মণিরামপুর উপজেলা

মণিরামপুর বাংলাদেশের যশোর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। জনশ্রুতি আছে রাজা সীতারাম রায়ের উকিল মুণিরাম রায়ের নাম ধরে জনপদের নাম হয়েছে মণিরামপুর। ঊনবিংশ শতকের প্রথম দশকে চাঁচড়া রাজবাড়ীর জনৈক মহিলা এখানে একটি মস্তবড় পুকুর খনন করেন। আজও তা কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে।[2]

মণিরামপুর
উপজেলা
মণিরামপুর
মণিরামপুর
বাংলাদেশে মণিরামপুর উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৩°০′৫২″ উত্তর ৮৯°১৪′১৩″ পূর্ব
দেশবাংলাদেশ
বিভাগখুলনা বিভাগ
জেলাযশোর জেলা
আসন৮৯, যশোর-৫
আয়তন
  মোট৪৪৪.৭৩ বর্গকিমি (১৭১.৭১ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[1]
  মোট৩,৮২,৪৬৫
  জনঘনত্ব৮৬০/বর্গকিমি (২,২০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৫০.৭৬%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৭৪৪০
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৪০ ৪১ ৬১
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

ইতিহাস

মণিরামপুরের হরিহর নদী।

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মণিরামপুর উপজেলা হরিহর নদীর তীরে অবস্থিত ।

জনশ্রুতি আছে যে, রাজা সীতারাম রায়ের আইনজীবী মুনিরাম রায়ের নামানুসারে মণিরামপুর উপজেলার নামকরণ করা হয়েছিল।চাঁচড়া ব্যাসিলিকা (রাজা প্রাসাদ) এর কিছু মহিলা এখানে একটি বড় পুকুর খনন করেছিলেন যা এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটি উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে খনন করা হয়। রাজারা ত্রিমোহনী সংযোগ সড়কে মণিরামপুর থেকে রাজগঞ্জ পর্যন্ত নয় কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করেন। মণিরামপুর ১৭৮৫ সাল থেকে পরিচিত। মণিরামপুরের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন মোঃ লুৎফর রহমান এবং প্রথম নির্বাহী কর্মকর্তা (টিএনও/ইউএনও) ছিলেন মোঃ এসএম মিজানুর রহমান।[3]

১৯৭১ এর সময়

মণিরামপুর উপজেলায় অবস্থিত আসাদ, মানিক, ফজলু, শান্তি, তোজোর কবর

১৯৭১ সালের ২৩ অক্টোবর চিনাটোলা গ্রামের কবি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ মনিরুজ্জামানের ছোট ভাই শহীদ আসাদুজ্জামান আসাদকে হত্যা করা হয়।তাকে চিনাটোলার হরিহর নদীর তীরে চিনাটোলা ব্রিজের কাছে সমাহিত করা হয়।শুধু আসাদ নয়, সিরাজুল ইসলাম শান্তি, মশিকুর রহমান তোজো, আহসান উদ্দিন খান মানিক, ফজলুর রহমান ফজলুকেও একই স্থানে একই সময়ে হত্যা করা হয় এবং তাদের সবাইকে একসঙ্গে কবরে দাফন করা হয়। [4] [5] [6] [7]

তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও রাজনৈতিক দলের নেতা ছিলেন।তাদের একসঙ্গে গ্রেফতার করা হয়, একসঙ্গে হত্যা করা হয় এবং একসঙ্গে কবর দেওয়া হয়। মণিরামপুরের খানপুরের শহীদ আকরাম মণিরামপুরের জুরানপুরের নিহত হন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে এ উপজেলায় রয়েছে ‘শহীদ আকরাম সড়ক’। তাছাড়া উপজেলায় আছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ

মণিরামপুর থানা ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৮ নম্বর সেক্টরের নিয়ন্ত্রণে ছিল।সেক্টরের সদর দফতর ছিল বেনাপোলে, এটির নেতৃত্বে ছিলেন মেজর আবু ওসমান চৌধুরী (এপ্রিল ১০ - ১৭ জুলাই, ১৯৭১) তারপর মেজর এম এ মঞ্জুর (১৪ আগস্ট, ১৯৭১ - ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২) এবং মণিরামপুরের প্রথম শহীদ জিএম মোসলেম উম্মে উদ্দিন।

স্মৃতিসৌধ:

  • শহীদ আকরাম রোড, মণিরামপুর,
  • মণিরামপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

প্রশাসনিক এলাকা

মণিরামপুরে হরিহর নদ

এর আয়তন ৪৪৪.৭৩ বর্গ কিলোমিটার (১৭১.৭৩ বর্গমাইল)। উত্তরে যশোর সদর উপজেলা, দক্ষিণে কেশবপুর উপজেলাখুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা, পূর্বে অভয়নগর উপজেলা, পশ্চিমে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলাঝিকরগাছা উপজেলা। এখানকার প্রধান নদ-নদী সমুহ: হরিহর, মুক্তেশ্বরী এবং কপোতাক্ষ

