মসলিন

মসলিন বিশেষ এক ধরনের তুলার আঁশ থেকে প্রস্তুতকৃত সূতা দিয়ে বয়ন করা এক প্রকারের অতি সূক্ষ্ম কাপড়বিশেষ। এটি ঢাকাই মসলিন নামেও সুবিদিত। এটি বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য।[1] ফুটি কার্পাস নামক তুলা থেকে প্রস্তুত অতি চিকন সুতা দিয়ে মসলিন তৈরি করা হত। চড়কা দিয়ে কাটা, হাতে বোনা মসলিনের জন্য সর্বনিম্ন ৩০০ কাউন্টের সুতা ব্যবহার করা হত যার ফলে মসলিন হত কাচের মত স্বচ্ছ। এই মসলিন রাজকীয় পোশাক নির্মাণে ব্যবহার করা হত। মসলিন প্রায় ২৮ রকম হত যার মধ্যে জামদানী এখনও ব্যাপক আকারে প্রচলিত। নানা কারণে আঠারো শতকের শেষার্ধে বাংলায় মসলিন বয়ন বন্ধ হয়ে গেলেও বর্তমানে সরকার কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগে পুনরায় বুননের কাজে হাত দেওয়া হয় এবং এই শিল্পকে আবার ফিরিয়ে আনা গেছে।

লস এঞ্জেলেস কাউন্টি মিউজিয়াম অব আর্টে প্রদর্শিত আনুমানিক ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপীয় রমণীর জন্যে মসলিনের তৈরী পোশাক

শব্দের উৎস

বাংলা মসলিন শব্দটি আরবি, ফার্সি কিংবা সংস্কৃতমূল শব্দ নয়। এস. সি. বার্নেল ও হেনরি ইউল নামের দুজন ইংরেজ কর্তৃক প্রকাশিত অভিধান 'হবসন জবসন'-এ উল্লেখ করা হয়েছে মসলিন শব্দটি এসেছে 'মসুল' থেকে। ইরাকের এক বিখ্যাত ব্যবসাকেন্দ্র হল মসুল[2][3] এই মসুলেও অতি সূক্ষ্ম কাপড় প্রস্তুত হত। এই 'মসুল' এবং 'সূক্ষ কাপড়' -এ দুয়ের যোগসূত্র মিলিয়ে ইংরেজরা অতিসূক্ষ্ম কাপড়ের নাম দেয় 'মসলিন'।[4] অবশ্য বাংলার ইতিহাসে 'মসলিন' বলতে বোঝানো হয় তৎকালীন ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে উৎপাদিত অতি সূক্ষ্ম এক প্রকার কাপড়কে।

ইতিহাস

ঢাকার ইতিহাস চারশো বছরের বেশি পুরনো নয়। ১৬১০ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় ইসলাম খান চিশতী রাজমহল থেকে ঢাকায় রাজধানী স্থানান্তর করলে ঢাকা ইতিহাসের প্রসিদ্ধতা লাভ করে। কিন্তু ঢাকার ইতিহাস বেশি পুরনো না হলেও মসলিনের ইতিহাস অনেকটাই পুরনো ও দীর্ঘ। স্মরণাতীত বাংলায় এর উল্লেখ পাওয়া যায়।[3][5] প্রথম খ্রিস্টাব্দের প্রথম শতকেই রোম সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগে অভিজাত রোমান নারীরা ঢাকার মসলিন পরে দেহসৌষ্ঠব প্রদর্শন করতে ভালোবাসতেন। একই শতকে রচিত ‘পেরিপ্লাস অব দ্য এরিথ্রিয়ান সি’ শীর্ষক গ্রন্থে মসলিন সম্পর্কে বিশেষ ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। " এতে মোটা ধরনের মসলিনকে মলোচিনা, প্রশস্ত ও মসৃণ মসলিনকে মোনাচি এবং সর্বোৎকৃষ্ট মসলিনকে গেনজেটিক বা গঙ্গাজলী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।" নবম শতকে রচিত আরব ভৌগোলিক সোলাইমানের 'সিলসিলাত উত তাওয়ারীখে 'রুমি' নামক একটি রাজ্যের বিবরণ পাওয়া যায়। সেখানে এমন সূক্ষ্ম ও মিহি সুতি বস্ত্র পাওয়া যেত যে, ৪০ হাত লম্বা ও ২ হাত চাওড়া। এক টুকরো কাপড় আংটির ভিতর দিয়ে অনায়াসে নাড়াচড়া করা যেতো। তৎকালীন এই বস্ত্র তিনি সেখানে ব্যতীত আর কোথাও দেখেন নি। আর এই রুমি রাজ্যকে বাংলাদেশের সাথে অভিন্ন ধরা হয়। চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলায় আগত মরক্কো দেশিয় পর্যটক ইবনে বতুতা তার কিতাবুর রেহালায়' সোনারগাঁওয়ে তৈরি সুতি বস্ত্রের বিশেষ প্রশংসা করেন। পঞ্চদশ শতকে বাংলাদেশে আসা চীনা লেখকরা ও এখানকার সুতি বস্ত্রের ভুয়সী প্রশংসা করেন। মোগল সম্রাট আকবরের সভাসদ আবুল ফজল' পর্যন্ত সোনারগাঁওয়ে প্রস্তুতকৃত এই সূক্ষ্ম সুতি বস্ত্রের প্রশংসা করতে ভুলেন নি।[6][7] এভাবে সপ্তদশ শতকের প্রথম দিকে ঢাকাকে বাংলার রাজধানী ঘোষণার পর হতেই ইউরোপিয় ব্যবসায়ীরা বাংলায় আসা শুরু করেন। এসকল বণিক কোম্পানি গুলোর তৎকালীন দলিল-দস্তাবেজ এবং ঐ সমকালীন ইউরোপীয় লেখকদের বিবরণে মসলিন সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। অবশেষে, ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে ইংরেজরা ক্ষমতাকে তাদের হাতে কুক্ষিগত করে ফেললে আস্তে আস্তে মসলিন বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করে এবং একটা সময় মসলিন হারিয়ে যায়।

হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে, জেমস টেইলরের রচনা অবলম্বনে ইতিহাসবিদ আব্দুল করিম তার 'ঢাকাই মসলিন' গ্রন্থে উদ্বৃতি পেশ করেন। এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন যে, সমসাময়িক লেখকদের (যেমন, জেমস টেলর, বোল্ট, জন টেলর প্রমূখ) বিবরণের অভাবে প্রকৃতপক্ষে মোগল আমলে মসলিন কত সূক্ষ্ম ও মিহি ছিল তার কোন সঠিক ও অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। ইংরেজ ইতিহাসবিদদের লেখাতে এ বিষয়ে কিছু মতামত পাওয়া গেলেও সেগুলো পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয়।[3] কারণ, তাদের কেউই মোগল আমলের স্বর্ণযুগ দেখেনি। এছাড়াও তাদের মাঝে পরষ্পর বিরোধী অসংখ্য মতানৈক্যের ছড়াছড়ি লক্ষ্যণীয়। তারা এমন সময় বাংলায় আসেন যখন বাংলায় মসলিন শিল্প বিলুপ্তির পথে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। একটি বিষয় চিন্তা করলে বুঝা যায় যে, উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তৈরি অর্ধটুকরা একখানি মসলিন (১০গজ × ০১গজ) ১৮৫১ সালে বিলেতের প্রদর্শনীতে প্রদর্শন করা হয়েছিল। এর ওজন ছিলো আট তোলা।[8] পাশাপাশি, ঢাকা জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত মসলিন খানির দৈর্ঘ্যও ১০ গজ এবং চওড়া ১ গজ, এর ওজন মাত্র ৭ তোলা। তাহলে ঢাকার মসলিন মোগল শিল্পের স্বর্ণযুগে যে, আরো সূক্ষ্মভাবে তৈরি করা যেতো সেটা সহজেই অনুমান করা যায়।[3]

বিবরণ

অতি সূক্ষ্ন সূতায় তৈরী বলে মসলিন হতো খুবই স্বচ্ছ

মসলিন প্রস্তুত করা হত পূর্ব বাংলার সোনারগাঁও অঞ্চলে। কথিত আছে যে মসলিনে তৈরি করা পোশাকসমূহ এতই সূক্ষ্ম ছিল যে ৫০ মিটার দীর্ঘ মসলিনের কাপড়কে একটি দিয়াশলাই বাক্সে ভরে রাখা যেত। সেইসময়ে এক গজ ঢাকাই মসলিনের দাম ছিল ৫০ থেকে ৪০০ পাউণ্ড, যা আজকের মূল্যমানে ৭,০০০ থেকে ৫৬,০০০ পাউণ্ড। তখনকার সবচেয়ে ভাল সিল্কের চাইতেও এই মসলিন ছিল ২৬ গুণ বেশি দামী।[9]

