মতিন রহমান

মতিন রহমান (জন্ম: ১৮ মার্চ, ১৯৫২) একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক।[1] আজিজুর রহমানের সহকারী হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্রে আগমন হলেও অচিরেই তিনি একজন সফল পরিচালক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেন। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র লাল কাজল। ১৯৯৩ সালে অন্ধ বিশ্বাস চলচ্চিত্র পরিচালনা করে অর্জন করেন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার[2]

মতিন রহমান
জন্ম
মতিন রহমান

(1952-03-18) ১৮ মার্চ ১৯৫২
জাতীয়তাবাংলাদেশী
শিক্ষাপিএইচডি
মাতৃশিক্ষায়তননওগাঁ কেডি হাই স্কুল
নওগাঁ ডিগ্রী কলেজ
আলমগীর কবির ফিল্ম ইন্সটিটিউট
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাচলচ্চিত্র পরিচালক, শিক্ষকতা
কর্মজীবন১৯৭৩বর্তমান
উল্লেখযোগ্য কর্ম
দাম্পত্য সঙ্গীনাসিম খানম
সন্তান
  • নওশীন (মেয়ে)
  • নওরীন (মেয়ে)
  • মৃত্তিক রহমান (ছেলে)
পিতা-মাতা
  • মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার (পিতা)
  • জামিলা খাতুন (মাতা)
পুরস্কারজাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১ বার)

প্রাথমিক জীবন

মতিন রহমান ১৯৫২ সালের ১৮ মার্চ বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার শান্তাহারে জন্মগ্রহণ করেন। সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। শৈশব কাটে ও গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন শান্তাহারে।[3] পরে ১৯৭৩ সালে ঢাকায় এসে আলমগীর কবির ফিল্ম ইন্সটিটিউটে চলচ্চিত্র বিষয়ে পড়াশুনা করেন। তিনি বাংলাদেশে সাংবাদিকতাসহ চলচ্চিত্র বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিপ্রাপ্ত প্রথম ছাত্র।[4]

চলচ্চিত্র জীবন

মতিন রহমান চলচ্চিত্রকার আজিজুর রহমানের সহকারী হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেন। আজিজুর রহমানের সহকারী হিসেবে তিনি অশিক্ষিত (১৯৭৮), মাটির ঘর (১৯৭৯), ছুটির ঘণ্টা (১৯৮০) এবং মহানগর (১৯৮১) চলচ্চিত্রে কাজ করেন। ১৯৮২ সালে নির্মিত লাল কাজল পরিচালক হিসেবে তার প্রথম চলচ্চিত্র।[5] এরপর নির্মাণ করেন চিৎকার, স্বর্গ নরক, স্নেহের বাঁধন, জীবন ধারা। ১৯৮৯ সালে পরিচালনা করেন পাকিস্তানের ইকবাল কাশ্মীরীর একটি গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার আহমদ জামান চৌধুরীর লেখা কাহিনী নিয়ে রাঙা ভাবী এবং ময়মনসিংহ গীতিকার লোককাহিনী অবলম্বনে বীরাঙ্গনা সখিনা। ১৯৯২ সালে পরিচালনা করেন অন্ধ বিশ্বাস। এই ছায়াছবিতে তার যার সহকারী হিসেবে চলচ্চিত্রে আসা সেই আজিজুর রহমান তার সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এই চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি নির্মাণ করেন সালমান শাহশাবনূর জুটিকে নিয়ে তোমাকে চাই (১৯৯৬), মন মানে না, রিয়াজ, শাকিল খান ও শাবনূর অভিনীত বিয়ের ফুল (১৯৯৯) ও নারীর মন (২০০০), রিয়াজ, শাবনূর, ও ফেরদৌস আহমেদ অভিনীত এ মন চায় যে...! (২০০০), রিয়াজ ও শাবনূর অভিনীত মাটির ফুল (২০০৩) ও মহব্বত জিন্দাবাদ[6] ২০০৪ সালে রিয়াজ ও শ্রাবন্তিকে নিয়ে নির্মাণ করেন কমেডি ধাঁচের রং নাম্বার। ২০০৫ সালে নির্মাণ করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত গল্প অবলম্বনে রাক্ষুসী[7] এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন রোজিনাফেরদৌস আহমেদ। ২০০৮ সালে পরিচালনা করেন তোমাকেই খুঁজছি[8]

চলচ্চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছেন। তিনি প্রথম আজিজুর রহমান পরিচালিত অতিথি চলচ্চিত্রে কাজী চরিত্রে অভিনয় করেন।[9] এছাড়া তিনি তার নিজের পরিচালিত স্নেহের বাঁধন চলচ্চিত্রে শাবানার স্বামী চরিত্রে অভিনয় করেন। পরবর্তীতে তিনি নারীর মন ছায়াছবিতে শিক্ষক, বউ শাশুড়ীর যুদ্ধ ছায়াছবিতে ডাক্তার, ও রাক্ষুসী ছায়াছবিতে পূর্ণিমার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া তিনি দিলশাদুল হক শিমুল পরিচালিত লিডার চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয় করেন।[10]

