মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক
মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের অন্তর্গত মৌলভীবাজার জ়েলার বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলিতে অবস্থিত একটি ইকোপার্ক।[1][2] পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে অন্যতম বিখ্যাত এই স্থানটিতে বর্তমানে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের রেস্টহাউজ ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এই ইকোপার্কের অন্যতম আকর্ষণ হলো মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, পরিকুণ্ড জলপ্রপাত, শ্রী শ্রী মাধবেশ্বরের তীর্থস্থান, এবং চা বাগান।
অবস্থান
মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তী থানা বড়লেখার ৮ নম্বর দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের অধীন গৌরনগর মৌজার অন্তর্গত পাথারিয়া পাহাড়ের গায়ে এই মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের স্রোতধারা বহমান এবং এই পাহাড় থেকে পতনশীল। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতকে ঘিরেই এই ইকোপার্কটি গড়ে ওঠে। এই পাথারিয়া পাহাড়, সিলেট সদর থেকে ৭২ কিলোমিটার, মৌলভীবাজার জেলা থেকে ৭০ কিলোমিটার, কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন থেকে ৩২ কিলোমিটার এবং কাঁঠালতলী থেকে ৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।[3]
দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত হিসেবে সমধিক পরিচিত। পাথারিয়া পাহাড় (পূর্বনাম: আদম আইল পাহাড়) কঠিন পাথরে গঠিত; এই পাহাড়ের উপর দিয়ে গঙ্গামারা ছড়া বহমান। এই ছড়া মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত হয়ে নিচে পড়ে হয়েছে মাধবছড়া। অর্থাৎ গঙ্গামারা ছড়া হয়ে বয়ে আসা জলধারা [১২ অক্টোবর ১৯৯৯-এর হিসাবমতে] প্রায় ১৬২ ফুট উঁচু থেকে নিচে পড়ে মাধবছড়া হয়ে প্রবহমান। সাধারণত একটি মূল ধারায় পানি সব সময়ই পড়তে থাকে, বর্ষাকাল এলে মূল ধারার পাশেই আরেকটা ছোট ধারা তৈরি হয় এবং ভরা বর্ষায় দুটো ধারাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় পানির তীব্র তোড়ে। জলের এই বিপুল ধারা পড়তে পড়তে নিচে সৃষ্টি হয়েছে বিরাট কুণ্ডের। এই মাধবছড়ার পানি পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হতে হতে গিয়ে মিশেছে হাকালুকি হাওরে।[3]
কুণ্ডের ডানপাশে পাথরের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে একটি গুহার, যার স্থানীয় নাম কাব। এই কাব দেখতে অনেকটা চালাঘরের মতো। মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে স্নানর্থীরা কাবের নিচে দাঁড়িয়ে ভিজা কাপড় পরিবর্তন করে থাকেন।[3]
পরীকুণ্ড জলপ্রপাত
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ছাড়াও এই ইকোপার্কে রয়েছে আরেকটি জলপ্রপাত, যা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত থেকে অনতিদূরে অবস্থিত। শিবমন্দির-এর বিপরীত দিকের ছড়া ধরে গেলে এই জলপ্রপাতের দেখা পাওয়া যায়। এই জলপ্রপাতটি পরীকুণ্ড জলপ্রপাত নামে পরিচিত। তবে এই জলপ্রপাতটি কেবল বর্ষাকালেই প্রাণ ফিরে পায়।[4]
তীর্থক্ষেত্র
কথিত আছে, পুরাকালে গৌরী দেহান্তরিত হলে মহাদেব (মাধবেশ্বর)প্রিয়াবিরহে ব্যথাকাতর মনে প্রিয়ার নিষ্প্রাণ দেহ কাঁধে নিয়ে অনির্দিষ্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। এই যাত্রায় গৌরীর দেহের অংশ যেখানে যেখানে পড়েছে, সেখানে সৃষ্টি হয়েছে তীর্থক্ষেত্রের। আর পাথারিয়ার গভীর অরণ্যে গৌরীর একটা অংশ পড়েছে বলে দাবি করা হয়, যার কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ মিলেনি।[3]
উদ্ভিদবৈচিত্র্য
মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক এলাকায় এককালে কমলা বাগান ছিল; ছিলো আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, সুপারি ও পানের বাগান। এখানে ফলতো লেবুসহ অন্যান্য ফলমূল। এছাড়া ছিল বিভিন্ন প্রকার বনজ গাছপালা।[3] কিন্তু বর্তমানে এর অধিকাংশই অতীত। "সামাজিক বনায়ন"-এর নামে প্রাকৃতিক গাছপালা কেটে ফেলে রোপণ করা হয়েছে বিভিন্ন হাইব্রিডজাতীয় গাছপালা, যেমন: একাশিয়া (স্থানীয় নাম আকাশি)। ঔষধি ও অর্থকরি গাছ আগরও আছে রোপণ তালিকায়। কিন্তু প্রাকৃতিক বন নষ্ট করে এই সামাজিক বনায়ন শ্রেফ পরিবেশ ধ্বংসই করেছে বেশি।
শকুনের নিরাপদ এলাকা
শকুনের নিরাপদ এলাকা-১ তফসিল অনুসারে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক শকুনের জন্য নিরাপদ বলে ঘোষিত।[5]
আদিবাসী নৃগোষ্ঠী
মাধবকুণ্ড এলাকায় বাস করে আদিবাসী খাসিয়ারা। খাসিয়ারা গাছে গাছে পান চাষ করে থাকে।[3] মাধবছড়াকে ঘিরে খাসিয়াদের জীবনযাত্রা আবর্তিত হয়।
আরো দেখুন
তথ্যসূত্র
- "বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৮-১৯" (পিডিএফ)। বন অধিদপ্তর। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
- "বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৭-১৮" (পিডিএফ)। বন অধিদপ্তর। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
- গোপাল দত্ত বাবলু (২০০০)। "মাধবকুণ্ড"। কালী প্রসন্ন দাস, মোস্তফা সেলিম। বড়লেখা: অতীত ও বর্তমান (প্রিন্ট) (ফেব্রুয়ারি ২১, ২০০০ খ্রিস্টাব্দ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ড। পৃষ্ঠা ১৪৬-১৫২।
- বেড়ানো: বর্ষায় মৌলভীবাজার, মুস্তাফিজ মামুন, কড়চা, দৈনিক ইত্তেফাক, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১; সংগ্রহের তারিখ: ১১ অক্টোবর ২০১২।
- "শকুনের নিরাপদ এলাকা"। রক্ষিত এলাকা। ২০১৭-০৯-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-২৮।