ভবতারণ শিব মন্দির
ভবতারণ শিব মন্দির নবদ্বীপ শহরের দ্বিশতাধিক প্রাচীন একটি শিব মন্দির। এই শিব মন্দিরটি বাংলার মন্দির স্থাপত্যের বিরলরীতির অষ্টকোণাকৃতি শিখর মন্দির।[1] পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটিকে নবদ্বীপের হেরিটেজ মন্দির হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।[2] নবদ্বীপের পোড়ামাতলায় এই মন্দিরের পাশেই পোড়ামা কালী মন্দির ও মা ভবতারিণী মন্দির অবস্থিত।
ভবতারণ শিব মন্দির | |
---|---|
![]() ![]() ভবতারণ শিব মন্দির ও শিবলিঙ্গ | |
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | হিন্দুধর্ম |
জেলা | নদিয়া জেলা |
ঈশ্বর | শিব |
অবস্থান | |
অবস্থান | পোড়ামাতলা, নবদ্বীপ |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
দেশ | ভারত |
স্থানাঙ্ক | ২৩°২৪′৩৮.১১″ উত্তর ৮৮°২২′১২.২০″ পূর্ব মানচিত্র |
স্থাপত্য | |
ধরন | বাংলার মন্দির স্থাপত্য, অষ্টকোণাকৃতি শিখর মন্দির |
সৃষ্টিকারী | মহারাজ গিরিশচন্দ্র |
প্রতিষ্ঠার তারিখ | ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দ |
সম্মুখভাগের দিক | পশ্চিমমুখী |
ইতিহাস

রাজা রাঘব ১৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে নবদ্বীপে অপরূপ একটি গণেশ মূর্তি স্থাপন করেছিলেন।[3] সেইসঙ্গে একটি শিবলিঙ্গ স্থাপনের অভিপ্রায়ে একটি মন্দির নির্মাণ করলেও মন্দির সম্পন্ন করার পূর্বেই তিনি মারা যান। পিতার অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন তাঁর ছেলে রাজা রুদ্র রায়। ১৬৮৩ থেকে ১৬৯৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রাজা রুদ্র রায় নবদ্বীপে গৌরীপট্ট সংবলিত ব্রাহ্মণ্য-সংস্কৃতির প্রথম শিব মূর্তিটি স্থাপন করেছিলেন।[4] তখন সেটি রাঘবেশ্বর শিব নামে পরিচিত ছিল।[5] কিন্তু ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দের গঙ্গার ভাঙনে এই মন্দিরসহ মূর্তিটি গঙ্গাগর্ভে নিমজ্জিত হলে তার প্রায় ৬৫ বছর পর রাজা গিরিশচন্দ্র ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে পোড়ামাতলায় শিব মূর্তিটি ভবতারণ মানে পুন:স্থাপিত করেন, যা বর্তমানে ভবতারণ শিব নামে পরিচিত।[6][7][8] ভবতারণ মন্দিরটি বর্তমানে সংস্কৃত না হলেও ১৯১১ থেকে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রাজা ক্ষৌণীশচন্দ্রের সময় মন্দিরটি সংস্কৃত হয়।[1]
অষ্টকোণাকৃতি শিখর স্থাপত্যের এই মন্দির সমগ্র বাংলায় খুবই কম দেখা যায়। এই সম্পর্কে নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব বলেছেন,
“ | ভবতারণ শিবমন্দিরের স্থাপত্য বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। অষ্টকোণাকার, আচ্ছাদিত বারান্দা সমেত এই শিবমন্দিরটি ব্যতিক্রমী নির্মাণশৈলী বহন করছে।[9] | ” |
বর্তমান অবস্থা
প্রায় দুশো বছরের অধিক এই প্রাচীন মন্দিরটিকে তত্সংলগ্ন একটি প্রাচীন বটগাছ আষ্টেপৃষ্টে আবৃত আছে। এই বটগাছের গোড়াতেই ঘট স্থাপন করে পোড়ামা পূজিত হওয়ায় বর্তমানে বটগাছের কোনো ক্ষতিসাধন করে মন্দিরের কোনো বৃহত সংস্কার বর্তমানে সম্ভবপর নয়।[10]
তথ্যসূত্র
- নবদ্বীপের ইতিবৃত্ত। নবদ্বীপ, নদিয়া: মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল। জানুয়ারি ২০১৩। পৃষ্ঠা ৩৩৪।
- "WEST BENGAL HERITAGE COMMISSION, Report July 2019" (পিডিএফ)। West Bengal Heritage Commission, Government of West Bengal। পৃষ্ঠা 4। ২ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০২১।
- রায়, মোহিত (১৯৭৫)। বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিয়কুমার; দাশ, সুধীররঞ্জন, সম্পাদকগণ। নদীয়া জেলার পুরাকীর্তি। পূর্ত (পুরাতত্ত্ব বিভাগ), পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পৃষ্ঠা ৪৪।
- গেরেট, জে. এইচ. (১৯১০)। Nadia District Gazeteers। কলকাতা: বেঙ্গল সেক্রেটারিয়েট বুক ডিপো। পৃষ্ঠা ১৫৫।
- মল্লিক, কুমুদনাথ (১৯১১)। রায়, মোহিত, সম্পাদক। নদীয়া কাহিনী (দ্বিতীয় সংস্করণ)। ২৭ বেনিয়াটোলা লেন, কলকাতা: পুস্তক বিপণি। পৃষ্ঠা ২২১।
- রাঢ়ী, কান্তিচন্দ্র (১৯৩৭)। দত্ত, জিতেন্দ্রিয়; দত্ত, ফণিভূষণ, সম্পাদকগণ। নবদ্বীপ মহিমা:অর্থাৎ নবদ্বীপের প্রাচীন ও আধুনিক বিবরণ (দ্বিতীয় সংস্করণ)। নবদ্বীপ: নবদ্বীপ মহিমা কার্যালয়: অমিয় গোপাল দত্ত। পৃষ্ঠা ৩০৩।
- রায়, কার্তিকেয়চন্দ্র (১৮৭৬)। ক্ষিতীশ-বংশাবলী-চরিত অর্থাৎ নবদ্বীপের রাজবংশের বিবরণ। কলিকাতা: নূতন সংস্কৃত যন্ত্র। পৃষ্ঠা ১৮০।
- রায়, প্রণব (২৭ জানুয়ারি ১৯৯৯)। বাংলার মন্দিরঃ স্থাপত্য ও ভাস্কর্য (দ্বিতীয় সংস্করণ)। ২৭ বেনিয়াটোলা লেন, কলকাতা: পুস্তক বিপণি। পৃষ্ঠা ১২৯।
- বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাশিস। "প্রাচীন মন্দির ঢেকেছে বটের ঝুরিতে"। anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৭।
- সংবাদদাতা, নিজস্ব। "ভবতারিণী মন্দির সংস্কারে ভক্তেরাই"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-১৩।