ভারতীয় খাদ্যগ্রহণ রীতিনীতি এবং শিষ্টাচার
ভারতীয় খাবার এবং সামাজিকীকরণের শিষ্টাচার ভারতের অঞ্চলের সাথে পরিবর্তিত হয়।
ভারতীয় রন্ধনশৈলী |
---|
সিরিজের অন্তর্গত নিবন্ধ |
|
সমস্ত ভারতীয়রা খাওয়ার আগে তাদের হাত ভালভাবে ধুয়ে নেয়, তারপরে ন্যূনতম ছুরি, কাঁটা, চামচ (কাটলারি) ব্যবহার করে তাদের আঙ্গুল দিয়ে খায় (ভারতের কিছু অংশে এই অভ্যাস অনুসরণ করা হয়, অন্যান্য অংশে কাটলারির ব্যবহার সাধারণ)।[1][2] এই অনুশীলনটি ঐতিহাসিক। এটি সাংস্কৃতিক ভিত্তির উপর নির্ভর করে, মনে করা হয় খাওয়া একটি ইন্দ্রিয়গত ক্রিয়াকলাপ। খাবারের স্বাদ, সুগন্ধ এবং এর উপস্থাপনার সঙ্গে খাদ্য স্পর্শ হল অভিজ্ঞতার অংশ। উপস্থাপনার মধ্যে আছে একটি থালিতে বা একটি বড় প্লেটে খাবার পরিবেশন, অথবা পরিষ্কার কলা পাতা (দক্ষিণে ব্যবহৃত), অথবা সেলাই করা এবং ধোয়া শিয়ালি (উত্তরে ব্যবহৃত) পাতায় পরিবেশন।[1] চিরাচরিতভাবে, আঙ্গুল দিয়ে খাবারের তাপমাত্রা অনুভব করা হয়।
ভাত খাওয়ার সময় তা তরকারির সঙ্গে মিশিয়ে আঙুল দিয়ে অল্প পরিমাণে তুলে বুড়ো আঙুল দিয়ে মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। রুটি খাওয়ার সময়, তার ছোট অংশ (রোটি, নান ) একটি ছোট পকেটের মতো ভাঁজ করে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ তরকারি তুলে খাওয়া হয়।[3] বেশিরভাগ খাবার কামড়ের আকারের মতো আকারে প্রস্তুত করা হয়, তবে মুরগির পায়ের মতো বড় খাদ্যের ক্ষেত্রে হাত দিয়ে একটু একটু করে খাওয়া গ্রহণযোগ্য।[4][5][6]
ঐতিহ্যগতভাবে, আরামদায়ক পোশাক পরে মাদুরের উপর একসাথে বসা হলো ভারতীয় আদর্শ। রেস্তোরাঁ এবং হোটেলে খাবার সময়, সাধারণত টেবিল এবং চেয়ার ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে আধুনিক, উচ্চ-মধ্যবিত্ত ঘরেও এই ভাবে খাওয়া হয়।
অনেক এলাকায় আঙ্গুলের সাহায্যে খাওয়ার সময়, শুধুমাত্র একটি হাত খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় (প্রধান হাত), এবং অন্যটি শুকনো থাকে। সেটি শুধুমাত্র খাদ্যবস্তু এগিয়ে দেওয়া অথবা জল পরিবেশন বা পান করার জন্য ব্যবহৃত হয়।[1][8][6][9] অনেক ক্ষেত্রে, কঠোর নিরামিষ এবং আমিষভোজী লোকেরা একসাথে খেতে পারে, কিন্তু শিষ্টাচার হল খাবারের মধ্যে রান্না বা পরিবেশনের পাত্রগুলিকে মিশ্রিত করা চলবেনা, কঠোর নিরামিষভোজীদের মধ্যে প্রচলিত প্রাণীদের প্রতি অহিংসার আধ্যাত্মিক বিশ্বাসকে সম্মান করার জন্য এটি করা হয়।
একইভাবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যবিধি গুরুত্বপূর্ণ। রান্না করার সময়, রাঁধুনি খাবারের স্বাদ গ্রহণ করে না এবং খাবার নাড়াতে একই হাতা বা খুন্তি ব্যবহার করে। একবার কোন চামচ ইত্যাদি ব্যবহার করে পাত্রের খাবারের স্বাদ নেওয়া হলে, সেটি ধুয়ে ফেলা হয়। আঙুল ডুবিয়ে খাওয়া খাবারকে ঝুটা বা উচ্ছিষ্ট (দূষিত) বলে মনে করা হয়। মুখনিঃসৃত লালা দিয়ে সমস্ত খাবার বা পানীয় যাতে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দূষিত না হয় তার জন্যই এই রীতিটি অবলম্বন করা হয়।[6][10]
