মশা
মশা এক প্রকারের ছোট মাছি প্রজাতির পতঙ্গ। অধিকাংশ প্রজাতির স্ত্রীমশা স্তন্যপায়ী প্রাণীর রক্ত পান করে থাকে। মেরুদণ্ডী প্রাণীর, যেমন স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ, উভচর প্রাণী এবং এমনকি কিছু মাছের শরীর থেকে রক্ত শোষণ করে হাজার রকমের প্রজাতি রয়েছে। যদিও যেসব প্রাণীর শরীর থেকে রক্ত শুষে নেয় তা তাদের শরীরের তুলনায় খুবই অল্প, কিন্তু কিছু মশা রোগজীবাণু সংক্রামক। মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ফাইলেরিয়া, পীতজ্বর, জিকা ভাইরাস প্রভৃতি রোগ সংক্রমিত হয়ে থাকে।[1][2][3]
মশা | |
---|---|
এক প্রজাতির নারী মশা | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী |
পর্ব: | আর্থোপডা |
শ্রেণী: | কীট |
বর্গ: | ডিপথেরা |
পুরুষ মশা কেবল একদিন বাঁচে। নারী মশা সচরাচর ৬-৮ সপ্তাহ বেঁচে থাকে। আর পুরুষ মশা একদিনের বেশি বাঁচলেও; তাদের পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক হয়ে পড়ে।
এই ছোট মাছি প্রজাতির পতঙ্গ দীর্ঘ ২৫০০ বছর ধরে পৃথিবীর বুকে টিকে আছে।
প্রজাতি
মশা নেমাটোসেরা মাছি বর্গের অন্তর্ভুক্ত।[4] আরও স্পষ্ট করে, মশা মূলত ক্রেন মাছি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। মশার কিছু প্রজাতির নারী মশা রক্ত শোষে এবং মারাত্মক সংক্রামক রোগ বিস্তার করে। কিছু প্রজাতির মশা রক্ত শোষণ করে না; আবার যেসব প্রজাতির মশা রক্ত শোষে তাদের মধ্যে অনেকেই রক্তে "উচ্চ থেকে নিম্ন চাপ" সৃষ্টি করে তা শোষণ করে এবং কোনওরকম রোগ বিস্তার করে না। রক্ত শোষণকারী প্রজাতির মধ্যে শুধু নারীরাই রক্ত শোষণ করে।[5]
পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ৩,৫০০ এর বেশি প্রজাতির মশা পাওয়া গেছে।[6][7] যেসব মশা নিয়মিত মানুষকে কামড়ায় তারা প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষের শরীরে রোগজীবাণু সংক্রমণের চলক হিসেবে কাজ করে।[8][9] অন্য যেসব প্রজাতি নিয়মিত মানুষকে কামড়ায় না, কিন্তু অন্যান্য প্রাণীদের শরীরে রোগ সংক্রমণের চলক, তারা মূলত বিভিন্ন কারণে, যেমন হঠাৎ বন ধ্বংস, তাদের বাসস্থান থেকে উৎখাত হলে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।[10][11]
অ্যানোফিলিস, কিউলেক্স, এডিস, হেমাগোগাস, প্রভৃতি হল রোগ সংক্রমণের চলক হিসেবে কাজ করা মশাদের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও সাধারণভাবে সবচেয়ে পরিচিত।
জীবনচক্র
সকল মাছির মত, মশার জীবনচক্র চারটি পর্যায়ে বিভক্ত: ডিম, শূক, মুককীট, এবং পূর্ণাঙ্গ মশা। বেশির ভাগ প্রজাতির পূর্ণাঙ্গ নারী মশা বদ্ধ পানি বা জলাশয়ে ডিম পাড়ে; কিছু পানির কাছাকাছি ডিম পাড়ে, বাকিরা জলজ উদ্ভিদে ডিম পাড়ে। প্রত্যেক প্রজাতি ডিম পাড়ার জন্য পানিতে বা পানির কাছাকাছি অবস্থান নির্বাচন করে এবং পারিপার্শ্বকতার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়। কিছু হ্রদে ডিম ছাড়ে, কিছু সাময়িক ডোবায় ডিম ছাড়ে, কিছু জলাভূমিতে ডিম ছাড়ে, আবার কিছু লবণাক্ত জলাভূমিতে ডিম ছাড়ে। লবণাক্ত পানিতে ডিম পাড়া মশাদের মধ্যে সমান সংখ্যক প্রজাতি বাড়িতে পরিষ্কার পানিতে ও লবণাক্ত পানিতে ডিম পাড়ে, যার এক-তৃতীয়াংশ সমুদ্রের পানিতে এবং বাকিরা লবণাক্তরার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়।[12]
ডিম
