মালেরকোটলা রাজ্য

মালেরকোটলা রাজ্য বা মালার কোটলা ব্রিটিশ ভারতের আমলে পাঞ্জাব অঞ্চলের একটি দেশীয় রাজ্য ছিল। মালার কোটলার সর্বশেষ শাসক ২০ আগস্ট ১৯৪৮ ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদানের জন্য প্রবেশাধিকার স্বাক্ষর করেন। এর শাসকরা একটি পাঠান রাজবংশের অন্তর্গত ছিল, এবং এর রাজধানী মালারকোটলায় ছিল। রাজ্যটি পাঞ্জাব স্টেট এজেন্সির মালিকানাধীন ছিল।

মালেরকোটলা রাজ্য

ਮਲੇਰਕੋਟਲਾ ਰਿਆਸਤ
مالیرکوٹلہ رِیاست
১৬৫৭–১৯৪৮
জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
নীতিবাক্য: Heaven's Light Our Guide[1]
১৯০৯ সালে পাঞ্জাব এজেন্সিতে পাতিয়ালা ও লুধিয়ানা সীমান্তে অবস্থিত মালেরকোতা রাজ্য
রাজধানীমালেরকোতা
প্রচলিত ভাষাউর্দু, ইংরেজি, পাঞ্জাবি
সরকারশর্তহীন রাজতন্ত্র
মালেরকোতার নবাব 
 ১৬৭২ - ১৭১২
শের মুহাম্মদ খান বাহাদুর (প্রথম)
 ১৭১২ - ১৭১৭
গুলাম হুসাইন খান
 ১৭১৭ - ১৭৬২
জামাল খান
 ১৭৬২ - ১৭৬৩/৬৪
ভিকান খান
 ২৩ আগস্ট ১৯০৮ – ১৫ আগস্ট ১৯৪৭
আহমাদ আলি খান (সর্বশেষ)
ইতিহাস 
 প্রতিষ্ঠা
১৬৫৭
১৫ আগস্ট ১৯৪৮
জনসংখ্যা
 
৭৭,৫০৬
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
মুঘল সাম্রাজ্য
ভারত

ভারত বিভাগের সময় সর্বশেষ নবাব ইফতেখার আলী খান মালার কোটলায় অবস্থান করেন এবং ১৯৮২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে সিরহান্ডি গেটে অবস্থিত শাহী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। তবে মালারকোটলা রাজ্যের ক্ষমতাসীন পরিবারের একটি অংশ পাকিস্তানে চলে যান এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা বেশিরভাগই মডেল টাউন, লাহোর এবং মুজাফফরগড় এবং খানগড়ে বাস করেন।[2]

ইতিহাস

পূর্ববর্তী রাজ্য ১৪৫৪ সালে শেখ সদরুদ্দিন-ই-জাহান নামের আফগানিস্তান এলাকার শেরওয়ানি উপজাতির একজন ধার্মিক ব্যক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং তার বংশধরদের দ্বারা শাসিত হয়।[3]

স্থানীয় ঐতিহ্য বলছে যে বেহল লোধি (১৪৫১-১৫১৭), আফগান রাজা যার নিয়ন্ত্রণে পশ্চিম ভারতের অধিকাংশ অংশ ছিল, দিল্লি শাসন করার ইচ্ছা পোষণ করে দিল্লি যাওয়ার পথে, তিনি একটি চোরাবালিতে আটকে গিয়েছিলেন[4]। অন্ধকারে রাজা দেখলেন বাতাসে একটি প্রদীপ জ্বলছে। এটা ছিল শেখ সদরুদ্দিনের কুঁড়েঘর এবং যখন রাজা এটি জানতে পারেন তখন তিনি তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কুঁড়েঘরে আসেন। এরপর তিনি পবিত্র লোকটিকে তার জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি একটি পুত্র সন্তান লাভ এবং বিজয় কামনা করে দোয়া করতে বলেন।[4] ১৪৫১ ও ১৪৫২ সালে রাজা দিল্লিতে সিংহাসনে বসার পর তার মেয়ে তাজ মুরাসাকে শেখ সাদরুদ্দিনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন এবং তাকে জাগির হিসেবে মালারকোটলা এলাকা প্রদান করেন।[4]

