিতেন। সঙ্গীত গুরু ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নিয়েছেন। কীর্তন ও ঠুমরী শেখেন সঙ্গীতাচার্য ধীরেন্দ্রনাথ দেবের কাছে। ১৯৩০ সালে আনাদি দস্তিদারের কাছে রবীন্দ্র সঙ্গীতের শিক্ষা লাভ করেন। তিনি নাচ শিখেন শান্তিনিকেতনে আমিতা সেনের কাছে।

পরিণয়

কথিত আছে, সঙ্গীতগুরু ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের তালিম নেওয়ার সময় পরিচয় হয় ভীষ্মদেবের আর এক কৃতী ছাত্র শচীন দেববর্মনের সঙ্গে। গুরুর থেকে বয়সে বছর ২-৩ ছোটো ছিলেন শচীন। শোনা যায় যে মীরা দেবী ও শচীনের প্রেম ভীষ্মদেব খুব একটা ভালো চোখে দেখেননি এবং তার ঠিক পরেই আরো দু’একটা ঘটনা নিয়ে শচীন কর্তা ও ভীষ্মদেবের সম্পর্কের মধ্যে একটা শীতলতা এসে পড়ে। ভীষ্মদেব সব ছেড়েছুড়ে পন্ডিচেরী চলে যান।

মতান্তরে, ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে এলাহাবাদ নিখিল ভারত সঙ্গীত সম্মেলনে শচীন দেববর্মনের সাথে তার পরিচয় হয়। সেই বছরই তিনি শচীন দেববর্মনের শিষ্যত গ্রহণ করেন এবং একই বছরে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর শচীন দেব বর্মন মীরা দেববর্মনের লেখা কয়েকটি গানে সুর প্রদান করেন।

কর্মজীবন

বিবাহের বছরে অল ইন্ডিয়া রেডিও, কলকাতা থেকে অডিশন দিয়ে উত্তীর্ণ হন। শচীন দেব বর্মনের সঙ্গে বম্বে গিয়ে মীরা দেবী ফয়াজ মহম্মদ খানের কাছে আবার তালিম নিতে শুরু করলেন। ১৯৪৫ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিও, বোম্বে থেকে অডিশন পাশ করে ঠুংরি ও গজল পরিবেশন করতেন। সেই সময় তিনি দুইটি নাটক শান্তি ও নয়া প্রভাতের গানের কথা রচনা করেন। শচীন দেব বর্মণের সঙ্গে অনেক গানের রেকর্ডও করেন তিনি। উল্লেখযোগ্য গান গুলো হলোঃ –আজ দোল দিল কে~(১৯৪৬),তুম হ বড়ে চিতচোর ~(১৯৪৬),কেন হায় স্বপ্ন ভাঙ্গার আগে~(১৯৪৯),কালি বদরিয়া ছা গয়ে, ডালি ডালি ফুল~(১৯৪৮),কে দিল ঘুম ভাঙ্গায়ে~(১৯৪৯)।

সহকারী সংগীত পরিচালক হিসেবেও তিনি ছিলেন একজন সফল মানুষ। নয়া জমাণা, তেরে মেরে স্বপ্নে, শর্মিলি, অভিমান, বারুদ, প্রেম নগর – এই বিখ্যাত চলচ্চিত্র গুলোর সহযোগী সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন তিনি।

উল্লেখযোগ্য গান

চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্রে বাইরে মীরা দেববর্মনের গাওয়া ও লেখা অনেকগুলো গান জনপ্রিয় হয়।[1] তার লেখা উল্লেখযোগ্য গানগুলো হলোঃ

  • কে যাস্ রে ভাটি গাঙ বাইয়া
  • (আমি) তাক্ দুম তাক্ দুম বাজাই বাংলা দেশের ঢোল (১৯৭১ সালে রেকর্ডকৃত[2])
  • না আমারে শশী চেয়ো না
  • বর্ণে, গন্ধে, ছন্দে, গীতিতে হৃদয়ে দিয়েছ দোলা
  • বিরহ বড় ভালো লাগে
  • রাতের আতরে ভিজাইয়া আদরে
  • শোনো গো দখিন হাওয়া, প্রেম করেছি আমি
  • ও বাঁশি ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা পান খাইয়া যাও
  • নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক, পায়েলখানি বাজে
  • সুবল রে বল বল

মৃত্যু

১৯৭৫ সালে স্বামী এবং ১৯৯৪ সালে পুত্রের মৃত্যুর পর মীরা দেববর্মনের জীবনযাপন বেশ কঠিন হয়ে পরে; এমতাবস্থায় ত্রিপুরা সরকার তাকে মুম্বাইতে স্থানান্তর করেন। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে মুম্বাইতে রাহুল দেব বর্মনের বাড়িতে নিয়ে রাখা হয়। পরবর্তীতে ঐ বছরেরই ১৫ অক্টোবর তারিখে দীর্ঘকালীন রোগভোগের কারণে তার মৃত্যু হয়।

তথ্যসূত্র

  1. "দৈনিক প্রথম আলো তে প্রকাশিত সংবাদ"। ২০১৪-০৪-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-১২
  2. "গানের রাজকুমার"www.prothom-alo.com। ২০০৯-১০-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-০৭
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.