ভারতীয় টাকা

ভারতীয় টাকা তথা ভারতীয় রুপি (মুদ্রা প্রতীক: ; ব্যাংক কোড: আইএনআর) হল ভারতের সরকারি মুদ্রার নাম। এই মুদ্রার প্রচলন ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। আধুনিক ১, ১০০ পয়সায় বিভক্ত। ৫, ১০, ২০, ২৫ ও ৫০ পয়সা এবং ১, ২, ৫ ও ১০ -র মুদ্রা বাজারে প্রচলিত। অন্যদিকে ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০,৫০০২০০০ -র ব্যাংকনোটও বাজারে প্রচলিত।

ভারতীয় টাকা
আইএসও ৪২১৭
কোডINR
একক
উপ-ইউনিট
১/১০০পয়সা
পয়সাp
পূর্বে ব্যবহৃত প্রতীকRs, ರೂ, രൂ, ৳, ૱, రూ, ௹, रु
ব্যাংকনোট১, ২, ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ৫০০, ২০০০
কয়েন১, ২, ৫, ১০
বিবরণ
প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহারকারী ভারত
অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহারকারী   নেপাল[টীকা 1]
 জিম্বাবুয়ে  ভুটান[টীকা 2]
প্রচলন
কেন্দ্রীয় ব্যাংকভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক
মুদ্রকভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক
ওয়েবসাইটwww.rbi.org.in
টাঁকশালভারত সরকার টাঁকশাল
ওয়েবসাইটwww.spmcil.com
মূল্যনিরূপণ
মুদ্রাস্ফীতি৪.৮%, আগস্ট ২০১৫
উৎসঅর্থনৈতিক উপদেষ্টা
পদ্ধতিডব্লিউপিআই
এটি দ্বারা স্থিরীকৃতভুটানি ঙুলট্রুম (১ = ১)
নেপালি রুপি (১ INR = ১.৬ NPR)
ভারতীয় রুপির নোট

২০১০ সালের ১৫ জুলাই ভারতের কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট রুপির একটি প্রতীক নির্বাচন করেন। এই নতুন প্রতীক "" -টি দেবনাগরী "" () ও রোমান বড় হাতের "R" অক্ষরদুটির সংমিশ্রণে সৃষ্ট। এর আগে Rs. (একবচনে Re.) কথাটিকে রুপির প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হত।

ভারতীয় টাকার ভাষাভিক্তিক নাম

ভারতীয় টাকা ভারতের বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন নামে পরিচিত।

ভারতীয় ব্যাংকনোটের ভাষা প্যানেলে দেশের ২২টি সরকারি ভাষায় মুদ্রার অঙ্কটি লিখিত থাকে।[1]

প্রতীক

ভারতীয় টাকার প্রতীক

২০০৯ সালের ৫ মার্চ ভারত সরকার টাকার প্রতীক অঙ্কনের একটি প্রতিযোগিতার ঘোষণা করেন।[2][3] ২০১০ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করার সময় ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় উল্লেখ করেন যে টাকার প্রস্তাবিত প্রতীকটিতে ভারতীয় সংস্কৃতি ও তার স্বাতন্ত্র্যের প্রতিফলন ঘটবে।[4] প্রতিযোগিতা থেকে প্রাপ্ত প্রতীকগুলি থেকে পাঁচটি প্রতীক বেছে নেওয়া হয়।[5] ২০১০ সালের ২৪ জুন কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের একটি বৈঠকে এই পাঁচটি প্রতীকের মধ্যে একটিকে টাকার প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করার কথা ছিল।[6] কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর একটি অনুরোধ রক্ষা করতে গিয়ে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে কিছু বিলম্ব হয়।[7] স্থির হয় ২০১০ সালের ১৫ জুলাই ক্যাবিনেটের পুনরায় বৈঠক হবে।[8] এই বৈঠকেই আইআইটির প্রাক্তন ছাত্র ডি উদয় কুমার অঙ্কিত প্রতীকটিকে টাকার প্রতীক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।[8][9]

এই প্রতীকটি দেবনাগরী "र" (র) ও রোমান বড়ো হাতের "R" অক্ষরদুটির সংমিশ্রণে সৃষ্ট। প্রতীকের উপরের অংশে দুটি সমান্তরাল রেখা জাতীয় পতাকার একটি রূপকল্প সৃষ্টি করেছে।[10] এর ফলে মার্কিন ডলার, পাউন্ড স্টার্লিং, ইউরো, ইজরায়েলি নিউ শেকেলজাপানি ইয়েনের মতো ভারতীয় টাকারও নিজস্ব একটি প্রতীকচিহ্ন হল।[8] ভারত সরকার ছয় মাসে দেশের মধ্যে এবং ১৮ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক স্তরে এই প্রতীকের প্রচলন করতে ইচ্ছুক।[8]

