ভূমেন্দ্র গুহ

ভূমেন্দ্র গুহ একজন বাঙালি কবি যিনি কবি জীবনানন্দ দাশের পাণ্ডুলিপি পাঠোদ্ধার ও প্রকাশের জন্য বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছেন। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন ভারতের একজন নামকরা শৈল্যচিকিৎসাবিদ। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হৃদশল্য চিকিৎসা বিভাগের এককালের প্রধান কবি ভূমেন্দ্র গুহ পরিচিত ছিলেন অধ্যাপক ড. বি.এন. গুহরায় নামে। তাঁর পিতৃপ্রদত্ত পূর্ণনাম ভূমেন্দ্রনাথ গুহরায়। তবে পশ্চিমপূর্ব বাংলার সাহিত্যের জগতে তিনি কবি ভূমেন্দ্র গুহ নামে পরিচিত হয়েছিলেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা এগারো । কিন্তু কালক্রমে তাঁর কবি-পরিচয় ছাপিয়ে ‘জীবনানন্দ গবেষক’ এই পরিচয়টিই ক্রমান্বয়ে বড় হয়ে গিয়েছিল।[1]

জীবনানন্দ বিশেষজ্ঞ কবি ভূমেন্দ্র গুহ
জন্ম২ আগস্ট, ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দ
বিলাসপুর, মধ্য প্রদেশ ভারত
মৃত্যু২০ ডিসেম্বর, ২০১৫
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ , ভারত
পেশাশল্য চিকিৎসা
বাসস্থানকলকাতা
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারতীয়
ধরনকবিতা, সাহিত্য, সাহিত্য-গবেষণা

জন্ম শিক্ষা ও জীবন

১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসের ২ তারিখ ভারতের মধ্য প্রদেশে বিলাসপুর-এ তাঁর জন্ম হয়েছিল। জীবনানন্দেরই মতো পৈত্রিক সূত্রে তিনি বরিশালেরই মানুষ। পিতামহ সতীশচন্দ্র গুহরায়ের আদিনিবাস ছিল অবিভক্ত ভারতের বরিশাল জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার মৈষাণী গ্রামে। তিনি ছিলেন মুনিনাগ গ্রামের জমিদারপুত্র, কিন্তু ভাগ্যের ফেরে স্বপরিবারচ্যুত হয়ে জেলেসমাজের একজন হয়ে গিয়েছিলেন।

ভূমেন্দ্র গুহ’র বাবা নগেন্দ্রনাথ গুহরায় রেল কোম্পানিতে চাকুরি করতেন। বদলির চাকুরি, ফলে নানা স্কুলে পড়তে হয়েছে ভূমেন্দ্র গুহকে, তবে ম্যাট্রিক পাশ করেছেন কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনের ছাত্র হিসেবে। বঙ্গবাসী কলেজ থেকে আইএসসি করার পর ডাক্তারি পড়েছিলেন ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজে। ১৯৫৭’য় ডাক্তারি পাশের পর তিনি শল্যচিকিৎসায় মাস্টার্স করেছেন; পরে বিশেষভাবে বক্ষদেশের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, হৃৎপিণ্ড ও ভাসকুলার সার্জারিতে এম.সি-এইচ।

শৈল্যচিকিৎসা বিদ্যায় অবদান

ষাটের দশকে ভারতের প্রথম ওপেনহার্ট সার্জারি হয়েছিল ১৯৬২ তে; সেদিন অপারেশন থিয়েটারে শিক্ষক প্রফেসর ডা. অজিত কুমার বসুর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তরুণ শল্যবিদ বি. এন. গুহরায়।[2] এরপর এ বিষয়ে তিনি অনেক গবেষণা করেছেন; তাঁর দেড়শরও বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নালে। যুক্তভাবে একটি ডাক্তারির বই-ও প্রকাশ করেছিলেন, বেশ কিছু বহুলেখক গ্রন্থের জন্য লিখেছেন। শেষ জীবনে কলকাতা মেডিকেল কলেজ-এর থোরাসিক সার্জারি বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন চৌদ্দ বছর। লিভার সিরোসিস রোগটি অপরেশন ক’রে সারানোর পদ্ধতিটিও তাঁরই আবিষ্কার: এটি বিশ্বব্যাপী চিকিৎসাশাস্ত্রে গুহরায়-বাসু শান্ট অপারেশন নামে খ্যাত। চাকরিজীবনে যথেষ্ট ব্যস্ত ছিলেন ড. বি. এন. গুহরায়।

