ভুটান

ভুটান (/bˈtɑːn/ (এই শব্দ সম্পর্কেশুনুন); জংখা: འབྲུག་ཡུལ་ টেমপ্লেট:IPA-dz), আনুষ্ঠানিক নাম ভুটান রাজ্য (জংখা: འབྲུག་རྒྱལ་ཁབ་),[9] দক্ষিণ এশিয়ার একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের দেশ। ভুটানের অধিবাসীরা নিজেদের দেশকে মাতৃভাষা জংখা ভাষায় 'দ্রুক ইয়ুল' বা 'বজ্র ড্রাগনের দেশ' নামে ডাকে। দেশটি ভারতীয় উপমহাদেশে হিমালয় পর্বতমালার পূর্বাংশে অবস্থিত। ভুটান উত্তরে চীনের তিব্বত অঞ্চল, পশ্চিমে ভারতের সিকিমতিব্বতের চুম্বি উপত্যকা, পূর্বে অরুণাচল প্রদেশ এবং দক্ষিণে আসামপশ্চিমবঙ্গ দ্বারা পরিবেষ্টিত। ভুটান শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ "ভূ-উত্থান" থেকে যার অর্থ "উঁচু ভূমি"।সংস্কৃত ভাষায় ভোট বা ভোটান্ত বলতেও ভুুুটান দেশটিকে বোঝানো হয়। ভুটান সার্কের একটি সদস্য রাষ্ট্র এবং মালদ্বীপের পর দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ। ভুটানের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর থিম্ফুফুন্টসলিং ভুটানের প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র।

ভুটান রাজ্য

འབྲུག་རྒྱལ་ཁབ  (জংখা)
ড্রুক ইয়ুল খাপ
ভুটানের প্রতীক
প্রতীক
জাতীয় সঙ্গীত: ড্রুক ৎসেন্ধেন
বজ্র ড্রাগনের রাজ্য
ভুটানের অবস্থান
রাজধানী
ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি
থিম্ফু
সরকারি ভাষাজংখা
ধর্ম
৭৪.৮% বজ্রযান বৌদ্ধধর্ম (রাষ্ট্রধর্ম)
২২.৬% হিন্দুধর্ম
১.৯% বন ও অন্যান্য দেশজ ধর্ম
০.৫% খ্রীষ্টধর্ম
০.৪% ইসলাম
০.২% অন্যান্য
জাতীয়তাসূচক বিশেষণভুটানি
সরকারঐক্যমূলক সংসদীয় অর্ধ-সাংবিধানিক রাজতন্ত্র
 রাজা
জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক
 প্রধানমন্ত্রী
লোটে শেরিং
আইন-সভাজাতীয় সংসদ
 উচ্চকক্ষ
জাতীয় কাউন্সিল
 নিম্নকক্ষ
জাতীয় পরিষদ
গঠন 
১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে
 ওয়াংচুক রাজবংশ
১৭ই ডিসেম্বর, ১৯০৭
 ইন্দো-ভুটান চুক্তি
৮ই আগস্ট, ১৯৪৯
 সাংবিধানিক রাজতন্ত্র
২০০৭
আয়তন
 মোট
৩৮,৩৯৪ কিমি (১৪,৮২৪ মা)[1][2] (১৩৩ তম)
 পানি/জল (%)
১.১
জনসংখ্যা
 ২০১৬ আনুমানিক
৭৯৭,৭৬৫ (১৬৫তম)
 ২০০৫ আদমশুমারি
৬৩৪,৯৮২[3]
 ঘনত্ব
১৯.৩ /কিমি (৫০.০ /বর্গমাইল) (১৯৬তম)
জিডিপি (পিপিপি)২০১৮ আনুমানিক
 মোট
$৮.০১০ বিলিয়ন[4]
 মাথাপিছু
$৯,৮০৫[4] (১১৫তম)
জিডিপি (মনোনীত)২০১৮ আনুমানিক
 মোট
$২.৬১০ বিলিয়ন[4]
 মাথাপিছু
$৩,১৯৭[4] (১৩০তম)
জিনি (২০১২)৩৮.৭[5]
মাধ্যম
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৫)বৃদ্ধি ০.৬০৭[6]
মধ্যম · ১৩২তম
মুদ্রাভুটানি ঙুলট্রুম, ভারতীয় রূপি (BTN)
সময় অঞ্চলইউটিসি+৬ (বিটিটি)
 গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি)
ইউটিসি+৬ (পর্যবেক্ষণ করা হয়নি)
গাড়ী চালনার দিকবামদিকে
কলিং কোড+৯৭৫
আইএসও ৩১৬৬ কোডBT
ইন্টারনেট টিএলডি.bt
  1. ভুটানের জাতিসংঘে যোগদানের সময়, অর্থাৎ ১৯৭০-এর দশকে, সঠিক তথ্যের অভাবে ভুটানের জনসংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ অনুমান করা হয়েছিল। [7] সুতরাং, বার্ষিক ২-৩% বৃদ্ধি ধরে হিসাব করলে ২০০০ সালে ভুটানের জনসংখ্যা হওয়া উচিত ছিল প্রায় ২০ লক্ষ। কিন্তু ২০০৫ সালের জাতীয় জনগণনা অনুযায়ী ভুটানের জনসংখ্যা ছিল ৬,৭২,৪২৫। ফলত, জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগ ১৯৫০ থেকে ২০৫০ পর্যন্ত সম্পূর্ণ সময়ের জন্য সংখ্যাটি ২০০৬ সালের সংশোধনের সময় ঠিক করে নেয়। [8]
  2. ভারতীয় রূপির আদানপ্রদানও বৈধ।

