মাইলস

মাইলস‌ বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় ব্যান্ড। মাইল্‌স্‌ এর জন্ম ১৯৭৯ সালে। এসময় তারা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সপ্তাহে ৫ দিন বাজাতো। এতে তারা সন্তুষ্ট ছিল, কিন্তু তারা তাদের প্রথম বাংলা মিউজিক অ্যালবাম বের করার পরপর-ই জনপ্রিয় হয়ে যায়। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তারা সোনারগাঁও প্যান প্যাসিফিক হোটেলে বাজিয়েছিল। মাইলসের সদস্য হামিন আহমেদশাফিন আহমেদের বাবা কমল দাশগুপ্ত আর মা ফিরোজা বেগম। ব্যান্ডটি ডিপ পার্পল, সান্তানা, পিংক ফ্লয়েড এবং বিটল্‌স ব্যান্ডের সংগীতের দ্বারা প্রভাবিত।[1]

মাইলস
উদ্ভবঢাকা, বাংলাদেশ
ধরনপপ, রক
কার্যকাল১৯৭৯ থেকে বর্তমান
সদস্যবৃন্দহামিন আহমেদ
মানাম আহমেদ
সৈয়দ জিয়াউর রহমান তুরজ
ইকবাল আসিফ জুয়েল
প্রাক্তন সদস্যবৃন্দশাফিন আহমেদ

বাংলাদেশ টেলিভিশনে মাইল্‌স্‌ হিসেবে তাদের প্রথম অংশগ্রহণ ১৯৮২ সালে। ঐ বছরই মাইল্‌স্‌ শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে ১৫০০ সংগীত পিপাসু দর্শকের সামনে তাদের প্রথম সরাসরি কনসার্ট অনুষ্ঠিত করে। ১৯৮২ সালে তারা তাদের প্রথম অ্যালবাম বের করে ইংরেজি ভাষায়। তাছাড়া তাদের প্রথম অ্যালবামটিও ছিল ইংরেজিতে। ঐ সময় কিছু লোক বলেছিল যে, মাইলস বাংলা গান রচনা করতে পারে না, তার পরই মাইলস তাদের প্রথম বাংলা মিউজিক অ্যালবাম বের করে, অ্যালবামটির নাম "প্রতিশ্রুতি"। এর ভেতর "চাঁদ তারা" গানটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। তাছাড়া বাকি গানগুলোও জনপ্রিয় হয়েছিল। ১৯৯৩ সালে তারা তাদের চতুর্থ মিউজিক (দ্বিতীয় বাংলা মিউজিক) অ্যালবাম "প্রত্যাশা" বের করে, যা বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করে। "প্রত্যাশা" অ্যালবামটি বের হওয়ার কয়েক মাসের ভেতরেই তিন লক্ষ কপি বিক্রি হয়। "প্রত্যাশা" এখনও এই দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া মিউজিক অ্যালবাম।। মাইল্‌স্‌-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন ফরিদ রশিদ যিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাস জীবনযাপন করছেন।

সঙ্গীতের ধরণ

মাইলস, তাদের রক, পপ ও অন্যান্য ধরনের ব্যান্ড দল হিসেবে প্রকাশ করেছে। মানাম বলেছেন, "আমরা ব্লুস, রক, ল্যাটিন, জ্যাজ, এবং টেকনো মিউসিক দ্বারা অনুপ্রাণিত" । "তাই আমাদের সঙ্গীতে অনেক ধরনের সাউন্ড ও ধরন রয়েছে"।

মাইলস এর অর্জন

১৯৯২ সালে মাইলস ব্যাঙ্গালোরের দর্শকদের চিত্তাকর্ষণ করেছিল। এবং ইন্ডিয়াতে তিন ঘণ্টার একটি ইংলিশ কনসার্ট করে সবাইকে মুগ্ধ করেছে। [2] তারা প্রথম ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে সিডি বের করে, ডিস্কো রেকর্ডিং (Disco Recording) নামে লস অ্যাঞ্জেলেস (Los Angeles) এর একটি রেকর্ডিং কম্পানি মাইলস এর প্রথম সিডি অ্যালবাম বেস্ট অব মাইলস বের করে। ১৯৯৬ সালে তারা ইন্ডিয়াতে পাঁচটি, আবু-ধাবি ও দুবাইতে দুইটি কনসার্ট করে। এবং চ্যানেল এমএমটিভি সরাসরি এই কনসার্ট রেকর্ড করে। ১৯৯৬ তারাই প্রথম বাংলাদেশী ব্যান্ড ছিল, যারা প্রথম ইউএসক্যানাডায় সফরে যায়। শাফিন আহমেদ বলেছেন, "আমরা আমাদের শৈশবের থেকে সঙ্গীত প্রশিক্ষণ পেয়েছি" । ঘটনাবশত হামিন এবং শাফিন আহমেদ বহুল প্রচলিত নজরুল গীতির একজন একনিষ্ঠ সাধক ফিরোজা বেগম এর পুত্র। এবং মানাম আহমেদ হচ্ছে বাংলাদেশের বিশিষ্ট সংগীত পরিচালক মনসুর আহমেদ এর পুত্র। মাইলস এর ইতিহাসে তাদের একটি অন্যতম কনসার্ট হয়েছিল ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে, যেখানে সাংবাদিক সহ প্রায় ৬০,০০০ দর্শক হয়েছিল। এই কনসার্টটি আয়োজিত হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড এর তত্ত্বাবধানে, এবং স্পন্সর ছিল পেপসি । ২০০১ সালে মাইলস নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে কনসার্ট এর জন্য আমন্ত্রিত হয়। ঐ কনসার্টে আরও ছিল জুনুন এবং সিল্ক রুটিন ব্যান্ড। মাইলস তাদের সাথে সেই প্রথম বারের মত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিল। তারা ৩৫০ এরও বেশি কনসার্ট করেছে, এবং অনেক চ্যারিটি শো করেছে। [2] মাইলস তাদের পঞ্চম অ্যালবাম "প্রত্যয়" বের করার পর দু মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডা ভ্রমণে যায়। ১৯৯৭ সালের দিকে তারা নিউ ইয়র্ক(New York) ডালাস(Dallas) ওকলাহোমা(Oklahoma) শিকাগো(Chicago) এবং ফ্লোরিডা(Florida) তে ২,৫০০ হাজার দর্শক এর সামনে কনসার্ট করে। মাইলস এর গান ইন্ডিয়ান এফএম রেডিওতে বাজানো হত। পরবর্তীতে বিবিসি মাইলসের একাধিক সাক্ষাৎকার নেয়। এবং তাদের একাধিক সংগীত পরিবেশন করে। লন্ডনের বাংলা সংবাদপত্র জনমত(Janomot) পত্রিকায় মাইলসের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ১৯৯৮ সালে মাইলস আবার কলকাতায় কনসার্ট করে। তারা কিছু সংখ্যক মিউসিক ভিডিও বের করে, যা এমটিভি সহ আরও কিছু চ্যানেল এ প্রকাশিত হয়েছে। তাদের "মাইলস(Vol.1)" "বেস্ট অব মাইলস (Vol.2) বের হওয়ার পর তারা বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়ার নতুন প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