জীবনানন্দ দাশের পাণ্ডুলিপি সংশ্রব

১৯৫৪য়, অক্টোবরের এক শীতার্ত মধ্যরাত-উত্তীর্ণ সময়ে ট্রামের ধাক্কায় মারাত্মকভাবে আহত জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু হয়েছিল। মৃত্যুকালে তাঁর প্রকাশনা বলতে ৫টি কাব্যগ্রন্থ এবং শ্রেষ্ঠ কবিতায় অন্তর্ভুক্ত ১৬২টি কবিতা এবং বিভিন্ন সাময়িক পত্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আরো শত খানেক কবিতাও কয়েকটি প্রবন্ধ-নিবন্ধ। জীবদ্দশায় কোন প্রবন্ধ গ্রন্থ প্রকাশ করে যান নি জীবনানন্দ দাশ। ২১টি উপন্যাস একং শতাধিক ছোট গল্প রচনা করলেও একটিও ছাপতে দেননি কোথাও। ট্রাংকে তালা-চাবি এঁটে সযত্নে লুকিয়ে রেখেছিলেন হাজার হাজার কবিতা, গল্প-উপন্যাসের খাতা ও ডায়েরি। প্রায় তিরিশ হাজার পাতার অপ্রকাশিত লেখা রেখে গিয়েছিলেন জীবনানন্দ শত-শত রুলটানা এক্সারসাইজ খাতায় । এই সব শত-শত রুলটানা এক্সারসাইজ খাতা খুঁজে খুঁজে পড়ে পড়ে, ভারি পাওয়ারের চশমায় না কুলোলে আতশি কাচের সাহায্য নিয়ে, জীবনানন্দের জড়ানো অনতিস্পষ্ট হস্তাক্ষরের প্রতিরোধ উপেক্ষা ক’রে অগণিত অপ্রকাশিত কবিতা, গল্প, উপন্যাস পাঠোদ্ধার ক’রে যিনি প্রকাশ করবার ব্যবস্থা করে যাচ্ছিলেন কবি ভূমেন্দ্র গুহ । [3]

পঞ্চাশের দশকের শুরুতে নিজেদের সাহিত্যের ছোটকাগজ “ময়ূখ”-এর জন্য কবিতা সংগ্রহ করতে গিয়ে জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে যে পরিচয় হয়েছিল, তারই সূত্র ধ’রে কবির মৃত্যু পরবর্তী সময়ে তাঁর পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ভূমেন্দ্রর । কার্যত জীবনানন্দের প্রকাশিত-অপ্রকাশিত রচনা সংবলিত ট্রাংকভর্তি অসংখ্য লেখার খাতা তাঁরই অধিকারে সংরক্ষিত ছিল দীর্ঘ কাল। সেগুলোর অধিকাংশ পাঠোদ্ধার করে তিনি প্রকাশযোগ্য পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন। বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কাব্য রূপসী বাংলা এবং জীবনানন্দের সপ্তম কাব্য সংকলন বেলা অবেলা কালবেলা, তাঁর প্রথম প্রবন্ধসংকলন কবিতার কথা এবং সর্বপ্রথম প্রকাশিত উপন্যাস মাল্যবান-এর মুদ্রণযোগ্য পাণ্ডুলিপি- সবই ভূমেন্দ্র গুহ’র হাতে তৈরী। কলকাতার প্রতিক্ষণ পাবলিকেশনস ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ১২ খণ্ডের জীবনানান্দ সমগ্র প্রকাশ শুরু করেছিল ভূমেন্দ্র গুহেরই কপি করা বিবিধ পাণ্ডুলিপির ভিত্তিতে। অপ্রকাশিত কবিতার সংকলন হে প্রেম তোমাকে ভেবে ভেবে, ছায়া-আবছায়া, উপন্যাস সফলতা-নিষ্ফলতা এবং ২০১২ তে প্রকাশিত অপ্রকাশিত শেষ ১৪টি গল্প ও ২টি উপন্যাস এবং ১৪ খণ্ডে প্রকাশিত পাণ্ডুলিপির কবিতা (সহায়তা করেছিলেন বর্তমানের বিশেষ জীবনানন্দ গবেষক গৌতম মিত্র) ইত্যাদিরও পশ্চাৎ কারিগর তিনি।

