মিনীয় জনগোষ্ঠী

গ্রিক পুরাণ ও ঈজিয়ান অঞ্চলের কিংবদন্তি ইতিহাস অনুসারে মিনীয়রা ( ইংরেজি: Minyans, গ্রিক: Μινύες, Minyes) ছিল ঈজিয়ান অঞ্চলের একটি স্থানীয় ও আদিম গোষ্ঠী, যারা ঈজিয়ান অঞ্চলে বসবাস করত। কিন্তু ঈজিয়ান বিশ্ব কতটা কিংবদন্তি জনগোষ্ঠীগুলোর লিখিত দলিলে প্রকাশিত হয়েছে, ও কত মাত্রায় তাদের বস্তুগত সংস্কৃতি ভাষাভিত্তিক নৃগোষ্ঠীর সাথে সম্পর্কিত হয়েছে তা বারবার পুনরালোচনায় বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

খ্রিস্টপূর্ব ১৪৫০ অব্দে মাইসিনীয় গ্রিকগণ ক্রিটে পৌঁছায়। কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ অব্দ থেকেই মূলভূমির গ্রিসে গ্রিকরা চলে আসে, যা সাম্প্রতিক শাফট গ্রেভ বা খাদ সমাধিতে দেখা গেছে। মিনীয় যুগের সংস্কৃতির অনেক কিছু এই গ্রিকদের থেকে পাওয়া। তাদের বস্তুগত সংস্কৃতির অন্যান্য বিষয়গুলো এসেছে উত্তরাঞ্চলীয় গ্রিস ও বলকান থেকে, বিশেষ করে তাদের টুমুলাস গ্রেভ বা স্তুপ সমাধি এবং ছিদ্রযুক্ত পাথুরে কুঠার। জন এল. ক্যাস্কি ১৯৫০ এর দশকে যেসব প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য সম্পন্ন করেন সেগুলো থেকে তিনি ব্যাখ্যা করেন, প্রত্ন-গ্রিকগণ মিনীয় সংস্কৃতির (বা মধ্য হেলাডীয় সংস্কৃতির) বাহক ছিল। আরও সাম্প্রতিক শিক্ষায়তনিকগণ তার খননকৃত সামগ্রীসমূহের ডেটিং বা কালনির্ণয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বা সংশোধন করেছেন। তারা এই বস্তুগত সংস্কৃতির সাথে ভাষাভিত্তিক জাতিসত্তার সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন।

সনাতনী গ্রিকদের দ্বারা "মিনীয়" শব্দের প্রয়োগ

বোকাচ্চিও এর ডি ম্যুলিয়েরিবাস ক্লারিস এর মিনীয়দের স্ত্রীগণ

গ্রিকগণ সবসময় স্পষ্টভাবে মিনীয়দেরকে পেলাসজীয় সংস্কৃতি থেকে পৃথক করেনি, যারা তাদের পূর্বে গ্রিসে বসবাস করত। গ্রিক পৌরাণিকগণ মিনীয় জাতির জন্য তাদের সমনামের জাতির প্রতিষ্ঠাতা চরিত্র দান করেন যার নাম মিনিয়াস। মিনিয়াস সম্ভবত পেলাসগাস মতই কিংবদন্তি চরিত্র ছিলেন, যাকে পেলাসজীয়দের প্রতিষ্ঠাতা চরিত্র হিসেবে ধরা হয়। বিস্তৃত পরিসরে পেলাসজীয়রা গ্রিকদের আগমনের পূর্বের ঈজীয় জনগোষ্ঠী। এই মিনীয়দেরকে বিওটিয়া অঞ্চলের অরকোমেনাস এর সাথে সম্পর্কিত করা হয়। পসানিয়াস লিখেছেন, "টিওসে অর্কোমেনাসের মিনীয়রা বসবাস করত, যারা অ্যাথামাসের সাথে সেখানে প্রবেশ করে।"[1] মিনীয়রা একটি শাসক রাজবংশ ও গোত্রকে নির্দেশ করে যারা পরবর্তীতে বিওটিয়া অঞ্চলে অবস্থিত ছিল।