অতীতে ভুটান পাহাড়ের উপত্যকায় অবস্থিত অনেকগুলি আলাদা আলাদা রাজ্য ছিল। ১৬শ শতকে একটি ধর্মীয় রাষ্ট্র হিসেবে এর আবির্ভাব ঘটে। ১৯০৭ সাল থেকে ওয়াংচুক বংশ দেশটি শাসন করে আসছেন। ১৯৫০-এর দশক পর্যন্ত ভুটান একটি বিচ্ছিন্ন দেশ ছিল। ১৯৬০-এর দশকে ভারতের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সাহায্য নিয়ে দেশটি একটি আধুনিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হতে শুরু করে। তবে এখনও এটি বিশ্বের সবচেয়ে অনুন্নত দেশগুলির একটি।

নামকরণ

ভুটানের নাম এসেছে সংস্কৃত শব্দ "ভূ-উত্থান" (উচ্চভূমি) হতে। অন্য মতে, ভুটান এসেছে ভোটস-আন্ত, অর্থাৎ "তিব্বতের শেষ সীমানা" হতে, যেহেতু ভুটান তিব্বতের ঠিক দক্ষিণে অবস্থিত।

ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন সময়ে ভুটান বিভিন্ন নামে খ্যাত ছিলো। যেমন, লো মন (দক্ষিণের অন্ধকারাচ্ছন্ন রাজ্য), লো সেন্দেঞ্জং (সেন্দেন সাইপ্রেস বৃক্ষমন্ডিত দক্ষিণের রাজ্য), লোমেন খাঝি (দক্ষিণের রাজ্য যাতে চারটি প্রবেশ পথ রয়েছে), ও লো মেন জং (দক্ষিণের রাজ্য যেখানে ওষধি বৃক্ষ পাওয়া যায়। [10]

ইতিহাস

ভুটানের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে সেখানে প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনীর চেয়ে বেশি সুস্পষ্ট কিছু জানা যায় না। এখানে হয়ত খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দেও বসতি ছিল, তবে ৯ম শতকে এখানে তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের প্রচলনের পরেই এলাকাটির সম্পর্কে আরও জানা যায়। সেসময় বহু তিব্বতি বৌদ্ধ ভিক্ষু পালিয়ে ভুটানে চলে আসেন। ১২শ শতকে এখানে দ্রুকপা কাগিউপা নামের বৌদ্ধধর্মের একটি ধারা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটিই বর্তমানে ভুটানের বৌদ্ধধর্মের প্রধান রূপ। ভুটানের বৌদ্ধ মন্দির ও ধর্মশিক্ষালয় দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসের উপর সবসময় প্রভাব ফেলেছে।

১৬১৬ সালে নগাওয়ানা নামগিয়াল নামের এক তিব্বতি লামা তিনবার ভুটানের উপর তিব্বতের আক্রমণ প্রতিহত করলে ভুটান এলাকাটি একটি সংঘবদ্ধ দেশে পরিণত হতে শুরু করে। নামগিয়াল বিরোধী ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলিকে পদানত করেন, একটি ব্যাপক ও সূক্ষ্ম বিবরণসমৃদ্ধ আইন ব্যবস্থা প্রচলন করেন এবং একটি ধর্মীয় ও সিভিল প্রশাসনের উপর নিজেকে একনায়ক বা শাবদ্রুং হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তার মৃত্যুর পর অন্তর্কোন্দল ও গৃহযুদ্ধের কারণে পরবর্তী ২০০ বছর শাবদ্রুঙের ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়ে। ১৮৮৫ সালে উগিয়েন ওয়াংচুক শক্ত হাতে ক্ষমতা প্রয়োগে সক্ষম হন এবং ভারতের ব্রিটিশ প্রশাসনের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন।