ভূমেন্দ্র গুহ কেবল লেখার খাতা থেকে মুদ্রণযোগ্য পাণ্ডুলিপিই প্রস্তুত করেন নি, তিনি জীবনানন্দের অনেক লেখার খাতাকে চির অবলুপ্তির হাত থেকে বাঁচিয়েছেন; ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত লেখার খাতাগুলো সযত্নে আগলে রেখেছিলেন নিজের টানে, যত দিন না চাকরিসূত্রে কলকাতার বাইরে চলে যাওয়ার ডাক এসেছিল।[1]

কাব্যকৃতি

তাঁর পদ্য লেখার শুরু উত্তর কৈশোরে যদিও সঞ্জয় ভট্টাচার্যের “পূর্বাশা” পত্রিকায় ১৯৫২’র মাঝামাঝি একটি কবিতা মুদ্রণের মধ্য দিয়ে তাঁর কবিজীবনের অভিষেক হয়েছিল মনে করতেন কবি ভূমেন্দ্র গুহ। পঞ্চাশ দশকের শুরুতে তাঁর কবিতা লেখার গোড়াপত্তন হলেও প্রথম কবিতা সংকলন “যম” প্রকাশিত হয়েছিল অনেক পরে, ১৯৯৪-এ। এবংবিধ দীর্ঘ ব্যবধান যে কারো পক্ষে কৌতূহলোদ্দীপক। শ্রেষ্ঠ কবিতা’র কবিতাগুলোর রচনাকাল উল্লেখ করা হয়েছে এই ভাবে: ১৯৫৫-৫৮ খ্রিস্টাব্দ এবং ১৯৯০-২০০৪ খ্রিস্টাব্দ। ২০০৫ পর্যন্ত এই কালপরিধিতেই তিনি কবিতা লেখায় সক্রিয় থেকেছেন এরকম অনুমান করা চলে। অর্থাৎ ১৯৫৯ থেকে ১৯৮৯ এই টানা তিরিশ বছর হয়তো ব্যতিক্রম কিছু ছিল, কেননা দেখা যাচ্ছে শ্রেষ্ঠ কবিতা’য় ষাট দশকের কবিতাও একআধটি আছে। ভূমেন্দ্র গুহ কবিতার টেবিল থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলেন। তাঁর জীবিকাজীবনের সঙ্গে এ সময়টি মিলিয়ে নেয়া যায়। এই দীর্ঘবিরতি তাঁর আদি কবিসত্তাকে অক্ষুণ্ন রেখেছিল কতটুকু সে প্রশ্ন অসঙ্গত হবে না। তবে ইত্যবসরে তিনি একটি কাব্যভাষা খুঁজে পেয়েছিলেন যাকে উত্তর-জীবনানন্দীয় কাব্যভাষা বলে চিহ্নিত করা যায়। অন্যদিকে বিষয়বস্তুর নির্বাচনে তিনি উত্তর-জীবনানন্দীয় কবিদের মতই নিবিড় আত্মজৈবনিকতার মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলেন স্বস্তিময় আরাধনা: “ভেবে দেখেছি কী হতে চেয়েছিলুম, কী হতে পারতুম, কী হতে পারতুম না, অর্থাৎ আকাঙ্ক্ষা, আকাঙ্ক্ষাতেই বানিয়ে নিচ্ছিলুম নিজেকে, নৌকার দাঁড়ে অভিভাবিকা ছিল--তার শীতল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নামে-নামে যে-সব ডাকনাম-- পুড়ে-যাওয়া মরুভূমিটি বুদ্বুদে-বুদ্বুদে ষোলো-আনা গর্ভবতী হবে; তখনও সে থাকবে সেখানে সেই জলের মতন যে অপরাধী পাপী কিন্তু অচ্ছোদ।” যারা জীবনান্দের খোঁজখবর রাখেন তাঁরা জানেন, ’৯০এর দশক থেকে শুরু ক’রে জীবনানন্দ আর ভূমেন্দ্র গুহ নাম দুটি অবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অনতিতরুণ ভূমেন্দ্র গুহ সেই পঞ্চাশের শুরুতেই জীবনানন্দকে খুব বড় কবি বলে মান্য করেছিলেন। হয়তো জীবনানন্দের কাব্যভাষা তাঁকে কিছুটা আকর্ষণও করে থাকবে। তাঁর নিজের কোন কোন কবিতায় সে প্রমাণ তো আছে; কোনটির কাঠামোতে প্রত্যক্ষ ছিল জীবনানন্দ’র প্রগাঢ় ছায়াপাত:

চোখে যে গড়াবে জল, সে-রকম সাহসিক নই, সেই চোখ যা এখন বিস্তীর্ণ আকাশ খুঁজে দেখে: নক্ষত্রেরা আছে কি না মৃতপ্রায় দিকের সন্ধানে; আরেকটু হেঁটে গেলে ভোর হবে, প্রথম প্রত্যুষা; জনৈক মৃতের ছবি দেয়ালে আয়নায় রাখা হবে। মধ্য রাত পার হলে দুইটি বছর, মানে কাল দুই দিকে চ’লে যাচ্ছে, যাচ্ছে আমাদের প্রেম যেন; পিঁপড়ের মতন পায়ে দুঃখ বাসা বাঁধছে হৃদয়ে। হেঁটে যাচ্ছি অন্ধকার, অন্ধকার পথের দু’পাশে যে সব শ্মশান আছে শুভ্রতায় ভুলে যাচ্ছি তা-ও; এখন বিকেল, আর সামান্য প্রভেদ মেনে নিলে অন্ধকার মাঝামাঝি দীর্ঘশ্বাসটুকু: যা গিয়েছে তার থেকে রাত্রিটিকে খুলে নিয়ে এসে দেখেছি যে, এই মাত্র কব্জির নিকটে রক্ত নাচে; অবশেষে এইটুকু বিশ্বাস জমাই ইহকালে;

সে-সময় জানো তুমি যদি না অসত্য ব’লে থাকো।

পরিণত বয়সে কেমন কবিতা লিখতেন ভূমেন্ত্র গুহ, তা নিচের উদ্ধৃতি থেকে বোঝা যাবে:

“তুমি আমাকে প্রেমের কথা বলবে, আমি কামনা করতে থাকি, এবং গোপন অপরাধে নিঃশেষিত হয়ে যাই। পরিবর্তে তোমার দেবীর মতো দু’টি হাত আমার উদ্বুদ্ধ শরীরটিকে খুঁজে নেয়, আমি দেখি। তুমি তোমার অনাগত একমাত্র সন্তানটির কথা গভীর উদ্বেগের ভিতর উচ্চারণ করো। তার জন্য পূজাবেদিটির সর্বাঙ্গে ধান রাখো, ফুল রাখো, বিল্বপত্র রাখো, কদলীখ- রাখো, ততোধিক রাখো প্রচুর নবীন দূর্বাঘাসের আচ্ছাদন, যাতে তোমার তৃণাস্তীর্ণ মৌল বেদিটিকে পদ্মপাতার ভঙ্গিমায় ঠিক চিনে নিতে পারি। তুমি আমার জন্য সমুদ্রমন্থনের আনুষঙ্গিক বিষপানের স্মৃতি পুনর্জীবিত করে তোলে।”

[1]

প্রকাশনা

কাব্য

ভূমেন্দ্র গুহ’র তাঁর কবিতাগ্রন্থগুলোর নাম এরকম রেখেছিলেন: “যম”, “ঋতুচক্র”, “পিতামহ”, “উত্তরপুরুষ”, “এই সব দিনাতিপাত”, “এই মাত্র”, “ভালো থাকুন”,“ঢের দিন বেঁচে থাকা হল”, “এককালের বসতবাড়িটি”, “বেলা-শেষের অতি-কথন”, ও “অন্ত-কবিতা”।

এছাড়া তিনি ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশ করে গেছেন “শ্রেষ্ঠ কবিতা”। ২০১৫’য় তাঁর প্রয়াণের কিছু আগে রাহুল পুরকায়স্থের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কবিতাসমগ্র যার প্ররচ্ছদনাম ভূমেন্দ্র গুহ’র কবিতা”। “শ্রেষ্ঠ কবিতা” তাঁকে এনে দিয়েছিল রবীন্দ্র পুরস্কার, ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে ।