হেরোডোটাস কয়েকবার বলেন, পেলাসজীয়গণ দূর অতীতে অ্যাটিকায় অ্যাথেনীয়গণের সাথে বসবাস করত, আর সেই পেলাসজীয়দেরকে অ্যাটিকা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়, যার ফলে একসময় লেমনস থেকে মিনীয়রা বের হয়ে আসে (লেমনস একটি ঈজীয় দ্বিপ বা ঈজিয়ান সাগরীয় দ্বিপ)[2]। তিনি আরও বলেন, অ্যামিকলাই অঞ্চলের মিনীয়রা খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ অব্দে থেরায় এসে বসবাস শুরু করে (থেরা ঈজিয়ান সাগরের দক্ষিণাঞ্চলের স্যান্টরিনি দ্বীপের একটি অঞ্চল, যা বর্তমানে স্যান্টরিনির রাজধানী)।[3]

গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী, বীর হেরাক্লেসের কার্যকলাপ সবসময় পুরনো ঐতিহ্যের চেয়ে নতুন অলিম্পীয় শাসনকেই সমর্থন ও উদযাপন করেছে। হেরাক্লেস থিব্‌সে আসেন যা গ্রিসের একটি প্রাচীন মাইসিনীয় শহর। এসে দেখেন, গ্রিকরা প্রতি বছর মিনীয়দের রাজা আরগিনাসকে ১০০টি করে গবাদি পশু (হেকাটোম্ব) রাজস্ব দান করছে।[4] হেরাক্লেস মিনীয়দের রাজস্ব আদায় কর্মকর্তাদের একটি দলকে আক্রমণ করেন ও তাদের কান, নাক ও হাত কেটে ফেলেন। এরপর তিনি তাদের নাক, কান ও হাত তাদের গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে বলেন এই রাজস্বগুলো আরগিনাসকে প্রদান করো। আর্গিনাস থিব্‌সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু হেরাক্লেস থিব্‌সের পক্ষে যুদ্ধ করে মিনীয়দেরকে পরাজিত করেন। এজন্য তিনি থিব্‌সের সৈন্যদেরকে সেইসব অস্ত্র প্রদান করেন যেগুলো মন্দিরগুলোতে উৎসর্গ করা হয়েছিল।[5] এরপর আর্গিনাসকে হত্যা করা হয় এবং মিনীয়গণ থিবীয়দের জন্য যে পরিমাণ রাজস্ব ধার্য করেছিল তাদের উপর তার দ্বিগুণ রাজস্ব ধার্য করা হয়। হেরাক্লিসকে অর্কোমেনাসের প্রাসাদ পোড়ানোরও কৃতিত্ব দেয়া হয়: "অর্কোমেনীয়দের নগর যখন ঘুমন্ত ও অসতর্ক ছিল, তখন অতর্কিতে হেরাক্লিস এসে অর্কোমেনীয়দের নগর ও প্রাসাদ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভূমিস্যাৎ করে দেন"।[6]

আর্গোনটদেরকে কখনও কখনও মিনীয়বলাহয়, কারণ জ্যাসনের মা মিনীয়দের থেকে এসেছিলেন, এবং তার অনেক জ্ঞাতিভাইই সেই অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[7]

প্রত্নতত্ত্ব

পদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে প্রত্নতাত্ত্বিকগণ কখনও কখনও ভিন্ন অর্থে "মিনীয়" শব্দটি ব্যবহার করতেন, এর দ্বারা তারা প্রত্ন-গ্রিকভাষীদের প্রথম তরঙ্গকে বোঝাতেন যারা খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দে বর্তমান ছিল ও ছিল একটি প্রাথমিক ব্রোঞ্জ যুগীয় সংস্কৃতি যাকে তারা মধ্য হেলাডীয় সংস্কৃতি হিসেবে চিহ্নিত করতেন। ধূসর "মিনীয় পণ্যদ্রব্য" হল একটি নৃতাত্ত্বিক শব্দ যা মধ্য হেলাডীয় যুগের (আনু. খ্রিস্টপূর্ব ২১০০ - ১৫৫০ অব্দ) ঈজীয় মৃৎশিল্পের একটি বিশেষ ধরনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হত। তাই মিডল হেলাডীয় যুগের সূচনা চিহ্নিত হয় এই "মিনীয়দের" গ্রিসে অভিপ্রায়ণের মধ্য দিয়ে। এমিলি ভারমিউলার মতে, এরা ছিল গ্রিসে সত্যিকারের হেলেনীয়দের প্রথম তরঙ্গ। তবে আরও সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিক ও পুরাজাতিতত্ত্ববিদগণ এই "মিনীয়" শব্দটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এফ. এইচ. স্টাবিং মন্তব্য করেন, "মিনীয় পণ্যদ্রব্যের প্রস্তুতকারীদেরকে মিনীয় বলাটা নিন্দনীয়"।[8] ১৯৭৪ সালে এফ. জে. ট্রিশ মন্তব্য করেন, "মৃৎশিল্প শৈলী থেকে জাতিগত নাম সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রত্নতত্ত্বের সবচেয়ে শোচনীয় অভ্যাসগুলোর একটি। যখন আমরা "মিনীয়" মৃৎশিল্পকে ব্যবহারকারী জনগোষ্ঠীকে বোঝাতে চাই তখন আনন্দের সহিত সেই জনগোষ্ঠীকে "মিনীয়" হিসেবে আখ্যায়িত করি।" অবশ্য তিনি বলেছিলেন, গ্রিকগণ কখনও 'মিনীয়দেরকে' একটি গোত্র বা জনগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করেনি। কিন্তু এই কথাটি ভুল ছিল।[9]