১৯০৭ সালে উগিয়েন ওয়াংচুক ভুটানের রাজা নির্বাচিত হন এবং ঐ বছর ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার উপাধি ছিল দ্রুক গিয়ালপো বা ড্রাগন রাজা। ১৯১০ সালে রাজা উগিয়েন ও ব্রিটিশ শক্তি পুনাখার চুক্তি স্বাক্ষর করে যেখানে ব্রিটিশ ভারত ভুটানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক না গলানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। উগিয়েন ওয়াংচুক ১৯২৬ সালে মারা গেলে তার পুত্র জিগমে ওয়াংচুক পরবর্তী শাসক হন। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর ভুটানকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে গণ্য করে। ১৯৪৯ সালে ভুটান ও ভারত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যেখানে ভুটান ভারতের কাছ থেকে বৈদেশিক সম্পর্কের ব্যাপারে পথনির্দেশনা নেবার ব্যাপারে সম্মত হয় এবং পরিবর্তে ভারত ভুটানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়। ১৯৫২ সালে জিগমে ওয়াংচুকের ছেলে জিগমে দর্জি ওয়াংচুক ক্ষমতায় আসেন। তার আমলে ভুটান পরিকল্পিত উন্নয়নের পথে এগোতে থাকে এবং ১৯৭১ সালে জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তার সময়েই ভুটানে একটি জাতীয় সংসদ, নতুন আইন ব্যবস্থা, রাজকীয় ভুটানি সেনাবাহিনী এবং একটি উচ্চ আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়।

১৯৭২ সালে ১৬ বছর বয়সে জিগমে সিঙিয়ে ওয়াংচুক ক্ষমতায় আসেন। তিনি আধুনিক শিক্ষা, সরকারের বিকেন্দ্রীকরণ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, পর্যটন এবং পল্লী উন্নয়নের মত ব্যাপারগুলির উপর জোর দেন। তিনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি জনগণের সামগ্রিক সুখের একজন প্রবক্তা; উন্নয়ন সম্পর্কে তার দর্শন কিছুটা ভিন্ন এবং এই ভিন্নতার কারণে তিনি আন্তর্জাতিক পরিচিত পেয়েছেন। তার আমলে ধীরে ধীরে ভুটান গণতন্ত্রায়নের পথে এগোতে থাকে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি রাজার পদ ছেড়ে দেন এবং তার ছেলে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ভুটানের রাজা হন। ২০০৮ সালের ১৮ই জুলাই ভুটানের সংসদ একটি নতুন সংবিধান গ্রহণ করে। এই ঐতিহাসিক দিন থেকে ভুটানে পরম রাজতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটে এবং ভুটান একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্রে পরিণত হয়।

রাজনীতি

ভুটান হল একটি রাজতন্ত্র বিশিষ্ট দেশ। এখানে বর্তমানে রাজতন্ত্র বিদ্যমান। ভুটানে অতীতে একটি পরম রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। বর্তমানে এটি একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। ভুটানের রাজা, যার উপাধি ড্রাগন রাজা, হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। মন্ত্রীদের একটি কাউন্সিল রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনা করে। সরকার ও জাতীয় সংসদ উভয়ের হাতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা ন্যস্ত। এছাড়াও যে খেনপো উপাধিবিশিষ্ট দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা রাজার সবচেয়ে কাছের পরামর্শদাতার একজন। ২০০৭ সালে একটি রাজকীয় আদেশবলে রাজনৈতিক দল নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়। বর্তমান সংবিধানে দেশটিতে একটি দুই-দলবিশিষ্ট গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। জিগমে খেসার নামগিয়াল ওয়াংচুক বর্তমানে ভুটানের রাজা।

ভূগোল

ভুটানের মানচিত্র (২০১০ সাল অনুযায়ী)

