মাচিস

মাচিস (অনু.দেশলাই কাঠি) হল আর ভি পণ্ডিত প্রযোজিত এবং গুলজার পরিচালিত ১৯৯৬ সালের ভারতীয়, একটি বিশেষ সময়কালের রাজনৈতিক রোমাঞ্চকর চলচ্চিত্র। এতে চন্দ্রচুর সিং, ওম পুরি, তাবু এবং জিমি শেরগিল মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ছবিতে ১৯৮০ এর দশকে পাঞ্জাবে শিখ বিদ্রোহ উত্থানের পরিস্থিতি চিত্রিত হয়েছে।

মাচিস
মাচিসের ডিভিডি কভার।
পরিচালকগুলজার
প্রযোজকআর ভি পণ্ডিত
রচয়িতাগুলজার
শ্রেষ্ঠাংশেচন্দ্রচুর সিং
তাবু
ওম পুরি
জিমি শেরগিল
সুরকারবিশাল ভারদ্বাজ
চিত্রগ্রাহকমনমোহন সিং
সম্পাদকএম রবি ও সদানন্দ শেঠি
পরিবেশকইরোস ইন্টারন্যাশনাল
মুক্তি২৫শে অক্টোবর ১৯৯৬
দৈর্ঘ্য১৬৮ মিনিট
দেশভারত
ভাষাহিন্দি
নির্মাণব্যয়২২.৪৭ কোটি

শিরোনামটি রূপক হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল, যাতে বোঝায় যে কোনও জাতির যুবক দেশলাই কাঠির মত, কোন অন্যায় অবিচার হলে সেটি যে কোন সময় জ্বলে উঠতে পারে।

মাচিস সমালোচনামূলক এবং বাণিজ্যিক উভয় দিকেই সাফল্য পেয়েছিল। গুলজারের নির্দেশনা এবং বিশাল ভরদ্বাজের সংগীত এই ছবির শক্তিশালী দিক ছিল। আজকের দিনেও, ছবিটির অনেক গান, বিশেষত "চপ্পা চপ্পা চরখা চলে" এবং "ছোড় আয়ে হাম ও গলিয়াঁ" গানদুটি এফএম রেডিও বা টিভি চ্যানেলগুলিতে বাজতে শোনা যায়।

পাঞ্জাব সমস্যার দিকে ফিরে মাচিস এর মূল কারণগুলি খুঁজে বের করার চেষ্টা করে।

ঘটনা

কাহিনীটি ভারতের ১৯৮০ এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে পাঞ্জাবের পটভূমিতে তৈরি হয়েছিল। অপারেশন ব্লু স্টার, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তীকালে ১৯৮৪ শিখ বিরোধী দাঙ্গার পরবর্তী পাঞ্জাব ধ্বংসের মুখে চলে গিয়েছিল।

যশবন্ত সিং রন্ধাওয়া (রাজ জুৎসি) এবং তার বোন বীরেন্দর "বীরান" (তাবু) পাঞ্জাবের একটি ছোট্ট গ্রামে তাদের বৃদ্ধ মা বিজির সাথে থাকে। কৃপাল সিং (চন্দ্রচুর সিং) হল যশবন্তের শৈশবের বন্ধু এবং বীরানের বাগদত্ত। সে তার দাদুর সাথে কাছেই থাকে।

তাদের শান্তিপূর্ণ জীবনে এসে হাজির হয় সহকারী পুলিশ কমিশনার খুরানা এবং ইন্সপেক্টর ভোহরার নেতৃত্বে একদল পুলিশ। তারা জিমির (জিমি শেরগিল) খোঁজ চালাচ্ছিল, যে ভারতীয় সংসদ সদস্য কেদার নাথকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। যশবন্ত মজা করে পুলিশকে জিমি নামে তার কুকুরের দিকে নিয়ে যায়। ক্রুদ্ধ হয়ে খুরানা এবং ভোহরা যশবন্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধরে নিয়ে যায়। কয়েকদিনের মধ্যেও সে না ফেরায়, কৃপাল খোঁজ শুরু করে। কিন্তু সেই অঞ্চলের বিভিন্ন থানা খুঁজেও সে যশবন্তের খোঁজ পায়নি। শেষ পর্যন্ত ১৫ দিনের পরে যখন যশবন্ত ফিরে এলে দেখা যায় পুলিশ তাকে প্রচণ্ড মারধর করেছে। এতে কৃপাল অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়।

পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কোনও আইনি উপায়ে সহায়তা না পেয়ে, কৃপাল তার সম্পর্কিত ভাই জিতেকে খুঁজতে বার হয়, যার সঙ্গে জঙ্গি দলগুলির সম্পর্ক ছিল। জিতেকে খুঁজে না পেয়ে কৃপাল সনাতন (ওম পুরি) নামে এক ব্যক্তির মুখোমুখি হয়, যাকে সে বাসে টাইম বোমা লাগাতে দেখেছিল। সনাতন কৃপালকে তার সাথে "কমান্ডার" দ্বারা চালিত ট্রাকে (কুলভূষণ খারবান্দা) নিতে রাজি হয়, ট্রাকে ছিল দেশি বোমা এবং দুজন জঙ্গি। তাদের আস্তানাতে পৌঁছে কৃপাল তার দুর্দশা বর্ণনা করে এবং জানতে পারে যে পুলিশের চর হওয়ার কারণে জিতেকে কমান্ডার নিজেই হত্যা করেছিল। কৃপালের অবস্থা, পরিবার এবং তার পরিস্থিতি সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন হয়ে, পেশাদার খুনির খোঁজে তাদের কাছে আসার জন্য কমান্ডার কৃপালকে তীব্র তিরস্কার করে। কমান্ডার কৃপালকে বলে খুরানাকে নিজেই হত্যা করতে, এবং বলে দল তাকে রক্ষা করবে।

কৃপাল আস্তে আস্তে দলের বাকি অংশের এবং সানাতনের সম্মান অর্জন করে। সনাতন তাকে বোঝায় যে, সে জাতীয়তাবাদী বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে নয়, বরং সে তার মৌলিক নাগরিক অধিকার এবং আত্ম-সম্মানের জন্য লড়াই করছে। সে আরো বলে যে তারা এমন একটি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করছে যা নিরপরাধ এবং সাধারণ মানুষকে মূল্যহীন করে তুলেছে। পরে জানা গেছে যে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের সময় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছিল সনাতন, এর পরে ১৯৮৪ সালের শিখ বিরোধী দাঙ্গায় তার পরিবারের বেশিরভাগ লোককে সে হারিয়েছিল। সনাতন দাবি করে যে ক্ষমতাসীন শ্রেণি রাজনৈতিক লাভের জন্য সমাজকে ধর্ম দ্বারা বিভক্ত করার চেষ্টা করছে।

কৃপাল দলটির সাথে প্রশিক্ষণ নেয় এবং খুরানাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এক বছর পর এক ব্যস্ত বাজারের মধ্যে সে খুরানাকে হত্যা করে। আত্মগোপনে যাওয়ার আগে সে একবার শেষবারের মত যশবন্ত ও বীরানকে দেখতে যায়, দুজনই তার কৃতকর্মের কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কৃপাল যখন তাদের আস্তানায় ফিরে আসে তখন সে এটি খালি দেখতে পায়। কিছুক্ষণ লুকিয়ে থাকার পরে, দলের এক সদস্য তার সাথে যোগাযোগ করে এবং কমাণ্ডার তাকে হিমাচল প্রদেশে গোষ্ঠীর নতুন গোপন আস্তানায় নিয়ে যায়। কমান্ডার তাকে জানায় যে পুলিশ তার কথা জেনে গেছে এবং যশবন্তকে আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধরে নিয়ে গেছে।