প্রকারভেদ

মসলিনের পার্থক্য করা হত সূক্ষ্মতা, বুননশৈলী আর নকশার পার্থক্যে।[4] এরই প্রেক্ষিতে বিভিন্ন প্রকার মসলিনের আলাদা আলাদা নাম হয়ে যায়।

মলবুস খাস

'মলবুস খাস' মানেই হলো খাস বস্ত্র বা আসল কাপড়। এ জাতীয় মসলিন সবচেয়ে সেরা আর এগুলো তৈরি হত সম্রাটদের জন্য।[4] আঠারো শতকের শেষদিকে মলবুস খাসের মতো আরেক প্রকারের উঁচুমানের মসলিন তৈরি হত, যার নাম 'মলমল খাস'। এগুলো লম্বায় ১০ গজ, প্রস্থে ১ গজ, আর ওজন হত ৬-৭ তোলা। ছোট্ট একটা আংটির মধ্যে দিয়ে এ কাপড় নাড়াচাড়া করা যেত। এগুলো সাধারণত রপ্তানি করা হত।[4]

সরকার-ই-আলা

এ মসলিনও মলবুস খাসের মতোই উঁচুমানের ছিল। বাংলার নবাব বা সুবাদারদের জন্য তৈরি হত এই মসলিন। সরকার-ই-আলা নামের জায়গা থেকে পাওয়া খাজনা দিয়ে এর দাম শোধ করা হত বলে এর এরকম নামকরণ। লম্বায় হত ১০ গজ, চওড়ায় ১ গজ আর ওজন হত প্রায় ১০ তোলা।[4]

ঝুনা

১৭৮৩ সালে মেরি এন্টোইনেতে তাঁর বিখ্যাত মসলিন পোশাক পরিহিতা অবস্থায় চিত্রকর্ম

'ঝুনা' শব্দটি, জেমস টেইলরের মতে, এসেছে হিন্দি ঝিনা থেকে, যার অর্থ হল সূক্ষ[10] ঝুনা মসলিনও সূক্ষ্ম সুতা দিয়ে তৈরি হ্ত, তবে সুতার পরিমাণ থাকত কম । তাই এ জাতীয় মসলিন হালকা জালের মতো হত দেখতে। একেক টুকরা ঝুনা মসলিন লম্বায় ২০ গজ, প্রস্থে ১ গজ হত। ওজন হত মাত্র ২০ তোলা। এই মসলিন বিদেশে রপ্তানি করা হত না, পাঠানো হতো মোঘল রাজ দরবারে। সেখানে দরবারের বা হারেমের মহিলারা গরমকালে এ মসলিনের তৈরি জামা গায়ে দিতেন।[4]

আব-ই-রওয়ান

আব-ই-রওয়ান ফার্সি শব্দ, অর্থ প্রবাহিত পানি। এই মসলিনের সূক্ষ্মতা বোঝাতে প্রবাহিত পানির মতো টলটলে উপমা থেকে এর নামই 'আব-রওয়ান' হয়ে যায়। লম্বায় হত ২০ গজ, চওড়ায় ১ গজ, আর ওজন হত ২০ তোলা।[4] আব-ই-রওয়ান সম্পর্কে প্রচলিত গল্পগুলোর সত্যতা নিরূপণ করা না গেলেও উদাহরণ হিসেবে বেশ চমৎকার। যেমন: একবার সম্রাট আওরঙ্গজেবের দরবারে তাঁর মেয়ে উপস্থিত হলে তিনি মেয়ের প্রতি রাগান্বিত হয়ে বললেন তোমার কি কাপড়ের অভাব নাকি? তখন মেয়ে আশ্চর্য হয়ে জানায় সে আব-ই-রওয়ানের তৈরী সাতটি জামা গায়ে দিয়ে আছে। অন্য আরেকটি গল্পে জানা যায়, নবাব আলীবর্দী খান বাংলার সুবাদার থাকাকালীন তাঁর জন্য তৈরী এক টুকরো আব-ই-রওয়ান ঘাসের উপর শুকোতে দিলে একটি গরু এতটা পাতলা কাপড় ভেদ করে ঘাস আর কাপড়ের পার্থক্য করতে না পেরে কাপড়টা খেয়ে ফেলে। এর খেসারৎস্বরূপ আলীবর্দী খান ওই চাষীকে ঢাকা থেকে বের করে দেন।[4]

