মলিনা দেবী

মলিনা দেবী[1] বাংলা এবং হিন্দি চলচ্চিত্র ও থিয়েটারের এক বাঙালি ভারতীয় অভিনেত্রী ছিলেন। তাঁর অভিনীত বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে প্রায়শই তাকে মাত্রীস্থানীয় চরিত্রে দেখা যেত। বিশেষত শ্রী রামকৃষ্ণের শুভার্থী রানি রাসমণি রূপে তিনি মঞ্চ ও চলচ্চিত্রে দীর্ঘদিন অভিনয় করেছেন। বেশিরভাগ বাংলা এবং হিন্দি ভাষার নাটক ও ছবিতে তিনি অভিনয় করতেন।

মলিনা দেবী
জন্ম১৯১৬ অথবা ১৯১৭
মৃত্যু১৩ আগস্ট, ১৯৭৭
পেশাঅভিনেতা (মঞ্চ ও চলচ্চিত্র); নাট্যসংস্থার কর্ণধার
কর্মজীবন১৯২০–১৯৭০
দাম্পত্য সঙ্গীজলু বোড়াল,
গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রথম জীবন

মলিনা দেবীর জন্ম ১৯১৬ অথবা ১৯১৭ সালে, কলকাতায় হয়। [2] :২৭৫ [3][4] :১৩ তাঁর আসল নাম ছিল মলিনমালা।[5]

কর্মজীবন

মলিনা দেবী আট বৎসর বয়সে কলকাতার নাট্যমঞ্চে সখীদের নাচের দলে তাঁর কর্মজীবন আরম্ভ করেন। মিনার্ভা থিয়েটারে 'কিন্নরী', 'মিশরকুমারী' বিবিধ নাটকের পরে একসময় মনমোহন থিয়েটারে বিশেষত বালক চরিত্রে অভিনয় করতে আরম্ভ করেন। জাহাঙ্গীর নাটকে তিনি সাজেন বালক দারা শিকোহ (১৯২৯)। এর কিছুদিন পরে তাঁকে পুনরায় নৃত্যশিল্পী রূপে মঞ্চে দেখা যায়।[5]

এর পরে তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় আরম্ভ করেন ও ১৯৩০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি শ্রীকান্ত-তে তাঁকে একটি ছোট চরিত্রে দেখা যায়। নিউ থিয়েটার্সের প্রযোজনায় নির্মিত চিরকুমার সভা ছবিতে তিনি নির্মলার পার্ট করেন, ও দীর্ঘদিন নিউ থিয়েটার্সের সাথে যুক্ত থাকেন। সেখানেই তিনি নাচের অতিরিক্ত তালিম নেন ও নৃত্যবহুল বেশ কিছু ছবি যেমন মীরাবাঈমহুয়া-তে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন।

১৯৩৬ সালে তিনি অভিনয় করেন প্রমথেশ বড়ুয়া পরিচালিত গৃহদাহ ছবিতে ও ১৯৩৮ সালে প্রফুল্ল রায়ের অভিজ্ঞান। একই সাথে হিন্দি ছবি অভাগীন-এও মূল চরিত্রে অভিনয় করেন। এর পরে তিনি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত বড়দিদি ছবিতে বিপুল সাফল্য লাভ করেন[5]। একই সময় তিনি পার্শ্বচরিত্রেও অভিনয় করেন ও রজত জয়ন্তী ছবিতে উল্লেখযোগ্য কাজ করেন।

১৯৪০ সালে নিউ থিয়েটার্সের বাণিজ্যিক পরিকাঠামো বদলের পরে তিনি অন্যান্য প্রযোজনা সংস্থা দ্বারা নির্মিত ছবিতে অভিনয় আরম্ভ করেন।

পরপর অনেকগুলি ছবিতে তিনি একই ছবির বাংলা ও হিন্দি সংস্করণে মুখ্য চরিত্রে রূপদান করেন। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য রামের সুমতিবিন্দুর ছেলে। মা অথবা বউদি রূপে গুরু গম্ভীর সিরিয়াস চরিত্রের পাশাপাশি তাঁকে কমেডি ছবিতে বা খলনায়িকার ভূমিকাতেও দেখা গেছে।

