মহাদেবপুর উপজেলা
মহাদেবপুর বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।
মহাদেবপুর | |
---|---|
উপজেলা | |
মহাদেবপুর মহাদেবপুর | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫৮′ উত্তর ৮৮°৪৫′ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রাজশাহী বিভাগ |
জেলা | নওগাঁ জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ৩৯৭.৬৭ বর্গকিমি (১৫৩.৫৪ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ২,৯২,৮৫৯ |
• জনঘনত্ব | ৭৪০/বর্গকিমি (১,৯০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৪৯.৮% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৬৫৩০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫০ ৬৪ ৫০ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট |
অবস্থান ও আয়তন
মহাদেবপুর উপজেলার আয়তন ৩৯৭.৬৭ বর্গ কিমি। এ উপজেলার উত্তরে পত্নীতলা উপজেলা, দক্ষিণে মান্দা উপজেলা ও নওগাঁ সদর উপজেলা, পূর্বে বদলগাছী উপজেলা ও নওগাঁ সদর উপজেলা, পশ্চিমে নিয়ামতপুর উপজেলা ও পোরশা উপজেলা।
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ও ইতিহাস
বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্তর্গত নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলা সুপ্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যমন্ডিত জনপদ। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয়-চতুর্থ শতকে এই প্রাচীন জনপদের কেন্দ্র ভূমিতে গড়ে ওঠে পুণ্ড্রনগর নামক এক নগর সভ্যতা কেন্দ্র। এ নগর সভ্যতার অভ্যুদয় প্রমাণ করে যে, এর ছিল বিশাল কৃষিভিত্তিক পশ্চাদভূমি। এখানে ছিল একটি সুবৃহৎ সচ্ছল কৃষিজীবী সমাজ। ক্রমশ স্থায়ী গ্রামীণ জীবন ধারার বিকাশ ঘটে, গোড়াপত্তন হয় সমৃদ্ধ কৃষি সমাজের। নানা জাতিগোষ্ঠীরর মানুষ যুগ যুগ ধরে বসবাস করতে গিয়ে গড়ে তোলে এক নতুন ধরনের সমাজ ব্যবস্থা, বিকশিত হতে থাকে এক স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক রুপকাঠামো। নানা জাতিগোষ্ঠীরর মানুষ মিশে তৈরী করেছে একটি মিশ্র জনগোষ্ঠী।
ব্রিটিশ শাসনকালে ১৮৮২ সালে নওগাঁ মহকুমা সৃষ্টি হওয়ার পর ১৮৯৮ সালে মহাদেবপুরকে নওগাঁ মহকুমার অর্ন্তভূক্ত করা হয়। এ উপজেলার নামকরণ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়না তবে অনুমান করা হয় দেবতা শিব মহাদেবের নাম অনুসারে মহাদেবপুর নামকরণ হয়েছে। ১৯৮৪ সালে নওগাঁ মহকুমা জেলায় রূপান্তরিত হলে মহাদেবপুর উপজেলায় পরিণত হয়। বর্তমানে এ উপজেলা ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প সাহিত্য আর জীবনযাপনে অগ্রসরমান উপজেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মহাদেবপুর উপজেলা সদর, এনায়েতপুর, রাইগাঁ, হাতুর, চাঁন্দাশ, খাজুর, উত্তরগ্রাম, ভীমপুর, চেরাগপুর ও সফাপুর এই দশটি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত। এর উত্তরে পত্নীতলা, দক্ষিণে মান্দা, দক্ষিণ-পূর্বে নওগাঁ সদর, পূর্বে বদলগাছী, পশ্চিমে নিয়ামতপুর ও পোরশা উপজেলা অবস্থিত। জেলা সদর, পার্শ্ববর্তী উপজেলা ও এ উপজেলার দশ ইউনিয়নের সাথে উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। এ উপজেলায় প্রাচীন বাসাবাড়ি, আদ্যাবাড়ী মন্দির ইত্যাদি সমৃদ্ধ ইতিহাসের অংশ। এখানে বহুকাল ধরে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতির অটুট বন্ধন বিদ্যমান রয়েছে। মহাদেবপুর উপজেলা আত্রাই নদীর তীরে অবস্থিত। মৌসুমী বায়ু অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় পরিবেশগত দিক থেকে এ এলাকা ধান উৎপাদনের উপযোগী। এখানে আর্থ-সামাজিক অবস্থা মূলতঃ কৃষি নির্ভর। (সূত্রঃ বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাস)