গদ্য

যৌবনে, ১৯৫৮য়, তিনি স্যাফোর কাব্য অনুবাদ করেছিলেন। বাংলা ভাষায় তিনিই প্রথম স্যাফোর কবিতা অনুবাদ করেছেন। হেনরী মিলারের “ঘাতকদের সময়” অনুবাদ করেছেন (তবে বলে রাখা দরকার অনুবাদের জন্য লেগেছে ১৩৮ পাতা, আর ভূমিকা-টীকার জন্য বাকী ২৭৪ পৃষ্ঠা)। ২০০৮এ প্রকাশ করেছেন জীবনানন্দের অপ্রাকশিত উপন্যাস “সফলতা-নিষ্ফলতা”। এখানেও বলে রাখা দরকার যে ১১৭ পাতার এ উপন্যাসের শুরুতে আছে ১৬ পৃষ্ঠার একটি ভূমিকা আর শেষে আছে ১২৫ পৃষ্ঠাব্যাপী টীকা-টিপ্পনীর বিশাল বহর। ২০১২ তে প্রকাশ করেছেন জীবনানন্দ’র “সমরেশ ও অন্যান্য গল্প” এবং “অপ্রকাশিত শেষ ১৮টি গল্প ও ২টি উপন্যাস”। কেবল জীবনানন্দ নিয়ে তাঁর বই একটিই; আর সেটি হলো “আলেখ্য : জীবনাননদ দাশ”। তাঁর জীবনানন্দ চর্চার অনুপুঙ্খ দলিল ২০০৮-এ প্রকাশিত “জীবনানন্দ ও সঞ্চয় ভট্টাচার্য”। উপন্তু জীবনানন্দের লিটের‌্যারি নোটস “দিনলিপি” শিরোনামে প্রকাশ করেছিলেন ৪টি প্রশস্ত খণ্ডে। দিনলিপি লেখার খাতার ফ্যাকসিমিলি প্রকাশ করেছেন “শেষ ছ’বছর” শিরোনোমে। বাংলাদেশের কালি ও কলম পত্রিকার-এর সম্পাদক আবুল হাসানাতের উদ্যোগে ভূমেন্দ্র গুহ জীবনানন্দ দাশের কবিতার মূলানুগ পাঠের একটি সংকলনগ্রন্থের পাণ্ডুলিপি করতে সম্মত হয়েছিলেন ২০০৯-এ। কাজ চলছিল সেই ২০১১ থেকে। তাতে “শ্রেষ্ঠ কবিতা” সহ জীবনানন্দের সাতটি কাব্যগ্রন্থ থেকে বাছাই করা কবিতা, জীবনানন্দের মৃত্যুকালে অপ্রকাশিত ৭৯টি কবিতা এবং সরাসরি ৩২টি লেখার খাতা থেকে ১৪৩২টি কবিতা (পূর্বোল্লিখিতগুলোবাদ দিয়ে) পত্রস্থ করা হয়েছে। কবিতা-সংবলিত ৬৮৭ পৃষ্ঠার প্রথম খণ্ডের পর ৪৯৬ পৃষ্ঠার দ্বিতীয় খণ্ডে ভূমেন্দ্র গুহের লেখা ভূমিকা ও টীকা-টিপ্পনী।[4][5]

মৃত্যু

ক্যান্সারে ভুগছিলেন ভূমেন্দ্র গুহ, কিন্তু কাউকে বলেন নি। নিঃশব্দে মৃত্যুবরণ করলেন ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে, ঘুমের ভেতর। [6][7]

তথ্যসূত্র

  1. কবি ভূমেন্দ্র গুহ : একটুখানি পরিচিতি
  2. "চলে গেলেন কবি ভূমেন্দ্র গুহ"। ১৪ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০১৬
  3. সাক্ষাৎকারে ভূমেন্দ্র গুহ
  4. পেল্লাই ভূমিকা ও টীকা-টিপ্পনীর বিশাল বহর প্রসঙ্গে একটু সলজ্জ হেসে ভূমেন্দ্র গুহ বলেছিলেন, “এ যেন বারো হাত কাঁকুড়ের তের হাত বিচি”।
  5. "ভূমেন্দ্র গুহ, জীবনানন্দ দাশের মূলানুগ পাঠ প্রসঙ্গে"। ৫ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০১৬
  6. "এখন শ্মশানের নিকটের নদীর কাছে ভূমেন্দ্রদা"। ২৪ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০১৬
  7. কবি-গবেষক ভূমেন্দ্র গুহর মৃত্যু
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.