শিক্ষকতা ও লেখালেখি

তিনি ২০০২ সাল থেকে ঢাকার বেসরকারী স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এ ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। ২০১৩ সালে তিনি নন্দিত সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত দুটি চলচ্চিত্র নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন। বইটির নাম "হুমায়ূন আহমেদ-এর শেষ ও প্রথম চলচ্চিত্র"।[11]

ব্যক্তিগত জীবন

মতিন রহমান নাসিম খানমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই মেয়ে নওশীন ও নওরীন এবং এক ছেলে মৃত্তিক রহমান। তারা ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাস করেন।[12]

চলচ্চিত্রের তালিকা

বছর চলচ্চিত্র পরিচালক চিত্রনাট্যকার অভিনেতা ভাষা টীকা
১৯৭৩অতিথিহ্যাঁবাংলা
১৯৭৯মাটির ঘরহ্যাঁবাংলাসহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন
১৯৮২লাল কাজলহ্যাঁবাংলা
চিৎকারহ্যাঁবাংলা
স্বর্গ নরকহ্যাঁবাংলা
১৯৮৮জীবন ধারাহ্যাঁবাংলা
১৯৮৯রাঙা ভাবীহ্যাঁহ্যাঁবাংলা
বীরাঙ্গনা সখিনাহ্যাঁবাংলা
১৯৯২অন্ধ বিশ্বাসহ্যাঁহ্যাঁবাংলাবিজয়ী: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ পরিচালক
রাধা কৃষ্ণহ্যাঁবাংলা
১৯৯৬তোমাকে চাইহ্যাঁহ্যাঁবাংলা
১৯৯৭স্নেহের বাঁধনহ্যাঁহ্যাঁবাংলা
মন মানে নাহ্যাঁবাংলা
১৯৯৯বিয়ের ফুলহ্যাঁহ্যাঁবাংলা
২০০০নারীর মনহ্যাঁহ্যাঁবাংলা
এ মন চায় যে...!হ্যাঁবাংলা
২০০৩মাটির ফুলহ্যাঁবাংলা
বউ শাশুড়ীর যুদ্ধহ্যাঁবাংলা
মহব্বত জিন্দাবাদহ্যাঁবাংলা
২০০৪রং নাম্বারহ্যাঁবাংলা
২০০৫রাক্ষুসীহ্যাঁহ্যাঁবাংলা
২০০৮তোমাকেই খুঁজছিহ্যাঁবাংলা

পুরস্কার

বছর পুরস্কার বিভাগ চলচ্চিত্র ফলাফল
১৯৯৩জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারশ্রেষ্ঠ পরিচালকঅন্ধ বিশ্বাস (১৯৯২)বিজয়ী

তথ্যসূত্র

  1. "চলচ্চিত্র নির্মাতা মতিন রহমানকে হত্যার হুমকি"দৈনিক আমার দেশ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২০ অক্টোবর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৬
  2. "গুরুতর অসুস্থ মতিন রহমান"দৈনিক সমকাল। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২৪ জুন ২০১১। ২৯ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৬
  3. "আলাপের অতিথি চলচ্চিত্রকার মতিন রহমান"সাতদিন। ১৮ মার্চ ২০১৫। ২৯ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৬
  4. "মতিন রহমান"বিডিনিউজ। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৬
  5. এফ আই দীপু (১৫ অক্টোবর ২০১৫)। "মতিন রহমান"দৈনিক যুগান্তর। ঢাকা, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৬
  6. "ভয়ে বাইরে যাচ্ছেন না মতিন রহমান"দ্য রিপোর্ট২৪। ২০ অক্টোবর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৬
  7. "চলচ্চিত্রে নজরুল"কাজী নজরুল ইসলাম। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৬
  8. "চলচ্চিত্রকার মতিন রহমানের প্রয়োজন ওপেন হার্ট সার্জারি"বাংলানিউজ। ২৩ জুন ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৬
  9. "অভিনয়ে ব্যস্ত নির্মাতা মতিন রহমান"দৈনিক ইত্তেফাক। ঢাকা, বাংলাদেশ। ১৯ জানুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৬
  10. "'লিডার' মতিন রহমান সঙ্গে ফেরদৌস"দৈনিক মানবজমিন। ঢাকা, বাংলাদেশ। ১৭ জানুয়ারি ২০১৪। ১৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৬
  11. "হুমায়ূন আহমেদের দুটি চলচ্চিত্র নিয়ে মতিন রহমান"দৈনিক ইত্তেফাক। ঢাকা, বাংলাদেশ। ৩ মে ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৬
  12. "হুমকির মুখে মতিন রহমান"দৈনিক ভোরের পাতা। ১৯ অক্টোবর ২০১৫। ২১ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৬

বহিঃসংযোগ

বাংলা মুভি ডেটাবেজে মতিন রহমান

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.