মল

মল বা বিষ্ঠা (ইংরেজি: Feces) হল কোন প্রাণীর পরিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থ যা পায়ূ পথে দেহ থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়। এই নিষ্ক্রমণ প্রক্রিয়াকে মলত্যাগ বলা হয়। জীবন ধারণের জন্য প্রাণী খাদ্যগ্রহণ করে যা পরিপাক ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শরীরে হজম হয়। যে অংশ হজম হয় না তা মল বা বিষ্ঠা হিসাবে শরীর থেকে বর্জিত হয়।

চিত্র:Human Feces.jpg
হাতির মল (বাঁমে) এবং মানুষের মল (ডানে)

দূর্গন্ধ

মল সাধারণত দুর্গন্ধযুক্ত হয়। মলের আলাদা দুর্গন্ধের কারণ হল ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে মলে বিভিন্ন সালফার ঘটিত গ্যাস যেমন হাইড্রোজেন সালফাইড উৎপন্ন হয় যা দুর্গন্ধের অন্যতম উৎস। মসলাযুক্ত খাবার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে পরিপাক হয় না এবং মলের সাথে বেরিয়ে এসে আলাদা গন্ধের সৃষ্টি করে।[1]

বাস্তুতন্ত্রে ভূমিকা

প্রাণী যে খাদ্য গ্রহণ করে পরিপাকের পর তার অবশিষ্টাংশ বর্জ্য বা মল হিসেবে নির্গত হয়। যদিও খাদ্যের বেশিরভাগ পুষ্টি ই প্রাণীর শরীরে শোষিত হয়ে যায় তবুও মলে সর্বোচ্চ ৫০% পর্যন্ত পুষ্টি উপাদান থাকতে পারে।[2] এই পুষ্টি উপাদানের উপর নির্ভর করে অনেক প্রাণী বেঁচে থাকে যেমন ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক, গুবরে পোকাসহ বহু প্রাণী যারা দূরবর্তী স্থান থেকে ঘ্রাণ সংবেদ করতে পারে।[3] কিছু প্রাণী সম্পূর্ণ মল ভক্ষণের ওপর নির্ভর করে থাকে এবং কিছু প্রাণী এর পাশাপাশি অন্য খাদ্যও ভক্ষণ করে থাকে। এছাড়া বহু প্রাণী অন্য প্রাণীর ত্যাগ করা মল এবং মূত্রকে চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করে শিকারের খোঁজ করে থাকে। এছাড়া পরোক্ষভাবেও বহু প্রাণী মলের উপর নির্ভর করে।

পাখি ও অন্যান্য প্রাণী যে ফল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে তার বীজ অনেক ক্ষেত্রেই পরিপাক হয় না এবং মলের সাথে বেরিয়ে আসে। এভাবে প্রাণীর মলের মাধ্যমে উদ্ভিদের প্রজাতিগুলো একস্থান হতে দূরবর্তী স্থানসমূহে ছড়িয়ে পড়ে এবং বনায়নসহ বাস্তুতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন প্রাণীর মল ব্যাক্টেরিয়া ও অন্যান্য বিয়োজোকের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জৈব অণু সৃষ্টি করে যেগুলি উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা প্রস্তুতিতে ব্যবহার করে সমগ্র প্রাণীজগতের জন্য খাদ্যের যোগান দেয়।

বিরূপ ভূমিকা

উন্মুক্ত পরিবেশে প্রাণীর মল দীর্ঘ সময় থাকলে তাতে ব্যকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটে এবং পঁচন শুরু হয় ফলে বিভিন্ন গ্যাস ও দুর্গন্ধের কারণে পরিবেশের দূষণ ঘটে। প্রাণীর মল পানিতে মিশলে পানিকে দূষিত করে ঐ পানি পানে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর বিভিন্ন রোগ হতে পারে। বিশেষ করে পানিবাহিত রোগ, যেমন কলেরা, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগের জীবাণু মলের সাথে দেহের বাহিরে বের হয়। পাণ্ডুরোগ বা জণ্ডিসের অন্যতম কারণ জণ্ডিস রোগীর মল শুষ্ক হয়ে বাতাসে মিশে মুখপথে মানুষের শরীরে প্রবেশ।

তথ্যসূত্র

  1. Curtis V, Aunger R, Rabie T (May 2004). "Evidence that disgust evolved to protect from risk of disease". Proc. Biol. Sci. 271 Suppl 4 (Suppl 4): S131–3.
  2. Biology(4th edition) N.A.Campbell (Benjamin Cummings NY, 1996) ISBN 0-8053-1957-3
  3. Heinrich B, Bartholomew GA (১৯৭৯)। "The ecology of the African dung beetle"Scientific American241 (5): 146–56। ডিওআই:10.1038/scientificamerican1179-146
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.