ভ্রামরী দেবী মন্দির

ভ্রামরী দেবী মন্দির ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়ি ব্লকের তিস্তা নদীর তীরে পুরনো শালবাড়িতে অবস্থিত । মন্দিরটি নদীর তিন স্রোতের মাঝে অবস্থান করছে বলে একে ত্রিস্রোতা বলা হয়। এই শক্তিপীঠ খুবই জাগ্রত। তবে মন্দিরটির অবস্থান সম্পর্কে অনেক গল্প প্রচলিত আছে। অনেকের মতে এই শক্তিপীঠটি জলপাইগুড়ি জেলার বোদাগঞ্জ অথবা সাতকুড়া অঞ্চলে অবস্থিত।[1][2][3]

ইতিকথা

সত্য যুগে দক্ষ যজ্ঞে সতী শিব নিন্দা সহ্য করতে না পেরে আত্মাহুতি দেন।এর পর মহাদেব কালভৈরবকে পাঠান দক্ষকে বধ করতে।সতীর দেহ নিয়ে তিনি শুরু করেন তাণ্ডবনৃত্য ।ফলে বিষ্ণু সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ বিভিন্ন ভাগে খণ্ডিত করেন।এই অংশ গুলো যেখানে পরেছে সেখানে মন্দির তৈরি হ্যেছে।এগুলোকে সতীপীঠ বা শক্তিপীঠ বলে।এগুলি তীর্থে পরিণত হয়েছে।[4]

পুরাণে আছে অরুণাসুর নামে এক অসুর এর আক্রমণে ধরা যখন বিপর্যস্ত তখন দেবী পার্বতী এই রূপ নেন। অরুণাসুরের বোন বজ্রজ্বালা এর দুর্মত্তি হল যে সে চন্দ্রদেবের রাণী হিসেবে থাকবেন চিরকাল। কিন্তু চন্দ্র তার বিবাহের প্রস্তাব প্রত্যাহার করলে বোনের অপমানের শোধ নিতে অরুণাসুর ব্রহ্মার থেকে বর চায় যে কোনো দ্বিপদী বা চতুষ্পদী প্রাণী তাকে হত্যা করতে পারবে না। সে ক্রোধে দেবতাদের বন্দী করলো । বরে মত্ব হয়ে সে কৈলাসে দেবী পার্বতীকে আক্রমণ করলো তখন দেবী ভ্রামরী রূপ ধরে যুদ্ধে অগ্রগমণ করেন। ভ্রামরী শতসহস্র ভ্রমর কে পাঠালে যুদ্ধাঙ্গনে তারা অরুণাসুরকে দংশন করে ও তাকে সম্পূর্ণ ভক্ষণ করে ও তার মৃত্যু হয়।[5]

মন্দির নিয়ে অনেক গল্প আছে। আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগে এক লাল কাপড় পরা মহারাজ এসেছিলেন মন্দিরে । তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিশাল জটা ছিল। তিনি দীর্ঘদিন মন্দিরে পূজা ও যজ্ঞ করেন। তিনিই তিনটি মোটা গাছের গুড়ির নিচে মায়ের পাথররুপী বাম পার সন্ধান পান । এরপর দেশ বিদেশ থেকে মন্দিরে সাধুসন্তরা আসতে শুরু করে । সে সময় এখানে আসা ভক্তদের কেউ মন্দিরের একটা ম্যাপ এঁকেছিল। যা আজও ফালাকাটা স্টেশনের দেওয়ালে দেখা যায়। একবার জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তাপস সাধ্য ও দিলীপ চৌধুরী নামে দুই অফিসার মন্দিরে এসেছিলেন । তারা শালবাড়ির লোকেদের মার মহিমার কথা বলেন। এই এলাকার এক প্রবীণ নিরেন রায় একটি দুর্ঘটনায় নির্দোষ হওয়া সত্বেও মামলায় জড়িয়ে যান। মা ভ্রামরী দেবীর কৃপায় তিনি সেই মামলা থেকে মুক্তি পান । তিনি মার নতুন প্রতিমা তৈরি করে পূজা করে ও জোড়া পাঠা বলি দেন।[6]

দেবী ও ভৈরব

পীঠনির্ণয়তন্ত্র মতে দেবী সতীর বাম চরণ ত্রিস্রোতায় পতিত হয়েছিল [7]। দেবীর নাম ভ্রামরী, ভৈরবের নাম ঈশ্বর বা জল্পেশ। দেবী ভ্রামরীও অন্যতম আদি শক্তি ।[8]ভৈরব জল্পেশ জল্পেশ মন্দির এ অবস্থান করেন।

মন্দির

মন্দিরটি তৈরির সঠিক তারিখ এখনও অজানা । কারণ এটি এমন এক শক্তিপীঠ যা বহু শতাব্দী পূর্বে তৈরি হয়েছিল।[9] মন্দির চত্বরে জোরা বট গাছ খুব আকর্ষণীয়। এই সতীপীঠ খুব জাগ্রত। মূল মন্দিরে প্রবেশ পথে সিদ্ধিদাতা গণেশের মূর্তি আছে। মূলমন্দিরে দেবীমূর্তি রয়েছে । দেবী অলঙ্কারে ভূষিত ও অষ্টভূজা । দেবীর সামনে বড় বড় কলস আছে। কলসের উপরে পুষ্পপত্র আছে । এর পাশে আছে পিতলের দেবী চরণযুগল। যা ভক্তিভরে পূজা করা হয়। দেবীর ডানদিকে মহাদেবের মূর্তি আছে । এই কক্ষের নীচে কয়েক সিঁড়ি পরে মন্দিরের গর্ভগৃহ। দেবী সিংহবাহনী ও কৃষ্ণবর্না। সামনের বেদীতে রয়েছে দেবীর প্রস্তরীভূত বামপদ। শরত্‍কালে নবরাত্রির পূজা হয় মন্দিরে । দেবীর আরাধনা করতে প্রচুর ভক্ত আসে। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন পুজো হয়। মন্দিরে দূর্গা পূজা ও মাঘি পূর্নিমায় বিশেষ পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়।[10]

তথ্যসূত্র

  1. "সতীপীঠ ভ্রামরী - Prothom Kolkata"Dailyhunt (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৩
  2. "গজলডোবায় পর্যটক টানতে ভ্রামরী মন্দিরের সৌন্দর্যায়ন"EI Samay। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৩
  3. "তারাপীঠের আদলে মালবাজারে তৈরি হচ্ছে মন্দির"Zee24Ghanta.com। ২০২১-০৩-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৩
  4. "ভ্রামরীদেবী দর্শন ~ শক্তিপীঠ ত্রিস্রোতা"Momspresso। ২০১৯-০৯-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১০
  5. "সতীপীঠ ভ্রামরী - Prothom Kolkata"Dailyhunt (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৩
  6. "কামাখ্যা কালীঘাটের মত শালবাড়ীর ভ্রামরী দেবীর মন্দিরও হতে পারতো প্রসিদ্ধ তীর্থস্থান - Banglar Pran"Dailyhunt (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৩
  7. "বৈষ্ণব-শাক্ত-শৈবপীঠের ত্রিধারায় পর্যটন সার্কিট"Eisamay। ২০১৮-১০-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১০
  8. "সতীপীঠ ত্রিস্রোতায় ভ্রামরী দেবীর আরাধনা"Bengali News Channel in Kolkata (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-১১-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৩
  9. "maa bhramari devi temple"pilgrimaide। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১০
  10. "সতীপীঠ ভ্রামরী - Prothom Kolkata"Dailyhunt (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৩
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.