মহাদেবপুর উপজেলা ২৪˚৪৮' থেকে ২৫˚০১' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮˚৩৮' থেকে ৮৮˚৫৩' পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।[2] মহাদেবপুর উপজেলার দুরত্ব নওগাঁ জেলা সদর হতে ২৪ কিঃ মিঃ পশ্চিমে এবং ঢাকা হতে ৩৩৫ কিঃ মিঃ। ইতিহাস থেকে জানা যায় মহাদেবপুরের অধিবাসিরা মুলত পুন্ড্রজাতির বংশধারায় বাংলাদেশে সর্ব প্রথম নগর সভ্যতার গোড়াপত্তন করেছিল। মহাদেবপুরে বর্তমানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই পশ্চিম বঙ্গের বীরভূম,বর্ধমান ও রাঢ় অঞ্চল হতে আগত। তা ছাড়া ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পশ্চিম বঙ্গের মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও বালুঘাট থেকে প্রচুর লোকজন এ এলাকায় আগমন করে। এ ছাড়াও মহাদেবপুর উপজেলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আদিবাসী বসবাস করে।
প্রশাসনিক এলাকা
মহাদেবপুর সদর শহর ৪টি মৌজা নিয়ে গঠিত এবং এর আয়তন ৭.১৫ বর্গ কি.মি.। প্রশাসন থানা সৃষ্টি হয়ে ছিল ১৮৯৮ সালে। বর্তমানে উপজেলা ১টি, ইউনিয়ন ১০টি, মৌজা ৩০৭টি, গ্রাম ৩০০টি।
মহাদেবপুর উপেজলা একটি মানসম্মত উপজেলা। এ উপজেলায় মোট ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে। নিম্নে ইউনিয়নসমূহের নাম উল্লেখ করা হলোঃ
(১) মহাদেবপুর সদর ইউনিয়ন (২) হাতুড় ইউনিয়ন (৩) খাজুর ইউনিয়ন (৪) চাঁন্দাশ ইউনিয়ন (৫) রাইগাঁ ইউনিয়ন (৬) এনায়েতপুর ইউনিয়ন (৭) সফাপুর ইউনিয়ন (৮) উত্তরগ্রাম ইউনিয়ন (৯) চেরাগপুর ইউনিয়ন ও (১০) ভীমপুর ইউনিয়ন
জনসংখ্যার উপাত্ত
জনসংখ্যা ২,৯২,৮৫৯ জন (২০১১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী), পুরুষ ৫২.৮৩%(১,৪৬,৯৫৫ জন), মহিলা ৪৭.১৭%(১,৪৫,৯০৪ জন)।
শিক্ষা
শিক্ষার হার ৪৯.৮%। মহাবিদ্যালয় ১২টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৬টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭টি মাদ্রাসা ২৮টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৪টি।
অত্র এলাকায় সর্ব মঙ্গলা (পাইলট) উচ্চ বিদ্যালয় একটি উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
অর্থনীতি
এই অঞ্চলের মানুষের আয়ের প্রধান মাধ্যম হলো কৃষিকাজ। এছাড়া এই উপজেলায় আছে ১২টি অটোমেটিক চাউল কল, ৫৫টি সাধারণ চাউল কল, ২৫টি ভাটা, ৫টি পেট্রল পাম্প।
ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ঐতিহ্য
- মহাদেবপুর জমিদার বাড়ি
- ভীমসাগর
- মহাদেবপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
- কেন্দ্রীয় মসজিদ মিনার
- ডাকবাংলো
- মহাদেবপুর শিশু পার্ক
- ১০৮ কক্ষ বিশিষ্ট মাটির বাড়ি
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
- মোঃ আখতার হামিদ সিদ্দিকী (সাবেক ডেপুটি স্পীকার, প্রয়াত সাংসদ)
বিবিধ
সরকারী হাসপাতাল : ০১ টি স্বাসহ্য কেন্দ্র/ক্লিনিক : সরকারী স্বাসহ্যকেন্দ্র- ০৯টি,ক্লিনিক-০৭টি পোষ্ট অফিস : প্রধান ডাকঘর -০১টি শাখা ডাকঘর-১৮টি নদ-নদী : নদী -০১টি ( আত্রাই নদী) হাট-বাজার : ২১ টি। ব্যাংক : ১২ টি।
তথ্যসূত্র
- "এক নজরে মহাদেবপুর"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৯ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭।
- বাংলাপিডিয়া