খননকার্য

আমেরিকান স্কুল অফ ক্লাসিকাল স্টাডিস অ্যাট এথেন্স এর জন এল. ক্যাসকি ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত লারনায় তার খননকার্যের ফলাফলকে লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, মধ্য হেলাডীয় সংস্কৃতির বিষয়গুলো (যেমন ধূসর মিনীয় পণ্যদ্রব্য এবং দ্রুত মৃতশৈল্পিক চাকা) সম্ভবত তৃতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগ (Early Helladic III) থেকে উদ্ভূত হয়েছে।[10] ক্যাসকি আরও বলেছেন যে, দ্বিতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগে লারনা (এবং আর্গোলিসের টাইরিন্‌জ, আসিনি; অ্যাথেন্সের পার্শ্ববর্তী এজিওস কোসমাস, ও সম্ভবত কোরিন্থও) ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি প্রস্তাব করেন যে, দ্বিতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগের বসতিসমূহের আক্রমণকারীগণ সম্ভবত গ্রিক ভাষাভাষী ছিল, যা পরবর্তী গ্রিক ভাষার আদিরূপ। অবশ্য কোরাকউ (কোরিন্থের নিকটে) এবং বিওটিয়ার ইউট্রেসিসে তৃতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগের শেষের দিকে ধ্বংসের প্রমাণ রয়েছে। যাইহোক, ক্যাসকি খুঁজে পান যে, মধ্য হেলাডীয় জনগোষ্ঠী মাইসিনীয় ও পরবর্তী গ্রিকদের প্রত্যক্ষ পূর্বপুরুষ।[11][Note 1][Note 2]

যদিও পণ্ডিতগণ আজ একমত যে মাইসিনীয় গ্রিকগণ মধ্য হেলাডীয় যুগের "মিনীয়দের" উত্তরপুরুষ,[12] ইন্দো-ইউরোপীয় আক্রমণকারীগণ গ্রিস জুড়ে দ্বিতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় বসতিগুলো ধ্বংস করেছে- ক্যাসকি-এর এই প্রস্তাব নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলেন।[13][Note 3] প্রকৃতপক্ষে ক্যাসকি লার্না ও টাইরিন্‌জে যে ধ্বংসাবশেষের স্তর খুঁজে পান সেগুলো আগুনের দ্বারা ধ্বংস হয়। এছাড়া এই বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে যে, তৃতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগ দ্বিতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় সংস্কৃতি থেকে সরাসরি এসেছে।[14][Note 4] সব মিলিয়ে, এই নির্দেশনাগুলো এটাই ইঙ্গিত দেয় যে, "মিনীয় সংস্কৃতির" পূর্বপুরুষ ও প্রতিষ্ঠাতাগণ গ্রিসের একটি স্থানীয় গোষ্ঠী ছিল।[15][Note 5]

আরও দেখুন

  • মিনিয়াস
  • বিওটিয়া
  • গ্রাইকে
  • গ্রাইয়া
  • ওগিগেস
  • পেলাসজীয় জনগোষ্ঠী
  • প্রাক-গ্রিক সাবস্ট্রেট
  • ক্লোরিস
  • পার্সিফোনি