ভারতীয় খাবারে বিভিন্ন শিকড়, বাকল, বীজ এবং পাতা থেকে উৎসারিত অসংখ্য গোটা এবং গুঁড়ো মশলা ব্যবহৃত হয়। রান্নায় ব্যবহৃত সম্পূর্ণ মশলা যেমন লবঙ্গ, তেজপাতা বা দারুচিনির কাঠিগুলি খাবারের অংশ হিসাবে খাওয়া হয় না, সেগুলিকে থালায় আলাদা করে রাখা হয়।
খাওয়া সাধারণত পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে হয়, গৃহকর্ত্রী সকলের খাওয়ার দিকে নজর রাখেন এবং প্রয়োজনমতো আরও খাবার এনে দেন। বড় দলের খাবার সময় বা কোন উদযাপনের সময়, স্বেচ্ছাসেবক বা পরিচারিকারা সাধারণত দলের সাথে খায়না, বরঞ্চ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সাহায্য করে।[5] কখনও কখনও দলটি নীরবে খেতে পারে, তবে প্রিয়জনের কাছে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা, কোনও বার্ষিকী উদযাপন করা বা সমাজ ও জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা এবং সাধারণভাবে কথোপকথনকে উৎসাহিত করা হয়।[5][11]
আঞ্চলিকভাবে, খাবার ঐতিহ্য,- থালায় খাবার নষ্ট না করা থেকে শুরু করে, একজনের যা ভালো লাগে তা খাওয়া এবং বাকিটা ছেড়ে দেওয়া পর্যন্তও ঘটে। যাইহোক, কিছু অঞ্চলে, নৈবেদ্য হিসাবে খাবার রেখে দেওয়া সাধারণ; কেউ কেউ এটিকে কেবলমাত্র খাবারের বিশুদ্ধ আত্মা খাওয়ার ইচ্ছার একটি পদ্ধতি হিসাবে বিবেচনা করে এবং ফেলে দেওয়া খাবার অতীতের অশুভ আত্মার প্রতিনিধিত্ব করে। খাবার পরে হাত ধোয়া এবং এগিয়ে দেওয়া তোয়ালে দিয়ে হাত মোছা একটি রীতির মধ্যে পড়ে।[5][12]
অনেক সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে, আয়ুর্বেদিক বিশ্বাস এবং রীতিনীতি তাদের খাবারের কাঠামো এবং অনুশীলনকে প্রভাবিত করে। সাধারণ অনুশাসন হল "মধ্যমভাবে প্রাতঃরাশ করা, ভালোভাবে দুপুরের খাবার খাওয়া এবং রাতের খাবার খুব কম খাওয়া"।[13]
আয়ুর্বেদ আমাদের বলে যে প্রতিটি দিন ৪-ঘন্টা করে দিবস-অংশে বিভক্ত। এই দিবস-অংশের প্রতিটি আমাদের দেহে একটি নির্দিষ্ট দোষের ধীরে ধীরে উত্থান, শিখরে পৌঁছোনো এবং তারপর পতনের সাথে যুক্ত। দোষের উত্থানের শক্তি সূর্যের গতিবিধির উপর নির্ভর করে। আদর্শভাবে, আমাদের সবচেয়ে ভারী খাবারের জন্য সঠিক সময় হওয়া উচিত দুপুরে, কারণ তখনই পিত্ত দোষ সূর্যের দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত হয়। অগ্নি (আগুন) হল দুটি পঞ্চ মহাভূতের মধ্যে একটি যা পিত্ত দোষ তৈরি করে, তাকে শীর্ষে পৌঁছে দেয়। এটি বিভিন্ন হজমের ক্রিয়াকলাপে সাহায্য করে, যেমন ক্ষুধা জাগানো, লালা ও গ্যাস্ট্রিক উৎসেচক তৈরি করা, পুষ্টিকর অংশ হজম করা ও শোষণ করা, এবং খাবারকে উপকারী এবং অ-উপযোগী উপ-পণ্যে আলাদা করা। অ-উপযোগী অংশ অবশেষে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
