মহাদেশীয় প্রবাহ

ভাসমান ভূ-ভাগ তত্ত্ব বা মহাদেশীয় প্রবাহ (ইংরেজি: Continental drift) এর মতে যে পৃথিবীর ভূ-ভাগগুলো ভাসমান অবস্থায় রয়েছে এবং তারা ক্রমে পরস্পর যুক্ত বা বিযুক্ত হচ্ছে। আলফ্রেড ভেগেনার ১৯১২ সালে এই তত্ত্বটি প্রদান করেন; যা পরবর্তীতে "প্লেট টেকটোনিক তত্ত্ব" দ্বারা আরো সুসংহত ও সুসংগঠিত হয়েছে।[1]

Antonio Snider-Pellegrini's Illustration of the closed and opened Atlantic Ocean (1858).

তত্ত্বের মূল ভাষ্য

১৯১২ সালে ওয়েগনার এই তত্ত্বটি প্রকাশ করেন। এই তত্ত্বের মূল ভাষ্য হচ্ছে, " ত্রিশ কোটি বছর পূর্বে কার্বনিফেরাস যুগে দেশগুলো একসময় পরস্পর সংযুক্ত ছিলো। এদের বলা হতো প্যানজিয়া বা সুপারকন্টিনেন্ট । আর এর চর্তুদিকে প্যানথালাস নামে সাগরের অস্তিত্ব ছিলো।[1] ১৮শ কোটি বছর পূর্বে এরা গন্ডোয়ানা এবং লরেশিয়া নামক দুইভাগে ভাগ হয়। যার মধ্যে বৃহত্তর ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরকা, এন্টার্কটিকা এবং আফ্রিকা একসাথে যুক্ত ছিল যা দক্ষিণ-পূর্ব ভারতের গন্ডোয়ানা রাজ্যের নামানুসারে গন্ডোয়ানা ভূভাগ নামে পরিচিত হয়। আর ইউরেশিয়া সহ বাকি অংশ নিয়ে লরেশিয়া তৈরী হয়। এদের মাঝে তৈরী হয় টেথিস সাগর। এর পরে ধীরে ধীরে তারা পরস্পরের নিকট হতে দূরে সরে যায় এবং আজ থেকে প্রায় ৪০ হাজার বছর পূর্বে তারা বতর্মান অবস্থানে আসে। এসময় টেথিস সাগর থেকে হিমালয়, লোহিত সাগর এবং ভারত মহাসাগর তৈরী হয়।" যার সমর্থনে তিনি দেখান যে, উত্তর আমেরিকার পূরব তীর ও ইউরোপের পশ্চিম তীর কাছাকাছি এনে মিলালে মিলে যায়। একই কথা সাউথ আমেরিকা ও আফ্রিকা আবার মাদাগাস্কার ও ভারত এর বেলায় ও খাটে। এই থিওরীই কন্টিনেন্টাল ড্রিফট বা মহাদেশীয় সঞ্চারন নামে পরিচিত যা তখন গুরুত্ব না পেলেও পরবর্তীকালে আলোর মুখ দেখে।[2]

ইতিহাস

আব্রাহাম ওরতিলউস (১৫৯৬),[3] থিওডর ক্রিস্টোফার লিলিয়েনথাল (১৭৫৬),[4] আলেকজান্ডার ফন হুমবোল্‌ড্‌ট্ (১৮০১ ও ১৮৪৫),[4] এবং আরো অনেকে ইতোপূর্বে উল্লেখ করেন, মহাদেশগুলোর বিভিন্ন অংশ পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এরা সম্ভবত পূর্বে কোনো একসময় একসাথে যুক্ত ছিল।

সমালোচনা

  1. ওয়েগনার বলেন জোয়ার-ভাটা এবং আবর্তন শক্তি বর্তমানের তুলনায় কয়েক হাজার গুণ বেশি হলেও কোনো সঞ্চারণ সম্ভব নয়।
  2. ওয়েগনারের মতে পর্বত গঠনের সময় সিয়াল এবং সীমা প্রচণ্ড চাপের সংকুচিত হয় । কিন্তু বিজ্ঞানী বুচার বলেন সিয়াল বা সীমা কোনটাই কুঞ্চিত হয়নি । কুঞ্চিত হয়েছে পাললিক শিলা স্তর।
  3. ওয়েগনার প্যানজিয়া এর সঞ্চারণের সময় পুঞ্জীর সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি ।
  4. ওয়েগনারের মতে, বর্তমান দ্বীপগুলো প্রধান মহাদেশগুলো হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে সৃষ্টি হয়েছে।  কিন্তু দীপগুলো পললের স্তরায়ন আগ্নেয়গিরির উৎক্ষেপণ বা অন্য কোনভাবেও তৈরি হতে পারে।
  5. ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক'জন বিজ্ঞানীর গবেষণায় দুটি মহাদেশের উপকূলভাগের গভীরতা সমান নয় বলে প্রমাণিত হয়েছে।

তথ্যসূত্র

  1. প্লেট টেকটনিক এর ক্রমবিকাশ স্টিফেন ব্রুসেট
  2. প্রানীভূগোল
  3. Romm, James (February 3, 1994), "A New Forerunner for Continental Drift", Nature 367 (6462): 407–408, Bibcode 1994Natur.367..407R, doi:10.1038/367407a0
  4. a b Schmeling, Harro (2004). "Geodynamik" (in German). University of Frankfurt
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.