মানব বসতি

ভূগোল, পরিসংখ্যানপ্রত্নতত্ত্বে মানব বসতি (ইংরেজিঃ Human Settlement) হল এমন একটি সম্প্রদায় যেখানে মানুষ বসবাস করে। ডিকশনারি অফ জিওগ্রাফি অনুসারে "স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য কোন স্থানে এক বা একাধিক মানুষ যখন বসবাস করতে শুরু করে, তখন তাকে বসতি বলে।"[1] বিখ্যাত ভূগোলবিদ টেরি, জি, জনসন বলেন, "বসতি হল সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্যের ধরন সম্পর্কিত অধ্যয়ন।" সুতরাং বলা যায় যে, কোন একটি স্থানে মানুষ একত্রিত হয়ে স্থায়ীভাবে বা অস্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য যে অবয়ব তৈরি করে তাকেই মানব বসতি বলে।

ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা-সিন্ধু সভ্যতায় মানব বসতির নির্দশন

বসতিতে প্রথাগত ভাবে তার নিজস্ব নির্মিত সুযোগ-সুবিধা, যেমন রাস্তা, বেষ্টনী, মাঠ পদ্ধতি, নদীতীর ও খাল, পুকুর, পার্কবন, বায়ুকল ও পানিকল, জমিদার মহল, পরিখা, মসজিদ, মন্দির, গির্জা বিদ্যমান থাকে।[2]

প্রকারভেদ

বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে মানব বসতির শ্রেণীবিভাগ করা হয়।[3]

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনুসারে

বসতিতে বসবাসকারী জনগোষ্টির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপরভিত্তি করে মানব বসতিকে ২টি ভাগে ভাগ করা যায়।

গ্রামীণ বসতি

    • যে বসতির সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী জীবিকা অর্জনের জন্য প্রথম পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিশেষত কৃষির উপর নির্ভরশীল সেই বসতিকেই গ্রামীণ বসতি বলা হয়। গ্রামীণ বসতি বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত ও গোষ্ঠীবদ্ধ যেকোনো একটি হতে পারে।

স্থিতিকাল অনুসারে

স্থিতিকাল অনুসারে বসতি ৩ প্রকার। যথা:

  • ক্ষণস্থায়ী বসতি:যে বসতি বছরের খুব অল্প সময়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, এবং বাকি সময় অব্যবহৃত থাকে তাকে ক্ষণস্থায়ী বসতি বলে।
  • অস্থায়ী বসতি:যে বসতি অস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য নির্মিত হয় তাকে অস্থায়ী বসতি বলে।
  • স্থায়ী বসতি:স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য যে বসতি নির্মিত হয় তাকে স্থায়ী বসতি বলে।

অবস্থান অনুসারে

অবস্থান অনুসারে মানব বসতি ৩ প্রকার। যথা:

  • জলাময় বসতি: কোনো বড় জলাশয় (যেমন নদী, হ্রদ, সমুদ্র) এর তীরবর্তী এলাকায় যে বসতি গড়ে ওঠে তাকে জলাময় বসতি বলে।
  • পাহাড়ী বসতি: পাহাড়ী অঞ্চলে যে বসতি গড়ে ওঠে তাকে পাহাড়ী বসতি বলে।
  • সমতল বসতি:সমতল অঞ্চলে যে বসতি গড়ে ওঠে তাকে সমতল বসতি বলে।

আকৃতি অনুসারে

আকৃতি অনুসারে বসতি চার প্রকার। যথা:

  • দন্ডবসতি:যাতায়াতের সুবিধার্থে যখন লোকজন নদী বা রাস্তার দুই ধারে বসতি গড়ে তুলে তবে তাকে দন্ড বসতি বলে।
  • সমকোনী বসতি:যে স্থানে দুই বা তিনটি রাস্তা সমকোনে বা ইংরেজি Y আকারে মিলিত হয় তবে তাকে দন্ড বসতি বলে।
  • চৌমাতা বসতি:দুটি রাস্তা পরস্পরকে ছেদ করেছে এমন রাস্তাকে চৌমাতা বসতি বলে।
  • বৃত্ত বসতি:নিরাপত্তার কারণে নিরাপদ ঘাঁটি বা স্থানকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকারে যে বসতি গড়ে ওঠে তাকে বৃত্ত বসতি বলে।

