ব্যান্ডিট কুইন
ব্যান্ডিট কুইন হল ভারতীয় লেখক মালা সেন রচিত ইন্ডিয়া'স ব্যান্ডিট কুইন: দ্য ট্রু স্টোরি অফ ফুলন দেবী বইতে বর্ণিত ফুলন দেবীর জীবনের উপর ভিত্তি করে ১৯৯৪ সালের একটি ভারতীয় জীবনীমূলক চলচ্চিত্র।[2] এটি পরিচালনা করেছিলেন শেখর কাপুর এবং ছবির শিরোনাম চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সীমা বিশ্বাস। এর সংগীত পরিচালনা করেছিলেন ওস্তাদ নুসরাত ফাতেহ আলী খান। ছবিটি হিন্দিতে সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সেরা চলচ্চিত্রের জন্য ফিল্মফেয়ার সমালোচকদের পুরস্কার এবং সেই বছরের সেরা নির্দেশনা পুরস্কার জিতেছিল। ১৯৯৪ কান ফিল্ম ফেস্টিভালে ডিরেক্টরদের পাক্ষিক বিভাগে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল, এবং এডিনবার্গ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়েছিল।[3][4] ছবিটি ৬৭তম একাডেমি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সেরা বিদেশী ভাষা চলচ্চিত্রের জন্য ভারতীয় প্রবেশ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিল, কিন্তু মনোনীত হয়নি।[5]
ব্যান্ডিট কুইন | |
---|---|
পরিচালক | শেখর কাপুর |
প্রযোজক | ববি বেদি |
রচয়িতা | রণজিৎ কাপুর (সংলাপ) মালা সেন |
শ্রেষ্ঠাংশে |
|
সুরকার | নুসরাত ফাতেহ আলী খান রজার হোয়াইট |
চিত্রগ্রাহক | অশোক মেহতা |
সম্পাদক | রেনু সালুজা |
প্রযোজনা কোম্পানি | ক্যালিডোস্কোপ এন্টারটেইনমেন্ট, চ্যানেল ৪ |
পরিবেশক | কোচ ভিশন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৪ (ডিভিডি) |
মুক্তি |
|
দৈর্ঘ্য | ১১৯ মিনিট |
দেশ | ভারত |
ভাষা | হিন্দি |
নির্মাণব্যয় | ₹৩২.৫ মিলিয়ন[1] |
আয় | প্রা. ₹২২১ মিলিয়ন (নিচে দেখুন) |
ঘটনা
১৯৬৮ সালের গ্রীষ্মে উত্তর প্রদেশের একটি ছোট্ট গ্রামে ছবিটি শুরু হয়।[6] একুশ বছর বর্ষীয় এক পুট্টিলালের (আদিত্য শ্রীবাস্তব) সঙ্গে ফুলনের বিবাহ হয়েছিল। যদিও সেই সময়ে বাল্যবিবাহের রীতি প্রচলিত ছিল, তবে ফুলনের মা মুলা (সাবিত্রী রেকওয়ার) এই বিবাহে আপত্তি জানিয়েছিল। ফুলনের বয়স্ক বাবা দেবীদিন (রামচরণ নির্মলকার) সংস্কৃতি মেনে ফুলনকে পুট্টিলালের সাথে বিদায় দিয়েছিল।
ফুলন সেখানে যৌন ও শোষণমূলক অত্যাচার এবং জাতি প্রথার মুখোমুখি হয়েছিল। (ফুলনের পরিবার এবং পুট্টিলালের পরিবার নিম্ন বর্ণের মাল্লা উপজাতির অন্তর্ভুক্ত; উচ্চ পদস্থ ঠাকুর উপজাতি রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব দেয়।) পুট্টিলাল শারীরিক ও যৌন বিচারে অত্যন্ত অবমাননাকর, এবং ফুলন শেষ পর্যন্ত পালিয়ে ঘরে ফিরে আসে। ফুলন যত বড় হতে থাকে, ঠাকুর পুরুষদের (যাদের পিতা-মাতা পঞ্চায়েত বা গ্রাম সরকার গঠন করে) কাছ থেকে স্পর্শ এবং জড়িয়ে ধরার (সম্মতিহীন) ঘটনাগুলির মুখোমুখি হয়। পরবর্তী পঞ্চায়েত সভায়, ফুলনকে গ্রাম থেকে নিষ্কাশিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কারণ সে উচ্চ বর্ণের পুরুষদের (যারা তাকে উপ-মানব অস্থাবর সম্পত্তির মত মনে করে) যৌন অগ্রগতিতে প্রতিবাদ করেছিল।