কৃপাল আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করে যে সে আর কখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেনা। সে দেখে যে তার দল এখন একটি নতুন কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং একজন ক্ষেপণাস্ত্র চালক বিশেষজ্ঞের আগমনের অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে, কৃপাল জানতে পারে যে তার অন্যতম সহযোগী, জয়মল সিংহ অন্য কেউ নয়, পুলিশ যে জিমিকে খুঁজছিল সেই। কিছুদিন পরেই, ক্ষেপণাস্ত্র চালক এসে পৌঁছোয়। কৃপাল স্তম্ভিত হয়ে দেখে তার বাগদত্তা বীরান সেই ক্ষেপণাস্ত্র চালক। বীরানের কাছ থেকে কৃপাল জানতে পারে যশবন্ত পুলিশের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে জেলেই আত্মহত্যা করেছে। বিজিও সেই ধাক্কা সহ্য করতে না পেরে মারা গেছে। এরপরে বীরান কৃপালের রাস্তায় চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পরে জানা যায় দলের নতুন কাজটি হল সংসদ সদস্য কেদার নাথকে, স্থানীয় শিখ গুরুদ্বারে আসার সময়, হত্যা করা। কৃপাল ও বীরান গোপনে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নেয়। বীরান কৃপালের কাছ থেকে সায়ানাইড বড়িটি চুপচাপ চুরি করে যা দলের প্রতিটি সদস্যের কাছেই ছিল এবং পুলিশের কাছে ধরা পড়লে সেটি ব্যবহার করার কথা ছিল।

প্রাথমিক নিরীক্ষণ করতে শিখ গুরুদ্বার পরিদর্শন করার সময় কৃপাল ইন্সপেক্টর ভোহরাকে দেখতে পায়। কৃপাল ভোহরার পিছু নিয়ে তার বাড়ি পৌঁছে যায়, কিন্তু তাকে হত্যার চেষ্টা করার সময় ভোহরা তাকে ধরে ফেলে, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে, দলের এক সদস্য কৃপালকে ভোহরার বাসায় ঢুকতে দেখে। ধরা পড়ার পরেও সায়ানাইড না খাওয়ায় তারা সিদ্ধান্ত করে কৃপাল আসলে পুলিশের চর। সনাতন বীরানকেও সন্দেহ করে তাকে বন্দী করে রাখে এবং দলের এক সদস্য ওয়াজিরকে রাখে তার পাহারায়। হত্যার স্থিরীকৃত দিনটিতে সনাতন তার দলকে বেরোতে বলে এবং ওয়াজিরকে আদেশ করে বীরানকে হত্যা করতে। বীরান নিজেকে মুক্ত ক'রে ওয়াজিরকে হত্যা করে।

ছবির সমাপ্তিতে বীরান জেলে কৃপালের সঙ্গে দেখা করতে যায়, তাকে সন্ত্রাসবাদী দলের সদস্য বলে কেউ চিনত না। সেখানে সে কৃপালকে তার সায়ানাইড বড়িটি দেয় এবং পরে তার নিজেরটি বার করে খেয়ে নেয়।

চরিত্র চিত্রণ

  • তাবু- বীরেন্দর কৌর বা বীরান
  • চন্দ্রচুর সিং- কৃপাল সিং বা পালি
  • ওম পুরি- সনাতন
  • কুলভূষণ খারবান্দা- কমান্ডার
  • কানওয়ালজিৎ সিং (অভিনেতা) কানওয়ালজিৎ সিং- ইন্সপেক্টর ভোহরা
  • এস এম জহির- খুরানা
  • রাজ জুৎসি- যশবন্ত সিং রন্ধাওয়া বা জস্সি
  • জিমি শেরগিল- জয়মল ​​সিং
  • রবি গোসাইন- কুলদীপ
  • সুনীল সিনহা- উজির সিং বা ওয়াজির
  • অমৃক গিল- নানু
  • নবনিন্দ্র বেহল- বীরানের মা

তথ্যসূত্র

    বহিঃসংযোগ

    টেমপ্লেট:National Film Award Wholesome Entertainment

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.