ভোলা জেলা
ভোলা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এর পূর্বের নাম দক্ষিণ শাহবাজপুর।[2]
ভোলা | |
---|---|
জেলা | |
বাংলাদেশে ভোলা জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২২°১০′৪২.৭১″ উত্তর ৯০°৪২′৩৬.৩৭″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | বরিশাল বিভাগ |
সরকার | |
• জেলা প্রশাসক | তৌফিক ই ইলাহি চৌধুরী |
আয়তন | |
• মোট | ৩,৪০৩.৪৮ বর্গকিমি (১,৩১৪.০৯ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ১৭,৭৬,৭৯৫ |
• জনঘনত্ব | ৫২০/বর্গকিমি (১,৪০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৪৩.২% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ১০ ০৯ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট |
ইতিহাস
ভোলা জেলার পূর্ব নাম দক্ষিন শাহবাজপুর । জে.সি. জ্যাক তার "বাকেরগঞ্জ গেজেটিয়ার"-এ বলেছেন যে দ্বীপটি ১২৩৫ সালে তৈরি হওয়া শুরু হয়েছিল এবং এই এলাকায় চাষাবাদ শুরু হয়েছিল ১৩০০ সালে। ১৫০০ সালে পর্তুগিজ এবং মগ জলদস্যুরা এই দ্বীপে তাদের ঘাঁটি স্থাপন করে। শাহবাজপুরের দক্ষিণাঞ্চলেও আরাকান ও মগ জলদস্যুরা তাদের ঘাঁটি স্থাপন করে।
শাহবাজপুর ১৮২২ সাল পর্যন্ত বাকেরগঞ্জ জেলার একটি অংশ ছিল। ১৯ শতকের শুরুতে, মেঘনা নদীর সম্প্রসারণের কারণে জেলা সদর থেকে দক্ষিণ শাহজাদপুরের সাথে সংযোগ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এরপর সরকার দক্ষিণ শাহবাজপুর ও হাতিয়াকে নোয়াখালী জেলার অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। ভোলা ১৮৬৯ সাল পর্যন্ত নোয়াখালীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৬৯ সালে, এটি একটি মহকুমা হিসেবে বরিশাল জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৭৬ সালে প্রশাসনিক সদর দফতর দৌলতখান থেকে ভোলায় স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৮৪ সালে, এটি একটি জেলা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
নামকরণের ইতিহাস
ভোলার নামকরণের পেছনে স্থানীয়ভাবে একটি কাহিনি প্রচলিত আছে। ভোলা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বেতুয়া নামক খালটি এখনকার মত অপ্রশস্ত ছিলনা। একসময় এটা পরিচিত ছিল বেতুয়া নদী নামে। খেয়া নৌকার সাহায্যে নদীতে পারাপার চলত। থুরথুরে বুড়ো এক মাঝি খেয়া নৌকার সাহায্যে লোকজনকে পারাপারের কাজ করতো। তার নাম ছিল ভোলা গাজি পাটনি। আজকের যুগীরঘোলের কাছেই তার আস্তানা ছিল। এই ভোলা গাজির নামানুসারেই একসময় নামকরণ হয় ভোলা। [3]
অবস্থান ও আয়তন
বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ জেলা ভোলা। জেলা প্রশাসন যাকে কুইন আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ বলে ঘোষণা করে।[4][5] ভোলা জেলার উত্তরে বরিশাল জেলা ও মেঘনা নদী, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে নোয়াখালী জেলা ও লক্ষ্মীপুর জেলা ও মেঘনা নদী, পশ্চিমে বরিশাল জেলা ও পটুয়াখালী জেলা ও তেঁতুলিয়া নদী। এর মোট আয়তন ৩৪০৩.৪৮ বর্গকিলোমিটার।
প্রশাসনিক এলাকাসমূহ
ভোলা জেলা ৭টি উপজেলা, ১০টি থানা, ৫টি পৌরসভা, ৭০টি ইউনিয়ন ও ৪টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।
উপজেলাসমূহ
ভোলা জেলায় মোট ৭টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হল:
সংসদীয় আসন
সংসদীয় আসন | জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[6] | সংসদ সদস্য[7][8][9][10][11] | রাজনৈতিক দল |
---|---|---|---|
১১৫ ভোলা-১ | ভোলা সদর উপজেলা | তোফায়েল আহমেদ | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
১১৬ ভোলা-২ | দৌলতখান উপজেলা এবং বোরহানউদ্দিন উপজেলা | আলী আজম | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
১১৭ ভোলা-৩ | তজুমদ্দিন উপজেলা এবং লালমোহন উপজেলা | নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
১১৮ ভোলা-৪ | চরফ্যাশন উপজেলা এবং মনপুরা উপজেলা | আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
জনসংখ্যার উপাত্ত
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ভোলা জেলার মোট জনসংখ্যা ১৭,৭৬,৭৯৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮,৮৪,০৬৯ জন এবং মহিলা ৮,৯২,৭২৬ জন। মোট পরিবার ৩,৭২,৭২৩টি।[12]
চিত্তাকর্ষক স্থান
- মনপুরা দ্বীপ
- শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্র
- শাহবাজপুর মেঘনা পর্যটন কেন্দ্র
- তুলাতলী পর্যটন কেন্দ্র (ভোলা সদর)
- ফাতেমা খানম মসজিদ
- চর কুকরী মুকরী
- সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল পার্ক
- শিশু পার্ক
- জ্যাকব ওয়াচ টাওয়ার, চরফ্যাশন
- তারুয়া সমুদ্র সৈকত
- দুদু মিয়ার মাজার
- বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্মৃতি যাদুঘর
- নিজাম হাসিনা ফাউন্ডেশন মসজিদ
- উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী
- খামার বাড়ি -নজরুল নগর, চরফ্যাশন।
