মালু মিয়া
মালু মিয়া (জন্ম: অজানা- মৃত্যু: ২০০৯) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [1]
মালু মিয়া | |
---|---|
মৃত্যু | ২০০৯ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মালু মিয়ার জন্ম নরসিংদী জেলার রায়পুর উপজেলার দড়িগাঁও গ্রামে। তার বাবার নাম আফতাবউদ্দিন মিয়া। তার স্ত্রীর নাম আমেনা বেগম। তাদের তিন মেয়ে, চার ছেলে।
কর্মজীবন
মালু মিয়া চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দিনাজপুর ইপিআর সেক্টরে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন। তাকে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের চার্লি (সি) কোম্পানিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জামালপুর জেলার বাহাদুরাবাদ, দেওয়ানগঞ্জ, সিলেট জেলার ছাতক, সালুটিকর, টেংরাটিলাসহ আরও কয়েকটি স্থানে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। [2]
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালে সুরমা নদীর তীরে ছাতকে পাকিস্তানি বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি ছিলো। এটি ছিলো ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ১০-১১ মাইল দূরে। ১৪ অক্টোবর ভোরে মুক্তিবাহিনীর ব্যাটালিয়ন শক্তির একটি দল সেখানে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন কয়েকটি দলে বিভক্ত। এই আক্রমণে চার্লি (সি) দলে ছিলেন মালু মিয়া। এই দলের ওপর দায়িত্ব ছিল কাটঅফ পার্টি হিসেবে কাজ করার। যাতে দোয়ারা বাজার হয়ে ওয়াপদার বাঁধ বা সুরমা নদীপথ ধরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কোনো রিইনফোর্সমেন্ট না আসতে পারে। ১৩ অক্টোবর রাতে মালু মিয়ারা ভারতের বাঁশতলা থেকে রওনা হন। তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান নেওয়ার কথা ছিল ছাতকের কাছে টেংরাটিলায়। খুব ভোরে কয়েকটি নৌকায় সেখানে পৌঁছামাত্র তাদের নৌকার দিকে ধেয়ে আসে গুলিবৃষ্টি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের সব নৌকায় একযোগে আক্রমণ চালায়। আকস্মিক এই ঘটনার জন্য মালু মিয়ারা মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। প্রথম ধাক্কাতেই তাদের দলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তার সহযোদ্ধা অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ বা আহত হন। গুলিবৃষ্টির মধ্যে জীবন বাঁচাতে তিনি ও তার সহযোদ্ধারা পানিতে ঝাঁপ দেন। নৌকাগুলো পানিতে ডুবে যায়। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কারও কারও অস্ত্র হাত থেকে পানিতে পড়ে হারিয়ে যায়। জীবন-মৃত্যুর চরম এই সন্ধিক্ষণে মালু মিয়া মনোবল হারাননি। চারদিকে গভীর পানি। আশপাশে ছিল না কোনো শুকনা স্থান বা আশ্রয় নেওয়ার জায়গা। গুলিবৃষ্টির মধ্যে সেখানে থাকা মানে নির্ঘাত প্রাণ হারানো। তার পরও সহযোদ্ধাদের বাঁচাতে তিনি সাঁতাররত অবস্থায় তার অস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি শুরু করেন। তার সাহসিকতা দেখে অন্যান্য যাঁদের অস্ত্র হারিয়ে যায়নি তারা কেউ কেউ অনুপ্রাণিত হয়ে গুলি করা শুরু করেন। এতে অস্ত্রহীন মুক্তিযোদ্ধাদের পশ্চাদপসরণে সুবিধা হয়।[3]
পুরস্কার ও সম্মাননা
তথ্যসূত্র
- "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২৫-০৭-২০১২"। ২০১৪-০১-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩।
- একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৯৫। আইএসবিএন 9789843351449।
- একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৫৮। আইএসবিএন 9789849025375।
পাদটীকা
- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।