মাইজদী
মাইজদী হলো দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশের একটি শহর। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলায় অবস্থিত। এটি নোয়াখালী জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্র এবং এর প্রধান শহর। এটি আবার মাইজদী কোর্ট টাউন হিসেবেও পরিচিত। এটি ৯টি ওয়ার্ড এবং ৩৬টি মহল্লা নিয়ে গঠিত। এটির এলাকা ১২.৬১ কিমি২।
মাইজদী মাইজদী কোর্ট টাউন | |
---|---|
শহর | |
মাইজদী | |
স্থানাঙ্ক: ২২°৫০′ উত্তর ৯১°৬′ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | চট্টগ্রাম বিভাগ |
জেলা | নোয়াখালী জেলা |
জনসংখ্যা | |
• মোট | ৭৪,৫৮৫ |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট অফিসের নাম্বার | ৩৮০০ |
ওয়েবসাইট | noakhali |
ইতিহাস
নোয়াখালী শহরের পুরাতন নাম ছিল সুধারাম। সাগর থেকে প্রায় দুই মাইল দূরে নোয়াখালী খালের পশ্চিম তীরে সুধারাম জেলার সদরের অবস্থান ছিল। ১৮২১ সালে ভুলুয়া জেলার দায়িত্বে নিযুক্ত যুগ্ম ম্যাজিস্ট্রেটের সদর দপ্তর হিসেবে সুধারাম মনোনীত হয়। সুধারাম নামটি সুধলিয়ারাম মজুমদার নামক ব্যক্তির নাম থেকে নেওয়া হয়; সুধলিয়ারাম একজন সমৃদ্ধ ব্যবসায়ী এবং দাতা ছিলেন, যিনি তার নামে একটি বিশাল দিঘি খনন করেছিলেন। ১৮৭৬-এ পৌরসভা গঠন করা হয় এবং ১৯০১-এ জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৬৫২০। সেই সময় এখানে গ্রাম্য বাজার, কিছু সরকারি কার্যালয় এবং আবাসিক ভবন ছাড়া অন্য কিছুই ছিল না। ১৮৯৩-তে ঘূর্ণিঝড়ে এগুলি পুরোপুরিভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। পরে এখানে ভবনগুলি মজবুতভাবে নির্মাণ করা হয়। সেখানে একটি মঞ্চ, বিলিয়ার্ড রুম, এবং গ্রন্থাগার, ছোট টাউন হল, এবং সার্কিট হাউস নির্মিত হয়। সুধারামের ট্যাংক থেকে পানীয় জল সরবরাহ করা হত। শহরটি লাকসামের সাথে রেলপথের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল, এবং জাহাজগুলো এখান থেকে দ্বীপ এবং বরিশাল পর্যন্ত চলাচল করত।[1]
১৯৪৮ সালে যখন উপজেলা সদর দফতর মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়ে যায়, তখন তা ৮ কিলোমিটার উত্তরে সরিয়ে ১৯৫০ সালে জেলার সদর দপ্তর অস্থায়ীভাবে মাইজদীতে স্থানান্তর করা হয়। নোয়াখালী শহর যখন ভেঙ্গে যাচ্ছিল তখন মাইজদী মৌজায় ধান ক্ষেত আর খোলা প্রান্তরে পুরাতন শহরের ভাঙ্গা অফিস আদালত গুলো এখানে এনে স্থাপন করা হয় এবং ১৯৫৩ সালে শহরের পুরনো এলাকা কালিতারা, সোনাপুর ও মাইজদীসহ কাদির হানিফ ইউনিয়নের কয়েকটি মৌজা নিয়ে গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে নোয়াখালী পৌর এলাকা ঘোষণা করা হয়। শহরের প্রাণ কেন্দ্রে প্রায় ষোল একর জুড়ে কাটা হয় এক বিশাল দীঘি। লোক মুখে প্রচলিত হয় বড় দীঘি নামে। সে দীঘির চতুর্দিকে চক্রাকারে বানানো হয় ইট সুরকীর রাস্তা। সে রাস্তাকে ঘিরে বাংলো আকৃতিতে তৈরী হয় সরকারি সব দপ্তর। এই দীঘিটি ব্যবহৃত হত মূলতঃ শহরের জলাধার হিসেবে, দীঘিতে পাম্প লাগিয়ে বিভিন্ন সরকারি অফিস-আদালত এবং আবাসিক এলাকায় পানি সরবরাহ করা হত। মাইজদী শহর স্থানান্তর করলেও, একযুগ পর্যন্ত মাইজদীকে নোয়াখালী জেলার সদরদপ্তর হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি না দেওয়ায় বিষয়টি বিতর্কিত অবস্থায় ছিল। ১৯৬২ সালে মাইজদীকে নোয়াখালী জেলার স্থায়ী সদর দপ্তর হিসাবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
নামকরণ
মেজদি বা মেজদিদি থেকে পরিবর্তিত হয়ে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় “মাইজদী” শব্দে পরিণত হয়েছে। জনৈক জমিদারের মেজ কন্যার জনহিতকর কাজের কারণে এতদ্বঅঞ্চলের জনগণ তাঁকে দিদি বলে ডাকতো। মেজদিদির জনপ্রিয়তা থেকেই জেলা শহরটির নাম মাইজদী হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
জনসংখ্যা
এই শহরের জনসংখ্যা হল ৭৪৫৮৫ জন (পুরুষ ৫১.৫০%, মহিলা ৪৮.৫০%)। জনসংখ্যার ঘনত্ব হলো ৫৯১৫ প্রতি কিমি২-এ।
শিক্ষা
এই শহরের লোকদের মধ্যে স্বাক্ষরতার হার হলো ৬০.৭%।
তথ্যসূত্র
- ওয়েবস্টার, জে. ই (১৯১১)। Eastern Bengal and Assam District Gazetteers:Noakhali. (পিডিএফ)। আল্লাহবাদ: দ্য পাইওনিয়ার প্রেস।