প্রশাসনিক অবকাঠামো

১৫ এপ্রিল ১৯৮৩ সালে মণিরামপুর থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। ১টি পৌরসভা, ৯টি ওয়ার্ড, ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদ, ২৪৬টি মৌজা এবং ২৪৯টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এই উপজেলা। ইউনিয়নগুলো হলো–

  1. কাশিমনগর ইউনিয়ন
  2. কুলটিয়া ইউনিয়ন
  3. খানপুর ইউনিয়ন
  4. খেদাপাড়া ইউনিয়ন
  5. চালুয়াহাটি ইউনিয়ন
  6. ঝাঁপা ইউনিয়ন
  7. ঢাকুরিয়া ইউনিয়ন
  8. দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়ন
  9. নেহালপুর ইউনিয়ন
  10. ভোজগাতি ইউনিয়ন
  11. মণিরামপুর ইউনিয়ন
  12. মনোহরপুর ইউনিয়ন
  13. মশ্বিমনগর ইউনিয়ন
  14. রোহিতা ইউনিয়ন
  15. শ্যামকুড় ইউনিয়ন
  16. হরিদাসকাটি ইউনিয়ন
  17. হরিহরনগর ইউনিয়ন

জনপ্রতিনিধি

নির্বাচিত সংসদ সদস্য

নির্বাহ কাল সংসদ সদস্য রাজনৈতিক দল
১৯৭৩ পিজুষ কান্তি ভট্টাচার্য (বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
১৯৭৯ আফসার সিদ্দিকী বিএনপি
১৯৮৬ মুফতি ওয়াক্কাস জাতীয় পার্টি
১৯৯১ খান টিপু সুলতান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
১৯৯৬ খান টিপু সুলতান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
২০০১ মুফতি ওয়াক্কাস জামাত-ই-উলামাই ইসলাম
২০০৮ টিপু সুলতান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
২০১৪ স্বপন কুমার ভট্টাচার্য স্বতন্ত্র
২০১৮ স্বপন কুমার ভট্টাচার্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

এখনো পর্যন্ত খান টিপু সুলতান হলেন মণিরামপুর থেকে সর্বাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য।

উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান

ক্রঃ নং নাম হইতে পর্যন্ত
০১ স্বপন ভট্টাচার্য্য (নির্বাচিত) ২৪-০২-২০০৯ ০২-১২-২০১৩
০২ নাজমা খানম (ভারপ্রাপ্ত) ০৩-১২-২০১৩ ১৯-০৪-২০১৪
০৩ মোঃ আমজাদ হোসেন লাভলু (নির্বাচিত) ১৯-০৪-২০১৪

মণিরামপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র প্রিন্সিপাল আলহাজ কাজী মাহমুদুল হাসান। (দায়িত্বরত)

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরৎ চন্দ্র মজুমদার (১৯৫৫-৫৮) এবং ধর্মীয় বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মুফতি ওয়াক্কাস এরশাদ সরকারের অধীনে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বর্তমানে মানিরামপুর (যশোর-০৫) সংসদীয় আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য (এমপি) দায়িত্ব পালন করছেন।

জনসংখ্যা

মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ ৩০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ৫০.১ শতাংশ এবং মহিলা ৪৯.৯ শতাংশ। মুসলমান ৭৯.২ শতাংশ, হিন্দু ২০.৬২ শতাংশ এবং অন্যান্য ৫.১৮ শতাংশ। গড় সাক্ষরতা ২৮.৯ শতাংশ। যার মধ্যে শতকরা ৩৭.২জন পুরুষ এবং ২০.৬ জন মহিলা।

রাস্তাঘাট ও যানবাহন

পাকা রাস্তা ৪৪ কি: মি:, আধা পাকা ৩২ কি:মি: এবং কাঁচা রাস্তা ৭৮৬ কি: মি:।

গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, হেলিকাপ্টার ( যাত্রী বাহক সাইকেল) এবং পালকি হলো এ অঞ্চলের ঐতিহাসিক যানবাহন। এ ধরনের পরিবহন হয় বিলুপ্ত অথবা প্রায় বিলুপ্ত।

এছাড়া আধুনিক যানবাহন যেমন– বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, ইজিবাইক, রিকশা-ভ্যান, টেম্পু, করিমন, টেকার, নসিমন, আলমসাধু এবং ইজিভ্যান ইজি রিকশা সহ অন্যান্য সাধারণ যানবহন মণিরামপুরে চলমান।

