মাদার ইন্ডিয়া

মাদার ইন্ডিয়া ১৯৫৭ সালের ভারতীয় মহাকাব্যিক নাট্য চলচ্চিত্র। এটি পরিচালনা করেছেন মেহবুব খান। অভিনয়ে ছিলেন নার্গিস (অভিনেত্রী), সুনীল দত্ত, রাজেন্দ্র কুমার এবং রাজ কুমার। এটি খানের পূর্বের অরাত (১৯৪০) চলচ্চিত্রের পুননির্মাণ, যেটি রাধা (নার্গিস) নামে এক দারিদ্র্যপীড়িত গ্রামের মহিলার গল্প, যিনি তার স্বামীর অনুপস্থিতিতে, ছেলেদের লালন-পালনের জন্য লড়াই করেন এবং ধূর্ত-ধনদাতার বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াই করছেন।

মাদার ইন্ডিয়া
মূল শিরোনামमदर इण्डिया
পরিচালকমেহবুব খান
প্রযোজকমেহবুব খান
রচয়িতা
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকারনওশাদ
চিত্রগ্রাহকফারিদুন এ ইরানি
সম্পাদকশামসুদ্দিন কাদরি
প্রযোজনা
কোম্পানি
মেহবুব প্রোডাকশন
মুক্তি
  • ২৫ অক্টোবর ১৯৫৭ (1957-10-25) (ভারত)
দৈর্ঘ্য১৭২ মিনিট
দেশভারত
ভাষা
আয়প্রা.৮০ মিলিয়ন[2]

চলচ্চিত্রের শিরোনামটি মার্কিন লেখক ক্যাথরিন মেয়োর ১৯২৭ সালের তর্কশাস্ত্রীয় বই মাদার ইন্ডিয়া থেকে বেছে নেওয়া হয়, যেখানে ভারতীয় সংস্কৃতির নিন্দা করা হয়েছিল। চলচ্চিত্রে হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি সম্পর্কে প্রচুর পরিমাণে আলোচনা রয়েছে এবং গল্পে প্রধান চরিত্রটিকে একজন প্রথাগত হিন্দু মহিলার স্বরূপ উপস্থাপনা হিসেবে দেখা গেছে, যিনি উচ্চ নৈতিক মূল্যবোধ এবং আত্মত্যাগের মাধ্যমে সমাজে মা হওয়ার অর্থ-ধারণার প্রতিফলন ঘটায়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মাদার ইন্ডিয়া রূপকভাবে ভারতকে একটি জাতি হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে এবং জাতীয়তাবাদ ও দেশ গঠনের দৃঢ় বোধ চিত্রায়িত করে। যদিও কয়েকজন লেখক রাধাকে নারী ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করার পরে, অন্যরা মহিলা স্টেরিওটাইপ অভিনেতা হিসেবে তাকে বিবেচনা করেছেন। বম্বের (বর্তমানে মুম্বই) মেহবুব স্টুডিওস এবং মহারাষ্ট্র, গুজরাতউত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন গ্রামে চলচ্চিত্রটির দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিল। নওশাদ চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনায় হিন্দি চলচ্চিত্রের সাথে পশ্চিমা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং অর্কেস্ট্রা সহ বিশ্বব্যাপী সঙ্গীতের প্রবর্তন করেছিলেন।

নির্মাণকালীন সময়ে এটি ছিল ব্যয়বহুল হিন্দি চলচ্চিত্রের (বলিউড) একটি এবং সেই সময়ে ভারতীয় চলচ্চিত্রের মধ্যে সর্বাধিক আয় করেছিল। মুদ্রাস্ফীতিতে সামঞ্জস্যের পরও, মাদার ইন্ডিয়া বর্তমানেও সর্বকালের ভারতীয় বক্স অফিস হিটগুলির মধ্যে রয়েছে। এটি ১৯৫৭ সালের অক্টোবরে জাকজমকভাবে ভারতে মুক্তি পেয়েছিল এবং রাজধানী নয়া দিল্লিতে এটির একাধিক হাই-প্রোফাইল প্রদর্শনী হয়েছিল, যার মধ্যে দেশটির তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। মাদার ইন্ডিয়া একটি অবির্তিত সাংস্কৃতিক ধ্রুপদী চলচ্চিত্র হয়ে উঠেছে এবং ভারতীয় ও বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচিত। চলচ্চিত্রটি ১৯৫৭ সালে শ্রেষ্ঠ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য অল ইন্ডিয়া সার্টিফিকেট অব মেরিট, এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছে, যেখানে নার্গিস এবং খান যথাক্রমে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীশ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে পুরস্কার জিতেছিলেন। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের জন্য ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে মনোনীত হয়েছিল।