পরবর্তীতে শেখ সদরুদ্দিনের বংশধররা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন। একটি অংশ রাজ্য শাসন কিরতে শুরু করে এবং তাদের মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থানের সময় নবাব উপাধি দেওয়া হয়।[4] অন্য শাখাটি শেখ সদরুদ্দিনের মাজারের চারপাশে বাস করত, তীর্থযাত্রীদের কাছ থেকে তার রাজস্ব আদায় করত।[4]

মালারকোটলা রাজ্য ১৬৫৭ সালে বায়েজিদ খান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। বাঘের আক্রমণে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের জীবন বাঁচানোর পর বায়াজিদ খানকে একটি দুর্গ নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হয়। বায়েজিদ দুর্গ নির্মাণ করে এর নাম মালারকোটলা নামকরণ করেন এবং অবশেষে এটিকে রাজ্যের নাম দেন। ৩ মে ১৮০৯ সালে মালার কোটলা ব্রিটিশ রাজের অধীনস্হ হয়ে পরে এবং ১৮৬২ সাল পর্যন্ত রাজ্যটিকে সিআইএস-সুতলেজ রাজ্যের অংশ করা হয়। ১৮৯০ সালে মালারকোটলা পাঞ্জাব দরবারে ১২তম স্থান লাভ করে। ১৯৪৭ সালের দাঙ্গার সময় যখন পাঞ্জাব অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়, তখন মালারকোটলা রাজ্য সহিংসতার একটি ঘটনারও সাক্ষী হয় নি; এই সব কিছুর মাধ্যমে, এটি ছিল শান্তির একটি নিঃসঙ্গ দ্বীপ।[3][5]

এ এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শিকড় প্রোথিত হয় ১৭০৫ সালে, যখন সাহেবজাদা ফতেহ সিং এবং সাহেবজাদা জোরাওয়ার সিং, শিখ গুরু, গুরু গোবিন্দ সিং এর ৯ ও ৭ বছর বয়সী পুত্র, স্যারহিন্দের গভর্নর ওয়াজির খানের কাছ থেকে জীবিত উদ্ধার করার আদেশ দেওয়া হয়। তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, মালারকোটলার নবাব শের মোহাম্মদ খান, যিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন, তিনি এই অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং বলেন যে এটি ইসলাম বিরোধী। তা সত্ত্বেও ওয়াজির খান জীবিত অবস্থায় সাহেবজাদাদের নির্যাতন এবং দেয়ালের একটি অংশে তাদের ঠুকতেন। এ সময় মালারকোটলার নবাব প্রতিবাদে আদালত থেকে বেরিয়ে আসেন। গুরু গোবিন্দ সিং এই ধরনের এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখে মালারকোটলার নবাবকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানান এবং তাঁর হুকামনামা, কিরপান ইত্যাদি দিয়ে তাঁকে আশীর্বাদ করেন। এই আইনের স্বীকৃতি স্বরূপ, মালারকোটলা রাজ্য বিভাজনের সময় সহিংসতার একটি ঘটনারও সাক্ষী হয়নি। অনেক স্থানীয় মানুষ এই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য সুফি সাধু বাবা হায়দার শেখের মাজারের উপস্থিতিকে উল্লেখ করেছেন, যিনি ৫০০ বছর আগে মালারকোটলা শহরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[6][7]

নবাব শের মোহাম্মদ খান গুরু গোবিন্দ সিং পরিবারের একজন মহিলাকে বিয়ে করেন যিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, তাই সকল পরবর্তী নবাব মায়ের দিক থেকে গুরু হরগোবিন্দ সিং ঊর্ধ্বতন পুরুষ।