তদনুসারে, ফুলন তার সম্পর্কিত ভাই কৈলাসের (সৌরভ শুক্লা) কাছে থাকতে শুরু করে। অন্য এক গ্রামে যাওয়ার পথে বিক্রম মাল্লা মাস্তানার (নির্মল পান্ডে) নেতৃত্বাধীন বাবু গুজ্জর সম্প্রদায়ের ডাকুর (ডাকাত) একটি দলের সাথে ফুলন মুখোমুখি হয়। ফুলন কিছুদিন কৈলাসের সাথে থাকে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত চলে যেতে বাধ্য হয়। রাগান্বিত ও হতাশ হয়ে ফুলন তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার জন্য স্থানীয় পুলিশের কাছে যায়, কিন্তু পুলিশ তাকে মারধর, শ্লীলতাহানি ও গ্রেপ্তার করে, তারপর হেফাজতে থাকার সময় তাকে ধর্ষণ করে। ঠাকুররা জামিন জমা দিয়ে তাকে মুক্ত করে। কিন্তু সে জানতনা, জামিনটি ছিল ঘুষ (পুলিশের মাধ্যমে বাবু গুজ্জরের দলকে দেওয়া হয়েছিল), এবং বাবু গুজ্জর এসে তার পুরস্কারটি নিয়ে যায়।
১৯৭৯ সালের মে মাসে, ফুলনকে বাবু গুজ্জর (অনিরুদ্ধ আগরওয়াল) অপহরণ করে। গুজ্জর ছিল নির্মম এবং শিকারী মানুষ। যদিও গুজ্জরের লেফটেন্যান্ট বিক্রম ফুলনের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল, গুজ্জর নির্বিচারে নৃশংসতার সাথে ফুলনকে লাঞ্ছিত করতে থাকে। শেষপর্যন্ত একদিন ধর্ষণরত অবস্থায় বিক্রম তাকে দেখে ফেলে এবং তার মাথায় গুলি করে। বিক্রম দলের নেতা হয়ে ওঠে, এবং ফুলানের প্রতি তার সহানুভূতি অবশেষে পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীল পরিপক্ব প্রাপ্তবয়স্ক সম্পর্কের হয়ে ওঠে। এই সময়ে, ফুলন পুনরায় তার প্রাক্তন স্বামী পুট্টিলালের কাছে যায়, এবং বিক্রমের সহায়তায় তাকে অপহরণ করে। ফুলন নিজের ধর্ষণ ও নির্যাতনের ন্যায়বিচার আদায় করতে তাকে মারধর করে।
ঠাকুর শ্রী রাম (গোবিন্দ নামদেও) কারাগার থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। ঠাকুর শ্রী রাম ছিল বাস্তবিক দলনেতা (পূর্ববর্তী গুজ্জরদের নেতা)। শ্রী রাম তার দলে ফিরে আসে এবং বিক্রম তাকে শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করে। কিন্তু শ্রী রাম বিক্রমের সমতাবাদী নেতৃত্বে মেনে নিতে পারেনি এবং ফুলনের প্রতি লোভী হয়ে পড়ে। ১৯৮০ সালের আগস্টে, শ্রী রাম বিক্রমকে হত্যা করায়, ফুলনকে অপহরণ করে এবং তাকে বেহমাই গ্রামে নিয়ে আসে। ফুলনকে শ্রী রাম এবং দলের বাকী সদস্যরা বার বার ধর্ষণ এবং মারধর করে। শ্রী রামের পূর্বের অগ্রগতিকে "অসম্মান" করা এবং সবার সমান হবার সাহস দেখানোর শাস্তি হিসাবে ফুলনের ওপর এই অত্যাচারগুলি ঘটে। চূড়ান্ত অপমানকর শাস্তি ছিল তাকে নগ্ন করা হয়েছিল, বেহমাইয়ের চারপাশে ঘোরানো হয়েছিল, মারধর করা হয়েছিল এবং কুয়ো থেকে জল আনতে পাঠানো হয়েছিল (গ্রামের সকলের সামনে দিয়ে)।
মারাত্মকভাবে মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত ফুলন তার সম্পর্কিত ভাই কৈলাসের কাছে ফিরে আসে। সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে থাকে, এবং বিক্রম মাল্লার পুরানো বন্ধু মান সিং (মনোজ বাজপেয়ী) কে খুঁজে বার করে। মান সিং তাকে বাবা মুস্তাকিমের নেতৃত্বাধীন (রাজেশ বিবেক) আরও একটি বড় দলের কাছে নিয়ে আসে। সে বাবার কাছে তার সমস্ত ইতিহাস খুলে বলে এবং একটি দল গঠনের জন্য তার কাছে কিছু পুরুষ এবং অস্ত্র চায়। বাবা মুস্তাকিম রাজী হয়। নতুন দলের নেতা হয় মান সিং ও ফুলন।
ফুলন তার নতুন দলকে সাহস, উদারতা এবং বুদ্ধি দিয়ে নেতৃত্ব দেয়। তার মজুদ এবং সঙ্গে তার কিংবদন্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। সে ডাকাত রাণী ফুলন দেবী হিসাবে পরিচিত হয়। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, বাবা মুস্তাকিম তাকে বেহমাইয়ের একটি বিশাল বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা জানায়, যেখানে ঠাকুর শ্রী রাম উপস্থিত থাকবে। বাবা ফুলনকে সতর্ক করে দেয় বড় কিছু না করার জন্য। ফুলন বিয়ের অনুষ্ঠানস্থলকে আক্রমণ করে এবং তার দল বেহমাইয়ের পুরো ঠাকুর বংশের ওপর প্রতিশোধ নেয়। তারা পুরুষদের দাঁড় করিয়ে বেধড়ক মারধর করে। বেশ কয়েকজনকে গুলি করা হয়। বিরাট এই ঘটনাটির ফলে ফুলন নতুন দিল্লির জাতীয় আইন শৃঙ্খলা বলবৎকারী কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকেরা ফুলনকে ধরার জন্য চেষ্টা চালাতে থাকে, এবং ঠাকুর শ্রী রাম খুব আনন্দের সঙ্গে তাদের সহায়তা করতে এগিয়ে আসে।