ভুটানের আয়তন ৪৬,৫০০ বর্গকিলোমিটার। থিম্পু এর রাজধানী শহর এবং এটি দেশের মধ্য-পশ্চিম অংশে অবস্থিত। অন্যান্য শহরের মধ্যে পারো, ফুন্টসলিং, পুনাখা ও বুমথং উল্লেখযোগ্য। ভুটানের ভূপ্রকৃতি পর্বতময়। উত্তরে সুউচ্চ হিমালয় পর্বতমালা, মধ্য ও দক্ষিণভাগে নিচু পাহাড় ও মালভূমি এবং দক্ষিণ প্রান্তসীমায় সামান্য কিছু সাভানা তৃণভূমি ও সমভূমি আছে। মধ্যভাগের মালভূমির মধ্যকার উপত্যকাগুলিতেই বেশির ভাগ লোকের বাস। ভুটানের জলবায়ু উত্তরে আল্পীয়, মধ্যে নাতিশীতোষ্ণ এবং দক্ষিণে উপক্রান্তীয়; জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়। স্থলবেষ্টিত দেশ ভুটানের আকার, আকৃতি ও পার্বত্য ভূ-প্রকৃতি সুইজারল্যান্ডের সদৃশ বলে দেশটিকে অনেক সময় এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ডাকা হয়।

বহির্বিশ্ব থেকে বহুদিন বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে ভুটান প্রাণী ও উদ্ভিদের এক অভয়ারণ্য। এখানে বহু হাজার দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়। ভুটানের প্রায় ৭০% এলাকা অরণ্যাবৃত। এই অরণ্যই ভুটানের জীব বৈচিত্র‍্য সংরক্ষণ করে চলেছে যুগ যুগ ধরে।

ভুটানের ভৌগোলিক মানচিত্র

অর্থনীতি

ভুটানের রাষ্ট্রীয় মুদ্রা গুলট্রাম এবং এর বিনিময় হার ভারতীয় রুপীর সাথে সম্পর্কিত । ভুটানে ভারতীয় রুপীরও প্রচলন রয়েছে। ভুটানের অর্থনীতি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র অর্থনীতিগুলির একটি।

২০১২ পর্যন্ত ভুটানের মাথাপিছু আয় ছিল ২,৪২০ মার্কিন ডলার।

ভুটানের অর্থনীতি কৃষি, বনজ, পর্যটন এবং ভারতে জলবিদ্যুৎ বিক্রির উপর নির্ভরশীল। জনসংখ্যার ৫৫.৪ শতাংশের জন্য কৃষিকাজ মূল জীবিকা সরবরাহ করে। কৃষিকাজ মূলত খামার এবং পশুপালন নিয়ে গঠিত। হস্তশিল্পগুলি, বিশেষত তাঁত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পার্বত্য ও পাহাড়ী অঞ্চল হবার ফলে রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ কঠিন এবং ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।

সমুদ্রবন্দর না থাকায় ভুটান ব্যবসা বাণিজ্যতে ভালো করতে পারেনি। ভুটানের কোনও রেলপথ নেই, যদিও ভারতীয় রেলপথ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির আওতায় দক্ষিণ ভুটানকে তার বিশাল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে। ২০০৮ সালে ভুটান এবং ভারত একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে,যা বিশ্বের যেকোনো বাজার থেকে ভুটানে আমদানি ও রফতানি শুল্ক ছাড়াই অনুমতি দেয় ট্রানজিট এর মাধ্যমে । ১৯৬০ সাল নাগাদ ভুটানের সাথে চীনের স্বায়ত্তশাসিত তিব্বত অঞ্চলের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল। শরণার্থীদের আগমনের পরে চীনের সাথে তার সীমানা বন্ধ করে দেয়।

শিল্প খাতটি একটি নবজাতক পর্যায়ে রয়েছে, যদিও বেশিরভাগ উৎপাদন কুটির শিল্প থেকে আসে, বৃহত্তর শিল্পগুলিকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে এবং সিমেন্ট, ইস্পাত এবং ফেরো এলয় এর মতো কয়েকটি শিল্প স্থাপন করা হয়েছে। বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্প, যেমন রাস্তা নির্মাণ, ভারতীয় চুক্তি শ্রমের উপর নির্ভর করে। কৃষি উৎপাদনের মধ্যে চাল, মরিচ, দুগ্ধ (কিছু ইয়াক, বেশিরভাগ গাভী) পণ্য, বেকওয়েট, বার্লি, সাইট্রাস এবং ভুট্টা পাহাড়ি নিম্ন ভূমিতে হয় । শিল্পের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, কাঠের পণ্য, প্রক্রিয়াজাত ফল, অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড।