- বিভাগীর টেক্সটাইল কলেজ
- বোরহানউদ্দিন চৌধুরীর জমিদার বাড়ি
চিকিৎসা ব্যবস্থা
ভোলা জেলায় সদর হাসপাতাল চিকিৎসা সেবার জন্য নিবেদিত। এছাড়াও চরফেশন উপজেলায় উপজেলা চিকিৎসা কমপ্লেক্স নামকরা। সিটি হা্রট,ফাস্ট কেয়ার, এসটিএস ডায়াগনস্টিক আছে।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
- বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল
- নাজিউর রহমান মঞ্জুর
- তোফায়েল আহমেদ
- মোশারেফ হোসেন শাজাহান
- অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন
- আন্দালিব রহমান
- সিদ্দিকুর রহমান
- নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ
- হাফিজ ইব্রাহিম
- আলী আজম
- জসিম উদ্দিন
- হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ
- নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন
- সাদ জগলুল ফারুক
- এম. এম. নজরুল ইসলাম
- জাফর উল্যাহ চৌধুরী
- নাজিম উদ্দিন আলম
- আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব
- মোস্তফা কামাল
- নলিনী দাস (ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী)
- আমিনুল হক (ফুটবলার)
- তৌসিফ (অভিনেতা)
- সাঈদ বাবু (অভিনেতা)
যোগাযোগ ব্যবস্থা
ভোলা শহর ঢাকা থেকে নদী পথে দূরত্ব ১৯৫ কি.মি.। সড়কপথে বরিশাল হয়ে দূরত্ব ২৪৭ কি.মি. এবং লক্ষীপুর হয়ে দূরত্ব ২৪০কি.মি.। ভোলার সাথে অন্য কোনো জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেই। অন্য জেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য ভোলাবাসীকে লঞ্চ,স্পিড বোট এবং ফেরীর উপর নির্ভর করতে হয়।
বিবিধ
দেশের দক্ষিণে বঙ্গোপোসাগর এবং দেশের সর্ববৃহৎ নদী মেঘনার কুল ঘেসে অবস্থিত একটি জেলা। যার সাথে কোনো জেলার সড়ক যোগাযোগ পথ নেই। প্রশ্ন উঠতে পারে "তাহলে ভোলা কি চর ?" না, ভোলা কোনো চর নয়।
দেশের সর্ব বৃহৎ দ্বীপ ভোলা এবং শুধু দ্বীপ নয় ভোলা দেশের সুসজ্জিত একটি জেলা।
দেশের সিংহ ভাগ ইলিশের চাহিদা মেটাতে ভোলা থেকেই সরবরাহ করা হয় রুপালি ইলিশ, জাতীয় গ্রিডের ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ভোলা থেকেই। গ্রিডে নতুন সরবরাহ ২২৫ মেগাওয়াট শক্তি সম্পন্ন বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে ভোলায়। আছে দেশের ১২ তম সরকারি পলিটেকনিক ভোলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট। দক্ষিণ বাঙলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীট ভোলা সরকারি কলেজ। দেশের প্রায় অর্ধ ভাগ গ্যাস সরবরাহ করা হয় ভোলা থেকে।
ভোলার বিখ্যাত মহিষের দুধের টক দধি বিখ্যাত। সুপারি এবং মিষ্টির জন্য বিখ্যাত ভোলা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য কুইন আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ খেতাবটি এই জেলার দখলেই। দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ ওয়াচ টাওয়ার ভোলাতেই অবস্থিত। নদী পথে শান্তির বাহন বিলাশবহুল লঞ্চগুলো ভোলার মানুষের গর্ব।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (জুন, ২০১৪)। "Population Census 2011 (Barisal & Chittagong)" (পিডিএফ)। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০১৪। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - জেলা, ভোলা। "এক নজরে ভোলা জেলা"। ভোলা জেলা। ২৫ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১৬।
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৮ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- প্রতিবেদক, নিজস্ব। "ভোলা এখন 'কুইন আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ'"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-০৩।
- "কুইন আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ"। সমকাল (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-০৩।
- "Election Commission Bangladesh - Home page"। www.ecs.org.bd। ২ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০।
- "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (পিডিএফ)। ecs.gov.bd। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯।
- "সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল"। বিবিসি বাংলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল"। প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- "জয় পেলেন যারা"। দৈনিক আমাদের সময়। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- "আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক জয়"। সমকাল। ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- "ইউনিয়ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য" (পিডিএফ)। web.archive.org। Wayback Machine। Archived from the original on ৮ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৮ নভেম্বর ২০১৯।