ভারতের স্বাধীনতা এবং ১৯৪৮ সালে ভারতীয় ইউনিয়নে প্রবেশাধিকারের চুক্তি স্বাক্ষরের পর, মালার কোটলা ১৯৫৬ সালে পাঞ্জাবের সাথে একত্রীকরণের আগ পর্যন্ত পাতিয়ালা ও পূর্ব পাঞ্জাব রাজ্য ইউনিয়ন (পেপসু) নবপ্রতিষ্ঠিত রাজ্য যোগ দান করেন।

শাসকগণ

শাসকদের 'নবাব' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। তাদের ১১ টি তোপধ্বনি দেওয়া হতো।

নাম রাজত্ব শুরু রাজত্ব শেষ
শের মুহাম্মদ খান বাহাদুর (জন্ম ১৬৪০ - মৃত্যু ১৭১২) ১৬৭২ ১৭১২
গোলাম হোসেন খান (মৃত্যু ১৭৩৪) ১৭১২ ১৭১৭
জামাল খান (মৃত্যু ১৭৬২) ১৭১৭ ১৭৬২
ভিকান খান (মৃত্যু ১৭৬৩/৬৪) ১৭৬২ ১৭৬৩/৬৪
খান সাহেব খান বাহাদুর খান (মৃত্যু ১৭৬৬) - রিজেন্ট ১৭৬৪ ১৭৬৬
খান সাহেব উমর খান (মৃত্যু ১৭৮০) ১৭৬৬ ১ নভেম্বর ১৭৮০
খান সাহেব আসাদুল্লাহ খান (মৃত্যু ১৭৮৪) ১ নভেম্বর ১৭৮০ এপ্রিল ১৭৮৪
খান আতাউল্লাহ খান (মৃত্যু: ১৮০৯) এপ্রিল ১৭৮৪ ১৪ আগস্ট ১৮০৯
মুহাম্মদ উজির `আলী খান (জন্ম ১৬ .. - মৃত্যু ১৮২১) ১৪ আগস্ট ১৮০৯ ৪ সেপ্টেম্বর ১৮২১
আমির আলী খান বাহাদুর (মৃত্যু ১৮৪৬) ৪ সেপ্টেম্বর ১৮২১ ৮ এপ্রিল ১৮৪৬
১০ মাহবুব আলী খান বাহাদুর (মৃত্যু ১৮৫৭) "সুবে খান" ৮ এপ্রিল ১৮৪৬ ২৫ নভেম্বর ১৮৫৭
১১ এস্কান্দার আলী খান বাহাদুর (মৃত্যু ১৮৭১) ২৫ নভেম্বর ১৮৫৭ ১৬ জুলাই ১৮৭১
১৩ মোহাম্মদ ইব্রাহিম আলী খান (জন্ম ১৮৫৭ - মৃত্যু ১৯০৮) ১৬ জুলাই ১৮৭১ ২৩ আগস্ট ১৯০৮
স্যার আহমদ আলী খান রিজেন্ট ১ ফেব্রুয়ারি ১৯০৫ ২৩ আগস্ট ১৯০৮
১৩ আহমদ আলী খান (জন্ম ১৮৮১ - মৃত্যু ১৯৪৭) - ভারতে প্রবেশের ব্যবস্থা করেন ২৩ আগস্ট ১৯০৮ ১৫ আগস্ট ১৯৪৭

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. The motto of the Order of the Star of India
  2. Malerkotla Muslims ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে The India Express, 14 August 1997.
  3. Goyal, Sushil (১৯ আগস্ট ২০০৬)। "'Malerkotla has Guru's blessings'"The Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৩
  4. "Study of the Pathan Communities in four States of India"। Khyber। ১৪ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০০৭
  5. A people's gratitude ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ মে ২০০৮ তারিখে The Sikh Review, Issue No. 14, November 2003
  6. The Legend of Malerkotla: A Tale from the Punjab (2004) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে 48 min, DVD, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮০২৬-০৭৬১-৪.
  7. Bigelow, Anna B (২ ডিসেম্বর ২০০০)। "Malerkotla: A heritage going to seed"The Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৩

 এই নিবন্ধটি একটি প্রকাশন থেকে অন্তর্ভুক্ত পাঠ্য যা বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনে: চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Maler Kotla"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ17 (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা 487।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.