অভিনয়ে

  • নার্গিস – রাধা, মূল চরিতে একজন ঐতিয্যগত ভারতীয় মহিলা
  • সুনীল দত্ত – বির্জু, রাধার বিদ্রোহী কনিষ্ঠ ছেলে, যিনি দস্যুতে পরিণত হন
  • রাজেন্দ্র কুমার – রামু, রাধার জৈষ্ঠ্য ছেলে, যিনি তার মায়ের শুদ্ধাচার অনুসারী
  • রাজ কুমার – শামু, রাধার স্বামী
  • কন্যা লাল – সুখীলালা "লালা", একটি ধূর্ত অর্থ-ঋণদাতা
  • জিলু মা – সুন্দর-চাচী, রাধার শাশুড়ি
  • কুমকুম – চম্পা, রামুর স্ত্রী
  • চঞ্চল – রূপা, সুখীলালার কন্যা
  • শীলা নায়েক – কমলা, পারিবারিক বন্ধৃ
  • মুকরি – শম্ভৃ, পারিবারিক বন্ধৃ, এবং কমলার'র স্বামী
  • মাস্টার সুরেন্দ্র – তরুণ রামু
  • সিতারাদেবী – হোলি নৃত্যশিল্পী
  • আজরা – চন্দ্রা, গ্রামের এক স্কুল শিক্ষকের কন্যা
  • মাস্টার সাজিদ – তরুণ বির্জু
এছাড়াও অন্যান্য
  • সিদ্দিকী, রাম শাস্ত্রী, ফকির মোহাম্মদ, গীতা, হামীদা, মাস্তান, নওয়াব খান এবং মাস্টার আলেক


পুরস্কার

মাদার ইন্ডিয়া, নার্গিস এবং মেহবুব খান অনেক পুরষ্কার এবং মনোনয়ন পেয়েছিলেন। নার্গিস ১৯৫৮ সালে ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন এবং প্রথম ভারতীয় হিসেবে বর্তমান চেক প্রজাতন্ত্রের কার্লোভি ভ্যারি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। মাদার ইন্ডিয়া সেরা চলচ্চিত্রের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করে এবং খানের জন্য সেরা পরিচালক, ফারদুন ইরানির জন্য সেরা সিনেমাটোগ্রাফার, এবং আর কৌশিকের জন্য সেরা সাউন্ড সহ আরও বেশ কয়েকটি ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার অর্জন করে। ১৯৫৮ সালে, চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্রের জন্য একাডেমি পুরস্কারের জন্য ভারতের প্রথম জমা দেয় এবং এই বিভাগের জন্য পাঁচটি মনোনয়নের মধ্যে একটি হিসাবে নির্বাচিত হয়। ১২০ মিনিট দীর্ঘ এই আন্তর্জাতিক সংস্করণটি অস্কারের জন্য পাঠানো হয়েছিল। উপরন্তু, এই সংস্করণে ইংরেজি সাবটাইটেল ছিল, এবং মেহবুব প্রোডাকশনের লোগোটি বাদ দেওয়া হয়েছিল, যা কমিউনিস্ট হাতুড়ি এবং কাস্তে বৈশিষ্ট্যযুক্ত ছিল, একাডেমিকে তুষ্ট করার জন্য। ১২০ মিনিটের সংস্করণটি পরে কলাম্বিয়া পিকচার্স দ্বারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে বিতরণ করা হয়েছিল। চলচ্চিত্রটি একাডেমি পুরস্কার জয়ের কাছাকাছি এসেছিল কিন্তু ফেডেরিকো ফেলিনির নাইটস অফ ক্যাবেরিয়ার কাছে একক ভোটে হেরে যায়। খান পুরষ্কারটি জিততে না পেরে পুরোপুরি হতাশ হয়েছিলেন। "তিনি অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলি মাঠে দেখেছিলেন এবং বিশ্বাস করতেন যে মাদার ইন্ডিয়া তাদের চেয়ে অনেক উন্নত," কয়েক দশক পরে সুনীল দত্ত স্মরণ করেছিলেন। এটি ১৯৫৭ সালে ৫ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারে দুটি পুরষ্কার জিতেছিল: সেরা ফিচার ফিল্মের জন্য অল ইন্ডিয়া সার্টিফিকেট অফ মেরিট এবং হিন্দিতে সেরা ফিচার ফিল্মের জন্য সার্টিফিকেট অফ মেরিট।

পুরস্কার বিভাগ মনোনীত ফলাফল
১১তম কার্লোভি ভ্যারি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেরা অভিনেত্রী নার্গিস বিজয়ী
৩০তম একাডেমি পুরস্কার সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র মেহবুব খান মনোনীত
৫ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হিন্দিতে সেরা ফিচার ফিল্ম বিজয়ী
৫ম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র
সেরা পরিচালক
সেরা অভিনেত্রী নার্গিস
শ্রেষ্ঠ সিনেমাটোগ্রাফি ফারদুন ইরানি
সেরা সাউন্ড ডিজাইন আর কৌশিক


সঙ্গীত

মাদার ইন্ডিয়া
নওশাদ কর্তৃক সাউন্ডট্র্যাক অ্যালবাম
মুক্তির তারিখ২৫ অক্টোবর ১৯৫৭[3]
শব্দধারণের সময়মেহবুব স্টুডিও[4]
ঘরানাফিল্ম সাউন্ডট্র্যাক
সঙ্গীত প্রকাশনীEMI Records
নওশাদ কালক্রম
উরন খাটোলা
(১৯৫৫)
মাদার ইন্ডিয়া
(১৯৫৭)
সোহনি মাহিওয়াল
(১৯৫৮)

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.