খাসসা

রাজকীয় ব্যক্তির জন্য মসলিনের তৈরী একখণ্ড শাল।

ফার্সি শব্দ খাসসা। এই মসলিন ছিল মিহি আর সূক্ষ্ম, অবশ্য বুনন ছিল ঘন। ১৭ শতকে সোনারগাঁ বিখ্যাত ছিল খাসসার জন্য। ১৮-১৯ শতকে আবার জঙ্গলবাড়ি বিখ্যাত ছিল এ মসলিনের জন্য। তখন একে 'জঙ্গল খাসসা' বলা হত। অবশ্য ইংরেজরা একে ডাকত 'কুষা' বলে।[4]

শবনম

'শবনম' কথাটার অর্থ হলো ভোরের শিশির। ভোরে শবনম মসলিন শিশিরভেজা ঘাসে শুকোতে দেয়া হলে শবনম দেখাই যেত না, এতটাই মিহি আর সূক্ষ্ম ছিল এই মসলিন। ২০ গজ লম্বা আর ১ গজ প্রস্থের শবনমের ওজন হত ২০ থেকে ২২ তোলা।[4]

নয়ন সুখ

মসলিনের একমাত্র এই নামটিই বাংলায়। সাধারণত গলাবন্ধ রুমাল হিসেবে এর ব্যবহার হত। এ জাতীয় মসলিনও ২০ গজ লম্বা আর ১ গজ চওড়া হত।[4]

বদন খাস

এ জাতীয় মসলিনের নাম থেকে ধারণা করা হয় সম্ভবত শুধু জামা তৈরিতে এ মসলিন ব্যবহৃত হতো কারণ 'বদন' মানে শরীর। এর বুনন ঘন হত না। এগুলো ২৪ গজ লম্বা আর দেড় গজ চওড়া হত, ওজন হত ৩০ তোলা।[4]

সর-বন্ধ

ফার্সি শব্দ সর-বন্ধ মানে হল মাথা বাঁধা। প্রাচীন বাংলা উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা মাথায় পাগড়ি বাঁধতেন, যাতে ব্যবহৃত হত সার-বন্ধ। লম্বায় ২০-২৪ গজ আর চওড়ায় আধা থেকে এক গজ হতো; ওজন হতো ৩০ তোলা।[4]

ডোরিয়া

ডোরা কাটা মসলিন 'ডোরিয়া' বলে পরিচিত ছিল। লম্বায় ১০-১২ গজ আর চওড়ায় ১ গজ হত। শিশুদের জামা তৈরি করে দেয়া হত ডোরিয়া দিয়ে।[4]

জামদানী

জামদানি কার্পাস তুলা দিয়ে প্রস্তুত একধরনের পরিধেয় বস্ত্র। প্রাচীনকালের মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে জামদানি শাড়ি বাঙ্গালি নারীদের অতি পরিচিত। মসলিনের উপর নকশা করে জামদানি কাপড় তৈরি করা হয়। জামদানি বলতে সাধারণত‍ শাড়িকেই বোঝান হয়। তবে জামদানি দিয়ে নকশি ওড়না, কুর্তা, পাগড়ি, রুমাল, পর্দা প্রভৃতিও তৈরি করা হত। ১৭০০ শতাব্দীতে জামদানি দিয়ে নকশাওয়ালা শেরওয়ানির প্রচলন ছিল। এ ছাড়া, মুঘল নেপালের আঞ্চলিক পোশাক রাঙ্গার জন্যও জামদানি কাপড় ব্যবহৃত হত। তবে আগেকার যুগে 'জামদানী' বলতে বোঝানো হতো নকশা-করা মসলিনকে।[4]

কামিস

আরবিতে কামিস অর্থ পোশাক। কুর্তা তৈরির জন্য এ জাতীয় মসলিন ব্যবহার করা হতো। কুর্তা এত দীর্ঘ ছিল যে, তা পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ঢেকে দিতো। এর জন্য দরকার হতো লম্বা ও সমান কাপড়ের, যাতে সুতার সংখ্যা ছিল ১,৪০০।[11]

এ ছাড়াও আরো বিভিন্ন প্রকারের মসলিন ছিল: মলমল (সূক্ষ্মতম বস্ত্র), 'রঙ্গ' (স্বচ্ছ ও জালিজাতীয় বস্ত্র), 'আলাবালি' (অতিমিহি), 'তরাদ্দাম', 'তনজেব' (দেহের অলঙ্কার সদৃশ), 'সরবুটি', 'চারকোনা' (ছক কাটা বস্ত্র) ইত্যাদি।[4]