ফুলনের দলের অনেক লোক নিহত হয়। তারা শেষ পর্যন্ত কোনও খাদ্য বা জল ছাড়াই চম্বলের রূক্ষ অঞ্চলে লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হয়। ফুলন তার বিকল্পগুলি মূল্যায়ন করে এবং আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়। তার শর্ত ছিল তার অবশিষ্ট সঙ্গীদের সুরক্ষিত রাখা এবং (বিশেষত মহিলা এবং শিশুদের জন্য) খাদ্য সরবরাহ করা। ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফুলনের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ছবিটি শেষ হয়। শেষের স্বীকারগুলি থেকে জানা যায় যে তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছিল (বেহমাইতে হত্যার অভিযোগ সহ) এবং ১৯৯৪ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
চরিত্র চিত্রণ
- সীমা বিশ্বাস- ফুলন দেবী
- নির্মল পান্ডে- বিক্রম মাল্লা
- আদিত্য শ্রীবাস্তব- পুট্টিলাল
- রাম চরণ নির্মলকর- দেবীদীন
- সাবিত্রী রেকওয়ার- মুলা
- গজরাজ রাও- অশোক চাঁদ ঠাকুর (সরপঞ্চের পুত্র)
- সৌরভ শুক্ল- কৈলাশ
- মনোজ বাজপেয়ী- মান সিং
- রঘুবীর যাদব- মাধো
- রাজেশ বিবেক- বাবা মুস্তাকিম
- অনিরুদ্ধ আগরওয়াল- বাবু গুজ্জর
- গোবিন্দ নামদেও- ঠাকুর শ্রী রাম
- শেখর কাপুর- একটি ক্যামিও চরিত্রে লরি চালক
- অনিল সাহু- ধনুয়া গ্যাংস্টার বিক্রম মাল্লার সাথে
বক্স অফিস
ভারতে ছবিটি আয় করেছিল ₹২০৬.৭ মিলিয়ন[1] ($৫৮,৩৩,৫৪৫)।[7] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় ছবিটি উপার্জন করেছিল $৩৯৯,৭৪৮[8] (₹১,৪১,৬৪,২৭১).[7] যৌথভাবে ছবিটির উপার্জন ছিল ₹২২১ মিলিয়ন ($৬.২৩ মিলিয়ন)।
আরো দেখুন
- List of submissions to the 67th Academy Awards for Best Foreign Language Film
- List of Indian submissions for the Academy Award for Best Foreign Language Film
তথ্যসূত্র
- "Bandit Queen - Movie"। Box Office India। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৯।
- Kotak, Ash (১৩ জুন ২০১১)। "Mala Sen obituary"। The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৬।
- "Anurag Kashyap: 'The perception of India cinema is changing'"। Digital Spy।
- "Shekhar Kapur, exclusive interview"। Festival de Cannes।
- Margaret Herrick Library, Academy of Motion Picture Arts and Sciences
- Let us Know Something About It In Detail. The real life Phoolan Devi was born in 1963 and was married when she was about 11. See Phoolan Devi for more details
- "Official exchange rate (LCU per US$, period average)"। World Bank। ১৯৯৬। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৯।
- "Bandit Queen (1995)"। Box Office Mojo। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৯।
বহিঃসংযোগ
- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে Bandit Queen (ইংরেজি)
- Moxham, Roy (৩ জুন ২০১০)। Outlaw: India's Bandit Queen and Me। Rider। আইএসবিএন 978-1-84604-182-2।
টেমপ্লেট:Shekhar Kapur