ভারত সরকার টাঁকশাল, কলকাতা

এটি কলকাতায় অবস্থিত ভারত সরকারের একমাত্র টাঁকশাল। এটি ভারতের অন্যতম প্রাচীন টাঁকশাল। কলকাতার আলিপুর অঞ্চলে এই টাঁকশালটি অবস্থিত।

১৭৫৯-৬০ সালে কলকাতায় প্রথম টাঁকশালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় এই টাঁকশালের নাম ছিল "ক্যালকাটা মিন্ট"। এখান থেকে মুর্শিদাবাদের নামে মুদ্রা উৎপাদিত হত। তবে এই টাঁকশালটি ঠিক কোথায় অবস্থিত ছিল তা জানা যায় না। ১৭৯০ সালে ইংল্যান্ড থেকে আধুনিক যন্ত্রপাতি এনে দ্বিতীয় ক্যালকাটা মিন্ট স্থাপন করা হয়। গিলেট শিপ বিল্ডিং-এ এই টাঁকশালটি অবস্থিত ছিল। ১৮৩৩ সালে স্ট্যাম্প অ্যান্ড স্টেশনারি কমিটি বাড়িটি অধিগ্রহণ করে নেয়। দ্বিতীয় টাঁকশাল থেকেও মুর্শিদাবাদের নামে মুদ্রা উৎপাদিত হত।

১৮২৪ সালের মার্চ মাসে তৃতীয় টাঁকশালের শিলান্যাস করা হয়। এই টাঁকশালটি চালু হয় ১৮২৯ সালের ১ অগস্ট। ১৮৩৫ সাল অবধি এই টাঁকশাল থেকে মুর্শিদাবাদের নামে মুদ্রা উৎপাদিত হত। স্ট্র্যান্ড রোডে অবস্থিত এই টাঁকশালটির নাম ছিল "ওল্ড সিলভার মিন্ট"। টাঁকশালের সম্মুখভাগটি ছিল গ্রিসের এথেন্স শহরের টেম্পল অফ মিনার্ভা মেডিকার অনুকরণে নির্মিত। ১৮৬০ সালে এই টাঁকশালের উত্তরে কেবলমাত্র তাম্রমুদ্রা উৎপাদনের উদ্দেশ্যে কপার মিন্ট নামে আর একটি সংযোজিত ভবন নির্মিত হয়। সিলভার ও কপার মিন্ট থেকে ব্রোঞ্জ, রৌপ্য ও স্বর্ণমুদ্রা উৎপাদিত হত। এই দুই টাঁকশালের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করত ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম শহরের বোলটন অ্যান্ট ওয়াট অফ সোহো। মুদ্রা উৎপাদন ছাড়াও ব্রিটিশ যুগের নানা পদকও এই টাঁকশাল থেকে নির্মিত হত। ১৯৫২ সালে এই টাঁকশালটি আলিপুরে উঠে গেলে হয়ে যাওয়ার পর ভবনটি পরিত্যক্ত হয়। বর্তমানে এই ভবনটির সংস্কার করে এখানে একটি জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

১৯৩০-এর দশকের শেষভাগে আলিপুরে নতুন টাঁকশাল ভবনের নির্মাণকার্য শুরু হয়। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৯৪২ সালের গোড়ার দিকে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এই কাজ থমকে যায়। অবশেষে ১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে কাজ শেষ হয়। ১৯৫২ সালের ১৯ মার্চ ভারতের তদনীন্তন অর্থমন্ত্রী সি. ডি. দেশমুখ এই নতুন ভবনটির উদ্বোধন করেন। বর্তমানে আলিপুরের এই ভবনটি থেকেই টাঁকশালের কাজকর্ম চলে। টাঁকশালটি বর্তমানে "ভারত সরকার টাঁকশাল, কলকাতা" নামে পরিচিত এবং ইহা জাতীয় সড়ক ১১৭ অর্থাৎ ডায়মন্ড হারবার রোডের পশ্চিম দিকে অবস্থিত।

পাঁচশত এবং এক হাজার টাকার কাগুজে মুদ্রা রহিতকরণ

১০০ টাকার নোটের জন্য হাওড়ার একটি এটিএমের বাইরে জনসাধারণের ভিড়। ৮ই নভেম্বর. ২০১৬.