টীকা

  1. হুডের মতে, " 'দ্য আর্লি হেলাডিক পিরিয়ড ইন দ্য আর্গোলিড' নামে একটি প্রবন্ধে (Hesperia 29 (1960), 285 ff.) জে. ক্যাসকি ১৯৫২-১৯৫৮ সালের খননকার্যের ফলাফল নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে নিয়ে আসেন: এখানকার বসতিগুলো (যার মধ্যে প্রাসাদের 'হাউস অফ টাইলস' ও একটি) দ্বিতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগে (তৃতীয় লারনা) কোন আক্রমণকারীর দ্বারা আগুনের কারণে ধ্বংস হয়। তৃতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় বসতি (চতুর্থ লারনা) এই আক্রমণকারীদের অধীনে ছিল। তৃতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগের সীমান্ত থেকে খোদাই করা হাড়ের ফলক ও কাঁদামাটির এঙ্কর গহনা আসে (Hesperia 23 (1954), 22 pl. 9 g; 25 (1956), pl. 47 1-p; 26. (1957), pl. 42 e)। মনে হয় মধ্য হেলাডীয় যুগ (পঞ্চম লারনা) কোন রকম সহিংসতা ছাড়াই শুরু হয়, যদিও এই যুগপরিবর্তন ছিল নতুন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভবের দ্বারা বিশেষভাবে চিহ্নিত, যেমন ম্যাট-অঙ্কিত মৃৎশিল্প (matt-painted pottery) এবং বসতির মধ্যে সমাধিস্থান তৈরির রীতি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ছিল, যা দিয়ে এযাবৎকাল পর্যন্ত মধ্য হেলাডীয় যুগকে চিহ্নিত করা হয় তা হল, ধূসর মিনীয় পণ্যদ্রব্য এবং দ্রুত মৃৎশিল্পীদের চাকা, যেগুলোর উদ্ভব হয় তৃতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগে। ক্যাসকি উল্লেখ করেন যে, আর্গোলিসের টাইরিন্‌জ ও আসিনি, এথেন্সের পার্শ্ববর্তী আইওস কোসমাস, ও সম্ভবত কোরিন্থ, সবই সম্ভবত লারনার মত দ্বিতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগে ধ্বংস হয়। এটাকে প্রস্তাব করা হয় যে আক্রমণকারীরা এইসব দ্বিতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগীয় বসতিসমূহকে ধ্বংস করার জন্য দায়ী, এবং তারা পরবর্তীতে আসা গ্রিক ভাষার আদি রূপে কথা বলত, অর্থাৎ সাধারণ অর্থে তারা গ্রিক ছিল। অবশ্য তৃতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগে কোরাকউ (কোরিন্থের পাশে) এবং বিওটিয়ায় ইউট্রেসিসে ধ্বংশের প্রমাণ রয়েছে।"
  2. ক্যাসকি মন্তব্য করেন, "কেবলমাত্র মধ্য ব্রোঞ্জ বস্তু হিসেবেই যেগুলোকে চিহ্নিত করা হয়, উদাহরণস্বরূপ সেই ধূসর মিনীয় পণ্যদ্রব্য ও দ্রুত মৃৎশিল্পীদের চাকার উদ্ভব তৃতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগে হয়েছে বলে এখন দেখা হয়। কে. মিলার টাইরিন্‌জে প্রাথমিক হেলাডীয় ও মধ্য হেলাডীয় যুগের মধ্যে একটি স্পষ্ট বিভেদ রেখা বের করতে সক্ষম হন নি। তৃতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগের আসিনে, জাইগোরিয়েস ও আঘিওস কোসমাস এর ধ্বংসকে তাদের কালনির্ণয় সঠিক কিনা তা ভেবে আর সত্যায়িত করা হয়না। কোরাকউ এবং ইউট্রেসিসের উপর তৃতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগের ধ্বংসাবশেষের উপরে থাকা ছাইয়ের স্তর ছিল, এবং অন্যান্য স্থানে দুর্যোগের সম্ভাবনা খুবই অল্প। এই প্রস্তাবে যে জাতি ও অভিপ্রায়ণের বিষয়টি লুকিয়ে আছে তা নিয়ে আলোচনা করা ছেলেমানুষী হবে এবং এই গবেষণাপত্রের আওতায়ও তা পড়বে না। মধ্য হেলাডীয় জনগোষ্ঠী যে "মাইসিনীয়" ও তাই পরবর্তী গ্রিকদের পূর্বপুরুষ ছিল সেই বিশ্বাস এই গবেষণাপত্রের দ্বারা প্রভাবিত হয়না। প্রশ্ন হচ্ছে, এই তৃতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগের মানুষেরা হয়তো মধ্য হেলাডীয় যুগের মানুষের সাথে সম্পর্কিত ছিল না, এবং তাই মাইসিনীয় গ্রিকদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পূর্বপুরুষও ছিল না। প্রাক-গ্রিক স্থানীয় নামগুলো, যেগুলোর তাৎপর্যকে ব্লেগান ও অন্যেরা সতর্কতার সাথে বিবেচনা করেছেন, সেগুলোকে দ্বিতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগের সাথে সম্পর্কিত বলে মনে হয়।"