বিন্যাস অনুসারে

বিন্যাস অনুসারে মানব বসতি ৫ প্রকার। যথা:

  • সারিবন্ধ বসত:কোনো নদী বা সড়কের দুই ধারে সারিবন্ধভাবে গড়ে ওঠা বসতিকে সারিবন্ধ বসতি বলে।
  • অনুকেন্দ্রিক বসতি:কোনো একটি বিশেষ স্থানকে কেন্দ্র করে চক্রাকারে গড়ে উটা বসতিকে অনুকেন্দ্রিক বসতি বলে।
  • সংঘবদ্ধ বসতি:যখন অনেকগুলো বসতি খুব কাছাকাছি বসবাস করে তখন তাকে সংঘবদ্ধ বসতি বলে।
  • বিছিন্ন বসতি:যখন কোনো অঞ্চলের পরিবারগুলো এলোমেলো ভাবে বসবাস করে তখন তাকে বিছিন্ন বসতি বলে।
  • বিক্ষিপ্ত বসতি:যখন কোনো বসতির মধ্যো কৃষিভূমি, জলাভূমি, বনভূমি থাকার কারণে পরিবারগুলো দূরে অবস্থান করে তখন তাকে বিক্ষিপ্ত বসতি বলে।

জনসংখ্যার আকার অনুসারে

জনসংখ্যার আকার অনুযায়ী বসতি চার প্রকার। যথা:

  • খামার বাড়ি:একটি কৃষিজমিকে কেন্দ্র করে এক বা একাধিক পরিবার মিলে যে বসতি গড়ে ওঠে তাকে খামার বাড়ি বলে।
  • পাড়া:সাধারণত অল্প কয়েকটি পরিবার মিলে একটি পাড়া তৈরি হয়।
  • ক্ষুদ্রগ্রাম:কয়েকটি পাড়ার সমন্বয়ে একটি ক্ষুদ্রগ্রাম গঠিত হয়।
  • বড়গ্রাম:অনেকগুলো পাড়া নিয়ে একটি বড়গ্রাম গঠিত হয়। এশিয়া মহাদেশএর বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং বাংলাদেশএর হবিগণ্জ্ঞ জেলায় অবস্থিত।

মানব বসতির নিয়ামকসমূহ

মানব বসতি গড়ে উঠার পেছনে যে সকল উপাদান কাজ করে তাদের কে মানব বসতির নিয়ামক বলে। মানব বসতির নিয়ামক সমূহ প্রধানত ২ প্রকার।

প্রাকৃতিক নিয়ামক সমূহ

ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, পরিবেশ, মাটির উর্বরতা, পানির প্রাপ্যতা, অরণ্য ইত্যাদি

সামাজিক নিয়ামকসমূহ

  • অর্থনীতি: যে অঞ্চলে খলিজ সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ অধিক পরিমাণে পাওয়া যায় যেখানে বসতি গড়ে ওঠে।
  • সংস্কৃতি: যে অঞ্চলে একই ধরনের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট বিদ্যমান যেখানে মানব বসতি গড়ে ওঠে।
  • সমাজ: একই সামাজিক বৈশিষ্টসম্পন্ন মানুষ একত্রে বসবাসের জন্য মানব বসতি গড়ে তোলে।
  • রাজনীতি: রাজনৈতিক কারণেও অনেক সময় বসতির স্থান পরিবতর্তিত হয়।

তথ্যসূত্র

  1. Dictionary of Geography- Smith
  2. "Medieval Settlement Research Group"Medieval Settlement
  3. হাসিবুশ শহীদ ও গাউছার রেজা; মাধ্যমিক ভূগোল; ঢাকা: অক্ষরপত্র প্রকাশনী।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.