ময়নামতি

ময়নামতি বাংলাদেশের কুমিল্লায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থান। ময়নামতির পূর্ব নাম রোহিতগিরি। এযাবৎ আবিষ্কৃত লালমাই অঞ্চলের প্রাচীনতম সভ্যতার নিদর্শন হল ময়নামতি প্রত্নস্থল। বর্তমানে ময়নামতি অঞ্চলে যে ধ্বংসস্তূপ দেখা যায় তা প্রকৃতপক্ষে একটি প্রাচীন নগরী ও বৌদ্ধ বিহারের অবশিষ্টাংশ। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে ইহা জয়কর্মান্তবসাক নামক একটি প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ।[1]

ময়নামতি রাণীর কুঠির

ইতিহাস

ময়নামতি বাংলাদেশের কুমিল্লায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থান। এযাবৎ আবিষ্কৃত লালমাই অঞ্চলের প্রাচীনতম সভ্যতার নিদর্শন হলো ময়নামতি প্রত্নস্থল। বর্তমানে ময়নামতি অঞ্চলে যে ধ্বংশস্তুপ দেখা যায় তা প্রকৃতপক্ষে একটি প্রাচীন নগরী ও বৌদ্ধ বিহারের অবশিষ্টাংশ । প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে ইহা জয়কর্মান্তবসাক নামক একটি প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ ।

কুমিল্লার ময়নামতিতে খননকৃত সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে শালবন বিহার অন্যতম প্রধান। কোটবাড়িতে বার্ডের কাছে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় এ বিহারটির অবস্থান। বিহারটির আশপাশে এক সময় শাল-গজারির ঘন বন ছিল বলে এ বিহারটির নামকরণ হয়েছিল শালবন বিহার। এর সন্নিহিত গ্রামটির নাম শালবনপুর। এখনো ছোট একটি বন আছে সেখানে। এ বিহারটি পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের মতো হলেও আকারে ছোট।

ধারণা করা হয় যে খ্রিস্টিয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন। শালবন বিহারের ছয়টি নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ পর্বের কথা জানা যায়। খৃষ্টিয় অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় মন্দিরটি নির্মাণ করা হয় ও বিহারটির সার্বিক সংস্কার হয় বলে অনুমান করা হয়। চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ের নির্মাণকাজ ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয় নবম-দশম শতাব্দীতে।

আকারে এটি চৌকো। শালবন বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ। বিহারের চার দিকের দেয়াল পাঁচ মিটার পুরু। কক্ষগুলো বিহারের চার দিকের বেষ্টনী দেয়াল পিঠ করে নির্মিত। বিহারে ঢোকা বা বের হওয়ার মাত্র একটাই পথ ছিল। এ পথ বা দরজাটি উত্তর ব্লকের ঠিক মাঝামাঝি স্খানে রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের মাঝে ১.৫ মিটার চওড়া দেয়াল রয়েছে। বিহার অঙ্গনের ঠিক মাঝে ছিল কেন্দ্রীয় মন্দির।

বিহারের বাইরে প্রবেশ দ্বারের পাশে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি হলঘর রয়েছে। চার দিকের দেয়াল ও সামনে চারটি বিশাল গোলাকার স্তম্ভের ওপর নির্মিত সে হলঘরটি ভিক্ষুদের খাবার ঘর ছিল বলে ধারণা করা হয়। হলঘরের মাপ ১০ মিটার গুণন ২০ মিটার। হলঘরের চার দিকে ইটের চওড়া রাস্তা রয়েছে।

প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে বিহারটির ধ্বংসাবশেষ থেকে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক বা টেরাকোটা, সিলমোহর, ব্রৌঞ্জ ও মাটির মূর্তি পাওয়া গেছে। এগুলো বাংলাদেশের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করছে।

এ স্থানটি দর্শনে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটে। ঢাকা থেকে ১১৪ কি.মি. দূরে ময়নামতির অবস্থান এবং চট্টগ্রাম থেকে মাত্র ২ ঘন্টায় ময়নামতি পৌঁছানো সম্ভব।

স্থাপনা

ময়নামতি প্রত্নস্থলের কিছু উল্লেখযোগ্য স্থাপনা হল :

ঐতিহাসিক নিদর্শন সমূহ :

এখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিদর্শনও পাওয়া গেছে। এখানে জাদুঘরে বিভিন্ন মুদ্রা ও পাথরের ফলক সংরক্ষিত আছে।

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন
  2. "ময়নামতী - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৩

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.