ভারতীয় পাঁচশত এবং এক হাজার টাকা মুদ্রার মুদ্রারহিতকরণ ভারতে ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি ও কালো টাকা সমস্যার সমাধানের অভিমুখে ভারত সরকার কর্তৃক গৃহীত একটি পদক্ষেপ। ৮ই নভেম্বর ২০১৬ এর মধ্যরাত থেকে বৈধ টেন্ডার হিসাবে সমস্ত ৫০০ এবং ১০০০ ভারতীয় টাকার নোটগুলির প্রচলন আইনত বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টেলিভিশনের মাধ্যমে সারা দেশের জনগণের উদ্দেশ্যে ৮ই নভেম্বর ২০১৬-এ এই পদক্ষেপের ঘোষণা করেন৷[11] তাঁর ভাষণে নরেন্দ্র মোদী ভারতে বিদ্যমান সমস্ত ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোটগুলিকে অকার্যকর নোট বলে ঘোষণা করেন এবং নতুন ৫০০ এবং ২০০০ টাকার নোট প্রচলনের ঘোষণাও করেন৷
জাল নোট ব্যবহারের দ্বারা তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ অর্থায়ন ও দেশে কালো টাকা প্রতিরোধ করার ভারত সরকার দ্বারা এটি একটি প্রচেষ্টা৷[12]

কার্যপ্রণালী

একটি ব্যাঙ্কের বাইরে জনসাধারণের ভিড়। ১০ই নভেম্বর ২০১৬.

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরবর্তীতে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জীৎ প্যাটেল সেই সময় (৮ই নভেম্বরের পূর্ববর্তী সময় অবধি ছাপা) দেশে প্রচলিত ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোটগুলি অনায়াসে বিনিময়ের পদ্ধতি সংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে একটি সংবাদ লিপি দেন।[13] ৮ নভেম্বর, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নিম্নলিখিতগুলি ঘোষণা করে:

  1. ৩০-এ ডিসেম্বর ২০১৬ অবধি সমস্ত ব্যাঙ্কগুলিকে তাদের গ্রাহকদের জন্য এটিএম থেকে টাকা উত্তোলনের পরিষেবা বিনামূল্যে প্রদান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ ১৮ই নভেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত ব্যাঙ্কগুলি তাদের গ্রাহকদের জন্য এটিএম এ প্রতি কার্ডে টাকা উত্তোলনের পরিমাণ সীমা দিনে ২০০০ টাকা মাত্র নির্ধারণ করতে পারে৷
  2. সকল ব্যাঙ্ক ৯ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে জনসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে৷

তথ্যসূত্র

  1. ভারত-নেপাল সীমান্তের বিভিন্ন শহরে নেপালি রুপি-সহ
  2. ভুটানি ঙুলট্রুম-সহ
  1. "Indian banknotes"। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১০
  2. http://finmin.nic.in/the_ministry/dept_eco_affairs/currency_coinage/Comp_Design.pdf ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩১ মে ২০১৩ তারিখে COMPETITION FOR DESIGN
  3. "India seeks global symbol for rupee"। Hindustan Times। ২০০৯-০৩-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-০৭
  4. "Cabinet defers decision on rupee symbol"। Sify Finance। ২০১০-০৬-২৪। ২০১০-০৭-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১০
  5. "List of Five Entries which have been selected for Final"। Ministry of Finance, Govt of India। ২০১০-০৭-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১৫
  6. "Rupee to get a symbol today!"। Money Control.com। ২০১০-০২-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১০
  7. "Cabinet defers decision on rupee symbol"। PTI। ২০১০-০৬-২৪। ২০১০-০৬-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১০
  8. "Cabinet approves new rupee symbol"। Times of India। ২০১০-০৭-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১৫
  9. "D. Udaya Kumar"। IIT Bombay।
  10. "IIT post-graduate gives Rupee its symbol"। Indian Express। ২০১০-০৭-১৫। ২০১০-০৭-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১৫
  11. Bhatt, Abhinav (৮ নভেম্বর ২০১৬)। "Watch PM Modi's Entire Speech On Discontinuing 500, 1000 Rupee Notes"। NDTV India। সংগ্রহের তারিখ ৮ নভেম্বর ২০১৬
  12. PM Narendra Modi: Rs 500, Rs 1000 bank notes not valid from midnight; ATMs won't work tomorrow
  13. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ৯ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৬

আরও দেখুন

ভারতীয় টাকার বর্তমান বিনিময় হার
গুগল ফাইন্যান্স থেকে: AUD BDT CAD CHF EUR GBP HKD JPY USD
ইয়াহু! ফাইন্যান্স থেকে: AUD BDT CAD CHF EUR GBP HKD JPY USD
এক্সই.কম থেকে: AUD BDT CAD CHF EUR GBP HKD JPY USD
ওএএনডিএ.কম থেকে: AUD BDT CAD CHF EUR GBP HKD JPY USD
এফএক্সটপ.কম থেকে: AUD BDT CAD CHF EUR GBP HKD JPY USD
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.