ব্যবসায় উদ্যোগ

ব্যাপক অর্থে ব্যবসায় উদ্যোগ বা ব্যবসায়িক উদ্যোগ বলতে কোনও ধারণা থেকে অর্থনৈতিক মূল্য সৃষ্টি বা বের করে আনার (নিষ্কর্ষণ) প্রক্রিয়াকে বোঝায়।[1][2][3] অপেক্ষাকৃত সংকীর্ণ অর্থে নতুন কোনও পণ্য বা সেবা সৃষ্টির মাধ্যমে বাজারে জায়গা করে নিয়ে মুনাফা উপার্জন করার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় মূলধন ও শ্রম পুঞ্জীভূত করে ঝুঁকি নিয়ে কোনও নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নকশা, সৃষ্টি ও পরিচালনা করার ইচ্ছা ও সামর্থ্য বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টাকে ব্যবসায় উদ্যোগ বলে।[4] ব্যবসায় উদ্যোগ উচ্চমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু একই সাথে ফলপ্রদ হতে পারে, এবং এর সুবাদে অর্থনৈতিক সম্পদ সৃষ্টি হতে পারে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে এবং নবীকরণ (নূতনের প্রবর্তন) ঘটতে পারে। যে ব্যক্তি এইরূপ নতুন ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা শুরু করেন ও এর সুবাদে লব্ধ মুনাফার সিংহভাগ উপভোগ করেন, তাকে ব্যবসায় উদ্যোক্তা বলে।[5][6] একজন ব্যবসায় উদ্যোক্তাকে সাধারণত নতুন ধ্যানধারণা, পণ্য, সেবা বা ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ার একজন নবীকারক হিসেবে দেখা হয়। ব্যবসায় উদ্যোক্তারা যেকোনও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারা তাদের দক্ষতা ও প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণের সামর্থ্য ব্যবহার করে বাজারের চাহিদা আগে থেকে আঁচ করে ও বাজারে নতুন উন্নত ধারণা নিয়ে আসে। উদ্যোগ সফল হলে তারা সম্ভাবনাময় নবীন ব্যবসা সৃষ্টির ঝুঁকির বিনিময়ে মুনাফা, খ্যাতি ও অবিরাম প্রবৃদ্ধির সুযোগ উপভোগ করে।

অর্থশাস্ত্রে যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনও উদ্ভাবন বা প্রযুক্তিকে পণ্য ও সেবায় রূপান্তর করতে পারে, তাদেরকে উদ্যোক্তা বলে।[7] এই দিক থেকে ব্যবসায় উদ্যোগ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা বা নতুন ব্যবসা উভয়ের কর্মকাণ্ডকেই নির্দেশ করে। অর্থনীতিবিদেরা ব্যবসায় উদ্যোগকে ভূমি বা প্রাকৃতিক সম্পদ, শ্রম ও পুঁজি বা মূলধনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উৎপাদনের চতুর্থ একটি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে মনে করেন। একজন ব্যবসায় বা শিল্প উদ্যোক্তা প্রথম তিনটি উপাদানের সমবায় সাধন করে পণ্য শিল্পোৎপাদন করেন বা সেবা প্রদান করেন। উদ্যোক্তারা সাধারণত একটি ব্যবসায় পরিকল্পনা সৃষ্টি করেন, শ্রমিক ভাড়া করেন, সম্পদ ও অর্থসংস্থান জোগাড় করেন, এবং ব্যবসার জন্য নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনা প্রদান করেন।