প্রজাতি অনুযায়ী মশার ডিম পাড়ার ধরনের পার্থক্য রয়েছে। সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হল নারী মশা পানির উপরে উপর নিচে উড়াউড়ি করে এবং পানিতে ডিম ছাড়ে। এটা মূলত অ্যানোফিলিস প্রজাতি বেশি করে থাকে। অ্যানোফিলিস প্রজাতির ডিম অনেকটা চুরুটের আকৃতির এবং দুই পাশে পানিতে ভেসে থাকার উপাদান রয়েছে। কিছু প্রজাতির পূর্ণাঙ্গ নারী মশা তার জীবনচক্রে ১০০-২০০টি ডিম দিতে পারে।
শূক
মশার শূকে খাবার উপযোগী মুখসহ সুগঠিত মাথা, পা-হীন বক্ষস্থল, ও বিভক্ত পেট থাকে। লাভা চারটি স্তরে বৃদ্ধি পেয়ে মুককীটে পরিণত হয়।
মুককীট
মশার মুককীট দেখতে কমা-আকৃতির। মাথা ও বক্ষস্থল পেটের সাথে বাঁকা হয়ে একত্রিত হয়। মুককীত তার পেটের সাহায্যে সাঁতার কাটতে পারে। বেশির ভাগ প্রজাতির মুককীটকে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য প্রায়ই পানির উপরে আসতে হয়।
- পানির উপরে ভাসমান মশার শূক ও মুককীট
- পশ্চিম জার্মানিতে প্রাপ্ত ৮ মিমি লম্বা অ্যানোফিলিস শূক
- এডিস এজিপ্টি মশার শূক
- কিউলেক্স মশার শূক ও মুককীট
- কিউলেক্স মশার শূক ও একটি মুককীট
- মশার ডিমের ইলেকট্রন মাইক্রোগ্রাফ
পূর্ণাঙ্গ
প্রজাতি অনুযায়ী ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা হওয়ার সময়ের পার্থক্য দেখা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পারিপার্শ্বক তাপমাত্রার ব্যাপক প্রভাব থাকে। কিছু প্রজাতির ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা হতে সময় লাগে পাঁচ দিনের মত, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ মশা হতে সময় লাগে ৪০ দিন বা কিছু প্রজাতির ক্ষেত্রে আরও বেশি। পূর্ণাঙ্গ মশার শারীরিক আকৃতি শূকের ঘনত্ব ও পানিতে খাদ্যের সরবরাহের উপর নির্ভর করে।
তথ্যসূত্র
- "Mosquitoes of Michigan -Their Biology and Control"। Michigan Mosquito Control Organization। ২০১৩। ৩০ মার্চ ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- Gates, Bill। "The Deadliest Animal in the World"।
- "Would it be wrong to eradicate mosquitoes? – BBC News"। BBC News (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- Jaeger, Edmund C. (১৯৫৯)। A Source-Book of Biological Names and Terms। Springfield, Ill: Thomas। আইএসবিএন 0-398-06179-3।
- Society, National Geographic। "Mosquitoes, Mosquito Pictures, Mosquito Facts – National Geographic"। National Geographic। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- "Biological notes on mosquitoes"। Mosquitoes.org। ৫ আগস্ট ২০০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- Leisnham, Paul (২০১০-০৭-২৬)। "Taking a bite out of mosquito research"। Enst.umd.edu। University of Maryland। ২০১২-০৭-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- Molavi, Afshin (জুন ১২, ২০০৩)। "Africa's Malaria Death Toll Still "Outrageously High""। National Geographic। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- "Mosquito-borne diseases"। American Mosquito Control Association। ৯ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- "Flooding and communicable diseases fact sheet"। World Health Organisation। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- Wilcox, B.A.; Ellis, B. (২০০৬)। "Forests and emerging infectious diseases of humans"। Unasylva। 57। আইএসএসএন 0041-6436।
- Wigglesworth V. B. (১৯৩৩)। "The Adaptation of Mosquito Larvae to Salt Water"। J Exp Biol। 10 (1): 27–36।