অতএব, ঐতিহ্যগতভাবে এই সম্প্রদায়গুলির বেশিরভাগেরই, দুপুরের খাবার হল দিনের প্রধান খাবার। রাতের খাবার ঐতিহ্যগতভাবে হালকা এবং শর্করা ও দুগ্ধজাত খাবার ইত্যাদি তাতে কম রাখা হয় কারণ আয়ুর্বেদের মতে উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত (শর্করাযুক্ত খাবারের জন্য একটি রেটিং পদ্ধতি) খাবার কফ দোষে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে।[14]
আরো দেখুন
তথ্যসূত্র
- Melitta Weiss Adamson; Francine Segan (২০০৮)। Entertaining from Ancient Rome to the Super Bowl: An Encyclopedia। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 311। আইএসবিএন 978-0-313-08689-2।
- Dawn Burton (২০০৮)। Cross-Cultural Marketing: Theory, Practice and Relevance। Routledge। পৃষ্ঠা 66। আইএসবিএন 978-1-134-06017-7।
- Christine Ingram; Jennie Shapter (১৯৯৯)। The cook's guide to bread। Hermes। পৃষ্ঠা 118। আইএসবিএন 978-1-84038-837-4।
- Gloria Petersen (২০১২)। The Art of Professional Connections: Dining Strategies for Building and Sustaining Business Relationships। Wheatmark। পৃষ্ঠা 358। আইএসবিএন 978-1-60494-705-2।
- John Hooker (২০০৩)। Working Across Cultures। Stanford University Press। পৃষ্ঠা 239–240। আইএসবিএন 978-0-8047-4807-0।
- Madhu Gadia (২০০০)। New Indian Home Cooking: More Than 100 Delicious Nutritional, and Easy Low-fat Recipes!। Penguin। পৃষ্ঠা 6। আইএসবিএন 978-1-55788-343-8।
- Madhu Gadia (2000). New Indian Home Cooking: More Than 100 Delicious Nutritional, and Easy Low-fat Recipes!. Penguin. p. 6. ISBN 978-1-55788-343-8.
- Melitta Weiss Adamson; Francine Segan (2008). Entertaining from Ancient Rome to the Super Bowl: An Encyclopedia. ABC-CLIO. p. 311. ISBN 978-0-313-08689-2.
- Madhu Gadia (2000). New Indian Home Cooking: More Than 100 Delicious Nutritional, and Easy Low-fat Recipes!. Penguin. p. 6. ISBN 978-1-55788-343-8.
- Madhu Gadia (2000). New Indian Home Cooking: More Than 100 Delicious Nutritional, and Easy Low-fat Recipes!. Penguin. p. 6. ISBN 978-1-55788-343-8.
- John Hooker (2003). Working Across Cultures. Stanford University Press. pp. 239–240. ISBN 978-0-8047-4807-0.
- John Hooker (2003). Working Across Cultures. Stanford University Press. pp. 239–240. ISBN 978-0-8047-4807-0.
- "What are healthy eating timings according to Ayurveda?"। ৩০ মার্চ ২০১৯।
- "8 Amazing Ayurveda Tips for Eating Healthy at Night"।