জনসংখ্যা

ওয়াংদি ফোদ্রাং উৎসবে জাতীয় পোষাকে ভুটানিরা

ভুটানের অধিবাসীরা ভুটানি নামে পরিচিত। ২০০৫ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ভুটানে ৬,৭২,৪২৫ জনের বাস। প্রতি বছর জনসংখ্যা ২% হারে বাড়ছে। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৫ জন। ভুটানে দ্রুপকা জাতির লোক প্রায় ৫০%। এর পরেই আছে নেপালি (৩৫%) এবং অন্যান্য আদিবাসী বা অভিবাসী জাতি। দেশের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ লোক লামাবাদী বৌদ্ধধর্মে বিশ্বাসী। বাকীরা ভারতনেপালি ধারার হিন্দু ধর্ম পালন করে। জংখা  ভুটানের সরকারি ভাষা। এছাড়া বুমথাং-খা, শারচোপ-খা ও নেপালি ভাষা প্রচলিত। ইংরেজি ভাষাতে শিক্ষা দেওয়া হয়। ভুটানের সাক্ষরতার হার প্রায় ৬০%। জনগণের প্রায় ৯৪% শতাংশ কৃষিকাজে নিয়োজিত। বেকারত্বের হার ৩.১% (২০০৫ সালের প্রাক্কলন)।জংখা ভাষা বা ভুটানি ভাষা ভুটানের সরকারি ভাষা। এছাড়াও এখানে আরও প্রায় ১০টি ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে বহু লক্ষাধিক বক্তাবিশিষ্ট নেপালি ভাষা অন্যতম। আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়।

সংস্কৃতি

ভুটানের বাসিন্দারা মূলত বৌদ্ধ ধর্ম পালন করে। ভুটানের একটি সমৃদ্ধ এবং অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে যা বিশ শতকের মধ্যভাগ অবধি বিশ্বব্যাপী বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে মূলত অক্ষত রয়েছে। পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল দেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য। ভুটানদের ঐতিহ্য তার বৌদ্ধ ঐতিহ্যে গভীরভাবে বিস্তৃত। দক্ষিণ অঞ্চলে সর্বাধিক প্রচলিত হিন্দু ধর্ম ভুটানের দ্বিতীয় সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্ম। সরকার দেশের বর্তমান সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বজায় রাখার জন্য ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এর জন্য ভুটান কে সর্বশেষ শ্যাংগ্রি-লা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

যদিও ভুটানের নাগরিকরা বিদেশ ভ্রমণে ক্ষেত্রে স্বাধীন, অনেক বিদেশী ভুটানকে ভ্রমণযোগ্য হিসেবে দেখে। এটি অজনপ্রিয় গন্তব্য হওয়ার অন্য কারণ হল ব্যয়, যা কঠোর বাজেটের পর্যটকদের জন্য বেশি। প্রবেশাধিকার ভারত, বাংলাদেশ এবং মালদ্বীপের নাগরিকদের জন্য নিখরচায়, তবে অন্য সমস্ত বিদেশিদের একটি ভুটান ট্যুর অপারেটরের সাথে সাইন আপ করতে হবে এবং তারা দেশে থাকতে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ ডলার দিতে হবে, যদিও এই ফি বেশিরভাগ ভ্রমণ, থাকার ব্যবস্থা এবং খাবারের ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করে।

ভুটান ধূমপান নিষিদ্ধ করার জন্য বিশ্বের প্রথম দেশ। ভুটানের ২০১০ সালের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে প্রকাশ্যে ধূমপান করা বা তামাক বিক্রি করা আইনত অবৈধ হয়েছে।

গণমাধ্যম

১৯৬০ এর দশকের প্রথম দিকে জিগমে দর্জি ওয়াংচুক মধ্যযুগীয় রাজতন্ত্রে আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত করার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে প্রথম ত্রিশ মিনিটের জন্য বেতার সম্প্রচার হয়। টেলিভিশন সম্প্রচার আরম্ভ হয় ১৯৯০-এর দশকে, যদিও মাত্র কয়েকটি ধনী পরিবার তখন স্যাটেলাইট ডিশ এন্টেনা কিনতে সক্ষম ছিল। ২০০০ সালে ইন্টারনেট সেবা চালু হয়।