স্থানীয় সংগঠন

অভেদ রক্তদান সংস্থা, প্রত্যয় সমাজ উন্নয়নমূলক সংগঠন, সত্যসন্ধ, কণ্ঠশীলন, উচ্চারণ শিল্পী সংসদ, মণিরামপুর শিল্পী গোষ্ঠি, টুনিয়াঘরা মানবকল্যাণ সংঘ।

স্থানীয় উৎসব

নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা, ঝাঁপা বাঁওড়, মণিরামপুর

মণিরামপুর শিল্পী গোষ্ঠির আয়োজনে ২০০০ সাল থেকে নিয়মিত বৈশাখী মাসে মণিরামপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে কৃষি মেলা এবং বৃক্ষ ও ফলজ মেলা হয়ে থাকে যা অতিশয় দৃষ্টিনন্দন। অত্যন্ত যাকজমকের সাথে এখানে পূজা-পার্বণ উদযাপিত হয়। মশিয়াহাটির মন্দির প্রাঙ্গণ এর দুর্গাপূজা এবং কপালিয়ার মহামায়া পূজা (গাউটে মেলা) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া ঝাঁপা বাঁওড়ে অনুষ্ঠিত নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অতি মনোরম।

শিক্ষা

কলেজের সংখ্যা ১১টি, উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৭টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যায়ের সংখ্যা ৩৭টি, মাদ্রাসার সংখ্যা ১৬৩টি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১২০টি এবং বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৪৬ টি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মণিরামপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মণিরামপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

অর্থনীতি

ফসলের মাঠ, রাজগঞ্জ, মণিরামপুর।

মণিরামপুরে মানুষের জীবিকা প্রধানত কৃষিনির্ভর। এখানে কৃষিতে ৪৫.৬%, কৃষি শ্রমিক হিসেবে ২৮.৩৬%, পরিবহনে ২.৪৪%, দিন মজুর হিসেবে ১.৯৯%, ব্যবসা বাণিজ্যে ৯.৫১%, চাকুরীতে ৩.৯৪%, শিল্পে ২% এবং অন্যান্য পেশাতে ৬.১৬% মানুষ নিয়োজিত।

এ অঞ্চলে উৎপাদিত প্রধান শস্য হলো ধান, পাট, আলু, সরিষা ও ঋতুকালীন তরিতরকারি। মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১,০৯,৮৯৪ একর। বিলুপ্ত অথবা প্রায় বিলুপ্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে মসীনা, নীল, এবং অরহর। এখানে প্রচুর পরিমাণে আম, কাঁঠাল, পেঁপে এবং কলা সহ অন্যান্য ঋতুকালীন ফল পাওয়া যায়। শিল্প প্রধান অঞ্চল না হলেও মণিরামপুর উপজেলায় কয়েকটি চাউল কল, আটা কল ও বরফ কল আছে। কুঠির শিল্প যেমন– তাঁত, স্বর্ণকার, কামার, কুম্ভকার, মাটির কাজ, দর্জি এবং ওয়েল্ডিং-ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অবদান রাখে।

মোট হাট–বাজারের সংখ্যা ৬০টি। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নেহালপুর, মণিরামপুর, ঢাকুরিয়া এবং চীনেটোলা।

দর্শনীয় স্থান

মণিরামপুর উপজেলায় অবস্থিত দমদম পীরের ঢিবি
  • নীলকুঠী, জয়পুর
  • পাগলাদোহা
  • অচিন গাছ
  • দমদম পীরের ডিবি
  • ভাসমান সেতু
  • মোহন্ততলা আশ্রম রঘুনাথপুর

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে মণিরামপুর"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৩ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারী ২০১৫
  2. http://manirampur.jessore.gov.bd/site/golpo_noy_shotti/20865f90-9e85-4460-93ed-fcd451a956c6/মনিরামপুর-উপজেলার-ভৌগোলিক-অবস্থান-ও-ইতিহাস
  3. "Manirampur Upazila, Jessore."। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৩, ২০১৫
  4. "হরিহর নদীর তীরে একই কবরে পাঁচ মুক্তিযোদ্ধা"Euro BD News। ২০১৪। এপ্রিল ১৮, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৮, ২০১৫
  5. "মণিরামপুরের ৫ সূর্যসন্তানের ৪১তম শাহাদাৎ বার্ষিকী"। ২০১২। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৮, ২০১৫
  6. "কমরেড আসাদ-শান্তি-মানিক-তোজো-ফজলুর ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন"। ২০১৪। এপ্রিল ১৮, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৮, ২০১৫
  7. মুক্তিযুদ্ধে চিনাটোলাManobkantha। ২০১২। এপ্রিল ১৮, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৮, ২০১৫

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.