  3. ডিয়েট্রিচের মতে, "এরকম বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ছিল ইউট্রেসিস ও মধ্য গ্রিসের পুরোনো বসতিসমূহ ধ্বংস, সিস্ট-গ্রেভ সমাধির বিস্তার, নতুন বসতির উদ্ভব, এবং "মেগারন ধাচের স্থাপত্যের উদ্ভব।" একই সময়ে সমগ্র গ্রিস জুড়ে তথাকথিত ধূসর মিনীয় পণ্যদ্রব্য দেখা যায়, এবং এই বিশিষ্ট ধরনের পণ্যদ্রব্য উত্তর থেকে আক্রমণকারী ইন্দো-ইউরোপীয় গোষ্ঠীর মৃৎশিল্পের সাথে প্রাকৃতিকভাবেই জড়িত ছিল, যেমনটা ছিল তাদের সংস্কৃতি ও ধর্ম। কিন্তু এগুলোর কোন বিষয়ই সম্পূর্ণভাবে নতুন ছিল না, অর্থাৎ এর পূর্বের যুগে নতুন কেউ প্রবেশ করেনি। আর তাই এটি অনিবার্যভাবেই মধ্য হেলাডীয় যুগের শুরুতে গ্রিসে ইন্দো-ইউরোপীয় বা অন্য কোন জাতির দ্বারা আক্রমণের তত্ত্বটি নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি করে... তাই এটা বলা যায়, গ্রিসে তৃতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগে কোন আক্রমণ হয়েছিল এই ধারণার কোন বিশ্বাসযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক ভিত্তি নেই। অবশ্যই এটা সম্ভব যে, সেই সময় অভিপ্রায়ণ ঘটেছিল, কিন্তু তার কোন প্রত্নতাত্ত্বিক চিহ্ন নেই। কিন্তু এটা একটি বিপজ্জনক ও অকার্যকরী যুক্তি। এটাই ভাল যে এই বিশ্বাস ও কোন বড় পরিসরে, হঠাৎ ও স্পষ্ট সাংস্কৃতিক বিভেদ ছিল এরকম ধারণাকে পরিত্যাগ করা।"
  4. ক্লাসিক ডিপার্টমেন্ট এট ডার্থমাউথ কলেজের চেয়ারম্যান জেরেমি বি. রাটার এর লেকচার নোটগুলো অনুসারে: "আর্গোলিসে লারনা ও টাইরিন্‌জে এই সাংস্কৃতিক সমষ্টি পাওয়া যায় যেগুলো কোরাকউ এর বসতিগুলোর (দ্বিতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগ - A) উপর সরাসরি প্রস্তরীভূত হয়ে আছে এবং যা আগুন দ্বারা ধ্বংস হয়েছিল। আর্গোলিস ও কোরিন্থিয়ার অন্যান্য স্থানে কোন মধ্যবর্তী প্রথম লেফকান্দি (দ্বিতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগ - B) দশা পাওয়া যায়নি। দক্ষিণ পেলোপনিসের ল্যাকোনিয়া ও মেসেনিয়ায় বা টাইরিন্‌জ সংস্কৃতিতেও প্রথম লেফকান্দির কোন প্রমাণ নেই (ব্যতিক্রম হচ্ছে নিকোরিয়ায় ও অ্যানো এংলিয়ানোস এর নিকটের ডেরিজিওটিস সাইটের বেসাল লেভেল খুবই শেষের দিকের তৃতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগের সাংস্কৃতিক বিষয়াবলি পাওয়া গেছে বলে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে), যদিও এই স্থানগুলো খুব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। বরং, আইওস স্টেফানোস (ল্যাকোনিয়া) এবং ভোইধোকইলা (মেসেনিয়া) প্রত্নস্থলে কোরাকউ সংস্কৃতির পর একটি প্রাথমিক মধ্য হেলাডীয় সাংস্কৃতিক সমষ্টিকে দেখা যায়, সেটি হয় কোরাকউ সংস্কৃতির পরপরই হয়, নাহলে একটি অনির্ণেয় সময়কালের জন্য পরিত্যাগের সময়কালের পর হয়। ঈজিনার কোলোনায়, টাইরিন্‌জ সংস্কৃতির ধ্বংসাবশেষ প্রস্তরীভূত হয়ে আছে ঠিক দ্বিতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগের সাংস্কৃতিক সমষ্টির উপরেই, যেখানে সেই দ্বিতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগের সংস্কৃতির স্থাপত্য স্থাপত্য কোরাকউ সংস্কৃতির তৃতীয় লারনা সাথে তুলনীয় (সেখানে একটি সম্ভাব্য সুরক্ষিত বসতি ছিল যার ভেতরে "করিডোর হাউজ" ধাচের ২০ X ৯ মিটার "হোয়াইট হাউজ" রয়েছে যা লারনায় আবিষ্কৃত হাউজ অফ টাইলস এর সাথে তুলনীয়), কিন্তু এর মৃৎশিল্পের মধ্যে মধ্য গ্রিসের "প্রথম লেফকান্দি" এর মৃৎশিল্পের ধরনের কিছু নমুনা পাওয়া গেছে, সেই সাথে পাওয়া গেছে কিছু পণ্যদ্রব্য যা দ্বিতীয় প্রাথমিক হেলাডীয় যুগ - A কোরাকউ সংস্কৃতির।"
  5. কোরেস এর মতে, "প্রোটো-গ্রিকগণ মধ্য হেলাডীয় স্তুপের একটি পিথই এর মধ্যে মৃতদেহ সৎকার করত, যার উদ্ভব হয় ভূমধ্যসাগরীয়-ঈজীয় অঞ্চল থেকে। তারা স্থানীয় ছিল, উত্তর গ্রিস থেকে অভিপ্রায়ণ করেনি, যা কুরগান জনগোষ্ঠীর তরঙ্গগুলোর আগমনের তত্ত্ব অনুসারে বিশ্বাস করা হয়। লিউকাস এর উত্তরে কোন পিথই সমাধি দেখা যায়নি, যা এ. হাউসলারের উপসংহারকে নিশ্চিত করে। তা হল, গ্রিসের কোথাও কুরগান জনগোষ্ঠীর আগমনের প্রমাণ নেই।"