উদ্যোক্তারা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। নির্মাতা উদ্যোক্তারা ঝুঁকি নিয়ে অল্প সময়ে বৃদ্ধি অর্জন করে ছোট থেকে বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য কাজ করে। সুযোগসন্ধানী উদ্যোক্তারা অর্থনৈতিক সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সঠিক সময়ে বাজারে যোগ দিয়ে মুনাফা উঠিয়ে ব্যবসা ছেড়ে দেয়। নবীকারক উদ্যোক্তারা বৃদ্ধি বা মুনাফার পেছনে না গিয়ে অভিনব নতুন কোনও কিছু বাজারে নিয়ে আসে ও নতুন বাজারের সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞ উদ্যোক্তারা নির্দিষ্ট কোনও ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে থাকে ও ঝুঁকি না নিয়ে ধীরগতিতে বর্ধনশীল ব্যবসা সৃষ্টি করে। উদ্যোক্তারা মূলত চার ধরনের প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে: ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (বিদ্যমান বাজারের একটি অংশ হিসেবে থাকতেই সন্তুষ্ট), সম্ভাবনাময় নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (কম সময়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির অভিলাষ), বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নতুন শাখা এবং সামাজিক উদ্যোগ (অলাভজনক)। উদ্যোক্তারা বহুবিষয়ে কুশলী, ঘাতসহ, নমনীয়, পাটোয়ারি (অর্থের হিসাব) ও ব্যবসায়িক বুদ্ধির অধিকারী, লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টিনিবদ্ধকারী ও ভাল যোগাযোগ স্থাপনকারী হয়ে থাকে। তাদেরকে উচ্চমাত্রায় অধ্যবসায়ী, পরিশ্রমী ও নিবেদিতপ্রাণ হতে হয়। তারা উচ্চমাত্রায় উদ্বুদ্ধ ঝুঁকি-গ্রহণকারী হয়, ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের একটি রূপকল্প থাকে এবং সেই রূপকল্প অর্জনের জন্য তারা প্রচুর ত্যাগস্বীকার করে। উদ্যোক্তাদের কর্মকাণ্ড একটি অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়, কেননা তাদের সৃষ্ট ব্যবসাগুলি বহু মানুষের কর্মসংস্থান করে ও বাজারে ভোক্তাদের ক্রয়ের জন্য পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে।

ব্যবসায় উদ্যোক্তার যে তিনটি প্রধান বাধার সম্মুখীন হয়, সেগুলি হল আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে উত্তরণ (লাল ফিতা), দক্ষ বা মেধাবী লোকদের চাকুরিতে নিয়োগ দান এবং অর্থের সংস্থান। তাই বাস্তব বিশ্বে সম্ভাবনাময় নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির সিংহভাগই তহবিলের অভাব, ভুল ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত, সরকারী নীতি, অর্থনৈতিক সংকট, বাজারে চাহিদার অভাব, বা এগুলির বিভিন্ন সমবায়ের কারণে বিফল হয়ে ক্ষতির শিকার হয়।[8]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Diochon, Monica; Anderson, Alistair R. (১ মার্চ ২০১১)। "Ambivalence and ambiguity in social enterprise; narratives about values in reconciling purpose and practices"। International Entrepreneurship and Management Journal (ইংরেজি ভাষায়)। 7 (1): 93–109। hdl:10059/613আইএসএসএন 1555-1938এসটুসিআইডি 144081539ডিওআই:10.1007/s11365-010-0161-0
  2. Gaddefors, Johan; Anderson, Alistair R. (১ জানুয়ারি ২০১৭)। "Entrepreneursheep and context: when entrepreneurhip is greater than entrepreneurs"। International Journal of Entrepreneurial Behavior & Research23 (2): 267–278। hdl:10059/2299আইএসএসএন 1355-2554ডিওআই:10.1108/IJEBR-01-2016-0040
  3. Alvarez, Sharon A.; Busenitz, Lowell W. (১ ডিসেম্বর ২০০১)। "The entrepreneurship of resource-based theory"। Journal of Management (ইংরেজি ভাষায়)। 27 (6): 755–775। আইএসএসএন 0149-2063এসটুসিআইডি 220587830ডিওআই:10.1177/014920630102700609
  4. "Business Dictionary definitionyuuggtygn"। Business Dictionary। ১৬ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৬
  5. AK Yetisen; LR Bob Volpatti; AF Coskun; S Cho; E Kamrani; H Butt; A Khademhos\\seini; SH Yun (২০১৫)। "Entrepreneurship"Lab Chip15 (18): 3638–3660। ডিওআই:10.1039/c5lc00577aপিএমআইডি 26245815
  6. Katila, Riitta; Chen, Eric L.; Piezunka, Henning (৭ জুন ২০১২)। "All the right moves: How entrepreneurial firms compete effectively" (পিডিএফ)Strategic Entrepreneurship JNL6 (2): 116–132। ডিওআই:10.1002/sej.1130। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১৭
  7. Audretsch, David B.; Bozeman, Barry; Combs, Kathryn L.; Feldman, Maryann; Link, Albert N.; Siegel, Donald S.; Stephan, Paula; Tassey, Gregory; Wessner, Charles (২০০২)। "The Economics of Science and Technology"। The Journal of Technology Transfer27 (2): 157। এসটুসিআইডি 143820412ডিওআই:10.1023/A:1014382532639
  8. Belicove, Mikal E. (২ আগস্ট ২০১২)। "How to Properly Close Your Business"
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.