১৯৫৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কমেডি ছবি সাড়ে চুয়াত্তরে তিনি তুলসী চক্রবর্তীর বিপরীতে এক অবিস্মরণীয় ভূমিকায় অভিনয় করেন, যা আজও বাঙলা চলচ্চিত্রের দর্শকদের কাছে সমাদৃত । ১৯৫৫ সালে তিনি রাণী রাসমণি ছবিতে মুখ্য চরিত্রে সাড়াজাগানো অভিনয় করেন। তাঁর বিপরীতে গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রীরামকৃষ্ণের পার্ট করেন। পরবর্তীকালে বহুবার তাঁকে মঞ্চ ও পর্দায় রাণী রাসমণির ভূমিকায় দেখা যায়। সমকালে ‘নিষ্কৃতি’, ‘ছোট বৌ’, ‘মেজো বৌ’, ‘অন্নপূর্ণার মন্দির’, ‘মহাকবি গিরিশচন্দ্র’, ‘নীলাচলে মহাপ্রভু’, ‘ইন্দ্রনাথ, শ্রীকান্ত ও অন্নদাদিদি’, ‘সাত পাকে বাঁধা’ ‘ওরা থাকে ওধারে’, ‘একটি রাত’, ‘মানময়ী গার্লস স্কুল’ ও ‘ছায়াসূর্য’ তাঁর উল্লেখযোগ্য ছবি। শেষ জীবনের উল্লেখযোগ্য ছবিগুলির মধ্যে রয়েছে দেবী চৌধুরাণী, ফুলু ঠাকুরমা, ফুলেশ্বরী, ময়না প্রভৃতি।

ছায়াছবির পাশাপাশি তিনি নিয়মিত মঞ্চে অভিনয় চালিয়ে যান। ১৯৪৩ সালে শিশির ভাদুড়ীর শ্রীরঙ্গমে (পরে বিশ্বরূপা) শরৎচন্দ্রের ‘বিপ্রদাস’ নাটকে বন্দনা চরিত্রে তিনি প্রশংসা পান। এর পরে কালিকা থিয়েটার দ্বারা প্রযোজিত বৈকুণ্ঠের উইল, মেজদিদি, যুগদেবতা নাটকে তিনি অভিনয় করেন। যুগদেবতা নাটকে তিনি রাণী রাসমণি ও গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রীরামকৃষ্ণের ভূমিকায় পার্ট করেন। পরে বিভিন্ন সময়ে মলিনা দেবীকে রাণী রাসমণির ভূমিকায় দেখা যায়। ১৯৫১ সালে বিধায়ক ভট্টাচার্যের ‘ছাব্বিশে জানুয়ারি’ ও ১৯৫২ সালে জলু বড়ালের নির্দেশনায় ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ নাটকে তিনি নামভূমিকায় ছিলেন। ১৯৭৫ সালে রঙ্গনা থিয়েটারের প্রযোজনায় নটনটী নাটকে তিনি নটী বিনোদিনীর মা, গঙ্গামণির পার্ট করেন। রেডিও শিল্পী হিসাবেও তিনি নিয়মিত কাজ করেছেন। ‘রাধারাণী’ রেডিও নাটকে রাধারাণীর মায়ের ভূমিকায় তাঁকে শোনা গিয়েছিল।

এক সময় তাঁর দ্বিতীয় স্বামী গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে যৌথভাবে একটি নাট্য সংস্থা স্থাপন করেন যার নাম দেওয়া হয় এমজি এন্টারপ্রাইজেস। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণরাণী রাসমণি নাটক দুটি বহু বৎসর ধরে তারা মঞ্চস্থ করেন।[2]

নাটকের ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য তাঁকে ১৯৭৬ সালে সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার প্রদান করা হয় । [3]

ব্যক্তিগত জীবন

১৯৭৭ সালের ১৩-ই আগস্ট কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।

ছায়াছবির তালিকা

নাম সাল ভুমিকা

তথ্যসূত্র

  1. Ananda Lal The Oxford companion to Indian theatre 2004- Page 275 "Trained in acting by Aparesh Mukhopadhyay, she debuted in a silent movie as an 8- year-old. She began her stage career, like many of ... She teamed up with Gurudas Bandyopadhyay, her second husband, to form a troupe, M. G. Enterprise, which specialized in commercial productions of devotional drama where he enacted Ramakrishna and other holy men. She made quite a stir as the lead in the ..."
  2. Lal, Ananda (২০০৪)। The Oxford companion to Indian theatre। Oxford University Press। আইএসবিএন 0195644468।
  3. "Molina Devi"sangeetnatak.gov.in। ডিসেম্বর ৯, ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৭, ২০১৮
  4. Lal, Ananda (২০০৯)। Theatres of India: A Concise Companion (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-569917-3।
  5. "আই ওয়ান্ট রিয়াল টিয়ার্স"anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-১৪
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.