খাদ্য

ভুটানের প্রধান খাবার হলো লাল চাল (বাদামী চালের মতো, কিন্তু এতে বাদামী স্বাদ থাকে, ধানের একমাত্র প্রকার যেটি উঁচু এলাকায় জন্মায়।), বাজরা, ভুট্টা ইত্যাদি। পাহাড়াঞ্চলের খাবারের তালিকায় আছে মোরগ, চমরী গাইয়ের মাংস, শুকনো গরুর মাংস, শুকরের মাংস এবং চর্বি এবং মেষশাবক ইত্যাদি। স্যুপ এবং সিদ্ধ মাংস, চাল, ফার্ন, মসুর ডাল, এবং শুকনো সবজি, লাল মরিচ এবং পনিরের সাথে মশলা ইত্যাদি ভুটানে শীতকালের প্রিয় খাবার।

দুগ্ধজাত খাবারের মধ্যে গরু এবং চমরী গাইয়ের দুধের তৈরি মাখন এবং পনির অত্যন্ত জনপ্রিয়, প্রকৃতপক্ষে বেশির ভাগ দুধ দিয়েই মাখন এবং পনির বানানো হয়। জনপ্রিয় পানীয়র মধ্যে আছে: মাখন চা, কালো চা, স্থানীয় ভাবে প্রস্তুতকৃত আরা (ভাতের মদ) এবং বিয়ার। জনপ্রিয় মশলার মধ্যে আছে: এলাচ, আদা, থিংগে (সিচুয়ান মরিচ), রসুন, হলুদ, এবং কেওড়া।

যখর কেউ খাবারের জন্য অনুরোধ করে, তখন বলে মেশু মেশু, এবং ভুটানের ভদ্রতা অনুযায়ী অপরজন বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করে, তখন দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার অনুরোধ করা হয়।

ভ্রমণ

ভুটান ভ্রমণ করার জন্য একটি সুন্দর জায়গা ৷ ভুটানের ভূ-প্রকতি প্রাকৃতিক ভাবেই খুব সুন্দর ।

আরও দেখুন

বজ্র ড্রাগনের দেশ নামে পরিচিত ভুটান এশিয়ার সবচেয়ে সুখি দেশ। ভুটানের রাজার উপাধি ‘ড্রাগন রাজা’। স্থলবেষ্টিত দেশ ভুটানের আকার, আকৃতি ও পার্বত্য ভূ-প্রকৃতি সুইজারল্যান্ডের সদৃশ বলে দেশটিকে এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ডাকা হয়। ভুটানের প্রায় ৭০% এলাকা অরণ্যাবৃত। বহির্বিশ্ব থেকে বহুদিন বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে ভুটান প্রাণী ও উদ্ভিদের এক অভয়ারণ্য। এখানে বহু হাজার দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়। ভুটানের রাষ্ট্রীয় মুদ্রা গুলট্রাম এবং এর বিনিময় হার ভারতীয় রুপীর সাথে সম্পর্কিত। ভুটানের সাক্ষরতার হার প্রায় ৬০%। জনগণের প্রায় ৯৪% শতাংশ কৃষিকাজে নিয়োজিত।

জংখা ভাষা বা ভুটানি ভাষা ভুটানের সরকারি ভাষা। হিন্দি এবং ইংরেজি ভাষাতেও তাদের দক্ষতা রয়েছে।

তথ্যসূত্র

  1. "9th Five Year Plan (2002–2007)" (পিডিএফ)। Royal Government of Bhutan। ২০০২। ২০ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০১১
  2. "National Portal of Bhutan"। Department of Information Technology, Bhutan। ২৩ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০১১
  3. "Population and Housing Census of Bhutan — 2005" (PPT)। UN। ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১০
  4. "Butan"। International Monetary Fund।
  5. "Gini Index"। World Bank। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১১
  6. "2016 Human Development Report" (পিডিএফ)। United Nations Development Programme। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১৭
  7. "Treaty Bodies Database – Document – Summary Record – Bhutan"Office of the United Nations High Commissioner for Human Rights (UNHCHR)। ৫ জুন ২০০১। সংগ্রহের তারিখ ২৩ এপ্রিল ২০০৯
  8. "World Population Prospects"United Nations। ২০০৮। ৭ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০০৯
  9. Driem, George van (১৯৯৮)। Dzongkha = Rdoṅ-kha। Leiden: Research School, CNWS। পৃষ্ঠা 478। আইএসবিএন 90-5789-002-X।
  10. "Home | Library of Congress"Library of Congress, Washington, D.C. 20540 USA। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০২

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.