শাফিন আহমেদ এর মাইলস ত্যাগ

শাফিন আহমেদ ২০১০ সালের ১লা জানুয়ারি বাংলাদেশী পত্রিকা প্রথম আলো কে জানিয়েছেন যে, তিনি মাইলস এর সাথে আর থাকছেন না। কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, মাইলস ব্যান্ডটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয়। তাই প্রতিটি সদস্য ছিল একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেই পরিবেশ না থাকায় তিনি এই দলের সাথে আর থাকছেন না। [3] তারপর তিনি রিদম অব লাইফ নামের একটি ব্যান্ড গঠন করেন।[4] তবে ২০১০ সালের শেষের দিকে শাফিন আহমেদ আবার মাইলস ব্যান্ডে ফিরে আসেন।

সদস্যবৃন্দ

বর্তমান সদস্যবৃন্দ

  • শাফিন আহমেদ (বেজ গিটার, কন্ঠ)
  • হামিন আহমেদ (ডাক নাম টুকন) (গিটার,কন্ঠ)
  • মানাম আহমেদ (কি-বোর্ড)
  • ইকবাল আসিফ জুয়েল(গিটার)
  • সৈয়দ জিয়াউর রহমান তূর্য(ড্রামস)

অতীতে যারা সদস্য ছিলেন

  • হ্যাপি আখন্দ - কীবোর্ড, কন্ঠ
  • রবিন - কীবোর্ড, কন্ঠ
  • ফরিদ রশিদ - বেজ গিটার, কন্ঠ
  • ল্যারি বাম্বি - গিটার
  • ইশতিয়াক - গিটার
  • কামাল মাইনুদ্দিন - ড্রামস

আরও যারা ছিলেন

  • কাইয়ুম - বেজ গিটার
  • মিল্টন - ড্রামস
  • শহিদুল হুদা - ড্রামস
  • মাহাবুব রশিদ - ড্রামস

প্রকাশিত এলবামসমূহ

  • মাইল্‌স্‌ (ইংরেজি) (১৯৮২)
  • প্রতিশ্রুতি (১৯৯১)
  • প্রত্যাশা (আগস্ট ২৩, ১৯৯৩)
  • প্রত্যয় (১৯৯৬)
  • প্রয়াস
  • প্রবাহ (২০০০)
  • প্রতিধ্বনি (২০০৬)
  • প্রতিচ্ছবি (২০১৫)

জনপ্রিয় গান

  • চাঁদ তারা সূর্য
  • জ্বালা জ্বালা
  • ধ্বিকি ধ্বিকি
  • সে কোন দরদীয়া
  • ফিরিয়ে দাও
  • স্বপ্নভঙ্গ
  • আর কতকাল খুঁজব তোমায়
  • পলাশীর প্রান্তর
  • পাহাড়ী মেয়ে
  • প্রথম প্রেমের মতো, প্রথম কবিতা এসে
  • ভুলবোনা তোমাকে
  • অনাবিল বিশ্বাসে
  • ভালোবেসো না 
  • নিরবে কিছুক্ষণ
  • হ্যালো ঢাকা
  • তুমি নাই
  • প্রতীক্ষা
  • হৃদয়হীনা
  • চাই না
  • প্রিয়তমা মেঘ
  • নীলা

তথ্যসূত্র

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১২ নভেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১১
  2. "মাইলস ছাড়ছেন শাফিন?"। ২০১৩-১০-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-১২
  3. "শাফিনের 'রিদম অব লাইফ'"দৈনিক প্রথম আলো। ২০১৩-১০-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮-০১-২০১০ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.