বিলুপ্তি এবং পুনর্জন্ম

ফ্রান্সিস রেনাল্ডি অঙ্কিত বিখ্যাত চিত্রকর্ম 'লেডি ইন মসলিন' এর একটি ছবি, ঢাকা, ১৭৮৯।

ভারতে ব্রিটিশশাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে ঊনবিংশ শতাব্দীতে স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত করা বস্ত্রের উপরে ৭০ হতে ৮০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়, যেখানে ব্রিটেনে প্রস্তুত-করা আমদানীকৃত কাপড়ের উপরে মাত্র ২ থেকে ৪ শতাংশ কর ছিল। এর ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের তাঁতশিল্পে ধস নামে।

কথিত আছে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকেরা মসলিন উৎপাদন বন্ধ করার জন্য মসলিন বয়নকারী তাঁতিদের হাতের বুড়ো আঙুল কেটে দেয়।[4] তবে অধুনা অন্য আরেকটি দাবি বেশ যৌক্তিকভাবে সামনে উঠে এসেছে। তা হল, তাঁতিদের হাত ব্রিটিশরা নয়, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের আঙ্গুল কেটে নিত, যাতে এই তাঁতের কাজ আর না করতে হয়।[12]

পুনর্জন্ম

‘বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিন সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার (প্রথম পর্যায়)’ প্রকল্পের আওতায় ছয় বছর গবেষণার পর ২০২০ সালে ছয়টি ঢাকাই মসলিন শাড়ি তৈরি করা হয়। আগামীতে এই শাড়ি সর্বসাধারণের জন্য বাজারে আনা সম্ভব হতে পারে। ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর ঢাকাই মসলিনকে জিআই ( ভৌগোলিক নির্দেশক) স্বত্বের অনুমোদন দেয়া হয়।[13]

আরও দেখুন

পাদটীকা

  1. জিআই সনদ পেল দেশের আরও ৬ পণ্য, প্রথম আলো, ১৭ জুন ২০২১
  2. Yule, Henry, Sir, 1820-1889. (১৯৯৬)। Hobson-Jobson : the Anglo-Indian dictionary। Burnell, A. C. (Arthur Coke)। Ware: Wordsworth Reference। আইএসবিএন 1-85326-363-X। ওসিএলসি 36528958
  3. কামারুজামান, মোহাম্মদ (নভেম্বর ২০১৯)। "মসলিনঃ একটি হৃত শিল্পের সুলুকসন্ধান"। বাঙ্গলানামা
  4. মুনতাসীর মামুন। ঢাকার মসলিন (প্রিন্ট) (ফেব্রুয়ারি ২০০৫ সংস্করণ)। সুবর্ণ। পৃষ্ঠা ৫৩। আইএসবিএন 984-459-075-4 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: checksum (সাহায্য) অজানা প্যারামিটার |origmonth= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  5. The Modern Review (ইংরেজি ভাষায়)। Modern Review Office। ১৯৭০।
  6. "আইন-ই-আকবরী - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-২৭
  7. Mubārak, Abū al-Faz̤l ibn (১৮৭৩)। The Ain i Akbari (ইংরেজি ভাষায়)। G. M. Rouse।
  8. Mortimer, John (১৮৫১)। A Descriptive and Historical Account of the Cotton Manufacture of Dacca, in Bengal (ইংরেজি ভাষায়)। J. Mortimer।
  9. বিলুপ্ত হওয়া ঢাকাই মসলিনকে আবার কীভাবে বাঁচিয়ে তোলা হচ্ছে, বিবিসি নিউজ বাংলা, ৯ এপ্রিল ২০২১
  10. Taylor (surgeon.), James (১৮৪০)। A Sketch of the Topography & Statistics of Dacca (ইংরেজি ভাষায়)। G.H. Huttmann, Military Orphan Press।
  11. মসলিন কাপড়ের চমকপ্রদ কাহিনি, জাগো নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম, ৫ মে ২০২২
  12. আসমার ওসমান (সেপ্টেম্বর ২০০৮)। "মসলিন অমলিন"। রহস্যপত্রিকা (প্রিন্ট)। সেবা প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ১৩।
  13. ঢাকাই মসলিনের পুনর্জন্ম, প্রথম আলো, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

তথ্যসূত্র

  • ঢাকার মসলিন, মুনতাসীর মামুন; ফেব্রুয়ারি ২০০৫ সংস্করণ; আইএসবিএন ৯৮৪-৪৫৯-০৭৫-৪ আইএসবিএন বৈধ নয়; সুবর্ণ।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.