তথ্যসূত্র

সাইটেশনস

  1. Pausanias. Description of Greece, 7.3.6.
  2. Herodotus. Histories, 1.57, 2.51.7, 2.51.12.
  3. Herodotus. Histories, 4.145ff.
  4. Bibliotheke 2.4.11 records the origin of the Theban tribute as recompense for the mortal wounding of Clymenus, king of the Minyans, with a cast of a stone by a charioteer of Menoeceus in the precinct of Poseidon at Onchestus; the myth is reported also by Diodorus Siculus, 4.10.3.
  5. Heracles' behavior showed that Bronze Age rules of social decorum were over: "the deeds of Heracles," Carlo Pavese observed in another context, "can scarcely be adduced as an apt paradigm of the customary" (Pavese, "The New Heracles Poem of Pindar", Harvard Studies in Classical Philology 72 (1968:47-88) p. 54.
  6. Diodorus Siculus. Bibliotheke, 4.10.5.
  7. Ovid ও More 1922, Metamorphoses, 7: "The Minyans were stark with fear"; Valerius ও Walker 2004, পৃ. 146–147.
  8. Stubbings, reviewing Albert Severyns, Grèce et Proche-orient avant Homère in The Classical Review New Series 11.3 (December 1961:259).
  9. Crossland ও Birchall 1973, পৃ. 236 under "The 'Sackers of Cities' and the 'movement of populations'" by F. J. Tritsch.
  10. Caskey 1960, পৃ. 285–303.
  11. Hood 1960, পৃ. 8–9; Caskey 1960, পৃ. 302
  12. Hadidi 1982, পৃ. 121: "Sea-faring was scarcely native to the ancestors of the Mycenaean Greeks, ie the Middle Helladic Minyans".
  13. Dietrich 1973, পৃ. 1–3.
  14. Rutter 1996, Lesson 8: The "Lefkandi I" and Tiryns Cultures of the Early Helladic IIB and Early Helladic III Periods.
  15. Cambitoglou ও Descœudres 1990, পৃ. 7 under "Excavations in the Region of Pylos" by George S. Korrés.

উৎস্যসমূহ

বহিঃস্থ সূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.